ভারতে রাষ্ট্রীয় বিচারিক হত্যাকাণ্ডের শিকার কাশ্মীরের আফজাল গুরুর এ সাক্ষাৎকারটি নেন বিনোদ কে জোশি। দিল্লির তিহার জেলের তিন নম্বর সেলে তার মোলাকাত পান ‘দি ক্যারাভান’ পত্রিকার এই নির্বাহী সম্পাদক। প্রায় এক ঘণ্টার বেশি চলতে থাকা আলাপের বৃহৎ অংশ অরুন্ধতী রায় সম্পাদিত ‘দি হ্যাংগিং অফ আফজাল গুরু অ্যান্ড দি স্ট্রেঞ্জ কেইস অফ দি অ্যাটাক অন দি ইন্ডিয়ান পার্লামেন্ট’ বই থেকে জবানের পাঠকদের জন্য অনুবাদ করে প্রকাশ করা হলাে–
বিনোদ কে জোশি : আফজাল-এর পরস্পর বিরোধী অনেক চরিত্র আছে। আমি কোনাে আফজালের সঙ্গে কথা বলছি?
আফজাল গুরু : আসলেই! যতটুকু জানি, আফজাল একজনই আছে এবং আমিই আফজাল।
যদি জিজ্ঞাসা করি পরিচয় কী এই আফজালের?
আফজাল : একজন উদ্যম, বুদ্ধিমান, আদর্শবাদী তরুণ আফজাল একজন কাশ্মীরি। কাশ্মীরের হাজার হাজার তরুণের মতো নব্বইয়ের দিকে জেকেএলএফ-এর সদস্য হয়ে সীমানার ওপারে (পাকিস্তান) ছিলাম। কয়েক সপ্তাহ পাকিস্তানের কাশ্মীরে থাকার পর মোহ কেটে যায় এবং ফিরে এসে সাধারণ জীবন যাপন করার চেষ্টা করি। কিন্তু নিরাপত্তা বাহিনীর হস্তক্ষেপের কারণে সাধারণ জীবন যাপন সম্ভব হয়নি কখনো। যখন-তখন ধরে এনে নির্যাতন করা হতো। ইলেকট্রিক শক দেয়া হয়েছে, বরফ চাপিয়ে দেয়া হয়েছে, পেট্রলে ডােবানো হয়েছে- কী করা হয়নি? মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হলো এবং কোনো আইনজীবী ছাড়া, কোনো ন্যায়বিচার ছাড়া শেষমেশ ফাঁসির রায়। পুলিশের বলা মিথ্যাগুলোই তো আপনারা প্রচার করেছেন। এর মাধ্যমেই জাতির একাত্মতা দেখা গেছে যেটা সুপ্রিম কোর্ট বলছেন ‘কালেক্টিভ কনসাইন্স অফ দি নেশন এবং জাতির এই একাত্মতা তুষ্ট করতে আমাকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়া হলাে। কিন্ত আমি চিন্তা করি বহির্বিশ্ব আমার কথা জানে কি না। আপনাকে প্রশ্ন করি, আমি কি সুযোগ পাবাে আমার কথা বলার? আপনি কি মনে করেন ন্যায়বিচার হয়েছে? আপনি কি কাউকে ফাঁসিতে ঝােলাবেন কোনো আইনজীবীর সাহায্য নেয়ার সুযোগ না দিয়ে কোনো ন্যায্যবিচার ছাড়াই, অপরাধীদের কথা না শুনে, তার জীবনে কত কিছু সহ্য করতে হয়েছে তা না জেনেই? গণতন্ত্র তো এসব সুযোগ দেয় না। দেয় কি?
এই মামলার আগের আপনার জীবন সম্পর্কে জানতে চাই…।
আফজাল : আমার শৈশব কাটে কাশ্মীরে অস্থির রাজনৈতিক পরিবেশের মধ্য দিয়ে। মকবুল বাট-কে ফাঁসিতে ঝােলানো হয় তখন। কাশ্মীরের জনগণ আরো একবার আশা করে, নির্বাচনের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে কাশ্মীরের দাঙ্গা-হাঙ্গামার অবসান হবে। মুসলিম ইউনাইটেড ফ্রন্ট (এমএফইউ) গঠিত হয় কাশ্মীরের মুসলমানদের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য। কিন্তু মুসলিম ইউনাইটেড ফ্রন্ট-এর জনপ্রিয়তা দেখে দিল্লি শঙ্কিত হয়ে পড়ে এবং বিপুল ব্যবধানে জয়ের পরও দলের নেতাদের কারাগারে পুরে দেয়া হয়। এর বিরুদ্ধে কাশ্মীরের তরুণরা রুখে দাঁড়ায় এবং সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু করে। আমি ঝিলাম ভ্যালি মেডিকাল কলেজের এমবিবিএস-এর ছাত্র। তখন জেকেএলএফ-এ যোগ দিয়ে সীমানা অতিক্রম করে পাকিস্তান যাই। কিন্তু আমার ভুল ভেঙে যায় যখন দেখি পাকিস্তানেও কাশ্মীরকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি ভারতের মতােই। আমি ফিরে আসি এবং বিএসএফ-এর কাছে আত্মসমর্পণ করি। ছাত্রত্ব বাতিল হওয়ায় ডাক্তার হতে না পারলেও ওষুধ ও ডাক্তারি সরঞ্জামের বিক্রেতা হিসেবে কাজ করতে থাকি।
আমাকে তারা বলে, আমি যেন স্বীকার করি পার্লামেন্ট আক্রমণে আমার ভাই শওকত, তার স্ত্রী নভজত, গিলানি ও আমি জড়িত ছিলাম। আমি প্রতিবাদ করি। কিন্তু তারা আমাকে হুমকি দেয়, ওই আক্রমণের দায় আমি না নিলে আমার পরিবার তাদের কব্জায় আছে
একটা দিনও আমার এসটিএফ (স্পেশাল টাস্ক ফোর্স)-এর হয়রানি ছাড়া কাটেনি। কাশ্মীরের কোথাও কোনো হামলা হলেই তারা আমাদের ধরে নিয়ে নির্যাতন করত এবং মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিত। শুধু ঘুষ দিলেই পাওয়া যেত মুক্তি। আমাকে ইলেকট্রিক শক দেয়া হয়, তাদের বাথরুম পরিষ্কার করানো হয়, ক্যাম্প ঝাড়ু-মোছার কাজ করানো হয়। হামহামার এসটিএফ ক্যাম্পে টর্চার করা হতাে ডিএসপি ভিনয় গুপ্তা এবং ডিএসপি দাভিন্দার সিংয়ের পরিচালনায়। আমাকে ইন্সপেক্টর শান্তি সিং টানা তিন ঘণ্টা ইলেকট্রিক শক দেয় যতক্ষণ না এক লাখ রুপি দিতে রাজি হই। ক্যাম্প থেকে ফিরে এলে মানসিক ও শারীরিকভাবে ভেঙে পড়ি। দিনের দিনের পর দিন বিছানায় পড়ে থাকা লাগতাে। ছয় মাস টানা বিছানায় পড়ে থাকি।
সংসদ হামলার মতো ইসুর সঙ্গে জড়ালেন কীভাবে?
আফজাল : এসটিএফ-এর ক্যাম্প থেকে আমার একটা শিক্ষা হয়, তাদের সহযোগিতা না করলে নিয়মিত নির্যাতিত হতে হবে। তাই ডিএসপি দাভিন্দার সিং যখন বলে মোহাম্মদকে দিল্লি নিয়ে আসতে হবে তখন রাজি না হয়ে উপায় ছিল না আমার। তখনই প্রথমবারের মতাে মোহাম্মদকে দেখলাম যে সংসদে হামলার মূল নেতৃত্বে ছিল। খেয়াল করেছি, দিল্লিতে অনেক মানুষের সঙ্গে দেখা করতে থাকে এবং একটা গাড়ি কেনেমোহাম্মদ। এরপর আমাকে ৩৫ হাজার রুপি দিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে বলে। আমি কাশ্মীরে ফিরে আসি। ঈদ তখন খুব কাছে।আসার পথে আমাকে গ্রেপ্তার করা হয় শ্রীনগর বাসস্ট্যান্ড থেক। পরে দিল্লিতে নিয়ে আসা হয়। দিল্লি পুলিশের টর্চার সেলে তাদের মোহাম্মদ সম্পর্কে যা জানতাম তা খুলে বলি। আমাকে তারা বলে, আমি যেন স্বীকার করি, পার্লামেন্ট আক্রমণে আমার ভাই শওকত, তার স্ত্রী নভজোত, গিলানি ও আমি জড়িত ছিলাম। আমি প্রতিবাদ করি। কিন্তু তারা আমাকে হুমকি দেয় ওই আক্রমণের দায় আমি না নিলে আমার পরিবার তাদের কব্জায় আছে এবং আমি স্বীকার না করলে সবাইকে তারা মেরে ফেলবে। এরই মধ্য মিডিয়ার অনেকের সঙ্গ আমার কথা বলতে হয় এবং আমাকে অনেক সাদা পৃষ্ঠায় সই করতে হয়।
আমিও বলতে তাই চাই। আমাকে ফাঁসি দিতে চাইলে দিতে পারেন। কিন্তু ওই ফাঁসি ভারতের বিচার ও রাজনৈতিক অধ্যায়ে একটি কালিমা হয়ে থাকবে
পুলিশ আমাকে বলির পাঁঠা বানায় তাদের ব্যর্থতা ঢাকতে। আমাকে অপরাধী বানানো হয় এবং পুলিশ অফিসাররা ওই কাজের জন্য পান বিভিন্ন সম্মাননা। কিন্তু এখনো মানুষ জানে না, পার্লামেন্ট আক্রমণের পেছনে কার হাত ছিল।
আপনি আইনি সহায়তা নেননি কেন?
আফজাল : আমার জন্য আইনজীবীর ব্যবস্থা করার মতো কেউ ছিল না। এমনকি বিচারে প্রথম ছয় মাস আমার পরিবারের কারো সঙ্গে আমার দেখা করতেও দেয়া হয়নি। আমার মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার ছিল আইনজীবী নেয়ার এবং চার আইনজীবীর নাম প্রকাশ করি আইনি সহায়তা পাওয়ার জন্য। কিন্তু বিচারপতি এসএন ধিংরা বললেন, তারা নাকি কেউই আমাকে আইনি সহায়তা দিতে রাজি নন। পরে আমাকে এক আইনজীবী ঠিক করে দেয়া হয় যিনি আমার সঙ্গে কথা না বলেই আদালতে দলিল পেশ করনে। তার সম্পর্কে আমিই কিছু জানতাম না। তার কোনাে কাজই ঠিকমতো করছিলেন না। এক সময় আমার মামলাটিই ছেড়ে দেন তিনি। এমন একটা মামলা কখনোই আইনজীবী ছাড়া লড়া যায় না এবং আমার ওই কাজটিই করতে হয়েছে এ দীর্ঘ সময়।
আপনি বিশ্ববাসীর কাছে কোনো আবেদন করতে চান?
আফজাল : আমার বিশেষ কোনো চাওয়া নেই। আমার যা বলার তা পিটিশনে বলেছি রাষ্ট্রপতির কাছে। আমার একটিই আবেদন, অন্ধ জাতীয়তাবাদ ও ভ্রান্ত উপলব্ধি দিয়ে চালিত হয়ে কোনো নাগরিক মৌলিক অধিকার থেকে যেন উপেক্ষিত না হয়। গিলানি-র মৃত্যুদণ্ডাদেশ হলে তিনি বললেন, ‘ন্যায়বিচারের মাধ্যমে শান্তি আসে।’ যেখানে ন্যায্যবিচার নেই সেখানে শান্তি নাই। আমিও তাই বলতে চাই। আমাকে ফাঁসি দিতে চাইলে দিতে পারেন। কিন্তু ওই ফাঁসি ভারতের বিচার ও রাজনৈতিক অধ্যায়ে একটি কালিমা হয়ে থাকবে।
আপনার অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ ছাড়া আর কী আপনাকে উদ্বিগ্ন করে?
আফজাল : আমাকে অনেক কিছুই উদ্বিগ্ন করে। হাজারো কাশ্মীরি দেশের বিভিন্ন জায়গার জেলে পড়ে আছে কোনো আইনজীবী ছাড়া, কোনো সুষ্ঠ বিচার ছাড়া এবং নেই মৌলিক অধিকার আদায়ের সুযোগ। শুধু কারাগার কেন, কাশ্মীরের রাস্তায় হাঁটতে থাকা কোনো সাধারণ নাগরিকের অবস্থাও এর বিপরীত নয়। কাশ্মীর খোদ একটা কারাগার। কাশ্মীরের মানুষ নিশ্বাসের সঙ্গে নির্যাতন গ্রহণ করে ও অবিচার ছাড়ে। খবরের পাতায় সাদ্দাম হােসেনের ফাঁসি দেখে ব্যথিত হই। মেসোপটামিয়ার ভূমি ইরাক- সবচেয়ে সভ্য জাতি যারা আমাদের গণিত শিখিয়েছে, ঘণ্টা নির্ণয় শিখিয়েছে, দিন নির্ণয় শিখিয়েছে। ওই জাতিকে কীভাবে আমেরিকা তিলে তিলে শেষ করছে। সন্ত্রাসবাদের বিরূদ্ধে যুদ্ধের নামে তারা পৃথিবীব্যাপী ঘৃণা ছড়াচ্ছে। আমি হয়তো বলতেই থাকবা। কিন্তু আমার উদ্বেগ কখনো শেষ হবে না।
ভারতীয় মিডিয়ার কাছে আমার আবেদন, ‘প্রপাগান্ডাযন্ত্র’ হিসেবে অন্যের স্বার্থে ব্যবহৃত না হয়ে সত্য খুঁজে বের করে প্রচার করুন। তারা খবর বিকৃত করে, অসত্য প্রচার করে, অসম্পূর্ণ রিপোর্ট করে কট্টরপন্থী তৈরি করে
আপনার পক্ষে তো প্রচার ক্যাম্পেইন চলছে। এ বিষয়ে কী বলবেন?
আফজাল : আমি কৃতজ্ঞ। হাজারো মানুষের কাছে আমি কৃতজ্ঞ যারা আমার বিরুদ্ধে হওয়া অবিচারের বিপক্ষে এগিয়ে এসেছে। যারা ন্যায্যবিচার চান তাদের কাছে অসম্ভব ছিল ঘরে বসে থাকা। গিলানি-কে মুক্তি দেয়ার পর অনেকেই পুলিশের দিকে আঙুল তোলেন। যতই মানুষ মামলার ব্যাপারে জানা শুরু করলাে ততই সচেতন হতে থাকলাে এবং আওয়াজ তুলতে লাগলাে।
আপনার স্ত্রী তাবাসসুম ও ছেলে গালিব-এর কথা চিন্তা করে বিচলিত হন না?
আফজাল : এ বছর আমার বিয়ের ১০ বছর পূর্ণ হবে। অথচ এর অর্ধেক সময় জেলেই কাটিয়েছি। এর আগেও বিভিন্ন সময় এসটিএফ-এর নির্যাতনের শিকার হয়েছি। তখন তাবাসসুম আমার পাশে ছিল। শুধু আমার একার নয়, বেশির ভাগ কাশ্মীরি দম্পতির গল্পই এমন। প্রতিটি কাশ্মীরি পরিবারই ওই ভয়ে দিনযাপন করে। এতকিছুর মধ্যেও আমাদের ছেলে হওয়ার পর আমরা খুশি ছিলাম। বিখ্যাত কবি মির্জা গালিব-এর নাম অনুসারে ছেলের নাম রাখি গালিব। গালিবের দ্বিতীয় জন্মদিনের পর আমাকে ওই মামলায় বন্দি করা হয়।
কাশ্মীরের রাজনৈতিক অস্থিরতার সমাধান কী বলে আপনি মনে করেন?
আফজাল : সরকারের উচিত প্রথমত. কাশ্মীরের প্রতি আন্তরিক হওয়া এবং তাদের সঙ্গে কথা বলা যারা সত্যিকার অর্থেই কাশ্মীরকে প্রতিনিধিত্ব করে। এর মাধ্যমেই কেবল সমাধান সম্ভব। কিন্তু সরকার যদি এখনো চায় শান্তি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কাশ্মীরি জনগণের বিদ্রোহের সমাধান করতে তাহলে তা কোনোদিনও হবে না। এখনই উপযুক্ত সময়, সরকারের উচিত কাশ্মীরের প্রতি আন্তরিক হওয়া।
কারা এই প্রতিনিধি?
আফজাল : খুঁজে বের করুন কাশ্মীরের মানুষ কী চায়। নাম ধরে বলতে চাই না। ভারতীয় মিডিয়ার কাছে আমার আবেদন, ‘প্রপাগান্ডাযন্ত্র’ হিসেবে অন্যের স্বার্থে ব্যবহৃত না হয়ে সত্য খুঁজে বের করে প্রচার করুন। তারা খবরকে বিকৃত করে, অসত্য প্রচার করে, অসম্পূর্ণ রিপোর্ট করে কট্টরপন্থী তৈরিতে ভূমিকা রাখে। এতে খুব সহজেই মিডিয়াগুলো গোয়েন্দা সংস্থার ফাঁদে পড়ে। তাই কাশ্মীর বিষয়ে ভুল তথ্য প্রচার করা বন্ধ করা উচিত সবার আগে। দেশের জনগণের জানা উচিত কাশ্মীরের আসল সত্য। সরকার যদি কাশ্মীরিদের কথা ও ইচ্ছা আমলে না নেয় তাহলে ওই দ্বন্দ্ব চলতেই থাকবে। আর কীভাবে কাশ্মীরি জনগণ আপনাদের বিশ্বাস করবে যদি কোনো কাশ্মীরিকে সুষ্ঠু বিচারের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেন? আইনজীবীর সাহায্য ছাড়া যার ফাঁসির বিরুদ্ধে লড়তে হয়? সমস্যার ভেতরে না গিয়ে ওপর থেকে পানি ঢাললে কি কাশ্মীরের দ্বন্দ্ব দূর হবে? না, কখনোই তা হবে না।
পার্লামেন্ট হামলায় ৯ জন নিরাপত্তা কর্মী মারা যান। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী?
আফজাল : আমি জানি, তাদের পরিবার এখন কী পরিমাণ কষ্টের মধ্যে আছি। আমিও তাদের কষ্টের অংশীদার। কিন্তু তাদের জন্য দুঃখবোধ করি। কারণ তারা ভাবছে, একজন নিরপরাধকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তাদের সন্তুষ্টি আসবে।
আপনার জীবনের অর্জন বলতে আপনি কী দেখেন?
আফজাল : আমার সঙ্গে ঘটে যাওয়া অবিচারের বিপক্ষে হওয়া ক্যাম্পেইন এবং এসটিএফের আসল রূপ প্রকাশিত হওয়া আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন। আমি খুশি, মানুষ এখন নিরাপত্তা বাহিনীর নৃশংসতা, টর্চার ক্যাম্প ইত্যাদি নিয়ে কথা বলছে। এসব বাস্তবতা মেনে নিয়েই কোনো কাশ্মীরি বেড়ে ওঠে। কাশ্মীরের বাইরের মানুষ আন্দাজও করতে পারবে না ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী কাশ্মীরে কী করে! যদি আমাকে কোনো অপরাধ ছাড়াই ফাঁসিতে ঝােলানোও হয়, এর কারণ হবে তারা সত্যের মুখোমুখি হতে ভয় পায়।
আপনি কীভাবে পরিচিত হতে চান?
আফজাল : আফজাল হিসেবে, মোহাম্মদ আফজাল হিসেবেই পরিচিত থাকতে চাই। আমি আফজাল কাশ্মীরের জন্য, ভারতের জন্য। স্বাভাবিকভাবেই কাশ্মীরের মানুষের সিদ্ধান্তে বিশ্বাস করবাে। এ জন্য না যে আমি কাশ্মীরি। কারণ কাশ্মীরের মানুষ জানে, কী পার করে এসেছি। তাদের কোনােভাবেই ভুল বােঝানো যাবে না। কেননা তারাও এই পরিস্থিতির সঙ্গে পরিচিত।