রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও আফজাল গুরু

অরুন্ধতী রায়ের বিশেষ লেখা

রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ও আফজাল গুরু

আফজাল গুরুর যেনতেন ফাঁসির রায় যারা সহজেই মেনে নিতে পারেননি সেই গুটিকয়েকের একজন প্রখ্যাত বুকারজয়ী সাহিত্যিক ও সমাজকর্মী অরুন্ধতী রায়। প্রতিবাদে দিয়েছেন নেতৃত্বও। তাই পাঠকদের সামনে জবান প্রকাশ করলাে এ বিষয়ে অরুন্ধতী রায়ের অভিমত। লেখাটি অরুন্ধতী রায় সম্পাদিত বই ‘দি হ্যাংগিং অব আফজাল গুরু অ্যান্ড দি স্ট্রেইন্জ কেইস অব দি অ্যাটাক অন দি ইন্ডিয়ান পার্লামেন্ট’ থেকে অনূদিত।

♦ ♦ ♦

২০০১ সালে ভারতীয় পার্লামেন্টে হামলার দায়ে মোহাম্মদ আফজাল গুরুর আচমকা ফাঁসি ভারতের রাজনীতিতে কী প্রভাব ফেলবে কেউ জানেন না। সুদূর তিহারের কেন্দ্রীয় জেল থেকে শহীদ আফজাল গুরুর স্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠানো হয় যাতে আবার অপমানজনক ভাবে আফজাল গুরুর নামের বানান পর্যন্ত ভুল। সেখানে লেখা–

‘আফজাল গুরু, পিতা হাবিবুল্লাহ- এর করা ক্ষমার আবেদন নাকচ করে দিয়েছেন ভারতের মহামান্য রাষ্ট্রপতি। তাই নিয়ম মোতাবেক, আফজাল গুরুর ফাঁসির রায় কার্যকর হবে কেন্দ্রীয় কারাগারের ৩ নম্বর জেলে। অতএব গৃহীত সিদ্ধান্ত আপনাদের জানানো হলো এবং ওই মোতাবেক জরুরি পদক্ষেপ নেয়ার অনুরোধ জানানো হলাে ‘

ওই চিঠিটি আফজালের স্ত্রী তাবাসসুমের বাড়িতে পৌঁছায় তার স্বামীর ফাঁসি কার্যকরের দু’দিন পর। ফলে ইচ্ছাকৃত ওই দেরির কারণে ক্ষমার আবেদন নাকচের পর অন্য আইনি সহায়তা নিতে ব্যর্থ হন তাবাসসুম। আইনি সহযোগিতা নেয়ার যে অধিকার ছিল আফজাল গুরুর এবং তার পরিবারের তা ছিনিয়ে নেয়া হলাে। অথচ ওই অধিকার ছিল কোনো নাগরিকের আইনগত আবশ্যকতা। এমনকি ওই চিঠিতে এটিও জানানো হয়নি, কিসের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি তার ক্ষমার আবেদন নাকচ করলেন। যদি তা জানানো না হয় তাহলে কিসের ভিত্তিতে তারা আপিল করবেন! অথচ মৃত্যুদণ্ড পাওয়া সব বন্দির ক্ষেত্রে এতদিন এসব মানার সংস্কৃতি ছিল।

ওই চিঠিখানা আফজালের স্ত্রী তাবাসসুমের বাড়িতে পৌঁছায় তার স্বামীর ফাঁসি কার্যকরের দু’দিন পর। ফলে ইচ্ছাকৃত এই দেরির কারণে ক্ষমার আবেদন নাকচের পর অন্য আইনি সহায়তা নিতে ব্যর্থ হন তাবাসসুম

 

যেহেতু তাবাসসুম তার স্বামীকে মৃত্যুর আগে এক পলক দেখতে পারেননি, আফজালপুত্র তার পিতার মুখ থেকে শেষবারের মতো কোনাে উপদেশ নিতে বঞ্চিত হলাে, মৃত আফজালকে কাঁধে করে কবরে নিতে যেতে দেয়নি (জেলের অভ্যন্তরে কবর হয় তার) সেহেতু কিসের ‘জরুরি পদক্ষেপ’-এর প্রস্তাব করছে তারা? ক্ষোভ দেখানো, নাকি অপূরণীয় ক্ষতির জন্য দুঃখ করা, নাকি বিনা শর্তে সব মেনে নেয়া, নাকি চুপচাপ হাওয়াও মিলিয়ে যাওয়া?

ফাঁসি কার্যকরের পর নানান জায়গায় আনন্দ উদযাপন হয়েছে। সংসদে হামলায় নিহতদের স্ত্রীরা, সর্বভারতীয় সন্ত্রাস বিরোধী ফ্রন্টের চেয়ারম্যান এমএস বিট্টা ও তার প্রধান কার্যনির্বাহী কর্মকর্তাদের হাস্যমুখ বার বার টিভিতে দেখাচ্ছিল। আদৌ কি তারা জানে, ওই হামলা যারা ঘটিয়েছিল তারা সবাই সেখানে মারা পড়েছিল, এমনকি তাদের কাছে ওই হামলার পরিকল্পনাকারীদের নামও আজ পর্যন্ত খোলাসা করা হয়নি!

তখন কাশ্মিরে চলছে কারফিউ। কাশ্মিরিদের গৃহবন্দি করার পাঁয়তারাও করা হলো সেখানে। কিন্তু অতীতের মতাে তারা কারফিউ অস্বীকার করে রাস্তায় নেমেছেন। তিন দিনে আহত হয়েছিলেন প্রায় ১৫ জন ও নিহত তিনজনের বেশি। এমনকি দৈনিক পত্রিকাগুলো দেখেনি ভোরের মুখ। কেউ যদি ইন্টারনেটে একটু খোঁজ করেন তাহলে দেখবেন ওই আন্দোলনে কাশ্মিরি তরুণদের কোনাে বেপরোয়া বা উত্তপ্ত ভাবাবেগিছিল না যেমনটা দেখা গিয়েছিল আগের ২০০৮, ২০০৯, এমনকি ২০১০ সালের তীব্র বিক্ষোভেও। এতে হত্যা করা হয়েছিল প্রায় ১৮০ জন। এবার যেন তারা একেবারে শীতল, নীরব। তবে ক্ষমাহীন। এ রকম না হওয়ারও কী কারণ আছে?

কাশ্মির তীব্র সামরিক দখলের মধ্যে আছে ২০ বছরের বেশি । লাখ লাখ মানুষ সেখানে জেলে আছেন, কেউ আছে টর্চার সেলেন। তাদের অনেকে জীবন দিয়েছেন লড়াই ক্ষেত্রে, কেউ এনকাউন্টারে। ওই এনকাউন্টার সত্য, না মিথ্যা তা জানি না। তবে আফজাল গুরুর প্রাণের চেয়ে আরেকটি ব্যাপার গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে এখন। সেটি হলাে, ওই হত্যা তরুণদের যারা এখনো গণতন্ত্রের মারপ্যাঁচ বুঝতে শেখেননি তাদের এখন মঞ্চের উঁচুস্থানে বসিয়ে দেখানো হলাে আমাদের গণতন্ত্রের ‘মোজেজা’ কী! তারা দেখলাে প্রাচীন প্রতিষ্ঠানগুলো- সরকার, রাজনীতি, আদালত, পুলিশ, রাজনৈতিক দলগুলো, এমনকি গণমাধ্যমগুলো কীভাবে এক গোপন আঁতাত করে এক কাশ্মীরিকে ঝুলিয়ে দিল। ফাঁসির আগ পর্যন্ত যে কেউ ন্যায়বিচারের অধিকার রাখেন ওই বিশ্বাসই নেই তাদের।

সেটি হলাে, ওই হত্যা তরুণদের যারা এখনো গণতন্ত্রের মারপ্যাঁচ বুঝতে শেখেননি তাদের এখন মঞ্চের উঁচুস্থানে বসিয়ে দেখানো হলাে আমাদের গণতন্ত্রের ‘মোজেজা’ কী!

 

নিম্ন আদালতে আফজাল গুরুর রায়ের গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলোয় তার প্রতিনিধি ছাড়াই বিচার পরিচালনা করা হয়েছে। সরকার এমন এক ‘মহান’ ব্যক্তিকে আফজাল গুরুর পক্ষে নিয়োগ করেছে যে কখনো আফজাল গুরুকে জেলে দেখতেই আসেনি, উল্টো বাদীপক্ষকে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছে। ফলে আফজাল গুরুর অপরাধ নিঃসন্দেহে প্রমাণিত হয়েছে দাবি করার কোনাে যৌক্তিকতা নেই।

ওই তরুণরা দেখলনে এক ব্যক্তিকে যেনতেনভাবে দাঁড়িয়ে করে দেয়া হলাে মৃত্যুর মুখোমুখি। এসব দেখে তাদের মনে কতােটা ক্রোধ জন্ম নিতে পারে? এই নমুনা কী তাদের ওই কাঙ্ক্ষিত মুক্তির পথে নিয়ে যাবে, নাকি নিয়ে যাবে অনন্ত সন্ত্রাসের পথে? ওই সন্ত্রাসের চক্রে তারাও বাধাও পড়বে এবং দেখা যাবে, আগামীকাল ভারত সরকার তাদেরও বুটের তলায় চেপে ধরেছে ‘দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষা’র নামে।

আমরা জানি, তখন সবেমাত্র আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার হচ্ছিল। ফলে পাকিস্তান পর্যন্ত এক ধরনের বিশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। এসবের ঢেউ আচড়ে পড়ে কাশ্মিরেও। তাই ওই অস্থিরতার আগুনে কেরোসিন ঢালে- ভারত যেমন ঢেলেছিল ১৯৮৭ সালের কাশ্মিরের নির্বাচনে। প্রশ্ন হলাে, কেন তারা এ ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজ করলাে?

দায়িত্বজ্ঞানহীন কেন বলেছি তা বলছি এবার। ২০০১ সালে যখন সংসদে হামলা হয় এবং এর কিছুদিন পর আফজাল গুরু গ্রেফতার হল। এর এক সপ্তাহের মধ্যে পাকিস্তানে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূতকে ফিরিয়ে আনা হয়। এমনকি সীমান্তে পাঁচ লাখ সৈন্য মোতায়েন করে ভারত। এর পেছনে আসল কারণ কী? আর তারা জনগণকে বােঝানোর চেষ্টা করে, আফজাল গুরু দিল্লির বিশেষ কারাগারে আছেন এবং পাকিস্তানভিত্তিক ‘জইশ-ই-মোহাম্মদ’ সংগঠনের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা স্বীকার করেছে। অথচ পুলিশের কাছে দেয়া আফজাল গুরুর ওই জবানবন্দি গ্রহণ করেননি উচ্চ আদালত। তাহলে যেটি আদালত গ্রহণ করেননি ওই তথ্যে সরকার বিশ্বাস করে ভারতজুড়ে যুদ্ধ অবস্থা সৃষ্টি করলো কেন?

ওই মামলার চূড়ান্ত রায়ের দিন শুধু ‘জনতার সামগ্রিক ইচ্ছা’কে সন্তুষ্ট করতে রায় দিয়েছে আফজাল গুরু বলে যে ‘বিখ্যাত’ বিবৃত আদালত দিয়েছিলেন তা আজ সবার জানা। এর বাইরে আদালত এও স্বীকার করে নিয়েছিলেন, আফজালের সঙ্গে কোনাে সন্ত্রাসী সংগঠনের সম্পৃক্ততার প্রমণে পাওয়া যায়নি। তাহলে কিসের ভিত্তিতে সামরিক আগ্রাসন করা হলাে? এতে অযথা সৈন্যদের জীবননাশের দিকে ঠেলে দেয়া হলাে, পাকিস্তানের সঙ্গে জীবনঘাতী নিউক্লিয়ার যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্করে সৃষ্টি হলাে, নাকি এর পেছনে গোপন কৌশল ছিল যা আমাদের আড়ালে ঘটে গেছে? আর হামলা যে হলাে তা কীভাবে হলাে এবং সেখানে আফজাল গুরুর ভূমিকা কী ছিল এ ব্যাপারে আমাদের সবার জানার অধিকার আছে।

নিরাপত্তা বিষয়ক সরকারি দায়িত্বশীলরা মনে করেন, ‘সন্ত্রাস দমন’ই সরকারের একমাত্র কাজ। এখন তো একটা গবেষণার দরকার পড়লাে যে, যারা টিভিতে যেনতেনভাবে সন্ত্রাস নির্মূলের পরামর্শ দেন তারা কী অস্ত্র কোম্পানিরগুলোর কাছ থেকে মাসোয়ারা পান কি না

 

ভারতীয় সংসদে হামলার ওই ঘোলাটে ঘটনাটি আসলে বেশ জটিল অবস্থানে ঠেলে দিয়েছে সবাইকে। বামপন্থী, ডানপন্থী, হিন্দুত্ববাদী, সেকুলার, জাতীয়তাবাদী, সমালোচক- সবার মুখে মনে হচ্ছে তালা এঁটে দেয়া হয়েছে। কিন্তু কেন?

হতে পারে জইশ-ই-মুহাম্মদ ওই ঘটনাটি ঘটিয়েছে। ভারতের ‘মিডিয়াখ্যাত’ সন্ত্রাসবাদ বিষয়ে অভিজ্ঞ প্রভিন স্বামীর দেয়া তথ্য মতে, ওই ঘটনার পেছনে আছে জইশ-ই-মুহাম্মদ। কিন্তু ওই সময় তেৎক্ষণাৎ ভারত সরকার ওই হামলার খবরাখবর কীভাবে পেল যার ভিত্তিতে সেনাবাহিনী মোতায়েন জরুরি হয়ে পড়লাে। তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম, জইশ-ই-মুহাম্মদই ওই হামলায় দায়ী। হয়তাে এর পেছনে আছে পাকিস্তানের আইএসআই । তাহলে এটি মনে করার কারণ নেই যে, ওই হামলায় পাকিস্তানের কোনাে হাত নেই (এসব ভারতও করেছে যেমন বাংলাদেশের ক্ষেত্রে মুক্তিবাহিনী ও শ্রীলংকার তামিল গ্রুপকে এভাবে সাহায্যের ঘটনাগুলো আমলে আনা যায়)।

চারদিকে এক অস্বস্তিকর অবস্থা। পাকিস্তানের সঙ্গে লড়াইয়ে কী অর্জন ভারত করেছে আর কী-ই বা করবে? (কিছু প্রাণ যাওয়া আর অস্ত্র ব্যবসায়ীদের পকেট ভারী হওয়া ছাড়া।) নিরাপত্তা বিষয়ক সরকারি দায়িত্বশীলরা মনে করেন, ‘সন্ত্রাস দমন’ই সরকারের একমাত্র কাজ। এখন তো একটা গবেষণার দরকার পড়ে, যারা টিভিতে যেনতেনভাবে সন্ত্রাস নির্মূলের পরামর্শ দেন তারা অস্ত্র কোম্পানিরগুলোর কাছ থেকে মাসোয়ারা পান কি না? তারা তো মনে হয় যুদ্ধও চান না, চান শুধু এমন একটা পরিস্থিতি যেখানে সামরিক ব্যয়ের গ্রাফ উপরের দিকে থাকে। দমন-পীড়নের ওই ধারণা তো যতটা ভাবা যায় এর চেয়েও আহাম্মকি। এভাবে বোমা কাদের মারবে? কয়জনকে মারবে? তাদের ব্যারাকে আর খাবারে মারবে? আচ্ছা, তাদের আদর্শে বোমা মারবে কীভাবে?

ভারত ভাবছে, তার সব সময়ের মতাে শক্তিশালী বাহিনী ও ম্যাকেভেলিয়ান প্রভাব দিয়ে একজনকে অন্যের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়ে সব ব্যবস্থা করে ফেলবে। কাশ্মীরের যুদ্ধকে তারা সেকুলার গণতন্ত্র বনাম চরমপন্থী ইসলামের মুখোমুখি যুদ্ধ হিসেবে হাজির করতে চায়

দেখেন, কীভাবে আফগানিস্তানে মার্কিন হামলা-অভিযান দিনের পর দিন ব্যর্থ হচ্ছে। এবার এখানে দেখুন, কোন কারণে পাঁচ লাখ প্রশিক্ষিত সেনাবাহিনী মিলেও কাশ্মিরের নিরস্ত্র জনতাকে দমাতে পারছে না এবং ভারতের ওই আগ্রাসী ভূমিকা ওই দেশের বাইরেও খাটাতে চাইছে। ভারতের যুদ্ধবাজ কর্মকর্তারা পাকিস্তানের ঐতিহাসিক বিভাজনের স্মৃতিচারণ করে সুখ নেয়। অথচ জ্ঞান ও ইতিহাসে যাদের নূ্যনতম জানা-শোনা আছে তারা জানেন ওই বিভাজনে আদতে কারো আনন্দ পাওয়ার হেতু নেই।

আফগানিস্তানে মার্কিন উপস্থিতিতে সঙ্গে ইরাক যুদ্ধ পরিচালনা। সেখানে আবার পাকিস্তানের উপস্থিতি মিলিয়ে ওই অঞ্চলটি বেশ আলোচিত হয়ে আসছে। বাকি দুনিয়া অন্তত জানে, আমাদের অঞ্চলে কী কী সংকট চলছে। কম বোঝাপড়া হওয়া ওই হাওয়াটাই পরাশক্তিগুলোর পালে দিচ্ছে। নির্বাচনের পরই তাহলে বালওয়ান্ত সিংয়ের ফাঁসিও হয়ে যাক পাঞ্জাবের প্রধানমন্ত্রী বিয়ান্ত সিংকে হত্যার অভিযুক্ত হিসেবে। তাহলে খালিস্তান আন্দোলনও চাঙ্গা হোক। এসব তো পুরনাে রাজনীতি।

ওই পুরানা রাজনীতি তো ঝামেলায় পড়বে। কয়েক মাস ধরে এটা শুধু রাজনৈতিক দলগুলোর চিত্র নয়, খোদ রাজনীতিই ওই জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে। বার বার হোক- সেটি দুর্নীতি, দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি, ধর্ষণ কিংবা নারীদের প্রতি সহিংসতা; সবক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে মধ্যবিত্তরা। তাদের জলকামান দিয়ে জল মারা হোক বা হোক লাঠিচার্জ। কিন্তু হাজারো মানুষকে গুলি বা জেলে পুরে দেয়া যায় না। একইভাবে দলিত, আদিবাসী, মুসলিম, কাশ্মীরি, নাগাবাসীদের ক্ষেত্রেও এ রকম হয় এবং হয়েই আসছে। এক্ষেত্রে পুরনো রাজনীতির চাল ছিল যদি আন্দোলন দমানো না যায় তাহলে আন্দোলনের মোর ঘুরিয়ে দিতে হবে। তারা জানে কীভাবে তা করতে হয়। এতে ভালাে কৌশল তখন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। ফলে হয়তাে হালকা যুদ্ধ আবস্থা দেখা দেয় যাতে সবাই ইঁদুর দৌড়ে ব্যস্ত থাকেন।

ওই অবস্থায় তারা কেন তাদের পরীক্ষিত অস্ত্র ‘কাশ্মির’কে ব্যবহার করবে না? আফজাল গুরুর হত্যা, সেটি ঘিরে প্রচার ও সময় খুব ইচ্ছাকৃত। এটি কাশ্মিরের রাস্তায় আবার ক্রোধ ও রাজনীতি ফিরিয়ে এনেছে।

ভারত ভাবছে তার সব সময়ের মতাে শক্তিশালী বাহিনী ও ম্যাকেভেলিয়ান প্রভাব দিয়ে একজনকে অন্যের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়ে সব ব্যবস্থা করে ফেলবে। কাশ্মিরের যুদ্ধকে তারা সেকুলার গণতন্ত্র বনাম চরমপন্থী ইসলামের মুখোমুখি যুদ্ধ হিসেবে হাজির করতে চায়। তাহলে তো ভাবাই যায় মুফতি বশিরউদ্দিন কাশ্মিরের গ্রান্ড মুফতি ফতোয়ার ওপর ফতোয়া দিয়ে প্রমাণ করতে চাইছেন কাশ্মির আসলে ওয়াহাবি সমাজে রূপান্তর হয়ে যাচ্ছে। তিনি কি সরকারি মওলানা না?

ফেসবুকে লিখে কাশ্মিরে কত শিশু জেলে গেল। অথচ তিনি দেদারসে ফতোয়া দিয়ে যাচ্ছেন। সৌদি আরবের টাকা যখন কাশ্মিরের মাদ্রাসায় ঢােকে তখন সরকার কেন অন্যদিকে তাকায়? তাহলে আফগানিস্তানে সিআইএ-র ভূমিকা থেকে আপনার তা আলাদা কোথায় ওই ব্যবসাই লাদেন তৈরি করে দেয়ায় আল কায়েদা-তালেবান-এর জন্ম। ওই ব্যবসাই আফগানিস্তান-পাকিস্তানকে অস্থিতিশীল করেছে। ভারতের ক্ষেত্রে ওই দুঃস্বপ্ন কেমন হবে?

সংকট হচ্ছে ওই পুরনাে রাজনীতির খেলা আর নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। তেজস্ক্রিয়ের মতাে বাড়ছে কেবল। মনে হচ্ছে, তার সঙ্গে মিলিয়ে কি না পাকিস্তান স্বল্প মাত্রার মিসাইল পরীক্ষামূলকভাবে ক্ষেপণ করেছে। দুই সপ্তাহ আগে ওই পরিপেক্ষিতে কাশ্মিরে পুলিশ পারমাণবিক যুদ্ধে করণীয় বিষয়ে নানান উপদেশ বিলি করেছে। সবাইকে দু’সপ্তাহের জন্য সবাইকে টয়লেটযুক্ত গারাজে অবস্থান নেয়ার পরামর্শের পাশাপাশি আরেকটি পরামর্শ দেয়া হয়। তা হলাে, “পারমাণবিক হামলা হলে গাড়িতে থাকলে দ্রুত বাইরে লাফ দিতে হবে যাতে গড়িয়ে যাওয়া গাড়ির নিছে চাপা না পড়ে।”

ঠিক ওই রকমই আমাদের তো চেনা-প্রিয় সময়গুলো কবেই হারিয়ে ফেলেছি। এখন হয়তাে আমাদের ওই গড়িয়ে যাওয়া গাড়ি থেকে দ্রুত লাফ দিয়ে বেরিয়ে আসতে হবে।