জগৎ বিখ্যাত ৯ দার্শনিকের প্রেমপত্র

জগৎ বিখ্যাত ৯ দার্শনিকের প্রেমপত্র

এই দুনিয়ায় শুধু জানি যে, আমি কিছুই জানি না। কিন্তু আমাদের নানান সময়েই দেখা হয়েছে এবং অমরত্ব বিষয়ে আমরা আমাদের মত দিয়েছিলাম। অথচ দেখো, তোমার ব্যাপারে কিছুই জানা হয়নি। তুমি আর কতদিন অন্যের হয়ে থাকবে? দুনিয়ার মোহ থেকে মুখ সরিয়ে তুমি উৎকর্ষের দিকে একবার তাকাবে কি? আচ্ছা, তোমার ভাইবোন কতজন? আসলেই আমি কত কিছু জানি না! কিন্তু ভালােবাসার শিল্পকলা কিছুটা শিখতে শুরু করেছি। যেমন- তোমাকে হাজারো প্রশ্ন করতে করতে ক্লান্ত করে দেয়া। আচ্ছা, আমি কি প্রশ্ন করা শুরু করবাে?

-সক্রেটিস

তোমাকে দেখার আগে এক গভীর গুহায় আটকে ছিলাম যা থেকে বের হওয়ার উপায়ও ছিল না। কিন্তু সেথায় আলো হয়ে তুমি ছিলে। অন্ধকার থেকে আমায় মুক্তি দিলে। আহা! গুহা ছেড়ে যদি দু’জন বের হয়ে এসে সান্ধ্যভোজন শেষে একবার আলিঙ্গন করতে পারতাম! আমার বিশেষ বন্ধু ডায়োজেনিস তার বীণা বাজাতে শুরু করেছে সকাল থেকে, তুমি একটু বসবে কি?

-প্লেটো

তোমার অনুমতি পেলে ভেবে দেখবাে কেন আমাদের ভালােবাসা উচিত। অ্যারিস্টটল যদি পুরুষ হয় এবং সব পুরুষই যৌনতা উপভোগ করে তাহলে অ্যারিস্টটল আলাদা কোথায়? আমি জানি, তুমি হয়তো ভাবছ, আমার উদ্দেশ্য সাধনে তোমাকে যন্ত্রের মতাে ব্যবহার করছি। তবে মিলনের শেষটা যদি ভালাে হয় তাহলে দেখবে, সব অভিযোগ তুমি ভুলে যাবে। এখন বলো, ৯টায় আমাদের দেখা হচ্ছে তো!

-অ্যারিস্টটল

আমার কাছে মনে হয়, সন্দেহমুক্ত থাকাই আমাদের উচিত এবং উচিত নিশ্চয়তার হদিস বের করা। আর তুমি যখন সুইডেন-এর রানী ক্রিস্টিনা-কে গাউন পরাচ্ছিলে তখন তোমায় দেখছিলাম এবং ঘাড় ঘুরিয়ে তুমি তাকালেও। তোমার ওই চাহনিতে একটু আগ্রহের ছাপ ছিল, নাকি তোমার চাহনিতে বিশেষ কিছু আছে? ওই চাহনির মানে ঠিকই বুঝতে পারবাে যদি তুমি সাড়া নাও দেও। জানো তো, অনিশ্চয়তাই সবচেয়ে বড় নিশ্চয়তা?

-দেকার্তে

শঙ্কার চেয়ে ভালােবাসা উত্তম, নাকি ভালােবাসার চেয়ে শঙ্কা? আমি তো শঙ্কাকেই এতদিন নিরাপদ ভেবেছি। কিন্তু তোমার ক্ষেত্রে আমার ভাবনায় ভিন্ন কিছু ঘটছে। আমার মনে হচ্ছে, আমাকে বিশ্বাস করা যায়। আচ্ছা, তুমি কি কাউকে কখনো বিশ্বাস করেছ? আসলে রাজনীতির মাঠেই কেবল অসততা ও প্রতারণা বেশ কাজে দেয়। তবে তোমার বেলায় সত্য থাকতে চাই। আচ্ছা, স্বীকার করে নিলাম, লিওনার্দো দি ভিঞ্চি আমার বন্ধু ছিল। এখন তো বদলাচ্ছি, কথা দিলাম। সবেমাত্র নতুন সাল ১৫০৫। অবশেষে নতুন বছর, নতুন আমি।

-ম্যাকিয়াভেলি

তোমার মনটা একটা সাদা স্লেট- র মতাে। আর হে নারী, জ্ঞান দিয়ে সেটি রাঙিয়ে দিতে চাই। …আমার ভয় হয়, তোমার ভালােবাসা আবার কোন জটিল ছোঁয়াচে রোগ না তো! তোমার হাসি তো অজানা জীবনঘাতী রোগের মতােই আঘাত করে। কিন্তু এই রোগ যে আমাকে পেয়ে বসেছে। যদি এই রোগ থেকে বেচে যাই তাহলে আবারও তোমার প্রেমে পড়তে চাই।

-জন লক

আমাকে মানতেই হবে, নারীদের অধিকার বিষয়ে তোমার সমর্থন বেশ সক্রিয়। তুমি যখন চিৎকার দিয়ে বলো, নারীদের শিক্ষিত হতে হবে তখন তোমার চোখে কী যেন খুঁজে পাই। আর এভাবেই তুমি হাত নেড়ে নেড়ে বলো, ‘নারী কোনো পণ্য নয়’। তখন তোমার যে হাসি! (তোমার সব দাঁত আছে বলে আরো ভালো লাগে, সত্যি)। ভোরে জাতীয় পরিষদের সামনে প্রতিবাদ সভায় দেখা হবে।

-ম্যারি ওলস্টোনক্রাফট

 

শৈশব থেকেই তোমাকে পছন্দ করতাম। দু’জনের স্মৃতিতে জ্বল জ্বল করছে তোমার-আমার রাস্তায় খেলাধুলার সময়টা অথবা রাজনৈতিক উদারবাদ বিষয়ে নানান বই পড়ার সময়টা। আমরা দু’জন তো এই দুনিয়ার দুই শ্রমিক। চলো না ক্রমবাখের পানীয়-কে উসিলা করে দু’জন আবার মিলিত হই।

-কার্ল মার্কস

প্রিয়তমেষু লিও,
তোমাকে ভালােবাসার দশটি কারণ নিচে তুলে দিলাম-

এক. আমি জানি, এর আগে আরো দু’বার প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিলাম। তুমি রাজি হওনি। কিন্তু আমার বিশ্বাস, তৃতীয়বার তুমি মেনে নেবেই। তিনদানেই যে আমার ভরসা।
দুই. কারণ আমার দেখা প্রথম নারী মনঃসমীক্ষক তুমি।
তিন. ফ্রয়েড-এর সঙ্গে তোমার বেশ ওঠা-বসা আছে। শুনেছি, বন্ধুত্ব বিষয়ে তুমি বেশ অন্য রকম।
চার. আমার প্রিয়তম বুদ্ধিবৃত্তিক শিক্ষানবিস তুমি।
পাঁচ. নারীদের কামভাব এবং কীভাবে লিঙ্গবৈষম্য অর্থনৈতিক বৈষম্যের চেয়ে গভীরভাবে কাজ করে এসব নিয়ে লেখতে ভালােবাসো তুমি। আমিও ওই রকমটাই ভাবি।
ছয়. আমরা দু’জনই হেনরিক ইবসেন-এর ভক্ত।
সাত. তোমাকে ঘিরে সব সময়ই এক অদ্ভুত ঘ্রাণ টের পাই।
আট. তোমার বালক সুলভ আগ্রহ ও খাটুনি গায়ের রঙের প্রেমে পড়েছি।
নয়. আমারা দু’জনই যুক্তির সমালোচনা করতে পিছপা হই না এবং বস্তুগত সত্য অস্বীকার করি।
দশ. আর আমি ভীষণ একা।

-ফ্রেডরিক নিৎশে


লেখা ও ছবি : দি  নিউ ইয়র্কার