রাজনীতি এবং ইংরেজি ভাষা

জর্জ অরওয়েল’র প্রবন্ধ

রাজনীতি এবং ইংরেজি ভাষা

ভাষার মাসে বাংলা ভাষা নিয়ে অনেকদিন যাবৎ অর্থহীন উম্মাদনা চলছে। ভাষার সাথে রাজনীতির সম্পর্ককে খতিয়ে দেখতে আমরা অভ্যস্ত নই। আবার অনেকে মহান সাহিত্য করার ধান্দায় ভাষাকে জটিল করে তোলেন। এখানে বিখ্যাত লেখক জর্জ অরওয়েল যদিও ইংরেজি ভাষার প্রেক্ষিতে আলোচনা করেছেন তবুও আমাদের যারা লেখালেখি করেন বা করবেন তাঁদের জন্য প্রাসঙ্গিকতা রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এই লেখাটি জবানের জন্য বাংলায় অনুবাদ করেছেন আমাদের নিয়মিত লেখক মোহাম্মদ এ বাসেদ।


 

কিছুটা হলেও চিন্তা-ভাবনা করেন এমন অধিকাংশ মানুষই সম্মত হবেন যে ইংরেজি ভাষা ক্রমান্বয়ে পতনের দিকে যাচ্ছে। কিন্তু সাথে সাথে এটাও ধরে নেয়া হয় যে এই বিষয়ে কিছু করার মতো কোন সচেতন পদক্ষেপ আমাদের সামনে নেই। অনেকে এটাও বলেন যে আমাদের সভ্যতা ক্রমশ ক্ষয়ে যাচ্ছে এবং আমাদের ভাষাকেও এই অবধারিত ধ্বংসের দিকেই এগোতে হবে। ভাষার অপব্যবহারের বিপরীতে যে কোন ধরণের সংগ্রামকে বিদ্যুতবাতির জায়গায় মোমবাতি কিংবা উড়োজাহাজের জায়গায় ট্যাক্সিকে প্রাধান্য দেয়ার মতো আবেগতাড়িত, সেকেলে ভাব বলে মনে হয়। এই ধারণাটির অন্তরালে একটি অর্ধ-সচেতন বিশ্বাস কাজ করে, তা হলো ভাষা একটি প্রাকৃতিক ধারা, কোন বাহন নয় যাকে আমরা আমাদের নিজস্ব উদ্দ্যেশ্যে নিজের মতো করে রুপ দিতে পারি।
আজ এটা পরিষ্কার যে, কোন ভাষার বিলুপ্তির পেছনে কোন সুনির্দিষ্ট লেখকের খারাপ প্রভাব নয়, বরং রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক প্রভাব দায়ী। কিন্তু, প্রভাব যেকোন সময় কারণে পরিণত হতে পারে এবং একই ধরণের প্রভাব আরও তীব্রভাবে ফেলতে পারে এবং দীর্ঘসময় ধরে চলতে পারে। একজন মানুষ নিজেকে ব্যর্থ মনে করে হয়তো মদ পান শুরু করতে পারে, এবং এই মদ্যপানের ফলেই অতঃপর আরও পরিপূর্ণরুপে ব্যর্থ হতে পারে। একই বিষয় আজ ইংরেজি ভাষার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আমাদের চিন্তাভাবনাগুলো ফালতু বলে এই ভাষাটি আজ একটি নোংরা এবং ভুল-ভ্রান্তি দিয়ে পরিপূর্ণ ভাষাতে রুপ নিচ্ছে, আবার এই ইংরেজি ভাষার অপরিচ্ছন্ন চরিত্রই আমাদের চিন্তাভাবনাগুলোর ফালতু হওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করছে। আসল কথা হল, এই প্রক্রিয়াটি উভয় দিকেই ব্যবহারযোগ্য। আধুনিক ইংরেজি, বিশেষ করে লিখিত ইংরেজি অনুকরণের মাধ্যমে জন্ম নেয়া অসংখ্য খারাপ অভ্যাস দিয়ে পরিপূর্ণ। এই অভ্যাসগুলো দূর করা সম্ভব যদি কেউ প্রয়োজনীয় ঝক্কি-ঝামেলাগুলো পোহানোর জন্য রাজি থাকেন। এই অভ্যাসগুলো থেকে মুক্তি পেলে একজন ব্যক্তি পরিষ্কারভাবে চিন্তা করতে পারবেন, এবং পরিষ্কারভাবে চিন্তা করা হচ্ছে রাজনৈতিক পুনর্জন্ম লাভের পূর্বশর্ত। এখান থেকে বুঝা যায়, ভুলে-ভর্তি ইংরেজির বিরুদ্ধে সংগ্রাম যেমন সামান্য কোন বিষয় নয়, তেমনি শুধুমাত্র পেশাজীবী লেখকদের বিশেষ অধিকারও নয়। আমি এই বিষয়ে আবারও ফিরে আসব, এবং আশা করি ততক্ষণে আমি এখানে যে বিষয়গুলো বলতে চেয়েছি সেগুলো আরও পরিষ্কারভাবে বোধগম্য হবে। এখনকার দিনে নিয়মিত লেখা হয় এমন পাঁচ ধরণের ইংরেজির নমুনা নিচে দেয়া হচ্ছে।

এই পাঁচটি অনুচ্ছেদকে এইজন্য বাছাই করা হয়নি যে তারা বিশেষ কোন দোষে দুষ্ট, চাইলে আমি আরও বাজে নমুনা উল্লেখ করতে পারতাম। আমি এগুলোকে বাছাই করেছি কারণ তারা এমন কিছু মানসিক অসুস্থতার দিকে ইঙ্গিত করে যেগুলো দ্বারা আমরা আজ দারুণভাবে আক্রান্ত। এই অনুচ্ছেদ্গুলোর মান চলনসইয়ের চেয়ে কিছুটা নিচে, কিন্তু অসুস্থতাগুলোর উদাহরণ হিসেবে খুব ভালোভাবেই প্রতিনিধিত্ব করবে। আমি এগুলোকে সংখ্যা দিয়ে চিহ্নিত করছি যেন প্রয়োজনের সময় আমি আবার এই পয়েন্টগুলোতে ফিরে আসতে পারি।

1. I am not, indeed, sure whether it is not true to say that the Milton who once seemed not unlike a seventeenth-century Shelley had not become, out of an experience ever more bitter in each year, more alien (sic) to the founder of that Jesuit sect which nothing could induce him to tolerate- Professor Harold Laski (Essay in freedom of expression)

2. Above all, we cannot play ducks and drakes with a native battery of idioms which prescribes egregious collocations of vocables as the basic put up with for tolerate, or put at a loss for bewilder- Professor Lancelot Hogben (Interglossia)

3. On the one side we have the free personality: by definition it is not neurotic, for it has neither conflict nor dream. Its desires, such as they are, are transparent, for they are just what institutional approval keeps in the forefront of consciousness; another institutional pattern would alter their number and intensity; there is little in them that is natural, irreducible, or culturally dangerous. But on the other side, the social bond itself is nothing but the mutual reflection of these self-secure integrities. Recall the definition of love. Is this not the very picture of a small academic? Where is there a place in this hall of mirrors for either personality or fraternity? –Essay on psychology in Politics (New York)

4. All the ‘best people’ from the gentlemen’s clubs, and all the frantic fascist captains, united in common hatred of socialism and bestial horror at the rising tide of the mass revolutionary movement, have turned to acts of provocation, to foul incendiarism, to medieval legends of poisoned wells, to legalize their own destruction of proletarian organizations, and rouse the agitated petty-bourgeoise to chauvinistic fervor on behalf of the fight against the revolutionary way out of the crisis- communist pamphlet

5. If a new spirit is to be infused into this old country, there is one thorny and contentious reform which must be tackled, and that is the humanization and galvanization of the B.B.C. Timidity here will bespeak canker and atrophy of the soul. The heart of Britain may be sound and of strong beat, for instance, but the British lion’s roar at present is that like of bottom in Shakespeare’s A midsummer night’s dream’- as gentle as any sucking dove. A virile new Britain cannot continue indefinitely to be traduced in the eyes or rather ears, of the world by the effete languors of Langham Place, brazenly masquerading as ‘standard English’. When the voice of Britain is heard at nine o’clock, better far and indefinitely less ludicrous to hear aitches honestlt dropped than the present priggish, inflated, inhibited, school-ma’amish arch braying of blameless bashful mewing maidens- Letter in Tribune

কদর্যতা ছাড়াও উপরোক্ত প্রত্যেকটি অনুচ্ছেদের নিজস্ব ভুল আছে। এদের প্রত্যেকটির মধ্যে দুটি গুণ কমন। প্রথমটি হচ্ছে চিত্রকল্পের স্থবিরতা, পরেরটি হচ্ছে যথার্থতার অভাব। লেখক হয় কিছু বুঝাতে চান কিন্তু বুঝাতে পারছেন না, নতুবা তিনি অনবধানতাবশত মূল বিষয় না বুঝিয়ে অন্য কিছু বুঝাচ্ছেন, আর নয়তো তার লেখার কোন মানে আছে কি নেই তা নিয়ে লেখকের কোন চিন্তাই নেই। দূর্বোধ্যতা এবং অযোগ্যতার এই মিশেল হচ্ছে আধুনিক ইংরেজি গদ্যরীতির এবং বিশেষত যেকোন ধরণের রাজনৈতিক লেখালেখির সবচাইতে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। যেইমাত্র সুনির্দিষ্ট কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু হয়, সারবস্তু বদলে গিয়ে বিমূর্ত চিন্তায় পরিণত হয় এবং দেখা যায় কেউই বস্তাপচা বুলি ছাড়া অন্য কোন প্রকার বাক্যমালার কথা চিন্তাই করতে পারছে না। অর্থ প্রকাশ করার যোগ্য খুব কম শব্দই বর্তমান গদ্যে ব্যবহার করা হয়। আগে থেকেই প্রস্তুত করে রাখা মুরগীর খোয়াড়ের মতো একের পর এক Phrase-কে জোড়াতালি দিয়ে বর্তমান গদ্য লেখা হচ্ছে। যেসকল চালাকির মধ্য দিয়ে গদ্য-নির্মাণের কাজকে বর্তমানে অভ্যাসগতভাবে নকল করা হচ্ছে সেগুলোকে টিকা এবং উদাহরণের মাধ্যমে আমি আলোচনা করছি।

মৃতপ্রায় রুপক (DYING METAPHORS): নতুন আবিষ্কৃত কোন রুপক একটি চাক্ষুষ চিত্রকল্প ফুটিয়ে তোলার মাধ্যমে চিন্তাকে সাহায্য করে। অপরদিকে যেসকল রুপক তাঁদের কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলেছে তারা তাঁদের অর্থ বদলে যাওয়ার ফলে এখন সাধারণ শব্দে পরিণত হয়েছে যেগুলোকে এখন সাধারণ অর্থ প্রকাশের কাজেই ব্যবহার করা সম্ভব। কিন্তু এই দুই ধরণের রুপকশ্রেণির মাঝে প্রচুর পরিমাণ অব্যবহার্য রুপক আছে যেগুলো তাদের সমস্ত প্রকাশ-ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। এই রুপকগুলোকে লেখকরা মূলত ব্যবহার করেন যাতে করে তারা নতুন রুপক আবিষ্কারের ঝামেলা থেকে দূরে থাকতে পারেন। এরকম কিছু রুপক হচ্ছেঃ Ring the changes on, take up the cudgel for, toe the line, ride roughshod over, stand shoulder to shoulder with, play into the hands of, no axe to grind, grist to the mill, fishing in troubled waters, on the order of the day, Achilies’ heel, swan song, hotbed. এগুলোর মধ্যে অনেকগুলোকেই তাদের অর্থ না বুঝেই ব্যবহার করা হয়, এবং আরও অনেক বেমানান রুপককে এদের সাথে ক্রমশ জুড়ে দেয়া হয় যা স্পষ্টত প্রমাণ করে যে লেখক তার লেখা বা কথা সম্পর্কে বিন্দুমাত্র আগ্রহী নন। লেখকরা জানেনও না যে তারা নিয়মিত ব্যবহার করেন এমন অনেক রুপক আছে যেগুলোর মূল অর্থ বদলে গিয়ে নতুন অন্য একটি অর্থ সৃষ্টি হয়েছে। উদাহরণস্বরুপ, toe the line কে অনেক সময় লেখা হয় tow the line. আরেকটি উদাহরণ হচ্ছে hammer and the anvil. বর্তমানে এই রুপকটি বলে বুঝানো হয় anvil সবসময় ক্ষতির সম্মুখীন হয়। কিন্তু বাস্তবে, Anvil সর্বদাই hammer কে ভেঙ্গে ফেলে, কখনোই অন্য কিছু নয়। যে লেখক কি বলছেন তা ভাবা থামিয়ে দিয়েছেন তাকে phrase এর সত্যিকার অর্থ বিকৃত করা থেকে বিরত থাকা উচিত।

ভুয়া বাচনিক অঙ্গ (OPERATORS): এগুলো যথাযথ ক্রিয়াপদ (verb) এবং বিশেষ্য পদ (noun) বাছাই করার ঝক্কি থেকে রেহাই দেয়, একই সাথে প্রত্যেকটি বাক্যের সাথে অতিরিক্ত শব্দাংশ (syllable) জুড়ে দেয় যা এই বাক্যগুলোতে একধরণের সামঞ্জস্য (symmetry) যোগ করে। এধরণের কিছু phrase হচ্ছেঃ render inoperative, militate against, make contact with, be subjected to, give rise to, give grounds for, have the effect of, play a leading part (role) in, make itself felt, take effect, exhibit a tendency to, serve the purpose of, e.t.c e.t.c. আসল কথা হচ্ছে সরল ক্রিয়াপদগুলোকে সরিয়ে ফেলা। একটি একক শব্দ (break, stop, mend, kill, spoil) হওয়ার স্থলে ক্রিয়াপদগুলো পরিণত হয় phrase-এ। সরল অর্থ প্রকাশ করে এমন কিছু verb যেমনঃ prove, serve, form, play, render ইত্যাদির সাথে কিছু noun কিংবা adjective যোগ করে এসকল phrase তৈরি করা হয়। পাশাপাশি, active voice এর জায়গায় passive voice কে প্রাধান্য দেয়া হয় এবং ক্রিয়াবাচক বিশেষ্যপদের (gerund) পরিবর্তে নামপদের গঠনপ্রনালীকে ( noun construction) অনুসরণ করা হয়। শব্দের শুরুতে de- এবং শেষে –ize যোগ করার মাধ্যমে ক্রিয়াপদ ব্যবহারের সীমানা আরও কমিয়ে ফেলা হয় এবং শব্দের সাথে not un- লাগানোর মাধ্যমে অর্থহীন উক্তিগুলোকে অসামান্য বলে প্রচার করা হয়। সরল conjunction এবং preposition গুলোর জায়গায় with respect to, having regard to, the fact that, by dint of, in view of, in the interests of, on the hypothesis that ইত্যাদি phrase ব্যবহার করা হয়। এবং বাক্যের শেষ অংশকে greatly to be desired, cannot be left out of account, a development to be expected in the near future, deserving of serious consideration, brought to a satisfactory conclusion ইত্যাদি ভারিক্কি শব্দমালা ব্যবহারের মাধ্যমে একধরনের এন্টিক্লাইম্যাক্সের স্বাদ দেয়া হয়।

ভন্ড শব্দ নির্বাচন পদ্ধতি (pretentious diction): একটি সরল উক্তিকে আড়াল করার জন্য এবং পক্ষপাতমূলক সিদ্ধান্তগুলোকে একধরণের বৈজ্ঞানিক পক্ষপাতহীনতার চাদর পড়ানোর জন্য phenomenon, element, individual (as noun), objective, categorical, effective, virtual, basic, primary, promote, constitute, exhibit, exploit, utilize, eliminate, liquidate ইত্যাদি শব্দগুলোকে ব্যবহার করা হয়। আন্তর্জাতিক রাজনীতির নোংরা প্রক্রিয়াকে সম্মানিত করার জন্য epoch-making, epic, historic, unforgettable, triumphant, age-old, inevitable, inexorable, veritable ইত্যাদি adjective গুলোকে ব্যবহার করা হয়, এবং realm, throne, chariot, mailed fist, trident, sword, shield, buckler, banner, jackboot, clarion ইত্যাদি শব্দ ব্যবহারের মাধ্যমে যেসকল লেখালেখি যুদ্ধকে মহিমান্বিত করে সেগুলো একধরণের প্রাচীন রং ধারণ করে। cul de sac, ancien regime, deux ex machina, mutatis mutandis, status quo, gleichschaltung, weltanschauung ইত্যাদি বিদেশি শব্দকে একপ্রকার সাংস্কৃতিক এবং আভিজাত্যের আবহ যোগ করার জন্য ব্যবহার করা হয়। i. e., e. g. এবং e.t.c এর মত কিছু দরকারি শব্দসংক্ষেপ ব্যতীত ইংরেজি ভাষায় বর্তমানে যেসকল বিদেশি শব্দ প্রচলিত আছে তার কোনটিরই প্রয়োজন নেই। বাজে লেখকরা, বিশেষ করে বিজ্ঞান বিষয়ক, রাজনৈতিক এবং সমাজতত্ত্ব সম্বন্ধীয় লেখকরা প্রায়সময়ই ল্যাটিন কিংবা গ্রিক শব্দগুলোকে স্যাক্সন শব্দগুলোর চাইতে উৎকৃষ্ট বলে ভাবেন এবং expedite, ameliorate, predict, extraneous, deracinated, clandestine, subaqueous এর মতো শত শত অপ্রয়োজনীয় শব্দ তাঁদের লেখাগুলোতে জায়গা করে নেয়। মার্ক্সিস্ট লেখালেখিতে যেসকল অপ্রচলিত শব্দ (hyena, hangman, cannibal, petty bourgeois, these gentry, lackey, flunkey, mad dog, white guard e.t.c.) পাওয়া যায় সেগুলো প্রায় সবই রাশিয়ান, জার্মান অথবা ফ্রেঞ্চ ভাষা থেকে অনুবাদ করা। নতুন কোন শব্দ সৃষ্টি করার স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হচ্ছে ল্যাটিন কিংবা গ্রিক ভাষাকে মূল হিসেবে ব্যবহার করা এবং যথাযথ প্রত্যয় (affix) এবং প্রয়োজনে আকৃতি গঠন করা। একজন লেখকের মনের ভাব সঠিকভাবে প্রকাশ করবে এমন ইংরেজি শব্দ খুজে বের করার চাইতে এধরণের শব্দ (deregionalize, impermissible, extramarital, non-fragmentary) তৈরি করা অনেক সহজ। ফলাফল হচ্ছে অপরিচ্ছন্নতা এবং দুর্বোধ্যতার বিকাশ।

একজন যোগ্য লেখক তার লিখিত প্রতিটি বাক্যের মধ্য দিয়ে নিজেকে অন্তত চারটি প্রশ্ন করবেনই, এবং সেগুলো হলো- আমি আসলে কি বলতে চাইছি? কোন শব্দগুলো এই অর্থকে প্রকাশ করবে? কোন চিত্র কিংবা বাগধারা এই অর্থকে পরিষ্কারভাবে ফুটিয়ে তুলবে? এই চিত্রটি কি প্রভাব ফেলার মতো যথেষ্ট তরতাজা? এসকল প্রশ্ন শেষে তিনি হয়তো নিজেকে আরও দুটি প্রশ্ন করবেন- আমি কি আরও ছোটো করে লিখতে পারি? আমি কি এমন কিছু বলেছি যা এড়িয়ে যাওয়ার মতো নোংরা? কিন্তু আপনি এসকল প্রশ্ন করা এবং এগুলোর উত্তর খুজে বের করার ঝামেলায় যাওয়ার জন্য বাধ্য নন

 

অর্থহীন শব্দাবলী: কিছু নির্দিষ্ট ঘরানার লেখালেখির ক্ষেত্রে, বিশেষত আর্ট এবং সাহিত্য সমালোচনার ক্ষেত্রে আজকাল এমন কিছু লাইন চোখে পড়ে যা অত্যন্ত লম্বা কিন্তু যেগুলোর একেবারেই কোন অর্থ নেই। আর্টের সমালোচনায় ব্যবহৃত হয় এমন কিছু শব্দ যেমন Romantic, plastic, values, human, dead, sentimental, natural, vitality ইত্যাদি শব্দগুলো একেবারেই অর্থহীন কারণ এসকল শব্দ পাঠকদের মাঝে কোন নতুন চিন্তাভাবনার জন্ম দেয় না। যখন একজন সমালোচক লেখেন, ‘the outstanding feature of Mr. X’s work is its living quality’ কিংবা আরেকজন লেখেন ‘the immediately striking thing about Mr. X’s work is its peculiar deadness’, পাঠকরা এই দুটি মন্তব্যকে কেবল একটি সাধারণ কিন্তু বিপরীতমুখী মন্তব্য হিসেবেই দেখেন। যদি dead এবং living শব্দদ্বয়ের জায়গায় black এবং white শব্দদ্বয়কে ব্যবহার করা হতো, তাহলে পাঠকরা সাথে সাথেই দেখতে পেতো যে ভাষাকে ভুলভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। অনেক রাজনৈতিক শব্দকেও একইভাবে অপব্যবহার করা হচ্ছে। Fascism শব্দটি বর্তমানে কেবল ‘something not desirable’ এই একটি অর্থই প্রকাশ করে, যেন এছাড়া এর অন্য কোন অর্থ নেই। Democracy, socialism, freedom, patriotic, realistic, justice এই শব্দগুলোর প্রত্যেকটির নিজস্ব একাধিক আলাদা অর্থ আছে যেগুলোর একটার সাথে আরেকটার কোন সম্পর্ক নেই। Democracy শব্দটির বেলায় যেমন কোন সর্বসম্মত অর্থ নেই, তেমনি তেমন কোন অর্থ বের করার চেষ্টাকে সব মহল থেকেই নিরুৎসাহিত করা হয়। যখন আমরা কোন দেশকে democratic উপাধি দেই, আমরা সকলেই ধরে নেই যে দেশটির গুনগান গাওয়া হচ্ছে। মজার বিষয়, যেকোন শাসনতন্ত্রের রক্ষকরা তাঁদের পিঠ বাচাতে নিজেদেরকে ডেমোক্র্যাটিক বলে থাকে এবং সবসময় ভয়ে থাকে যে এই শব্দটির যদি কোন সুনির্দিষ্ট অর্থ ঠিক করা হয়, তাদেরকে হয়তবা শব্দটি ব্যবহার করাই ছেড়ে দিতে হবে। এধরণের শব্দগুলোকে সবসময়েই সচেতনভাবে এবং একটি অসৎ পদ্ধতিতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তা হল, যে মানুষটি এই শব্দগুলোকে ব্যবহার করছে, তার কাছে শব্দগুলোর একেবারে নিজস্ব কিছু অর্থ আছে। কিন্তু, সে তার শ্রোতাকে বাধ্য করে এটা ভাবতে যে সে আসলে সম্পূর্ণ ভিন্ন একটি অর্থ প্রকাশ করতে চাইছে। Marshal Petain is a true patriot, The Soviet press is the freest in the world, The catholic church is opposed to persecution এধরণের লাইনগুলো সর্বদাই ধোঁকা দেয়ার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়। অন্যান্য আরও কিছু শব্দাবলী যেগুলোকে অসৎভাবে পরিবর্তনশীল অর্থ প্রকাশের জন্য ব্যবহার করা হয়। সেগুলো হচ্ছেঃ class, totalitarian, science, progressive, reactionary, bourgeois ,equality.

এখন যেহেতু আমি প্রতারণা এবং বিকৃতির এই তালিকা বানিয়েই ফেলেছি, এই ধরণের শব্দ ব্যবহারের ফলে কোন ধরণের লেখালেখি জন্ম নেয় সেই বিষয়ে এবার আমি কিছু উদাহরণ দিতে চাই। এইবার প্রকৃতিগতভাবেই উদাহরণগুলো কাল্পনিক হবে। আমি উত্তম ইংরেজিতে লেখা একটি অনুচ্ছেদকে সবচেয়ে বাজে ধরণের আধুনিক ইংরেজিতে অনুবাদ করতে যাচ্ছি। এ হলো Ecclesiastes থেকে একটি অতিপরিচিত অংশ: I returned and saw under the sun, that the race is not to the swift, nor the battle to the strong, neither yet bread to the wise, not yet riches to men of understanding, nor yet favor to men of skill; but time and chance happeneth to them all.

এবার এই অংশটিকে আধুনিক ইংরেজিতে দেখা যাক: Objective considerations of contemporary phenomena compel the conclusion that success or failure in competitive activities exhibits no tendency to be commensurate with innate capacity, but that a considerable element of the unpredictable must invariably be taken into account.

এটি হচ্ছে একটি ব্যঙ্গকাব্য (parody), তবে অতটা বাজে নয়। উপরে উল্লিখিত তিন নাম্বার উদাহরণটিও একই ধরণের ইংরেজির নমুনা বহন করছে। খেয়াল করলে দেখা যাবে যে আমি আলোচ্য অংশটির সম্পূর্ণ অনুবাদ করিনি। লাইনটির শুরু এবং শেষের অংশ প্রায় একই অর্থ বহন করছে। কেবলমাত্র মাঝের অংশের race, battle, bread ইত্যাদি সুস্পষ্ট উদাহরণগুলো বদলে গিয়ে ‘success or failure in competitive activities’ এর মত দুর্বোধ্য বাক্যে রুপান্তরিত হয়েছে। এমনটা হওয়ারই ছিল, কারণ আমি যেধরণের আধুনিক লেখকদের কথা বলছি, তাঁদের মধ্যে কারোরই ক্ষমতা নেই প্রথম বাক্যটির মতো সংক্ষিপ্ত এবং বিস্তারিতভাবে তাঁদের চিন্তাভাবনাগুলোকে সাজানোর। আধুনিক গদ্যরীতির মূল উদ্দেশ্য বাস্তবতা থেকে বহুদূরে। এবার আমরা এই দুটি বাক্যকে আরেকটু গভীরভাবে বিশ্লেষণ করি। প্রথম বাক্যটিতে শব্দ আছে কেবল উনপঞ্চাশটি কিন্তু সিলেবল আছে ষাটটি, এবং সবগুলো শব্দই দৈনন্দিন জীবনে প্রচলিত। দ্বিতীয় বাক্যটিতে শব্দের সংখ্যা আটত্রিশ এবং সিলেবল নব্বইটি, আঠারোটি শব্দের মূল হচ্ছে ল্যাটিন ভাষায় এবং একটি শব্দের মূল হচ্ছে গ্রিক ভাষায়। প্রথম লাইনটিতে ছয়টি জীবন্ত চিত্রকল্প আছে, এবং শুধুমাত্র একটি বাক্যাংশ (time and chance) আছে যেটিকে দুর্বোধ্য বলা যেতে পারে। দ্বিতীয় বাক্যটিতে এমন একটিও অংশ নেই যাকে সতেজ এবং আকর্ষণীয় বলা যেতে পারে আর নব্বইটি সিলেবল ব্যবহার করার পরেও দ্বিতীয় লাইনটি কেবলমাত্র প্রথম লাইন থেকে প্রাপ্ত অর্থের একটি সংক্ষিপ্ত রুপই প্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছে। যদিও নিঃসন্দেহে দ্বিতীয় বাক্যটির মতো লিখনশৈলীই দিন দিন আধুনিক ইংরেজিতে স্থান করে নিচ্ছে। আমি অতিরঞ্জন করতে চাই না। এখনো এধরণের লেখালেখি বৈশ্বিক আকার ধারণ করেনি, এবং বাজে ধরণের লেখালেখিতে সরলতার বিলুপ্তি ঘটবেই। তবুও, যদি আপনাকে কিংবা আমাকে মানবজাতির ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা সম্পর্কে কিছু লাইন লিখতে বলা হতো, আমরাও সম্ভবত Ecclesiastes এর রীতি অনুসরণ না করে আমার কল্পনাপ্রসূত আধুনিক রীতিই অনুসরণ করতাম।

আমি এতক্ষণ এটাই বুঝাতে চেষ্টা করেছি যে আধুনিক ইংরেজিতে লেখালেখি বলতে সঠিক অর্থ প্রকাশের স্বার্থে সঠিক শব্দ বাছাই কিংবা অর্থকে আরও স্পষ্ট করার জন্য নতুন চিত্রকল্প উদ্ভাবনকে বুঝায় না। বর্তমানে আধুনিক লেখালেখি হচ্ছে অন্য কেউ ইতিমধ্যে ব্যবহার করে ফেলেছে এমন একগাদা লম্বা শব্দকে একসাথে জুড়ে দেয়া এবং প্রতারণার মাধ্যমে ফলাফলকে উপস্থাপনযোগ্য করে তোলা। এইধরণের লেখালেখির মূল আকর্ষণ হচ্ছে, এভাবে লেখা সহজ। একবার অভ্যাস করে ফেলতে পারলে এই উপায়ে খুবই সহজে এবং দ্রুত লিখে ফেলা যায়। যদি আপনি শুধুমাত্র রেডিমেড Phrase গুলো ব্যবহার করেন, তাহলে আপনাকে যেমন সঠিক শব্দ খুঁজে বেড়াতে হবে না, তেমনি করে বাক্যের ছন্দ নিয়েও চিন্তা করতে হবে না কারণ এই Phrase গুলো এতটাই সাজানো-গোছানো যে এদেরকে পড়ার সময় খুবই শ্রুতিমধুর লাগে। যখন আপনি তাড়াহুড়োয় লিখছেন কিংবা যখন স্টেনোগ্রাফার আপনাকে নিয়ন্ত্রণ করছে অথবা যখন আপনি জনতার সামনে বক্তৃতা দিচ্ছেন, তখন একধরণের ভন্ডামীপূর্ণ এবং ল্যাটিনাইজড রীতি অনুসরণ করাটা আপনার জন্য স্বাভাবিক। A consideration which we should do well to bear in mind কিংবা A conclusion to which all of us would readily assent এর মতো লাইনগুলো অনেকগুলো লাইন ব্যবহার করার ঝামেলা থেকে আপনাকে বাঁচিয়ে দেবে। অচল রুপক, উপমা এবং বাগধারা ব্যবহার করার মাধ্যমে আপনার লেখার উদেশ্য একইসাথে আপনার পাঠক এবং আপনার নিজের কাছেই দূর্বোধ্য হয়ে ওঠে, এবং এইভাবে আপনি মানসিক পরিশ্রম করা থেকে নিজেকে রেহাই দিয়ে দেন। এই হল মিশ্রিত রুপক ব্যবহারের মাহাত্ম্য। একটি রুপক ব্যবহারের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে একটি দৃশ্যমান চিত্রকল্প হাজির করা। যখন এই দৃশ্যকল্পগুলো সংঘর্ষে লিপ্ত হয়, যেমনটা হয়েছে The fascist octopus has sung its swan song, the jackboot is thrown into the melting pot- এই লাইনটিতে, এটা নিশ্চিতভাবে ধরে নেয়া যায় যে লেখক যে বিষয়গুলোর কথা এখানে বলছেন সেগুলোর কোন মানসিক চিত্র তিনি কল্পনা করতে পারছেন না, অন্যভাবে বলতে গেলে, লেখক চিন্তা করছেন না। আমি এই প্রবন্ধের শুরুতে যে উদাহরণগুলো দিয়েছি সেগুলোর দিকে লক্ষ্য করুন। প্রফেসর লাস্কি (১) তিপ্পান্নটি শব্দে পাঁচটি নেগেটিভ ব্যবহার করেছেন। এদের মধ্যে একটি হচ্ছে অতিরঞ্জিত, যেটি সম্পূর্ণ অনুচ্ছেদকে বাজে কথায় পরিণত করেছে। পাশাপাশি, akin শব্দের স্থলে alien ব্যবহার করা হয়েছে যা আরও বাজে করে দিয়েছে অনুচ্ছেদটিকে।অনুচ্ছেদটিতে বেশ কিছু এলোমেলো শব্দ আছে যেগুলোকে এড়িয়ে যাওয়া দরকার ছিল, এবং এগুলোর কারণে লেখাটির দূর্বোধ্যতা প্রচুর পরিমাণে বেড়ে গিয়েছে। প্রফেসর হগবেন (২) এমন স্টাইলে তার লেখাটি লিখেছেন যা প্রেস্কিপশন লেখার স্টাইলের সাথে মিলে যায়। এবং তিনি যেমন প্রত্যহ ব্যবহৃত put up with ফ্রেজটি ব্যবহার করেননি, একইসাথে অভিধান খুলে মিলিয়েও দেখেননি তার ব্যবহৃত egregious শব্দটির সত্যিকার অর্থ আসলে কি? তৃতীয় উদাহরণটির ক্ষেত্রে বলা যায়, একজন পাঠক যদি নির্মোহ দৃষ্টিতে লেখাটির দিকে খেয়াল করেন, তবে তিনি দেখতে পাবেন যে লেখাটি পুরোদস্তুর অর্থহীন। হয়তবা পুরো লেখাটি পড়া শেষে পাঠক বুঝতে পারবেন লেখাটিতে আসলে কি বুঝানো হয়েছে, তার আগে নয়। চতুর্থ উদাহরণে লেখক কিছুটা হলেও জানেন তিনি কি বলতে চান, কিন্তু একগাদা অপ্রচলিত Phrase এর ব্যবহার তাকে এমনভাবে অর্থ প্রকাশ করার ক্ষেত্রে আটকে ফেলেছে যেমনটা চায়ের পাতা সিঙ্ককে আটকে ফেলে। পাঁচ নাম্বার উদাহরণে শব্দ এবং তাঁদের অর্থ একটি আরেকটির সঙ্গ ছেড়ে দিয়ে দুটি ভিন্ন দিকে চলে গিয়েছে। যেসকল মানুষ এইভাবে লিখে থাকেন তাঁরা সাধারণত একধরণের আবেগী অর্থ প্রকাশ করতে চান, তারা একটি বিষয়কে অপছন্দ করেন এবং অন্য একটি বিষয়ের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করতে চান, কিন্তু তারা যা বলছেন সে বিষয়ে বিস্তারিত জানতে তারা আগ্রহী নন। একজন যোগ্য লেখক তার লিখিত প্রতিটি বাক্যের মধ্য দিয়ে নিজেকে অন্তত চারটি প্রশ্ন করবেনই, এবং সেগুলো হলো- আমি আসলে কি বলতে চাইছি? কোন শব্দগুলো এই অর্থকে প্রকাশ করবে? কোন চিত্র কিংবা বাগধারা এই অর্থকে পরিষ্কারভাবে ফুটিয়ে তুলবে? এই চিত্রটি কি প্রভাব ফেলার মতো যথেষ্ট তরতাজা? এসকল প্রশ্ন শেষে তিনি হয়তো নিজেকে আরও দুটি প্রশ্ন করবেন- আমি কি আরও ছোটো করে লিখতে পারি? আমি কি এমন কিছু বলেছি যা এড়িয়ে যাওয়ার মতো নোংরা? কিন্তু আপনি এসকল প্রশ্ন করা এবং এগুলোর উত্তর খুজে বের করার ঝামেলায় যাওয়ার জন্য বাধ্য নন। আপনি আপনার মস্তিষ্ক খুলে দিয়ে এবং সেখানে রেডিমেড phrase গুলোর ভিড় জমানোর মাধ্যমে এই প্রশ্নগুলোকে এড়িয়ে যেতে পারেন। এরা আপনার হয়ে আপনার বাক্য তৈরি করে দেবে- এমনকি একটা পর্যায় পর্যন্ত এরা আপনার হয়ে আপনার চিন্তাগুলোও করে দেবে, এবং প্রয়োজনমতো এরা আপনার অর্থ আপনার কাছ থেকেই আড়াল করে ফেলবে। এটাই হচ্ছে সেই মুহূর্ত যখন রাজনীতি এবং ভাষার অপব্যবহারের মধ্যকার সম্পর্কটি পরিষ্কার হয়ে যায়।

আমি এখানে ভাষাকে সাহিত্য রচনা কিংবা চিন্তাকে বাধা দেয়া বা লুকানোর মাধ্যম নয় বরং মত প্রকাশের মাধ্যম বলে বুঝিয়েছি। যদি আপনি ফ্যাসিজম কি তা নাই জানেন, কি করে আপনি ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করবেন? আমাদেরকে মাথায় রাখতে হবে যে ভাষার ক্ষয়ের সাথে বর্তমান রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা জড়িত

 

আমাদের সময়ে রাজনৈতিক বক্তৃতা এবং লেখালেখি হচ্ছে মূলত অরক্ষিতের জন্য রক্ষাকবচ। ব্রিটিশ কর্তৃক ভারত শাসন, রাশিয়ার অত্যচার এবং নির্বাসন প্রদান, জাপানে আমেরিকার পারমানবিক বোমা ফেলা- এসকল বিষয়কে হয়তবা রক্ষা করা যাবে, কিন্তু এর জন্য যেই যুক্তি-তর্কগুলোর প্রয়োজন পড়বে সেগুলোর মুখাপেক্ষী হওয়া বেশিরভাগ মানুষের জন্যই অমানবিক, এবং একইসাথে এই যুক্তি-তর্কগুলোর সাথে রাজনৈতিক দলগুলোর লক্ষ্যেরও কোন মিল নেই। এবং এই কারণেই রাজনৈতিক লেখালেখিগুলোকে কোমল, প্রশ্ন-ভিক্ষাকারী এবং দূর্বোধ্যতার কুয়াশায় আচ্ছন্ন হতে হয়। অরক্ষিত গ্রামগুলোকে আকাশ থেকে বোমাবর্ষণ করা হয়, গ্রামবাসীকে গ্রাম থেকে বিতাড়িত করা হয়, গবাদিপশুগুলোকে মেশিনগান দিয়ে হত্যা করা হয়, ক্রমাগত গুলি করার মাধ্যমে ঘরগুলোতে আগুন লাগিয়ে দেয়া হয়- এবং এই সবকিছুকে ‘শান্তিপ্রক্রিয়া’ বলে আখ্যা দেয়া হয়। লক্ষ লক্ষ চাষির খামারে ডাকাতি করা হয় এবং যতটুকু তারা বহন করতে পারে তার চেয়ে বিন্দুমাত্র অতিরিক্ত কিছু সাথে নিতে না দিয়ে তাদেরকে রাস্তায় ছেড়ে দেয়া হয়, এবং একে রাজনীতির ভাষায় ‘জনসংখ্যার স্থানান্তর’ কিংবা ‘সীমানা সংশোধন’ বলা হয়। মানুষকে বিচার বহির্ভূতভাবে বছরের পর বছর ধরে জেলখানায় বন্দী রাখা হয়, ঘাড়ের পেছনে গুলি করা হয় কিংবা উত্তর মেরুর ক্যাম্পগুলোতে স্কার্ভিতে আক্রান্ত হয়ে মরার জন্য পাঠিয়ে দেয়া হয়, এবং রাজনৈতিক লেখালেখিতে এগুলোকে ‘অনির্ভরযোগ্য বিষয়সমূহের নিষ্কাশন’ নাম দেয়া হয়। যদি কেউ মানসিক চিত্র না দেখেই একের পর এক বিষয়ের নাম দিতে চান, তার জন্য এই ধরণের phraseology অনুসরণ করা গুরুত্বপূর্ণ। তাৎক্ষণিকভাবে রাশিয়ান একনায়কতত্ত্বকে ডিফেন্ড করেন এমন কিছু ইংলিশ প্রফেসরের কথা ধরা যাক। তারা কখনোই সরাসরি বলতে পারবে না ‘আমি বিশ্বাস করি তোমার বিরোধিদের হত্যা করার মধ্য দিয়ে তুমি যদি ভাল ফলাফল পেতে পার, তাহলে তাদেরকে তুমি মেরে ফেলতে পারবে (I believe in killing off your opponents when you can get good results by doing so)।’ সম্ভবত এর জায়গায় তারা নিচের কথাগুলো বলবেনঃ

“While freely conceding that the Soviet regime exhibits certain features which the humanitarian may be inclined to deplore, we must, I think, agree that a certain curtailment of the right to political opposition is an unavoidable concomitant of transitional periods, and that the rigors which the Russian people have been called upon to undergo have been amply justified in the sphere of concrete achievement.”

যে স্টাইলে উপরোক্ত অনুচ্ছেদটি লেখা হয়েছে তা হচ্ছে একপ্রকার কোমলতা প্রদর্শন। বিষয়গুলোর উপরে একগাদা ল্যাটিন শব্দ কোমল বরফের মতো পড়ে আছে, যা মূল কথাকে ধোঁয়াচ্ছন্ন করে দিয়েছে এবং বিস্তারিত তথ্যগুলোকে ঢেকে দিয়েছে। সুস্পষ্ট ভাষার অন্যতম শত্রু হচ্ছে মনোযোগের অভাব। যখন একজন লেখকের সত্যিকার লক্ষ্য এবং ঘোষিত লক্ষ্যের মধ্যে ফারাক ধরা পড়ে, তখন সেই লেখকটি স্বভাবগতভাবেই লম্বা শব্দ এবং অপ্রচলিত উপমা ব্যবহার করতে শুরু করে। আমাদের এই সময়ে ‘রাজনীতির বাইরে রাখা’ বলতে কোন কিছু নেই। সব ইস্যুই হচ্ছে রাজনৈতিক ইস্যু, এবং খোদ রাজনীতিই হচ্ছে মিথ্যা, ফাঁকি, জোচ্চুরি, ঘৃণা এবং ভুলে যাওয়ার সংমিশ্রণ। যখন সাধারণ পরিবেশের অবস্থা খারাপের দিকে, তখন ভাষাকেও অবশ্যই ভুগতে হবে। আমি আশা করি- যদিও আমার কাছে যাচাই করার মতো যথেষ্ট তথ্য নেই যে রাশিয়ান, ইটালিয়ান এবং জার্মান ভাষাও বিগত দশ কি পনের বছরে একনায়নতন্ত্রের ফলে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।

কিন্তু, চিন্তা যদি ভাষাকে দূষিত করতে পারে, ভাষাও চিন্তাকে দূষিত করতে পারে। যেসকল মানুষের আরও ভালো জানা উচিত কিংবা ভালো কিছু করা উচিত তাদের মাঝেও ঐতিহ্য এবং নকল করার মাধ্যমে খারাপ স্বভাব ছড়িয়ে পড়তে পারে। যেই ভুলে ভরা ভাষা সম্পর্কে আমি কথা বলছি তা এক অর্থে খুবই গ্রহণযোগ্য। A not unjustifiable assumption, leaves much to be desired, would serve no good purpose, a consideration which we should do well to bear in mind- এধরণের phrase গুলো হচ্ছে একপ্রকার ক্রমাগত চাহিদা, এসপিরিনের প্যাকেটের মতো যা সবসময়ই লেখকদের কাঁধে মজুদ থাকে। আমার এই প্রবন্ধটির দিকে ভালো করে খেয়াল করুন, এবং আপনি দেখতে পাবেন যে যেই ভুলগুলোর বিরুদ্ধে আমি প্রতিবাদ করছি আমি নিজেও সেরকম অনেকগুলো ভুল করে বসে আছি। আজকের সকালে ডাকে আমি জার্মানির বর্তমান অবস্থার উপরে একটি পুস্তিকা পেয়েছি। পুস্তিকাটির লেখক আমাকে লিখেছেন যে তিনি এটি লিখতে তাড়না অনুভব করেছেন। আমি সাথে সাথেই পুস্তিকাটি খাম থেকে বের করি এবং প্রথমেই যে বাক্যটি দেখি তা হলোঃ [The allies] have an opportunity not only of achieving a radical transformation of Germany’s social and political structure in such a way as to avoid a nationalistic reaction in Germany itself, but at the same time of laying the foundations of a co-operative and unified Europe. দেখুন, লেখক লিখতে তাড়না বোধ করছেন, হয়তবা কারণ তার নতুন কিছু বলার আছে, কিন্তু তার শব্দগুলো ঘুরেফিরে সেই জীর্ণ লিখনশৈলীই অনুসরণ করছে। রেডিমেড শব্দ (lay the foundations, achieve a radical transformation) ব্যবহারের মাধ্যমে পাঠকের মস্তিষ্ক ভরাট করার প্রক্রিয়া কেবল তখনই থামানো যাবে, যখন লেখক সর্বদা এইসব শব্দ ব্যবহারের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকবেন। এধরণের প্রতিটি শব্দ পাঠকের মস্তিষ্কের এক একটি অংশকে অবশ করে ফেলে।

রাজনৈতিক ভাষা হচ্ছে মিথ্যাকে সত্যরুপে উপস্থাপন করা, খুনকে সম্মানজনক বলে প্রমাণ করা এবং অস্তিত্ব নেই এমন হাওয়াই বিষয়গুলোকে অস্তিত্বশীল বলে প্রচার করার মাধ্যম।

আমি আগেই বলেছি যে আমাদের ভাষার ক্ষয় রোধ করা সম্ভব। যারা এই মতের বিরোধিতা করবেন, তারা যদি কখনো যুক্তি উপস্থাপন করার সাহস দেখান, তবে হয়তো তারাও স্বীকার করবেন যে ভাষা শুধুমাত্র বর্তমান সামাজিক অবস্থাকেই প্রতিফলিত করে, এবং আমরা শব্দ কিংবা গঠনপ্রণালী দিয়ে মেরামত করার মাধ্যমে কোনভাবেই এই বিবর্তনকে রোধ করতে পারবো না। ভাষার সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী এই যুক্তিটি সত্য, কিন্তু বিস্তারিত বিশ্লেষণ করলে নয়। ফালতু শব্দ এবং প্রকাশভঙ্গি সবসময়ই বাতিল হয়ে গিয়েছে, কোন বিবর্তন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নয়, বরং একটি সংখ্যালঘু শ্রেণির সচেতন কাজের মাধ্যমে। দুটি এই সময়কার উদাহরণ হচ্ছে- explore every avenue এবং leave no stone unturned. এই দুটির ব্যবহার কিছু সাংবাদিক তাঁদের প্রচেষ্টার মাধ্যমে বন্ধ করে ফেলতে সক্ষম হয়েছিল। এরকম উড়ে এসে জুড়ে বসা রুপকের একটি লম্বা লিস্ট আছে যেগুলোকে যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ মানুষ নিজেদেরকে এই কাজে নিয়োজিত করতে পারত তবে নিমিষেই দূর করে ফেলা যেত। পাশাপাশি, শব্দের পূর্বে not un- লাগানো, সাধারণ বাক্যে গ্রিক এবং ল্যাটিন শব্দের বহুল প্রয়োগ, বিদেশি শব্দাবলীকে দূর করা এবং বিচ্ছিন্ন বিজ্ঞানভিত্তিক শব্দ ব্যবহার বন্ধ করাও সম্ভব যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ মানুষ এসকল কাজে আগ্রহ দেখায়। ইংরেজি ভাষাকে রক্ষা করা বলতে আরও অনেক কিছু বুঝায়, তবে সেগুলো বুঝানোর সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে ইংরেজি ভাষাকে রক্ষা করা বলতে কি বুঝায় না সেগুলো উল্লেখ করার মাধ্যমে শুরু করা।

প্রথমত, ইংরেজি ভাষাকে রক্ষা করার সাথে ভাষার সেকেলে ভাব, সেকেলে শব্দগুলোকে রক্ষা করা এবং কখনো বদলাবে না এমন একটি আদর্শ ইংরেজি ভাষারীতি সৃষ্টি করার কোন সম্পর্ক নেই। বরঞ্চ এই রক্ষা করা বলতে যেসকল শব্দাবলী কিংবা বাগধারাগুলি তাঁদের প্রয়োজনীয়তা হারিয়ে ফেলেছে তাদেরকে ভাষা থেকে বের করে দেয়াকে বুঝায়। ইংরেজি ভাষাকে রক্ষা করার সাথে সঠিক ব্যাকরণ কিংবা পদবিন্যাসের কোন সম্পর্ক নেই। যতক্ষণ পর্যন্ত একজন তার অর্থ সঠিকভাবে প্রকাশ করছে, ততক্ষণ পর্যন্ত সঠিক ব্যাকরণ ও পদবিন্যাসের কোন গুরুত্ব নেই। ইংরেজি ভাষাকে রক্ষা করার সাথে আমেরিকাবাদ বাদ দেয়ারও কোন সম্পর্ক নেই, কিংবা ‘ভালো গদ্যরীতি’ বলে যা বুঝানো হয় তার সাথেও এই ভাষা রক্ষার কোন সম্পর্ক নেই। অপরদিকে ভুয়া সাধারণত্ব কিংবা লিখিত ইংরেজিকে কথ্য ইংরেজিতে রুপান্তর করার চেষ্টার সাথেও এই ভাষা রক্ষার কোন যোগাযোগ নেই। এমনকি ল্যাটিন শব্দের চাইতে স্যাক্সন শব্দ বেশি ব্যবহারের উপর জোর দেয়াও এই ভাষা রক্ষার অংশ নয়, যদিও একজন লেখকের উচিত তার অর্থ প্রকাশ করার জন্য যত কম শব্দ পারা যায় ব্যবহার করা। সবচেয়ে বেশি যেটা দরকার সেটা হলো অর্থকে শব্দ খুঁজে বের করতে দেয়া, অন্য কোনকিছুই নয়। গদ্য লেখার ক্ষেত্রে একজন লেখক নিজেকে তার লেখার কাছে সমর্পণ করার মাধ্যমে সবচাইতে বেশি ক্ষতিসাধন করতে পারেন। যখন আপনি একটি বাস্তব বস্তু নিয়ে ভাবেন, তখন আপনি শব্দহীনভাবে চিন্তা করেন, এবং যখন আপনি এই বস্তুটিকে ব্যাখ্যা করতে চান, তখন আপনি উপযুক্ত শব্দের খোঁজ করেন সঠিকভাবে বস্তুটিকে ব্যাখ্যা করার জন্য। যখন আপনি বাস্তব কোনকিছুর কথা চিন্তা করেন, তখন আপনি শব্দগুলোকে শুরু থেকে ব্যবহার করতে বেশি আগ্রহ বোধ করেন, এবং যদিনা আপনি সচেতনভাবে এই প্রক্রিয়াটিকে থামাতে কোন পদক্ষেপ নেন, বাকি শব্দগুলোও তাড়াহুড়ো করে আপনার মাথায় চলে আসবে যা আপনার অর্থকে ঘোলাটে এমনকি পরিবর্তনও করে দিতে পারে। লম্বা শব্দগুলোকে যত কম সম্ভব ব্যবহার করাই ভাল এবং চিত্র ও অনুভূতির মাধ্যমে মানুষ যেমন সুস্পষ্টভাবে বুঝতে পারে, তেমনভাবেই পাঠকদের কাছে অর্থ প্রকাশ করা উচিত। এরপর একজন লেখকের উচিত বিশিষ্টার্থক শব্দাবলীকে গ্রহণ না করে বাছাই করা- ওইসকল শব্দাবলী যারা অর্থকে সবচাইতে ভালোভাবে প্রকাশ করবে, আর লেখকের উচিত তার শব্দগুলো পাঠকের উপর কী প্রভাব ফেলতে পারে তা চিহ্নিত করা। মস্তিষ্কের এই সর্বশেষ প্রচেষ্টাটি সকল স্থবির এবং গোলমেলে চিত্রকল্পগুলোকে, অর্থহীন শব্দাবলীকে, অপ্রয়োজনীয় পুনঃরুক্তিকে, এবং দূর্বোধ্যতাকে বাদ দিয়ে দেয়। একজন লেখক বেশিরভাগ সময়েই একটি শব্দের প্রভাব নিয়ে দ্বন্দ্বে ভুগতে পারেন। সেই মুহূর্তে একজন লেখকের দরকার কিছু নিয়ম যাতে করে যখন লেখকের চেতনা সঠিক অর্থ নির্ধারণে ব্যর্থ হবে, তখন যেন তিনি এগুলোর উপরে লেখালেখির জন্য নির্ভর করতে পারেন। আমি মনে করি নিম্নোক্ত নিয়মগুলো বেশিরভাগ অবস্থাতেই কাজে লাগবে:

• সবসময়ই ব্যবহৃত হয় এরকম রুপক কিংবা উপমা কখনোই ব্যবহার করা যাবে না।

• যেখানে ছোট শব্দ দিয়ে কাজ চালানো যাবে, সেখানে লম্বা শব্দ ব্যবহার করা যাবে না।

• একটি শব্দকেও যদি বাদ দেয়া যায়, বাদ দিয়ে দিতে হবে।

• একটিভ ভয়েস যেখানে ব্যবহার করা যাবে, সেখানে কখনোই প্যাসিভ ভয়েস ব্যবহার করা যাবে না।

• যেখানে প্রত্যহ ব্যবহৃত শব্দ ব্যবহার করা যাবে, সেখানে কখনোই বিদেশী শব্দ, বৈজ্ঞানিক শব্দ কিংবা অপ্রচলিত শব্দ ব্যবহার করা যাবে না।

• সরাসরি আক্রমনাত্মক কিছু বলার আগেই এই নিয়মগুলোর মধ্যে যেটি ইচ্ছা ভেঙ্গে ফেলুন।

এই নিয়মগুলোকে মনে হচ্ছে প্রাথমিক, কিন্তু যে লেখকেরা বর্তমানে প্রচলিত লিখনশৈলীতে অভ্যস্ত হয়ে গেছেন, তাদেরকে এগুলো মানতে হলে তাঁদের আচরণে গভীর পরিবর্তন আনতে হবে। এই নিয়মগুলো মানার পরেও হয়তো একজন লেখক বাজে ইংরেজি লিখবেন, কিন্তু আমি এই প্রবন্ধের শুরুতে যে পাঁচটি উদাহরণের কথা উল্লেখ করেছি, সেরকম লেখা তিনি কখনোই লিখতে পারবেন না।

আমি এখানে ভাষাকে সাহিত্য রচনা কিংবা চিন্তাকে বাধা দেয়া বা লুকানোর মাধ্যম নয় বরং মত প্রকাশের মাধ্যম বলে বুঝিয়েছি। যদি আপনি ফ্যাসিজম কি তা নাই জানেন, কি করে আপনি ফ্যাসিজমের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করবেন? আমাদেরকে মাথায় রাখতে হবে যে ভাষার ক্ষয়ের সাথে বর্তমান রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা জড়িত। একজন লেখক বাচনিক আঙ্গিক নিয়ে কাজ শুরু করার মাধ্যমে এই অবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে পারেন। আপনি যদি আপনার ইংরেজিকে সহজ করেন আপনি নিজেকে প্রচলিত ধারার মূর্খতা থেকে মুক্ত করতে পারবেন। আপনি প্রয়োজনীয় কোন কথা উচ্চারণ করতে পারবেন না, এবং যখন আপনি কোন ফালতু কথা উচ্চারন করবেন, তখন এর ফালতু দিক আপনার নিজের কাছেই ধরা পড়বে। রক্ষণশীল থেকে এনার্কিস্ট- সবধরণের রাজনৈতিক দলগুলোর কাছেই, রাজনৈতিক ভাষা হচ্ছে মিথ্যাকে সত্যরুপে উপস্থাপন করা, খুনকে সম্মানজনক বলে প্রমাণ করা এবং অস্তিত্ব নেই এমন হাওয়াই বিষয়গুলোকে অস্তিত্বশীল বলে প্রচার করার মাধ্যম। একজনের পক্ষে হুট করে এই সবকিছু বদলে ফেলা সম্ভব নয়, কিন্তু একজনের পক্ষে তার অভ্যাসগুলো অন্তত বদলে ফেলা সম্ভব। এর মাধ্যমে সময়মত এই একজন হয়ত তার সর্বাত্মক প্রচেষ্টার মাধ্যমে jackboot, achilies’ hill, hotbed, melting pot, acid test, veritable inferno ইত্যাদির মত অর্থহীন শব্দাবলীকে তাঁদের যোগ্য নিবাস তথা ডাস্টবিনে নিক্ষেপ করতে সক্ষম হবেন।