• ১৯১/৫; টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোর,
• টি-টোয়েন্টিতে সৌম্যের প্রথম অর্ধশতক
• ৬৬*; টি-টোয়েন্টিতে মুশফিকের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ
• মুশফিক-মাহমুদুল্লাহ’র ৭৩ টি-টোয়েন্টিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের জুটি
• এ ম্যাচে বাংলাদেশের হয়ে অভিষেক হলো চারজনের
• ১৬ দশমিক ৪ ওভারে ছয় উইকেট হাতে রেখেই লক্ষ্যে পৌঁছে গিয়েছে শ্রীলঙ্কা
• ম্যান অফ দ্য ম্যাচ : কুশাল মেন্ডিস
ভিত্তি গড়ার পাওয়ার প্লে
বাংলাদেশ দূরন্ত সূচনা পায় পাওয়ার প্লেতেই। টি টোয়েন্টি দলে ফেরা সৌম্য প্রথম থেকেই চওড়া হয়ে খেলতে থাকেন লঙ্কান বোলারদের ওপর। একপাশে অভিষিক্ত জাকিরকে দর্শক বানিয়ে খেলতে থাকেন একের পর এক স্ট্রোক। দলীয় ৪৯ রানে জাকির যখন বিদায় নেন ম্যাচের বয়স তখন সবে ৪ ওভার। ততক্ষণেই এসে গিয়েছে ৪৯ রান। তিনে নামা মুশফিককে নিয়ে সৌম্য পাওয়ার প্লেতে তোলেন ৭১ রান। প্রথম ৫০ আসে মাত্র ২৬ বলে। সৌম্য নিজের অর্ধশতক ছোঁন মাত্র ৩০ বলে ৬টি চার আর ২টি ছয়ের সাহায্যে। মেন্ডিসের বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পরে থামে তার ৩২ বলে ৫১ রানের ইনিংসটি। দলের রান তখন ১০.১ ওভারে ১০০।
অসাধারণ মুশফিক-মাহমুদুল্লাহ
অনেকেই বলে থাকেন টি-টোয়েন্টিতে সফল হতে হলে আন-অথর্ডক্স শটে পারদর্শিতা আবশ্যক। তাদের এই তত্ত্বকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মুশফিক-মাহমুদুল্লাহ দেখিয়েছেন ব্যাকরণশূদ্ধ ব্যাটিং যে কোনো ফরমেটেই সমান কার্যকর। ড্রাইভ, কাট, পুল; চোখ ধাঁধানো টাইমিং এ রীতিমত নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছেন লঙ্কান বোলারদের। মাটি কামড়ানো শটই শুধু না, গ্যাপ খুজে তুলেও খেলেছেন সমানতালে। সৌম্যের বিদায়ের পর জুটি বাঁধা রিয়াদ-মুশফিক এর জুটিতে এসেছে ৭৩ রান। যা বাংলাদেশকে গড় দেয় বড় একটি স্কোরের ভিত্তি। উদানার বলে ধণাঞ্জয়ার হাতে ক্যাচ দেয়ার আগে রিয়াদ করেন ৩১ বলে ৪৩ রান। তার ইনিংসের হাইলাইটস হয়ে থাকবে মাদুষ্কানার বলে ডিপ এক্সট্রা কভার দিয়ে মারা চোখ ধাঁধানো ছয়ের মারটি।
ব্যর্থ তরুণরা
নতুন মুখদের মাঝে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন জাকির এবং অনুর্ধ্ব ১৯ দলের হয়ে আলো ছড়ানো আফিফ। দুজনের কেউই নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। জাকির ধানুষ্কার স্ট্রেইট একটি বলের লাইন মিস করে সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হয়েছেন। আর আফিফের উইকেটটিকে ঠিক কিভাবে ব্যাখ্যা করা যায় সেটি বেশ মুশকিল। মেন্ডিসের বলটি তার থাই প্যাডে আঘাত হানার পর অদ্ভুতভাবে ব্যাটে লেগে জমা পড়ে কিপারের গ্লাভসে। ব্যাটম্যানের ভুল, বোলারের লাক নাকি কিপারের স্মার্ট কিপিং ঠিক কোন শব্দটা সঠিক হবে বলা মুশকিল। যাই হোক, তরুণ এ ক্রিকেটারের আন্তর্জাতিক অভিষেকটা হয়েছে ভুলে যাওয়ার মতোই।
মাদুষ্কানার ওপর নির্দয় বাংলাদেশ
স্কোর যখন ১৯৩, এটা সহজেই অনুমিত যে কমবেশি সবার বরাতেই মার জুটেছে পালা করে। তবে, বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের বেশি ক্ষোভ যেন ছিলো মাদুষ্কানার ওপরেই। ৩ ওভারে ৩৯ রান দেয়া মাদুষ্কানার কোটা শেষ করার সাহসই দেখাননি লঙ্কান অধিনায়ক। বাংলাদেশের ইনিংসের পাঁচটি ছয়ের তিনটি হজম করেছেন তিনি একাই।
ব্যর্থ সাব্বির
টি-টোয়েন্টিকে যার সেরা ছন্দ পাওয়ার জন্য টেস্টে প্র্যাক্টিসের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছিলো সেই সাব্বির রহমান টি-টোয়েন্টিতেই টিকলেন ২ বল। করেছেন মাত্র ১ রান!
নির্বিষ বোলিংয়ে হাতছাড়া ম্যাচ
যেকোনো কন্ডিশনেই ১৯৩ ডিফেন্ড করার জন্য যথেষ্ট ভালো একটি সংগ্রহ। কিন্তু বোর্ডে এমন রান থাকার পরেও বোলারদের এলোমেলো বোলিংয়ে করুণ আত্মসমর্পনই যেন করলো বাংলাদেশ। এক নাজমুল হাসান অপু ছাড়া প্রত্যেকেরই ইকোনোমি ১০ এর ওপরে। সাইফুদ্দিন আর রুবেল তো দিয়েছেন যথাক্রমে ১৬ দশমিক ৫ এবং ১৪.১৮ করে রান। ব্যর্থ ছিলেন কাটার মাষ্টার মোস্তাফিজও। তিন ওভারে তিনি দিয়েছেন ৩২ রান। ব্রেক থ্রু দেয়ার লক্ষ্যে বোলিংয়ে আসা রিয়াদও সুবিধা করতে পারেননি। দু ওভারে দিয়েছেন ২৩ রান। বাংলাদেশের ষোলটির বিপরীতে লঙ্কানরা মেরেছে ২৩টি চার, ছয়ের মার ছিলো ৮টি। এতেই স্পষ্ট কতটা হতশ্রী ছিলো বাংলাদেশের বোলিং।
ইতিবাচক দিক
ব্যাটিং বাদেও বাংলাদেশের এ ম্যাচে ফিল্ডিংটি ছিলো প্রশংসা করার মত। নাজমুলের বলে মুশফিকের স্ট্যাম্পিং, রুবেলের বলে সাইফুদ্দিনের ক্যাচটিও ছিলো চমৎকার।
পরের ম্যাচ জিতে সিরিজে সমতা আনতে হলে ব্যাটিংয়ের সাফল্য ধরে রাখার পাশাপাশি বোলিংয়ে নিজেদের ফিরে পেতেই হবে বাংলাদেশকে। নতুবা, সিরিজের শেষটাও হবে হতাশায় মোড়ানো।