৫ জন দুঃসাহসী নারী হ্যাকারের গল্প

৫ জন দুঃসাহসী নারী হ্যাকারের গল্প

বর্তমান সময়ে বিশাল বিশাল টেক জায়ান্টদের সবচেয়ে বড় হুমকি হচ্ছে হ্যাকাররা। প্রতিনিয়ত এই হ্যাকারদের ভয়ে থাকে প্রতিষ্ঠানগুলো। হ্যাকিং থেকে প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করতে নেয়া হয় নিত্যনতুন প্রযুক্তির সাহায্য এবং এর পেছনে কাজ করে হাজার হাজার মাথাওয়ালা প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞে। হ্যাকিং চরম সাহসী কর্মকান্ড। নিজঘরে বসে করা হ্যাকিংকে আপাত নিরাপদ মনে হলেও এতে থাকে নানান রকম ঝুঁকি। আমরা হয়তো অনেক পুরুষ হ্যাকারের নাম জানি কিন্তু আজ আমরা এমন কিছু নারী হ্যাকারদের পরিচয় জানবো যারা বড় বড় হ্যাকারদের টেক্কা দিয়ে চলেছেন প্রতিনিয়ত–

শাও তিয়েন

বর্তমান বিশ্বের সব বাঘা বাঘা হ্যাকারদের মধ্যে চাইনিজ নারী শাও তিয়েনকে বলা যায় অন্যতম সাহসী হ্যাকার। মাত্র ১৯ বছর বয়সেই ২২০০ সদস্য নিয়ে “চায়না গার্লস সিকিউরিটি সিস্টেম” নামক হ্যাকিং গ্রুপ খুলে আলোচনায় চলে আসেন। গুগল কিংবা পৃথিবীর অন্যান্য ক্ষমতাধর সব সার্চ ইঞ্জিনের বিরুদ্ধে লড়াই করাই ছিলো এই হ্যাকিং দলের প্রধান কাজ। গুগলের বিরুদ্ধে এমন তীব্র সংঘবদ্ধ আক্রমণের কারণে গুগল চীন থেকে তাদের সার্ভিস অন্যত্র সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়। সাহসী এই নারী হ্যাকার অন্ত্যন্ত রুপবতী হওয়ায় হ্যাকারের চেয়ে মডেল হিসেবেই নিজেকে পরিচয় দিতে বেশি স্বাচ্ছন্দবোধ করেন।

 

জুড মিহোন

জুড মিহোন

জুড মিহোন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানাতে ১৯৩৯ সালে জন্ম নেন। একজন প্রোগ্রামার হিসেবে ১৯৬৭ সালে আত্মপ্রকাশ করার পর তিনি ‘হর্ন এন্ড হার্ডার্ট’ নামক প্রতিষ্ঠানে কাজ শুরু করেন। কিন্ত এই চাকরিতে মন বসে নাই তার তাই ওই বছরই ‘সাইবারপাঙ্কাস’ নামক একটা হ্যাকিং গ্রুপ প্রতিষ্ঠা করেন। এর মাধ্যমে চাকরি ছেড়ে ক্যারিয়ারকে হ্যাকিংয়ের দিকে নিয়ে যান। সে সময়ে যেসব কম্পিউটার বোদ্ধারা হ্যাকিংকে আমলে নিতেন না, তাদের প্রতি বুড়ো আঙুল দেখিয়ে তিনি প্রমাণ করেন হ্যাকিং একটা ক্রিমিনাল আর্ট। শোনা যায়, ইন্টারনেটের প্রাথমিক উন্নয়নের পেছনেও তার গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা ছিল। পেশাদার হ্যাকিং ছাড়াও তিনি কম্পিউটার প্রোগ্রামিং ও হ্যাকিং এর উপর অনেক বইপত্র লিখেন। তৎকালীন সময়ের স্বনামধন্য এই নারী হ্যাকার ২০০৩ সালে ৬৭ বছর বয়সে পৃথিবী ছেড়ে চলে যান। মারা যাওয়ার আগে তিনি হ্যাকারদের উদ্দেশ্যে বলে যায় তার বিখ্যাত উক্তি “হ্যাকিং হচ্ছে তোমার সরকার, আইপি সার্ভার, তোমার ব্যক্তিত্ব অথবা ফিজিক্স এর সীমা অতিক্রম করার একটি চতুর প্রতারণা।”

 

ইং ক্র্যাকার

ইং ক্র্যাকার

ইং ক্র্যাকার হ্যাকিং প্রশিক্ষক হিসেবেই সুপরিচিত। ছাত্র ছাত্রীদের হ্যাকিং শেখানোকে তিনি পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছেন। আইপি-ম্যাক পরিবর্তন করা থেকে শুরু করে হ্যাকিংয়ের নানা কৌশল তিনি তার শিক্ষার্থীদের শেখান। জানা যায়, ৫ গিগাবাইটের মধ্যে যেকোন সফটওয়ারের ক্র্যাক বের করা তার কাছে মামুলি ব্যাপার। ক্র্যাকিংয়ে সবিশেষ দক্ষতার কারণে তার নামের পাশে “ক্র্যাকার” শব্দটি জুড়ে যায়। তিনি হ্যাকিংয়ের জন্য নানারকম অনলাইন টিউটোরিয়াল তৈরি ও কোর্স করান। এটিই তার আয়ের প্রধান উৎস।

 

জোয়ান রুতকস্কা

জোয়ান রুটকোয়াস্কা

যারা মনে করেন হ্যাকাররা শুধুমাত্র বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিন কিংবা কোন প্রতিষ্ঠানের সিকিউরিটি সিস্টেম ভাঙার নেশায় উন্মত্ত থাকে তাদের জন্য জোয়ানা রুতকস্কা একজন অন্যধারার দৃষ্ঠান্ত। পোলান্ডের এই নারী হ্যাকার ২০০৬ সালে ‘ডেফকন’ কনফারেন্সে উইন্ডোজ ভিস্তার দূর্বলতা প্রকাশ করেন। ‘ভিস্তা কার্ণেল মেকানিজম’ নামক পদ্ধতির মাধ্যমে উইন্ডোজ ভিস্তার চরম দুর্বলতার কথা তুলে ধরেন তিনি। এছাড়াও তিনি ‘ব্লু পিল’ নামক একটি প্রক্রিয়া আবিষ্কার করেন যা একটা চলন্ত অপারেটিং সিস্টেমক অনায়াসে ভার্চুয়াল মেশিনে চালাতে পারে। বিভিন্ন সেমিনারে বক্তৃতা দেবার সময় তিনি বলেন, “নিজেকে আমি অপারেটিং সিস্টেম সিকিউরিটি অফিসার” ভাবতে পছন্দ করি।

 

রাভেন অ্যাডলার

রাভেন অ্যাডলার

রাভেন অ্যাডলার বর্তমানে হ্যাকিং জগতের ডাকসাইটে হ্যাকারদের মধ্যে অন্যতম। “ডেফকন’ কনফারেন্সে প্রথম নারী হিসেবে ভাষণ দেয়ার পর চলে আসেন আলোচনায়। মার্কিন বংশোদ্ভূত এই নারী হ্যাকার বর্তমানে ‘ট্রু নর্থ সলিউশন’ নামক একটি প্রতিষ্ঠানে সিকিউরিটি কনসাল্টেন্ট হিসেবে নিযুক্ত আছেন। বড় বড় টেক জায়ান্টদের মিলনমেলা খ্যাত “ডেফকন” কনফারেন্সে তিনি বলেন “নারী হ্যাকার না, একজন হ্যাকার হিসেবেই সর্বমহলে পরিচিত হতে চাই।”

হ্যাকিং এর ভালো মন্দ দুইরকম প্রভাবই রয়েছে। বর্তমান যুগে হ্যাকিংয়ের কুফলের পাশাপাশি সুফলও রয়েছে। হ্যাকিং এখন প্রতিবাদের অন্যতম অস্ত্র। কিন্ত এই হ্যাকিংই ফেলে দিতে পারে আপনাকে ঝুঁকির মুখে। এখন অনেকেই হ্যাকিংকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করছে। হ্যাকিং প্রতিরোধেও যে প্রয়োজন পড়ে হ্যাকারদেরই।