গাজায় চলমান ইসরায়েলি অবরোধের মুখে নতুন করে ভয়াবহ মানবিক সংকট শুরু হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের সহযোগী সংস্থা কো-অর্ডিনেশন ফর হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাফেয়ার্স (OCHA) কতৃপক্ষ। বিশেষ করে আগামী ১০ দিনের মধ্যে গাজা উপত্যকায় বিদ্যুৎ এবং জ্বালানির মজুদ শেষ হয়ে যাবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটির গতকাল প্রকাশিত এক বিবৃতিতে। এমন অবস্থার প্রেক্ষিতে জাতিসংঘ জানিয়েছে দ্রুত আর্থিক সহায়তা না পেলে এই অঞ্চলের মানুষকে চরম ভোগান্তির সম্মুখীন হতে হবে। ইসরায়েলের অব্যাহত আগ্রাসনের মুখে গাজায় কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি হতে পারেনি। তাই মূলত বহির্বিশ্বের অনুদান ও মানবিক সহায়তার উপরেই গাজার নাগরিকদের নির্ভর করতে হয়।
এদিকে জাতিসংঘ তাদের এক প্রতিবেদনে জানায় গাজায় বর্তমানে প্রায় বিশ লাখ মানুষের জনবসতি রয়েছে যার মধ্যে অর্ধেকের বেশি নারী ও শিশু। এমতাবস্থায় গাজায় জ্বালানি এবং বৈদ্যুতিক সংকটের ফলে সেখানে পানি সরবরাহ, স্বাস্থ্য এবং পয়ঃনিস্কাশনের উপর মারাত্মক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন গাজায় দায়িত্বরত বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীরা।
২০১৮ সালে গাজার অভ্যন্তরীণ প্রয়োজন মেটানোর জন্য ৭ দশমিক ৭ মিলিয়ন লিটার জ্বালানি তেলের দরকার যার আর্থিক মূল্য ৬ দশমিক ৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। জাতিসংঘের ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয় গাজায় স্বাস্থ্য চিকিৎসাসহ বিভিন্ন খাতের পেছনে প্রতি মাসে ১ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলারের প্রয়োজন। সেদিক দিক দিয়ে বছরে প্রয়োজন ১০ মিলিয়ন ডলারের বেশি। এই আর্থিক অনুদান নিশ্চিত করতে না পারলে গাজায় হাসপাতাল, বর্জ্য-নিষ্কাশনসহ অন্যান্য খাতে চরম বিপর্যয় হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য যে গাজায় হামাস-নিয়ন্ত্রিত ইসলামী সরকার ক্ষমতায় থাকার ফলে বিভিন্ন ভাবে এই অঞ্চলের উপর ইসরায়েলি প্রশাসনের কঠোরতা তুলনামূলক অন্যসব শহর থেকে সর্বাধিক। তাছাড়া ফাতাহ নিয়ন্ত্রিত পশ্চিম তীরের সাথেও তার যোগাযোগের ব্যবস্থা সুবিধাজনক নয়। ফলে বিভিন্ন স্থানে গাজার অধিবাসীদের আন্তর্জাতিক সাহায্যের উপর নির্ভর করেই চলতে হয়। এমন কি ঔষধ থেকে শুরু করে বিভিন্ন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পর্যন্ত ত্রান-সরবরাহকারী কতৃপক্ষের সহায়তা ছাড়া পাওয়া যায় না।
এমতাবস্থায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে গাজায় দ্রুত মানবিক সহায়তা পাঠানোর দাবি জানিয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো। হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাফেয়ার্সের মুখপাত্র রাবার্তে ভেলেন্ট বলেন, “সহায়তার অভাবে গাজার হাসপাতালগুলো এখন বন্ধ হবার উপক্রম হয়েছে। কিছু হাসপাতাল ইতোমধ্যে বন্ধ হয়েও গেছে। খুব দ্রুত যদি সহায়তা না পাওয়া যায় তবে এখনের পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। যার প্রভাব পড়বে গাজার সব বাসিন্দাদের উপর। আমরা কোনোভাবেই এমনটি হতে দিতে পারি না।”