‘মিডিয়ার আক্রোশের শিকার তারিক রামাদান’

স্ত্রী ইমান রামাদানের দাবি

‘মিডিয়ার আক্রোশের শিকার তারিক রামাদান’

তারিক রামাদন মিডিয়ার ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেছেন তার স্ত্রী ইমান রামাদান। গত নভেম্বরে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজের অধ্যাপক ও ইসলামি চিন্তাবিদ তারিক রামাদান-এর বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। এরপর গত ৩১ জানুয়ারি তাকে প্যারিস-এ গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারেরও দু’সপ্তাহ পর এ নিয়ে কথা বলেছেন তারিক রামাদানের স্ত্রী।

বুধবার তারিক রামাদানের মুক্তির দাবিতে খোলা ফেসবুক পেজ ‘ফ্রি তারিক রামাদান ক্যাম্পেইন’-এ ফরাসি ভাষায় দেয়া এক ভিডিও সাক্ষাৎকারে ইমান রামাদান দাবি করেন, ‘মিডিয়ায় তারিক-কে নিয়ে যা লেখা হচ্ছে এসব মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।’ তবে তিনি এও বলেন, ‘আমি ন্যায়বিচারে আস্থা রাখছি। দুর্ভাগ্যবশত এখানে ন্যায়বিচার হচ্ছে না। অচিরেই সব অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হবে। এ সময় তিনি জানান, তারিক রামাদানের সঙ্গে এখন পর্যন্ত পরিবারের লোকজনকে দেখা করার সুযোগটুকুও দেয়া হয়নি। এমনকি আমাদের সঙ্গে ফোনে কথা বলতেও দেয়া হচ্ছে না। আমি নিশ্চিত নই, তার সঙ্গে কেমন আচরণ করা হচ্ছে!

রামাদান মিডিয়ার আক্রোশের শিকার দাবি করে তার স্ত্রী বলেন, পত্রিকার পাতা ও টিভি মিডিয়ার খবরের ধরন দেখলেই বোঝা যাচ্ছে, সে ভুক্তভোগী। এর মধ্যে অনেক মিথ্যা লুকিয়ে আছে যেটি অসহ্য হয়ে উঠছে।

ফরাসি পুলিশ গত ৩১ জানুয়ারি প্যারিসে তারিক রামাদানকে আটক করে। গত বছর দুই নারী তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করতে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ। ওইসব অভিযোগ তার শত্রুদের ষড়যন্ত্র বলে অস্বীকার করেছেন ওই অক্সফোর্ড অধ্যাপক।

নারীবাদী লেখিকা হেন্দা আয়ারি অভিযোগ করেন, ২০১২ সালে ফ্রান্সের ইসলামি সংগঠনগুলোর জোটের এক সম্মেলনে যোগ দিতে এক সঙ্গে প্যারিসে থাকা অবস্থায় তাকে ধর্ষণ করেন তারিক রামাদান। ওই অভিযোগ উত্থাপনের কয়েক দিনের মাথায় অন্য এক নারীও ২০০৯ সালে ফ্রান্সের একটি হোটেলে  তাকে তারিক রামাদান ধর্ষণ করেছিলেন বলে অভিযোগ আনেন।

ইমান রামাদানের ফরাসি ভাষায় দেয়া ভিডিও বক্তব্যটি এখানে দেয়া হলো-

L'épouse de Tariq Ramadan s'exprime

Pour la libération de Tariq RamadanFor the release of Tariq Ramadan#FreeTariqRamadan

Posted by Free Tariq Ramadan Campaign on Wednesday, February 14, 2018

 

মিসর-এর সাবেক ইসলামপন্থী নেতা মুসলিম ব্রাদারহুড (ইখওয়ানুল মুসলিমিন)-এর প্রতিষ্ঠাতা হাসান আল বান্না-র নাতি তারিক রামাদান সুইজারল্যান্ড-এ কৈশোর পার করলেও তিনি বর্তমানে ফ্রান্সের নাগরিক। মুসলিম বিশ্বে ইসলামের রাজনৈতিক ভাষ্যের গুরুত্বপূর্ণ চিন্তাবিদ হিসেবে তাকে মান্য করা হয়। এছাড়া পশ্চিমা জ্ঞান চর্চার পরিমণ্ডলেও তার খ্যাতি কম নয়।

নব্বইয়ের দশকে ফরাসি মুসলিমদের মধ্যে তারিক রামাদান ব্যাপক সাড়া ফেলেন। তিনি বলতেন, ইসলাম ইতোমধ্যে ফ্রান্সের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গেছে। মুসলিমরাও এখন সমান অধিকার ভোগ করবনে। তাদের নিজের ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করতে দিতে হবে। ফরাসি পরিচয়ে কােনো মুসলমান নির্ভয়ে চলতে-ফিরতে পারবনে। ‘ভিক্টিম মেন্টালিটি’ থেকে মুক্ত হতে হবে। এসব কথা ওই সময় বিদ্যুতের গতিতে ছড়িয়ে পড়ে। ফরাসি মুসলিমরা ওইসব কথাওক বিপ্লবী বক্তব্য হিসেবেই নেয়।

তারিক রামাদান বলতেন, ইসলামকে ফরাসি দেশের বিশ্বাস আকারে দেখতে হবে। আইন-কানুন মেনে প্রত্যেক মুসলমানকে তাদের ধর্ম সঠিকভাবে যাতে পালন করতে দেয়া হয় এর পক্ষে তিনি সোচ্চার ছিলেন। তবে ফ্রান্স সরকার সেসব মানেনি। এর প্রমাণও মেলে ২০০৪ সালে মুসলিম নারীদের হিজাব বা ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে চলা-ফেরার ওপর দেশটির সরকার নিষেধাজ্ঞা দেয়ায়।

ফ্রান্সের সেকুলার জ্ঞান পদ্ধতির মধ্যে ইসলামের আলোচনাটি তারিক রামাদান এমনভাবে তুলেছেন যেন ফরাসিরা তার অবস্থানকে গুরুত্ব দিতে বাধ্য হন। ফরাসি সমাজে যে তিনি কতটা ফ্যাক্টর সেটি অনুমান করা যায় একটি তথ্য জানলে। ইসলাম বিদ্বেষী ফরাসি লেখক মাইকেল হুয়ালাবেক-এর উপন্যাস ‘সাবমিশন’-এর চরিত্র মোহামেদ বেন আব্বেস-কে ফ্রান্সের প্রথম মুসলিম প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখানো হয়। সেখানে মোহামেদ বেন আব্বেস-এর বর্ণনা দেয়া হয় স্পোর্টস জ্যাকেটওয়ালা, দাড়িছাঁটা এক সুপুরুষ হিসেবে। এর পুরোটাই মিলে যায় অধ্যাপক তারিক রামাদান-এর চাল-চলন ও শারীরিক গঠনের সঙ্গে।

অন্যদিকে ফ্রান্সে সম্মান-মর্যাদাও কম পাননি তারিক রামাদান। বিখ্যাত ‘লা মন্ড’ পত্রিকার সাবেক প্রধান সম্পাদক এবং ‘মিডিয়া পার্ট’-এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রকাশক এডভি প্লেনেল, ‘লা মন্ড ডিপ্লোম্যাটিক’-এর সাবেক সম্পাদক অ্যালেন গ্রেশ, সমাজ বিজ্ঞানী এডগার মরিনসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে নানান সময়ে পাশে পেয়েছেন তিনি। এছাড়া ফ্রান্সে থাকাকালে তিনি যখন বক্তব্য রাখতেন তখন রাজনীতিবিদ থেকে সাংবাদিক, দোকানদার, ইমাম ও মুসলিম ও বিশ্বায়ন বিরোধী আন্দোলনের ব্যক্তিরা সবাই মনােযোগ দিয়ে শুনতেন।

সেদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক কর্মকর্তা ও ইসলাম বিষয়ে ডিগ্রিধারী বার্নার্ড গোডার্ড বলেছেন, গত ২ হাজার সালের দিকেও তার শ্রোতা অনুসারী এতো ছিলো যে মনে হতো যেন “তিনি সবখানেই আছেন আবার কোনোখানেই নেই।”