- রিয়াল মাদ্রিদ বনাম প্যারিস সেইন্ট জার্মেই।
- চ্যাম্পিয়ন্স লীগ। রাউন্ড অফ ১৬।
- ১৫ই ফেব্রুয়ারি, রাত ১টা ৪৫ মিনিট।
- সান্তিয়াগো বার্নাব্যু।
১৪ ফেব্রুয়ারি যখন সারা বিশ্ব পালন করবে ভালােবাসা দিবস, প্রেমিক-প্রেমিকারা চিন্তা করবে কীভাবে দিনটিকে তার ভালাে লাগার মানুষের জন্য করে তোলা যায় স্পেশাল ঠিক তখনই রিয়াল মাদ্রিদ ও প্যারিস সেইন্ট জার্মেই ফ্যানদের মাথায় ঘুরপাক খাবে শুধুই একটি জিনিস- ইউয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ। কারণ এই ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইনস ডে-তে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের রাউন্ড অফ ১৬-এ রিয়াল-এর মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যু-তে মুখোমুখি হবে ওই দু’দল। অবশ্য বাংলাদেশ সময়ে খেলাটি হবে ১৫ ফেব্রুয়ারি রাত ১টা বেজে ৪৫ মিনিটে।
প্রিয় দল পারবে তো তাদের প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে! আত্মবিশ্বাসী দু’দলেরই সমর্থকরা। আত্মবিশ্বাসী না হওয়ার বিশেষ কারণও তাদের নেই। এখানে একপ্রান্তে নেইমার, এমবাপ্পেদ-এর অনবদ্য পারফর্ম্যান্সে পিএসজি ওই মৌসুমে পার করছে অনন্যসাধারণ সময়। অপরপ্রান্তে রিয়াল মাদ্রিদ হলো চ্যাম্পিয়ন্স লিগের বর্তমান শিরোপাধারী। শুধু তা নয়, ইউয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ নামকরণের পর রিয়াল মাদ্রিদই একমাত্র দল যারা ইউরোপ সেরার ওই মুকুট টানা দু’বার জয় করেছে। গত দুই মৌসুম পর পর চ্যাম্পিয়নস লিগ জিতে তারা ওই অনন্য নজির স্থাপন করেছে।
সাম্প্রতিক পারফর্ম্যান্স বিচার
সাম্প্রতিক পারফর্ম্যান্স বিচারে এগিয়ে থাকছে পিএসজি। ওই মৌসুমে অপ্রতিরোধ্য তারা। লিগ ওয়ান-এ ১০ পয়েন্টের ব্যবধানে টেবিলের শীর্ষে প্যারিসের ক্লাবটি। ফ্রেঞ্চ লিগে তাদের ২৪টি ম্যাচের মধ্যে ২০টিই জয়ের মুখ দেখেছে। জিতেছে তাদের সর্বশেষ ৫টি ম্যাচের সবই। এছাড়া চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গ্রুপ ‘বি’ চ্যাম্পিয়ন হয়েই তারা রাউন্ড অফ ১৬-তে উঠেছে। অন্যদিকে রিয়াল মাদ্রিদ-এর ওই মৌসুমটি শুধুই হতাশার। স্প্যানিশ লা-লিগায় ২২ ম্যাচ খেলে পয়েন্ট টেবিলে ৩ নম্বরে অবস্থান করছে। ওই ২২ ম্যাচের মধ্যে রিয়াল জিতেছে মাত্র ১২টি, ড্র করেছে ৬টি ও হেরেছে ৪টি ম্যাচ। শীর্ষস্থানে থাকা বার্সার সঙ্গে তাদের পয়েন্ট ব্যবধান ১৬। অন্যদিকে গ্রুপ ‘এইচ’-এর রানার্সআপ হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগগের রাউন্ড অফ ১৬-তে উঠেছে তারা। মাদ্রিদ তাদের সর্বশেষ ৫ ম্যাচের মধ্যে জিতেছে ৩টি। তাই সব মিলিয়ে বলা যায়, সাম্প্রতিক পারফর্ম্যান্স বিচারে কিছুটা ব্যাকফুটে রয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। কিন্তু সোসিয়াদাদ-এর বিপক্ষে রোনালদোর জ্বলে ওঠা ম্যাচের আগে কিছুটা স্বস্তি দেবে মাদ্রিদ-কে।
যে বিষয়গুলো মাদ্রিদ-এর পক্ষে কাজ করবে
সাম্প্রতিক পারফর্ম্যান্সে পিছিয়ে থাকলেও কিছু বিষয় এমন আছে যা মাদ্রিদের পক্ষে কাজ করবে।
♦ রিয়ালের গোলের দেখা পাওয়া : রিয়াল মাদ্রিদ সবশেষ ৩ ম্যাচে ১১টি গোল করেছে। মাদ্রিদ বেশি বেশি গোল করার তাদের ওই সাম্প্রতিক ধারা ধরে রাখতে পারলে ম্যাচ পিএসজি-র হাত থেকে বের করে নিয়ে যেতে পারবে।
♦ বিবিসি-কে একত্রে মাঠে পাওয়া : বিবিসি-কে একত্রে মাঠে দেখা যেতে পারে ওই ম্যাচে। যদিও বেল ও বেঞ্জেমা-র রিসেন্ট ফর্ম তেমন ভালাে না তবুও একত্রে বিবিসি বিধ্বংসী হয়ে উঠতে পারে যে কোনো সময়।
♦ নাচো-কে মাঠে পাওয়া : যদিও কার্ভাহাল-কে মাঠে না পাওয়া খুব বড় একটা ধাক্কা তবুও মাদ্রিদ-এ কাভারযোগ্য ব্যাকআপ হিসেবে প্রস্তুত নাচো। নেইমার-দের পর্যায়ে খেলোয়াড়দের রুখে দিতে সক্ষম নাচো তার অগণিত দৃষ্টান্ত দীর্ঘদিন ধরে দিয়ে আসছেন।
♦ খেলাটি সান্তিয়াগো বার্নাব্যু-তে : ১৫ ফেব্রুয়ারির খেলাটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে মাদ্রিদের ঘরের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে। ঘরের মাঠে যে বাড়তি সুবিধা মাদ্রিদ পাবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
♦ রিয়ালের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ইতিহাস : চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ দল রিয়াল মাদ্রিদ। অনেকবার এমন দেখা গেছে লিগে খুব খারাপ সময় পার করেও তারা চ্যাম্পিয়ন্স লিগগ জিতে নিয়েছে ঠিকই। তাই খেলা যখন চ্যাম্পিয়ন্স লিগগের তখন রিয়াল-কে কখনোই সমীহ করা যায় না।
ব্যবধান গড়ে দেয়া খেলোয়াড়
তারকা ফুটবলের কমতি নেই ওই দু’দলের মধ্যে। একদিকে পিএসজি-তে যেমন রয়েছেন পৃথিবীর সর্বোচ্চ দামি খেলোয়াড় নেইমারসহ এমবাপ্পে, ডি মারিয়া ও ভেরাত্তিরা তেমনি অন্যদিকে মাদ্রিদে আছেন বিশ্বসেরা রোনালদোসহ বেল, ক্রুস মদ্রিচরা। দু’দলেই এমন কয়েক খেলোয়াড় আছেন যারা মুহূর্তের মধ্যে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন।
রোনালদো : সবশেষ ম্যাচেই হ্যাটট্রিক করা রোনালদো আবার নিজের ফর্ম ফিরে পাচ্ছেন। তাছাড়া ওই মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা তিনি। ৯ গোল নিয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় প্রথমে তিনি। আর তিনি যে কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই একটি ম্যাচ শেষ করে দিতে পারেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
নেইমার : চলতি মৌসুমে ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ান-এ ১৯ গোল ও ১১ এসিস্ট নিয়ে নিজ ক্যারিয়ারের সেরা সময় পার করছেন ওই তরুণ তারকা। যে কোনাে সময় প্রতিপক্ষ ডিফেন্সকে তছনছ করে দিতে পারেন ওই তরুণ ব্রাজিলিয়ান।
কিলিয়ান এমবাপ্পে : পিএসজি-র ওই তরুণ তারকাও মাদ্রিদের জন্য অন্যতম হুমকি হয়ে উঠতে পারেন। গোল রেশিও এডসন কাভানি বা নেইমার-এর মতাে না হলেও ধারাবাহিকভাবে ভালাে খেলে যাচ্ছেন ওই ফ্রেঞ্চ তারকা।
ক্রুস ও মদ্রিচ : মাদ্রিদের খেলার প্রাণকেন্দ্র হচ্ছেন ওই দু’জন। ম্যাচের নির্ধারক হতে পারে ওই দু’জনের পারফর্ম্যান্স।
মার্কো ভেরাত্তি : ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ান-এর সেরা মিডফিল্ডারদের একজন ধরা হয় ভেরাত্তি-কে। মধ্যমাঠে তার খেলার ওপরই অনেকটা নির্ভর করে পিএসজি-এর আক্রমণ।
সার্জিও রামোস : বড় ম্যাচগুলোয় রামোস বরাবরই উজ্জ্বল। ডিফেন্সে তার নৈপুণ্যের পাশাপাশি দলের খুব প্রয়োজনীয় সময়ে গোল করতে ভুল করেন না মাদ্রিদ ওই কাপ্তান। ম্যাচে তার মতাে একক প্রভাব খুব কম ডিফেন্ডারই ফেলতে পারনে।
সব মিলিয়ে বলা যায়, একটি সমানে সমান ফুটবল দ্বৈরথ উপহার পেতে যাচ্ছে বিশ্ববাসী এই ভ্যালেন্টাইনস ডে’র রাতে।