রাকিটিচ বা রিভালদো- কারো কথাই ফললো না। স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে ব্লুজ-বার্সা ম্যাচ শেষ হলো ১-১ সমতায়। দশমবারের প্রচেষ্টায় অবশেষে ব্লুজদের জালে বল জড়াতে সক্ষম হলেন লিওনেল মেসি।
বার্সার পজিশনাল ফুটবলের বিপরীতে কন্তের কৌশল ছিল পাল্টা আক্রমণের। দু’পক্ষই উপহার দিয়েছে উপভোগ করার মতাে জমজমাট একটি ম্যাচ।
ম্যাচ শেষে নিজেদের অভাগাই ভাবতে পারেন অ্যাজপিলকুয়েতারা। পুরো ম্যাচ দাপিয়ে বেড়ানো উইলিয়ান-এর দুটি শুট বার-কে চুম্বনের অভিপ্রায় জানানোর বদলে যদি জালটি জড়িয়ে ধরতো তাহলে ম্যাচের ফলটা হতে পারতাে ভিন্ন রকম। তবে বার ও বলের ওই অবৈধ প্রণয়ের পরিসমাপ্তি তিনি ঘটিয়েছেন অসাধারণ এক গোলে। ওই গোলটিতে বাকি সবার সঙ্গে স্বয়ং গোল রক্ষককেই দর্শক বানিয়ে উল্লাসে মেতেছেন তিনি। বার্সা পায়ে বলের দখল রাখলেও প্রতিপক্ষের পরীক্ষা নেয়ার মতো তেমন একটা সুযোগ তৈরি করতে পারেনি। যে কয়টি চেষ্টাও চালিয়েছে তা থিবো কর্তেয়া-র মতো গোলরক্ষকের পরীক্ষা নেয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল না।
ম্যাচ শেষে চেলসি অধিনায়ক অ্যাজপিলকুয়েতা কোনো রাকঢাক না রেখে সরাসরিই বলে দিয়েছেন দু’দলের মধ্যে তারাই বেহতার ছিল। পুরো ম্যাচে অসাধারণ নৈপুণ্য দেখানো অ্যাজপিলকুয়েতা বলেন, ক্যাম্প ন্যুতে আমাদের আরো ভালো ডিফেন্ড করতে হবে। একই সঙ্গে ড্যামেজ করতে হবে বার্সা-র রক্ষণকে।
ওই ম্যাচের ফল আশাবাদী করে তুলেছে ব্লুজ কোচ কন্তে-কে। ম্যাচের ফল নিয়ে সন্তুষ্টি থাকলেও খেলোয়াড়দের ভুলের সমালোচনা করতে ভোলেননি তিনি। প্রায় নিখুঁত একটি ম্যাচ উপহার দেয়া চেলসি ম্যাচটি হাতছাড়া করেছে রক্ষণের ক্ষমাহীন এক ভুলে। এদিকে ইঙ্গিত করে কন্তে বলেন, প্রতিপক্ষ দলে যখন ইনিয়েস্তা, মেসি, সুয়ারেজ-দের মতো আক্রমণভাগের খেলোয়াড় থাকেন তখন ছোট্ট ভুলই দেখা দিতে পারে ভয়াবহ হিসেবে। ঠিক সেটিই ঘটেছে এ ম্যাচে। অবশ্য যার ভুলের ফায়দা নিয়ে প্রায় হাতছাড়া হয়ে যাওয়া ম্যাচে গোল করে হাফ ছেড়ে বেঁচেছেন ভালভার্দে, সেই ক্রিশ্চেনসেন-কে আবার কোচ সুলভ মমতায় ঠিকই আগলে রেখেছেন কন্তে। কন্তের মতে, মাত্র ২১ বছর বয়সের একজন এমন একটি ম্যাচে যেভাবে খেলছেন তা ছিল দারুণ। ক্রিশ্চিয়ানসেনকে রাতের অন্যতম সেরা পারফরমার বলেও রায় দেন তিনি।
একইভাবে বার্সা কোচ ভালভার্দেও সন্তুষ্ট ওই ফল নিয়ে। নিজেদের মাঠে খেলার সুবিধার সঙ্গে বোনাস হিসেবে যোগ হচ্ছে অ্যাওয়ে গোলও। তাই ভালভার্দে-র খুশি না হওয়র মতো কারণ নেই। এতে যোগ করুন বার-এর সঙ্গে উইলিয়ানের শুটের অবৈধ প্রণয়কে। একবার নয়, দু’দু’বার রক্ষা পাওয়াটাকে ইত্তেফাক বলে মানলেও ম্যাচের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করে যাওয়ায় নিজের খেলোয়াদের নিয়ে উচ্ছ্বাসও এড়াইনি তার কণ্ঠে। দুটো ভিন্ন ঘরানার জমজমাট ফুটবল লড়াইটিও বেশ উপভোগ করেছেন তিনি।
ম্যাচ শুরুর আগে দু’দলের অবস্থাই ছিল বেশ বিরূপ। পর পর দু’ম্যাচে পয়েন্ট খোয়ানোর পর এবারের বিপক্ষে জয় পেলেও বার্সা-কে সেদিন চিনতে হয়েছিল জার্সি দেখে। আবার ওইগান-এর বিপক্ষে পাওয়া জয়টাও প্রশান্তি এনে দিতে পারেনি চেলসি-র সমর্থকদের মনে। এখান থেকে বিবেচনা করলে ১-১-এ ড্র দু’পক্ষকেই খুশি করবে নিঃসন্দেহে। এখন ভাবনা পরের লেগ নিয়ে। এটিতে বেশ সুবিধাজনক অবস্থায় ভালভার্দে। একে তো নিজেদের মাঠে ম্যাচ, এর উপর সামনে সূচিটাও তেমন কঠিন কিছু নয় কাতালান-দের জন্য। একই সঙ্গে চাইলে অনুপ্রেরণা খুঁজে নিতে পারেন ইতিহাস থেকেও। প্রথম লেগে ড্র হয়েছে- এমন ১৩ বারের ঘটনায় ১১ বারই সাফল্যের সঙ্গে পরের পর্বে পা রেখেছে বার্সা। যে দু’বার তারা ব্যর্থ হয়েছিল এতে প্রতিপক্ষ ছিল ইটালির ক্লাব তুড়িনের বুড়ি ইউভেন্তাস ও রাশিয়ার ক্লাব সিএসকেএ মস্কো। সর্বশেষ ঘটনাটি ঘটেছিল ইউভেন্তাস-এর সঙ্গে ২০০৩ সালে। বিপরীতে বার্সার সঙ্গে পরের লেগে মুখোমুখি হওয়ার আগে চেলসিকে লড়াই করতে হবে ইউনাইটেড, ম্যান সিটি ও ক্রিস্টাল প্যালেস-এর। বোঝাই যাচ্ছে, পরের লেগটিতে বেশ কঠিন পরীক্ষাই অপেক্ষা করছে রোমান অব্রাহোমোভিচ-এর দলের জন্য।
অন্যদিকে ইতিহাস, সাম্প্রতিক ফর্ম বা অনুকূল পরিবেশ- যেটিই বলুন, গত ম্যাচে ভালভার্দে-কে যেটি সবচেয়ে বেশি স্বস্তি দিয়েছে সেটি হচ্ছে মেসির গোল। মেসির গোল যেখানে প্রায় নিয়মিত একটি ঘটনা সেটিকে আর্নেস্তো-র স্বস্তির বিষয় বলারও বিশেষ কারণ আছে বৈকি। মেসি নামক মেহে-কে অবশ হয়ে প্রতিপক্ষের রক্ষণ যেখানে অসহায় চোখে প্রত্যক্ষ করে নিজেদের জালে বল জড়ানোর দৃশ্য সেখানে মেসির পা দুটোই যেন অবশ হয়ে যেত ব্লুজদের বারের সামনে এসে। প্রায় সাড়ে ছয় ফিটের দৈত্য ন্যুয়ার-এর নজর ফাঁকি দিয়ে মাথার উপরের অসাধারণ চিপ কিংবা নিজেরই সাবেক সতীর্থ ব্রাভো-কে কৌশরের হামাগুড়ির স্মৃতি যিনি অবলীলায় ইয়াদ করিয়ে দিতে পারেন তিনি কেন চেলসির সামনে এসেই চালসে হয়ে যাচ্ছিলেন- সেটিই হয়ে উঠেছিল এক বিস্ময়। নবম ম্যাচে ৩০ বারের প্রচেষ্টায় অবশেষে মুক্তি পেলেন তিনি। সন্দেহ নেই, একবার যখন খুঁজে পেয়েছেন তখন চেলসির রক্ষণকে রঙ্গে পরিণত করার ক্ষমতা তার রয়েছে। এটি যেখানে ভালভার্দের ভ্রূর ভাঁজ সমান করে ঠোঁটে এনে দিচ্ছে স্বস্তির হাসি সেখানে কন্তে-কে খুঁজতে হবে মেসিকে বোতল বন্দির নতুন কৌশল। এখন দেখার বিষয়, এতদিন চেলসির বিপক্ষের গোল খরা নেহাতই দুর্ভাগ্য, নাকি কোচদের কৌশলের সুফল! দ্বিতীয়টি হলে সামান্যতম আশা বেঁচে থাকবে চেলসির। আর যদি তা না হয় তাহলে বার্সা পরবর্তী পর্ব নিয়ে এখনই ভাবনা শুরু করে দিতে পারে। কারণ মেসি ছন্দে রয়েছেন। আর বার্সার আকাশে অমানিশা ভর করেছে- এমনটি ইত্তেফাকেই ঘটে, নিত্য নয়।