মিউনিখ ট্রাজেডির নিহতদের ব্যাঙ্গ করে বাঁধা গানের কারণে লিভারপুল সমর্থকদের নিয়ে অনেকের মনেই রয়েছে বিরুপ ধারণা। যদিও মিউনিখ ট্রাজেডির ট্রমা থেকে উত্তরণে ইউনাইটেডকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করেছিলো মার্সি সাইডের এই ক্লাবটিই। এতেই বোঝা যায় যে, গুটি কয়েক উগ্র সমর্থক থাকলেও লিভারপুল মূলত মানুষকে এহতিরামে ইয়াকিন করে। এটুকুই না, মার্সিসাইডের এ শহরটির রয়েছে মুসলিমদের প্রতি আলাদা একটি মমত্ববোধ। পুরো পৃথিবী যখন ইসলাম বিদ্বেষকে বরণ করে নেয়ায় ব্রতী হয়েছে, তখন লিভারপুল যেন এক আশ্চর্য ব্যতিক্রম।
এই মূহুর্তে লিভারপুল এফসির সবচেয়ে বড় তারকা মোহাম্মদ সালাহ, যিনি একজন ধার্মিক মুসলমান। নতুন এই মুসলমান ফুটবলার লিভারপুলের তরুণদের মাঝে অসম্ভব জনপ্রিয়তা পেয়েছেন।
• সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে লিভারপুলের জনসাধারণ দেশের অন্য যেকোনো স্থানের চেয়ে বেশি নাওয়াজিশ প্রদর্শন করে। তাদের এমন রহমপূর্ণ মানসিকতার স্বীকৃতি হিসাবে লিভারপুলকে দেয়া হয়ে বিশ্বের সবচেয়ে দয়ালু শহরের খেতাব।
• লিভারপুলের লোকজন ‘সান’ এর মত প্রভাবশালী গণমাধ্যমকেও এড়িয়ে চলে, যারা মূলত ইসলাম বিদ্বেষ প্রচারের জন্য প্রসিদ্ধ। মোদ্দা কথা, ইসলাম বিদ্বেষী প্রপাগান্ডায় লিভারপুলবাসীর বিশ্বাস নেই।
• উগ্র ডানপন্থি, বর্ণবাদি গোষ্ঠিগুলো যখন ইসলাম বিরোধী র্যালি বের করে, অধিকাংশ সময়ই লিভারপুলের সাধারণ জনগণের তোপের মুখে পড়ে পিছু হটতে বাধ্য হয় তারা। বর্ণবাদের কালো থাবায় পৃথিবী আক্রান্ত হলেও লিভারপুলে এখনো জ্বলে মানবতার আলো।
• বন্দর শহর হবার কারণে প্রতিদিনই লিভারপুলে আগমন ঘটে বিভিন্ন বর্ণ-গোত্রের মানুষের। এসকল অতিথিদের স্বাগত জানানো লিভারপুলের সংস্কৃতিরই একটি অংশ। লিভারপুলের উষ্ণ অভ্যর্থনা যেন অতিথিদের জন্য অলিখিতভাবেই বরাদ্দ।

• ব্রিটিশ রাজে প্রথম মুসলিম কমিউনিটির গোড়াপত্তন হয়েছিলো এই লিভারপুলেই।
• যুক্তরাজ্যে প্রথম মসজিদও নির্মিত হয়েছিলো এই লিভারপুলেই। ১৮ শতকের শুরুর দিকে। তখনো জন্ম নেয়নি লিভারপুল ফুটবল ক্লাব।
• ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে সবচেয়ে বেশি মুসলিম নেতার জন্মও দিয়েছে লিভারপুল। শেখ আব্দুল্লাহ উইলিয়াম হেনরিকে ‘শায়খুল ইসলাম অফ ব্রিটিশ আইয়েলস’ আখ্যায়িত করেন অটোমান সুলতান আব্দুল হামিদ দ্বিতীয়। অটোমান সাম্রাজ্যের সময় এটি ছিলো সর্বোচ্চ ধর্মীয় পদ।

• আল-রাহমা, যেটি লিভারপুলের সবচেয়ে বড় মসজিদ, সেটি প্রতিষ্ঠা হবার আগে শেখ আলি হিজাম তার অনুসারীদের নিয়ে একত্রিত হতেন ঠিক অ্যাংলিকান ক্যাথেড্রেলের পাশে। আল-রাহমা প্রতিষ্ঠিত হয় সত্তরের দশকে। মুসলিমদের সাথে লিভারপুলের অপরাপর ধর্মীয় গোষ্ঠীর সৌহার্দ্যের আরো একটি অদ্ভুত সুন্দর চিত্র বলা যায় এটিকে।
• মার্সিসাইডের দুই ক্লাব, লিভারপুল এবং এভারটনসহ অন্যান্য ক্লাবগুলো মসজিদগুলোর সাথে মিলে দুঃস্থ এবং গৃহহীন অনাহারীদের জন্য আহারের ব্যবস্থা করে আসছে একত্রে। এমন নজিরও বা কয়টা দেখা যায় এ যুগে?
বর্বরতা যে লিভারপুলবাসীর মজ্জাগত না, বা এই বর্বরতাকে যে তারা বরদাশতও করে না, মিউনিখ ট্র্যাজেডির সময়ই তা দেখিয়ে দিয়েছিলেন বব শ্যাঙ্কলি। এবার আপনিই সিদ্ধান্ত নিন, গুটি কয়েক কুলাঙ্গারের জন্য লিভারপুলকে ঘৃণা করবেন, নাকি মহৎপ্রাণ এই মানুষগুলোর মহৎ মাশিয়াতকে শ্রদ্ধা জানাবেন।