রোনালদোর রোশনাইয়ে আলাভেস যখন অন্ধ তখন মেসিই বা নিরব থাকেন কি করে? যে জিরোনার বিপক্ষে আগে কখনো গোলের দেখা পাননি, তাদের বিপক্ষে দুটি গোল করে জানিয়ে দিলেন প্রতিপক্ষ যেই হোক, জাল খুঁজে নিতে মেসির কোনো সমস্যা হয় না।
শুধু দুটি গোল কেন? পুরো ম্যাচটাই তো ছিলো মেসিময়। সুয়ারেজ হ্যাট্রিক করেছেন সত্য, অসাধারণ এক গোলে বার্সা কেনো তার পেছনে জোঁকের মত লেগেছিলো সেটি বুঝিয়েছেন কৌতিনিও। কিন্তু পুরা অর্কেস্ট্রাটা চলেছে মেসির নির্দেশনায়। কোথায় ছিলেন না তিনি?
প্রথমেই গোল করা জিরোনাকে জিরোবার সামান্যতম সুযোগ না দিয়ে অসাধারণ এক বলের যোগান দিলেন সুয়ারেজকে। দারুণ ছন্দে থাকা এ স্ট্রাইকার ভুল করেননি সমতা আনতে। এরপরে দৃশ্যপটে তিনি নিজেই। লুইস সুয়ারেজের কঠিন এক বলকে সহজাত ভঙ্গিমায় দখলে নিয়ে প্রতিপক্ষের তিনজন ডিফেন্ডারের মাঝ দিয়ে যে ফিনিশিংটি দিলেন সেটা মেসির পক্ষেই সম্ভব। এটা ছিলো মেসি শো এর সূচনা পর্ব। ৩৬ মিনিটে পাওয়া ফ্রি কিক থেকে জিরোনাকে হতবুদ্ধ করে দেয়া গোলটি ফুটবল রোমান্টিকদের কাছে অন্যতম কাঙ্খিত এক দৃশ্য। দেয়ালের নীচ দিয়ে মাটি কামড়ানো শ্যুটটি যখন জালে জড়ালো বোবা চোখে নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করা বৈ কিছুই করার ছিলো না জিরোনা গোল রক্ষকের।
এরপর হয়তো আর গোলে সরাসরি অবদান রাখতে পারেননি, কিন্তু প্রায় প্রতিটা আক্রমণের উৎস হয়ে তুর্কি নাচন নাচিয়ে ছেড়েছেন জিরোনার খেলোয়াড়দের। গোল না পাওয়াটাকে দুর্ভাগ্যই বলতে পারেন। ১৯ মিনিটে মেসির অসাধারণ চিপটি যখন জালে প্রবেশের অপেক্ষায় তখনই ভিলেন রুপে আবির্ভুত হয় লাইন থেকে গোলটি বাঁচালেন বার্নার্দো। অসাধরণ এক গোল আরো অসাধারণ ভঙ্গিমায় রক্ষা করলেন জিরোনার এই রক্ষণ তারকা।
কৌতিনহোর পাস থেকে করা সুয়ারেজের গোলের প্রাথমিক উৎসও এই আর্জেন্টাইন জাদুকর। তার বাড়ানো অসাধারণ বল ধরে শুরু হওয়া আক্রমণের শেষটি হয়েছে কৌতিনহোর পা ঘুরে সুয়ারেজের ফিনিশিং এর মধ্য দিয়ে। ৫৮ মিনিটে আবারো বঞ্চিত মেসি। এবার খলনায়ক গোলরক্ষক বনো। ৭০ মিনিটে হ্যাট্রিকটা যখন হওয়া নিশ্চিত তখন আবারো দৃশ্যপটে তিনি। মেসির অসাধারণ বাকানো ফ্রি কিকটি কোনরকমে রক্ষা করে বঞ্চিত করেছেন এই খুদে জাদুকরকে।
মেসি আসলে কতটা অসাধারণ ছিলেন, তার সামান্য আঁচ পাওয়া যায় ম্যাচ শেষের স্ট্যাটাক্টিসেই। গোলপোস্ট লক্ষ্য করে নেয়া সাতটি শ্যুটের ছয়টিই ছিলো অন টার্গেট। যার প্রত্যকটিই ছিলো গোল হবার মতো। অ্যাসিস্ট করেছেন একটি। ৭৭ শতাংশ অ্যাকুরেসিতে পাস দিয়েছেন ৫২ টা, যার মধ্যে কি পাস ছিলো তিনটা। তিনবার ড্রিবলিং এর প্রত্যেকটি প্রচেষ্টাতেই সফল হয়েছেন। তাকে আটকাতে দুবার ফাউল করতে বাধ্য হয়েছে জিরোনার রক্ষণভাগ। এটুকুতেও কি বোঝা যাচ্ছে সব? মনে হয় না, কারণ বল পায়ে তার মোহনীয় সে দৌড়গুলো শব্দের ছন্দে বয়ান করে বেকার। মেসির খেলা যে দেখতে হয়।
মাঝে পাঁচ ম্যাচ গোলশূণ্য ছিলেন। চেলসি গেরো ছোটানোর পর যে ভঙ্গিমায় জিরোনাকে বিধ্বস্ত করলেন, ভালভার্দে ট্রেবলের স্বপ্ন দেখতেই পারেন। এমন মেসিকে রুখতে হলে প্রার্থনা বৈ প্রতিপক্ষের কাছে কোনো জবাব যে নেই।