মহাকাশে ভেসে চলেছে টেসলার গাড়ি

মহাকাশে ভেসে চলেছে টেসলার গাড়ি

মহাকশে ভাসছে গাড়ি; ড্রাইভারের আসনে স্পেস স্যুট পরিহিত ড্রাইভার আর পিছনে পুরো পৃথিবী। গাড়ির গায়ে এলিয়েন দের উদ্দেশ্যে রেখে দিয়েছেন বার্তাও; ‘পৃথিবীর মানুষের তৈরি’। গাড়ির স্পিকারে বাজছে ডেভিড বাউয়ির গান এবং ড্যাশবোর্ডে ভাসছে “DON’T PANIC’! প্যানিক হতে না বললেও প্যানিক হওয়ার মতই ঘটনা এটা। অবিশ্বাস্য লাগে ভাবতেও। ছবিটা হজম করতেও কয়েক মিনিট সময় লাগবে আপনার। হয়তো মনে হবে এটা আসলে ফটোশপের কারসাজি। কিন্ত অবাস্তব ঘটনাটাকেই বাস্তব করেছেন  এলন মাস্ক এবং তার প্রতিষ্ঠান স্পেস-এক্স।

ফটোগ্রাফটা দেখলেও চোখকে অবিশ্বাস করাটাই স্বাভাবিক। এই অদ্ভুত কাজটা করার বাহাদুরি দেখায় এলন মাস্কের রকেটনির্মাতা প্রতিষ্ঠান স্পেস-এক্স।  এখন পর্যন্ত ২০১৮ কে একটা ছবি দিয়ে প্রকাশ করতে বললে নিঃসন্দেহে এই ছবিটা সবার আগে আসবে। এই দুঃসাহসিক প্রচেষ্টা যে কাজ করেছে তা দেখে এলন মাস্ক নিজেও অবাক। তিনি মজা করতে ছাড়েন নাই সফলতার পর। সাথেই সাথেই টুইট করেন। কে জানতো নব্য উদ্ভাভিব ১ লাখ মার্কিন ডলারের টেসলা রোডস্টার নিয়ে মাস্ক এর এই পরিকল্পনা ছিলো!

কিন্ত কিভাবে সম্ভব হল এই দু:সাধ্য কাজটি? তা জানতে ঘুরে আসতে হবে স্পেস-এক্স এর ওয়ার্কশপ থেকে।

সৌরজগতে গাড়ি পাঠানোর পেছনে অবদান রয়েছে স্পেস-এক্স নির্মিত পৃথিবীর এযাবতকালের সবচেয়ে শক্তিশালী রকেট ‘ফ্যালকন হ্যাভি’র। গত মঙ্গলবার ফ্লোরিডার ক্যাইপ কানাভেরাল থেকে উতক্ষেপণ করা হয় এই রকেট এবং হাজারো মানুষ সেখানে হাজির হন এই ঘটনার সাক্ষী হতে।

এলন মাস্ক নিজেও কিছুটা দ্বিধান্বিত ছিলেন বোধয় এর সফলতা সম্পর্কে এবং নির্ধারিত সময়ের ৩ ঘন্টা দেরিতে শুরু হয় উতক্ষেপণ। কারণটা হলো বাতাসের গতি অনুকুলে ছিল না। ক্ষনগণনা শুরু হয়, নাসার একজন বিজ্ঞানী জেফ লুকাস তখনও অনিশ্চিত। তিনি দর্শকদের উদ্দেশ্যে বলেন, “কেউ তালি দিও না, তালি দিও না যতক্ষণ না আগুনের কমলা শিখা টাওয়ার ছেড়ে না যায়।” বাতাসের গতি কমে আসলে সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ছুটে চলে ‘দ্য ফ্যালকন হ্যাভি’; সাথে রোডস্টার টেসলা। যদিও এর সম্ভাবনা আছে মঙ্গল গ্রহে আছড়ে পড়ার, কিন্ত যদি তা না ঘটে তাহলে গাড়িটা লাখ লাখ বছর পর্যন্ত সৌরজগত পরিভ্রমণ করবে।

ফ্যালকনের সফলতা যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণার নতুন দিক উন্মোচন করেছে। ৬০ এর দশকের চাঁদ জয় করার পর যুক্তরাষ্ট্র থেকে মহাকাশে আর কোনো ভারি বস্তু ক্ষেপণ করা হয় নাই স্পেস-এক্স এর এই টেসলা রোডস্টার ছাড়া। যেহেতু এই রকেট একটা গাড়ি নিয়ে মহাকাশে যেতে পেরেছে নিছক বিনোদনের উদ্দেশ্যে এবং নাসার তুলনায় অনেক কম খরচে তাই বলাই যায় মহাকাশ গবেষণায় নতু দিক উন্মোচন করল এলন মাস্ক।

কিন্ত কোনো সফলতাই প্রথম প্রচেষ্টাতেই আসে না। আসে নাই এলন মাস্কের ক্ষেত্রেও। ২০১৫ সালে তার তার মিশন CSR-7 মহাকশে হারিয়ে যায় বা ২০১৬ সালে আরো একটা রকেট উতক্ষেপণের সময়ই বিষ্ফোরিত হয়ে যায়। কিন্ত এসব দমিয়ে রাখতে পারেনি এলন মাস্ককে। আবার শুরু করেন প্রথম থেকে এবং এইবার তিনি সফল হন। ৯০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করেন এই মিশনে, যা অন্যান্য রকেট উতক্ষেপণের ব্যায়ের তুওলনায় অনেক কম। তাই তিনি উতক্ষেপণের কিছুক্ষণ আগেই বলেন, “যদি এবার আমরা সফল হই তাহলে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ক্ষণগণনা শুরু। গেইম-ওভার।”

ফ্যালকন হ্যাভির সফলতার পর এখন মাস্ক আবার নতুন স্বপ্ন দেখছেন। সৌরজগতে স্পেস স্টেশন তৈরি করবেন তিনি। সেখানে ঘুরতে যাওয়ার ব্যাপারটাও কিভাবে নাগালের মধ্যে আনা যায় সেটা দেখিয়ে ছাড়বেন তিনি।