বাংলাদেশ কি একদলীয় শাসনের দিকে যাচ্ছে

ভারত-আওয়ামীলীগ বন্ধুত্বের প্রভাব

বাংলাদেশ কি একদলীয় শাসনের দিকে যাচ্ছে

প্রেক্ষাপট

একটু মনােযোগ দিয়ে খেয়াল করলে দেখা যাবে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির আগে বাংলাদেশে ক্ষমতাবলয় ঠিক করে দেয়ার প্রধান শক্তিগুলো যেমন ক্ষমতাসীন দল, প্রধান বিরোধী দল ও সেনাবাহিনী- এই তিনপক্ষের মধ্যে ‘দুইপক্ষ’ (একটি দল ও সেনা) যেদিকে থেকেছে সেভাবেই হয়েছে বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদল।

ওই খেলায় ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র পর্যবেক্ষকের ভূমিকায় থাকতো। তারা মাঝে মধ্যে নিজ নিজ রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থ বাস্তবায়নে বিশেষ বিশেষ দলের অনুকূলে প্রভাবক হয়ে উঠতো। কিন্তু রাজনৈতিক, বিচার বিভাগীয় ও প্রসাশনিক অথোরিটারিয়ান পটপরিবর্তনের অধ্যায়ের পর (৫ জানুয়ারির নির্বাচন ও এ সংক্রান্ত মহাপ্রস্তুতি) যুক্তরাষ্ট্রকে পর্যবেক্ষকের ভূমিকায় রেখে বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদলে বিরোধীপক্ষকে মাইনাস করে দিয়ে ভারতই সরাসরি নীতি-নির্ধারণী পক্ষ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে বলে মনে হয়। এ অবস্থায়, এমনকি সংবিধান ও বিচার বিভাগীয় কাঠামোতেও দেশের জনগণের বিকল্প মতামত কিংবা রাজনৈতিক বিরোধীপক্ষের ভূমিকা রাখার সুযোগ থাকছে না।

সহজ ভাষায় বললে, দেশে চলতে থাকা অরাজকতাপূর্ণ নির্বাচনী ব্যবস্থা ভারতের আঞ্চলিক রাজনৈতিক মহাপরিকল্পনা ও আওয়ামী লীগের ক্ষমতালিপ্সার ইচ্ছা একাকার হয়ে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। অকার্যকর পররাষ্ট্র নীতির সুযোগে দেশের ক্ষমতাবলয় দিন দিন নগ্নভাবে ভারত নির্ভর হয়ে উঠেছে।

২০১৪ সালে চাপিয়ে দেয়া নির্বাচনের প্রধান পক্ষ হিসেবে বাংলাদেশের সড়ক, নৌ, রেল, ইন্টারনেট ও টেলিযোগাযোগ, নৌবন্দর ও সমুদ্র বন্দরের যাবতীয় আর্থিক এবং অবকাঠামোর সুযোগ-সুবিধা নিয়ে নেয় ভারত। ট্রান্সজিট প্রায় বিনা মূল্যে ও শুল্কে বাগিয়ে নেয়া হয়। বাংলাদেশের পরিবেশ ও বনবিধ্বংসীতে প্রথম পাইলট হিসেবে রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের সূচনা করে দেশে ভারতীয় কয়লার বাজার সৃষ্টির অমিত সম্ভাবনা সৃষ্টি করা হয়েছে। বাংলাদেশের অতি প্রয়োজনীয় চট্টগ্রাম বন্দর সম্প্রসারণ, বহুল অপেক্ষমাণ কর্ণফুলী নদীর মোহনার মেরিন বে ও সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দরের মতাে মেক্রোইকনমিক প্রটেনশিয়ালগুলো নিজ স্বার্থে কূটনৈতিক চাপে বন্ধ করে দিয়ে শুধু ভারতীয় ট্রানজিট ও কয়লা ব্যবসার অনুকূলে দরকার পড়া অগভীর নদী মোহনায় পায়রা বন্দর এবং মাওয়া-পায়রা রেলসহ বহু ঋণ নির্ভর অতি খরুচে আবকাঠমোগত কাজ আন্তর্জাতিক বিবেচনায় অতি দুর্বল সরকারকে দিয়ে করিয়ে নেয়া হচ্ছে। উল্টো ধারণ ক্ষমতা সংকটে ভোগা চট্টগ্রাম বন্দরে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভারতীয় পণ্যের খালাস চেয়ে চুক্তি করতে বাধ্য করা হয়েছে। ওইসব প্রকল্পে ফান্ডিংয়ের জন্য ৮৫ শতাংশ পণ্য সেবা-মেশিনারি-ডিজাইন-ইমপ্লিমেন্টেশন ভারত থেকে আসার শর্ত রেখে উচ্চ সুদে কয়েক বিলিয়ন ঋণও গছিয়ে দেয়া হয়েছে।

ভারতীয় বিবেচনায় বাংলাদেশের দুর্বল সরকারকে বাধ্য করে তারা এ দেশের নির্মিতব্য নিউক্লিয়ার প্রকল্পে সরাসরি ঢুকে পড়েছে। এছাড়া প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে প্রায় প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ও সফটওয়্যার খাতের নির্মাণে। বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকসহ সরকারি ব্যাংক ও প্রশাসনে ভারতীয় সফটওয়্যার কোম্পানিগুলোর অ্যাকসেস নিশ্চিত হয়েছে এই সময়ে। তেল উৎপাদনকারী দেশ না হয়েও বাংলাদেশেকে কিনতে বাধ্য করা হয়েছে ভারত থেকে উচ্চ দামের ডিজেল। একই সময়ে বাংলাদেশ ক্রস বর্ডার বিদ্যুৎ কিনে জ্বালানি নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার উপলক্ষ তৈরি করা হয়েছে। আরো উল্লেখ্য, এই সময়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শত্রু তালিকা থেকে ভারতের নাম প্রত্যাহার এবং ভারত বিদ্বেষী ঊর্ধতন সেনা অফিসারদের গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে তাদেরই নিম্নমানের অস্ত্র ক্রয়ের জন্য চাপ এসেছে।

শুধু দলীয় ছাত্র সংগঠনের দুর্বৃত্তদের দিয়ে পুলিশ ফোর্স বোঝাই করা হয়েছে। ফলে বিরোধীপক্ষ দমনের আদালতীয় ও পুলিশি যৌথ পন্থা কায়েম হয়েছে। অরেকটি ধাপে দলীয় ব্যক্তিদের মিডিয়া হাউসগুলোয় সেট করা হয়েছে। তাই বাংলাদেশের মিডিয়া বিরোধীপক্ষের মতামত শূন্য যেখানে সেতুর একটি পিলার ব্রেকিং হিসেবে অভির্ভূত হলেও রাষ্ট্রের হাজারাে কোটি টাকা লোপাট কিংবা শিক্ষা ধ্বংসের মহাআয়োজনের কোনাে আওয়াজ নেই আজকের মিডিয়ায়

অন্যদিকে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক নদীর ন্যায্য পানি হিস্যার ছিটেফোঁটাও পায়নি। চুক্তি সত্ত্বেও পানি শুধুই কমেছে পদ্মায়। চুক্তিহীন তিস্তায় সম্পূর্ণ পানিই প্রত্যাহার হয়েছে শুকনো মৌসুমে। বাংলাদেশের সড়ক-নৌ-রেল পরিবহণ, বন্দর, জ্বালানি নিরাপত্তা ও সফটওয়্যার নিরাপত্তার সব কৌশলগত উপাদান এখন কার্যত ভারতের নিয়ন্ত্রণে। পোস্ট কলোনিয়াল সময়ে এসে ভারত একটি দুর্বৃত্ত চক্রের যোগসাজশে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক নিও-কলোনিয়ালিজম প্রতিষ্ঠা করেছে।

এমনিতেই ভারতীয় ভূরাজনৈতিক আধপিত্যের অনুকূল দল হিসেবে পরিচিত আওয়ামী লীগকে ক্ষমতার কেন্দ্রে রাখার ভারতীয় চেষ্টা ও চর্চা দৃশ্যমান এবং দৃষ্টিকটু পর্যায়ে কূটনৈতিক হীনম্মন্যতা এখন চাক্ষুষ বাস্তবতা। ভারতীয় আর্থিক প্রাপ্তির বিপরীতে ওই চেষ্টার তীব্রতা বোধগম্য। ফলে প্রতিটি নির্বাচনের আগে এখানে ‘রথ দেখতে ও কলা বেচতে’ আসেন ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়সহ স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রীরা। ওই বাণিজ্য বড়ই একপেশে। বাংলাদেশ ওই একতরফা বাণিজ্যে উদাম হয়ে যাচ্ছে।

দুর্বৃত্ত দলীয়করণের ফায়দা নিয়ে সহজেই বিচার বিভাগের ঘাড়ে বন্দুক রেখে ক্ষমতার বলয়ে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। পছন্দের বিচারপতি দিয়ে অতি উৎসাহী ও একপেশে রায়ে রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রামে অর্জিত চেক অ্যান্ড ব্যালান্স সৃষ্টিকারী নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ভেঙে দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে সংসদ না ভেঙেই দুর্বৃত্ত রাজনীতির প্রতিনিধিত্বকারী ও রাষ্ট্রীয় আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বেপোরোয়া লুটপাটকারী দলীয় ব্যক্তিদের অধীনেই নির্বাচন করার হাস্যকর বিধান চালু হয়েছে। ফলে ভোটহীন সরকার প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়েছে। এছাড়া অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে প্রকাশ্যে ব্যালটে সিল মারার তাণ্ডব। অারেকদিকে নির্বাচন এলেই সুড় সুড় করে বিরোধীপক্ষের সিনিয়র থেকে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের হাজতবাস নিশ্চিত হয়ে যাচ্ছে। এমনিতেই ব্যাপক হারে বিদেশি শান্তি মিশনে ব্যস্ত থাকা বাংলাদেশের বাহিনীগুলোকে (এমনকি ব্যক্তি অফিসারদেরও) কর্তৃত্বপরায়ণ সরকার নানান প্রজেক্ট ধরিয়ে আর্থিক সুবিধা দিয়ে রাজনৈতিকভাবে নির্লিপ্ত করে তোলায় বেশ সফল হয়েছে। এর পাশাপাশি সেনা, বিমান ও নৌবাহিনী থেকে এমন প্রজেক্টের বিরোধী অফিসারদের অগুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বভার দিয়ে রাখা হয়েছে।

অবৈধ কিন্তু সাংবিধানিক (!) নির্বাচনের পর সরকার ভালো কিছু কাজ করে মানুষের মন জয় করবে, রক্তক্ষয়ী হিংস্র ক্ষমতার লড়াইয়ে জয়ী হয়ে একজন ক্ষমতায় আসবেন আর তিনি ভালো কাজ করবেন- এমন উৎকল্পনা কেবল বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীরাই করতে পারেন। কিন্তু দেখা গেছে। ওইসব বুদ্ধিজীবীই বড় বড় নিয়োগ বাগিয়ে নিয়ে ব্যাংক লুটে জড়িয়ে পড়েছেন (উদাহরণস্বরূপ- অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাত এবং ইতিহাসবিদ ও বুদ্ধিজীবী মুনতাসীর মামুন)

অতিমাত্রায় অপরাধপ্রবণ ও সীমাহীন দুর্নীতির দেশে শুধু দলীয় ছাত্র সংগঠনের দুর্বৃত্তদের দিয়ে পুলিশ ফোর্স বোঝাই করা হয়েছে। ফলে বিরোধীপক্ষ দমনের আদালতীয় ও পুলিশি যৌথ পন্থা কায়েম হয়েছে। বিরুদ্ধবাদীদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করে রাজনীতির মাঠে কর্মসূচি বাস্তবায়ন চেষ্টা এবং এর অনুকূলে প্রয়োজনীয় আর্থিক সামর্থ্যও ভেঙে দেয়া হয়েছে। ওই মহাপরিকল্পনার অারেকটি ধাপে দলীয় ব্যক্তিদের মিডিয়া হাউসগুলোয় সেট করা হয়েছে। তাই বাংলাদেশের মিডিয়া বিরোধীপক্ষের মতামত শূন্য যেখানে সেতুর একটি পিলার ব্রেকিং হিসেবে অভির্ভূত হলেও রাষ্ট্রের হাজারাে কোটি টাকা লোপাট কিংবা শিক্ষা ধ্বংসের মহাআয়োজনের কোনাে আওয়াজ নেই আজকের মিডিয়ায়।

ভারতীয় ভূরাজনৈতিক ইচ্ছার প্রবল প্রতাপে একদলীয় নির্বাচনে ক্ষমতায় থাকার অনুকূলে সমর্থন জোগানো আওয়ামীপন্থী বুদ্ধিজীবীরা ইনিয়ে-বিনিয়ে উপর্যপুরি বলার চেষ্টা করেছেন, অবৈধ কিন্তু সাংবিধানিক (!) নির্বাচনের পর সরকার ভালো কিছু কাজ করে মানুষের মন জয় করবে, রক্তক্ষয়ী হিংস্র ক্ষমতার লড়াইয়ে জয়ী হয়ে একজন ক্ষমতায় আসবেন আর তিনি ভালো কাজ করবেন- এমন উৎকল্পনা কেবল বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীরাই করতে পারেন। কিন্তু দেখা গেছে ওইসব বুদ্ধিজীবীই বড় বড় নিয়োগ বাগিয়ে নিয়ে ব্যাংক লুটে জড়িয়ে পড়েছেন (উদাহরণস্বরূপ- অর্থনিতিবিদ আবুল বারাকাত এবং ইতিহাসবিদ ও বুদ্ধিজীবী মুনতাসীর মামুন)।

অন্যদিকে প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও উচ্চ-মধ্যম নেতারাও পিছিয়ে নেই যিনি যেভাবে পারছেন বেসামাল বেপরোয়া লুটপাটে লিপ্ত হয়েছেন প্রবল পরাক্রমে। প্রতিটি উন্নয়ন প্রকল্প বিশ্ব রেকর্ড পরিমাণ খরুচে হয়ে উঠছে। প্রায় প্রতিটি একনেক বৈঠকেই বড় বড় প্রকল্পের ব্যয় শত বা হাজার কোটি করে বাড়ছে। আর ছোট প্রকল্পগুলোও কয়েক দফয়ে ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া শেষ হচ্ছে না। প্রায় সব উন্নয়ন প্রকল্প উচ্চ সুদের বিদেশি ঋণে হওয়র কারণে বৈদেশিক ঋণের সুদ-আসল ক্রমেই দেশের বাজেটের শীর্ষ খাত হিসেবে আবির্ভূত হতে যাচ্ছে।

এদিকে দেশ মাত্র এক দশকে ছয় লাখ কোটি টাকার বেশি পাচার প্রত্যক্ষ করেছে। প্রতিটি সরকারি ব্যাংক হাজার কোটির উপরে লোকসান করেছে। সরকারি-বেসরকারি প্রায় সব ব্যাংক হাজারাে কোটি টাকার খেলাপি ঋণের সম্মুখীন হয়েছে। সোনার বাংলা আওয়ামী লুটপাট ও পাচারের ভাগাড় হতে চলেছে।

ক্রান্তিকাল

দলীয় ক্ষমতা প্রলম্বিত করতে বর্তমান রাজনীতিতে দেশি-বিদেশসহ বহুবিধ কারণে দীর্ঘ মেয়াদে পিছিয়ে পড়া দেশের সবচেয়ে বড় বিরোধীপক্ষ বিএনপি’র দায় কোনাে অংশেই কম নয়। বিএনপির দুটি বৈধ ট্রার্মই শেষ হয়েছে ক্ষমতা হস্তান্তরের গড়িমসির মধ্য দিয়ে- একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার না মানার মধ্য দিয়ে, অন্যটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে দলীয় গণ্ডির মধ্যে রেখে পুনর্নির্বাচিত হওয়র দুর্বৃত্ত চেষ্টার মধ্য দিয়ে। উভয়টিতেই বিএনপি পরাজিত হয়েছে। একটি মেরুদণ্ডবান নির্বাচনী প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করতে বিএনপিকে আন্তরিক হতে দেখা যায়নি। এর ফল দলটি ভোগ করছে এখন। এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, ভারতীয় স্ট্যাবলিশমেন্টের বাইরে থাকার দাবি করে আসা দলটি দু’দু’বার পূর্ণ মেয়াদে ক্ষমতায় থেকেও দেশের বিদ্যুৎ, বন্দর, রেল, সড়ক, যাতায়াত ও শিল্প ইনফাস্ট্রাকচার ভারতীয় ও চায়নিজ প্রভাবমুক্ত করে বহু দূর এগিয়ে নেয়ার দূরদৃষ্টি দেখাতে পারেনি। উল্লেখযোগ্য বলার মতাে হচ্ছে, সাধারণভাবে দেশের শিক্ষা ও নারী শিক্ষা এগিয়ে নেয়ার ভালাে চেষ্টা করেছিল দলটি। বিএনপি গত দু’বারের সময়ে একটি পূর্ণাঙ্গ ও টেকসই কার্যকর এবং কল্যাণভিত্তিক শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তনের স্বপ্ন দেখাতে পারেনি। দেশের সমস্যার সমাধান ও তা বাস্তবায়নে সক্ষম দলীয় লোকবল সৃষ্টি করার দৃশ্যমান এবং বিশ্বাসযোগ্য প্রস্তাবনা হাজির হতে পারেনি। আসলে দলটি নিদারুণভাবে অক্ষম, প্রজ্ঞাহীনদের দিয়ে চালিত। ফলে আজ রাজনৈতিক ও আর্থিক শক্তিতে পিছিয়ে পড়ে দানবীয় একদলীয় উত্থানে দলটি সরাসরি ভুক্তভোগী।

মধ্যম পর্যায়ের দুটি দলের একটি যুদ্ধাপরাধের বিচারে বিপর্যস্ত, অন্যটি ক্ষমতাবলয়ে ঢুকে আর্থিক যোগ উপভোগ করতে ব্যস্ত। দেশের ক্ষুদ্র বিরোধী দলগুলোর ডান ও বামের দুটি ধারায় বহু বিভক্ত। এগুলোরও কিছু সরাসরি ক্ষমতার উচ্ছিষ্টভোগী, কিছু উচ্ছিষ্ট ভোগের চেষ্টায় নিয়োজিত নিরন্তর। আর কিছু আছে সাংস্কৃতিকভাবে আওয়ামীপন্থীবলয়ে থেকে রাজনৈতিকভাবে লীগের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর হিম্মত দেখানোর শক্তি অর্জন করতে ব্যর্থ। একটি অংশ ক্ষমতাবলয়কে অসন্তুষ্ট করে রাজনৈতিক কর্মসূচি দিতে নৈতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে অক্ষম (এমনকি শত চেষ্টা করেও একটি সামাজিক আন্দোলনকেও তারা দাঁড় করাতে পারেননি। যেমন- রামপাল আন্দোলন)। ডান ও বামের অন্য দুটি ক্ষুদ্রধারা রাজনৈতিক বিপ্লব চাইলেও নিদারুণভাবে শক্তি ও অর্থে অক্ষম। ফলে কার্যকর ও জনস্বার্থভিত্তিক বিরোধী দল না থাকায় তাঁবেদার সরকাকে পুঁজি করে পেন্ডিং থাকা ডেভেলপমেন্ট স্কোপগুলোয় ভারত ও চীন স্ট্যাবলিশমেন্টের একচেটিয়া অনুপ্রবেশে দেশের আর্থিক গোলামিই জারি থাকছে আর দেশের নাগরিকরা তা চেয়ে চেয়ে দেখছেন।

ঠিক নির্বাচনের মুহূর্তে এসে মামলাগুলো এত সচল হয়েছে যে, বিরোধীপক্ষের সবাইকে প্রায় প্রতিদিন আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে। অন্যদিকে নিজেরা মাজার জিয়ারত করে সরকারি পদে থেকে নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। সবশেষে এসে দেখা গেল, হাজারাে কোটি টাকা লোপাট হওয়ার দেশে আদালত দুই কোটি টাকার মামলায় খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের জেলে পাঠিয়েছেন। অবশ্য ওই বিচার কার্যক্রমের শেষ দিনে সরকার স্বঘোষিত অবরোধ সৃষ্টি করে শতকোটি টাকার শ্রম ঘণ্টা নষ্ট করেছে

ক্ষমতা দীর্ঘ মেয়াদি করার পরবর্তী ধাপগুলো আপাত দৃশ্যমান! দুর্বৃত্ত ও একদলীয় ক্ষমতার নিরঙ্কুশ চর্চা প্রলম্বিত করতে ও বেপারোয়া লুটপাট জারি রাখতে আরেকটি একদলীয় এবং ভোটবিহীন নির্বাচনের দিকে পা বাড়িয়েছে আওয়ামী লীগ। সরকার গঠনের পর শেখ হাসিনা ও তার দলীয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং গত জোট সরকারের সময় করা ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক’ মামলাগুলো প্রত্যাহার করে নিয়ে শুধু খালেদা জিয়া ও বিএনপি দলীয়দের নামে থাকা মামলাগুলো রেখে দিয়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা জারি রাখা হয়েছে। এর মধ্যে তিনটি গ্যাস ফিল্ড থেকে গ্যাস উত্তোলনের জন্য নাইকো-কে কাজ দিয়ে রাষ্ট্রের ১৩ হাজার ৬৩০ কোটি ৫০ লাখ টাকা ক্ষতি সাধনের অভিযোগে দুদকের মামলা, কয়েকটি ঘুষের মামলা, মিগ ক্রয় মামলা উল্লেখযোগ্য। ঠিক নির্বাচনের মুহূর্তে এসে মামলাগুলো এত সচল হয়েছে যে, বিরোধীপক্ষের সবাইকে প্রায় প্রতিদিন আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে। অন্যদিকে নিজেরা মাজার জিয়ারত করে সরকারি পদে থেকে নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। সবশেষে এসে দেখা গেল, হাজারাে কোটি টাকা লোপাট হওয়ার দেশে আদালত দুই কোটি টাকার মামলায় খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের জেলে পাঠিয়েছনে। অবশ্য ওই বিচার কার্যক্রমের শেষ দিনে সরকার স্বঘোষিত অবরোধ সৃষ্টি করে শতকোটি টাকার শ্রম ঘণ্ট নষ্ট করেছে। যে দেশে এমনকি সাধারণ রাজনীতিবিদেরও ডজন ডজন মামলা ডাল-ভাত সে দেশে দু’বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে জেলে নিতে হয়। অথচ জেলে যেতে হয় না শাস্তি ও জেলপ্রাপ্ত বর্তমান মন্ত্রী কিংবা সংসদ সদস্যদের।

কথা হচ্ছে অত্যন্ত সুচারুরূপে বহু ধাপে দীর্ঘ মেয়াদি একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠাকারী দুটি স্ট্যাবলিশমেন্টের উইন উইন সিচুয়েশন অব্যহত রাখতে, ওই দুটি স্ট্যাবলিশমেন্টের সব সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক উপাদানগুলো সচল রাখতে দেশি-বিদেশি জোট এখানেই থামবে কি না? আগেরবার খালেদা জিয়াকে বাইরে রেখেই একদলীয় নির্বাচন করা গেলেও সামনের দিনে আরো সরাসরি ও নিরাপদে খেলতে চাচ্ছে গোষ্ঠীটি। সম্ভবত খালেদা জিয়াকে জেলে নেয়ার প্রয়োজন ছিল এই কারণে যে, যেটুকু অবশিষ্ট নাগরিক সমর্থনের শক্তি খালেদা জিয়াকেন্দ্রিক বিএনপি জোটের আছে এর অবসান ঘটানো। বাংলাদেশে একদলীয় শাসনের দীর্ঘ মেয়াদি ও দানবীয় উত্থানে উইন উইন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে ভারতীয় এবং দেশি আওয়ামী স্ট্যাবলিশমেন্টের দুটি বন্ধু শিবিরে। ওই খেলায় পরাজিত দেশ ও নাগরিকের আর্থিক স্বার্থ। একটি দীর্ঘ মেয়াদি আর্থিক ক্ষতি ও প্রাতিষ্ঠানিক নৈরাজ্যের নতুন শুরুর আভাস দেখা যাচ্ছে সমসাময়িক রাজনৈতিক তৎপরতায়! জনগণের সচেতনতা ও গণতান্ত্রিক-রাজনৈতিক শক্তির উত্থান ছাড়া ওই অবস্থা থেকে উত্তরণের আর কোনাে পথ খোলা নেই।

৩ thoughts on “বাংলাদেশ কি একদলীয় শাসনের দিকে যাচ্ছে

  1. You’re not wrong in your appraisal of AL being playing as lackey of India, and you have used your might of pen to lash out at the AL in the most incisive, sardonic, strident words of accusation, you would still say media is chained not to tell words against the failings of the AL ? You proved yourself a BNP man from toe to the top. So your eyes would naturally skip over the haughtiness, loot, corruption, sponsoring militancy and reign of terror, bombing of AL meeting, absolute rule etc. etc. BNP did during its reign. India is AL’s master, Khaleda also went to woo India, but failed. But BNP worships Pakistan, our sworn enemy and with it perhaps, you too. You have the right to be, so you cannot claim fair in your opinions. Thanks.

    1. জনাব দেওয়ান, জবানে আপনার মন্তব্যের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ। এটা একটা বিড়ম্বনার বিষয় যা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন স্কোপে ভিন্ন ভিন্ন পরিসরে ও বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন দলের সমর্থকদের কাছে ব্যাখ্যা দিতে হয়। সংক্ষিপ্ত করে বলি, দুর্নীতি ও অনৈতিক স্ট্যাব্লিশ্মেন্টের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে বিবাদমান দুটি পক্ষেরই বিরুদ্ধে কিছু কিছু লিখে একটা ব্যালান্স করে বুদ্ধিজীবীতা প্রকাশের বাংলাদেশীয় সুশীল ধারাকে আমি ঘৃণা ও তাচ্ছিল্য ভরে প্রত্যাখ্যান করি। এই লিখায় একদলীয় ক্ষমতার অনৈতিক দীর্ঘায়ন এবং দুর্বল, নির্বাচন বিহীন (যা আন্তর্জাতিক বিবেচনায় দুর্বল) সরকারকে ভাঙ্গিয়ে কি অন্যায্য ও ভয়ংকর ভাবে দেশকে শোষণ করার মহড়া তৈরি করেছে ৫ জানুয়ারী উত্তর সরকার তার ক্রিটিক্যাল থিংকিং অর্থনৈতিক বয়ান আকারে উপস্থাপনা কর হয়েছে। এখানে বিএনপি বা এরশদের দুর্নিতী নিয়ে আলোচনার স্কোপ এনে নিজেকে নিরপেক্ষ প্রমানের কোন অবকাশ দেখি না। তাও ক্রান্তিকাল প্যারাতে কিছুটা হিন্টস দিয়েছি দেশের রাজনৈতিক দল্গুলোর হীনতা নিয়ে। আমার নির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি আছে কিন্তু দলীয় সীমাবদ্ধতা নেই বলেই মনে করি, চোর কে চোর বলার সৎ সাহস আমার আছে বলেই বিশ্বাস করি। রাষ্ট্রের অনৈতিক কাঠামোকে এবং দুর্নীতিবাজদের সবাইকে তীক্ষ্ণ ভাবে চ্যালেঞ্জ করার চেষ্টা করি। রাষ্ট্র কে চ্যালেঞ্জ করতে চাই প্রতিটি অক্ষমতার আর অজ্ঞতার জন্য, তবে আঘাত নয়। সচেতন প্রত্যাক্টি নাগরিকেরই উচিত দেশের যে কোন দলের অন্যায্য স্টাব্লিশ্মেন্ট এবং তাদের প্রভুভিত্তিক বিদেশী তোষণ নীতিকে শ্লেষাত্মক ভাবে আঘত করা। এখানে কথিত নিরপেক্ষতার প্রশ্ন এনে বাংলাদেশের সুশীল বুদ্ধিজীবীদের মত গর্তে লুকানোর সুযোগ নেই।

    2. দুর্নীতি ও অনৈতিক স্ট্যাব্লিশ্মেন্টের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে বিবাদমান দুটি পক্ষেরই বিরুদ্ধে কিছু কিছু লিখে একটা ব্যালান্স করে বুদ্ধিজীবীতা প্রকাশের বাংলাদেশীয় সুশীল ধারাকে আমি ঘৃণা ও তাচ্ছিল্য ভরে প্রত্যাখ্যান করি। একদলীয় ক্ষমতার অনৈতিক দীর্ঘায়ন করতে, নির্বাচন বিহীন সরকারকে (৫ জানুয়ারী উত্তর সরকার আন্তর্জাতিক বিবেচনায় খুবই দুর্বল) ভাঙ্গিয়ে কি অন্যায্য ও ভয়ংকর ভাবে বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক ভাবে শোষণ করার মহড়া তৈরি করেছে প্রতিবেশী দেশ ভারত (এমনকি চীনও কিছু ক্ষেত্রে) তার ক্রিটিক্যাল থিংকিং অন্তত অর্থনৈতিক বয়ান আকারে উপস্থাপনা করা দায়িত্ব হয়ে উঠছে দেশের বুদ্ধিজীবীদের, অথচ সবাই মুখে কুলূপ এটে বসে আছে। এখানে ১০ বছর আগের বিএনপি বা ২৭ বছর আগের এরশাদের দুর্নীতি নিয়ে আলোচনার স্কোপ এনে নিজেকে নিরপেক্ষ প্রমানের কোন অবকাশ দেখি না, যদিও বিরোধীদের দুর্নীতি নিয়ে আলাদা আলাদা স্কোপে আলোচনা করা যায়। কর্তিত্ববাদী ক্ষমতার বলয়ে এবং ইন্সটিটিউশনহীণ দেশে ক্ষমতার বাইরে থাকা লোকের বা দলের প্রভাব নেই। তাই ক্ষমতার বলয়ে থাকার মোক্ষম সময়েই দুর্নীতি নিয়ে কথা বলতে হবে, ক্ষমতা থেকে প্রস্থানের পর এবং রাষ্ট্রের অর্থ লোপাট ও আত্মসাতের পর যারা সেইফ সাইড বক্তব্য নিয়ে হাজির হয় যেসব পত্রিকা ও লোক, এরা দেশের স্বার্থের প্রত্যক্ষ শত্রু। আদতে দেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দলই চোর, ছোট বা বড়, সর্বশেষ সরকার সবচেয়ে বড় ও সর্বেসর্বা চোর, তাই এই চোরদের চূরিকালীন সময়েই আপনাকে সরব ও সবাক থাকতে হবে।

      বুদ্ধিজীবীদের নির্দিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি থাকবে, কিন্তু দলীয় সীমাবদ্ধতা থাকবে না। চোর কে চোর বলার সৎ সাহস যাদের নেই তাদের সামাজিকভাবে প্রত্যাখ্যান করুণ। এই বুদ্ধিজীবীদের হাটে মাঠে ঘাটে যেখানে পাওয়া যায়, ঘৃণা ভরে প্রত্যাখ্যান করা দরকার।

      রাষ্ট্রের অনৈতিক কাঠামোকে এবং দুর্নীতিবাজদের সবাইকে তীক্ষ্ণ ভাবে চ্যালেঞ্জ করাই সচেতন নাগরিকের কাজ। রাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ করতে হবে প্রতিটি অক্ষমতার, অজ্ঞতা, অব্যবস্থাপনা ও অদুরদর্শীতার জন্য, তবে সচেতনে বা অবচেতনে কোন ভাবেই রাষ্ট্রকে আঘাত করা যাবে না। রাষ্ট্রকে আঘাত না করে লূটেরা রাজনৈতিক দলকে চ্যেলেঞ্জ করার যোগ্যতা যাদের নেই তারা সেবা দাস। লাউড এন্ড ক্লিয়ার।

      সচেতন প্রত্যাক্টি নাগরিকেরই উচিত দেশের যে কোন দলের অন্যায্য স্টাব্লিশ্মেন্ট এবং তাদের প্রভুভিত্তিক বিদেশী তোষণ নীতিকে শ্লেষাত্মক ভাবে আঘত করা। এখানে কথিত নিরপেক্ষতার প্রশ্ন এনে বাংলাদেশের অধুনা সুশীল বুদ্ধিজীবীদের মত গর্তে লুকানোর সুযোগ নেই। এরা সবাই উচ্ছিষ্ট ভোগের লাইনে অপেক্ষমান!

কমেন্ট বন্ধ।