আফগানিস্তান যুদ্ধে আমেরিকার ব্যয় প্রতি বছর প্রায় ৪৫ বিলিয়ন ডলার। বার্ষিক ওই ব্যয়ের প্রায় ৫ বিলিয়ন প্রদান করা হয় আফগান বাহিনীকে এবং ১৩ বিলিয়ন খরচ হয় আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনীর পেছনে। বাকিটা চলে যায় নানন সামরিক রসদ জোগাতে। এমনটিই দাবি করেছেন মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের এশীয় কর্মকর্তা র্যান্ডাল স্ক্রিভার।
আফগানিস্তানের কাবুলে এক অতর্কিত হামলায় প্রায় ২০০ জন নিহত হলে সিনেট বৈদেশিক সম্পর্ক কমিটির জরুরি শুনানিতে র্যান্ডাল স্ক্রিভার ওই তথ্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ১৭ বছর ধরে চলমান ওই যুদ্ধে সবচেয়ে খরচের পাল্লা ভারী ছিল ২০১০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত। ওই সময়ে প্রায় এক লাখ মার্কিন সৈন্য আফগানিস্তানের নানান ফ্রন্টে লড়াই করেছিল। তখন বিশাল ওই সেনাবাহিনীর জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে গুনতে হয়েছিল বছরে ১০০ বিলিয়ন ডলার। বর্তমানে সেটি কমে প্রায় ১৬ হাজার মার্কিন সৈন্য সেখানে অবস্থান করছে বলে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জানা গেছে।
ওই ব্যাপক যুদ্ধ ব্যয় নিয়ে নানান মন্তব্যে উত্তপ্ত রিপাবলিকান ও ডেমক্রেটিকরা। তবে মাস ছয়েক আগে আফগানিস্তানে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে বার্তা দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এছাড়া তিনি পরিস্থিতির ওপর ছেড়ে দেন ওই লড়াইয়ের তীব্রতা।
আফগানিস্তানে দুই মাস যুদ্ধ চালাতে যুক্তরাষ্ট্রের যা ব্যয় হয় ওই অর্থ দিয়ে প্রতিটি প্রদেশে মাদক নিরাময় কেন্দ্র স্থাপন করা যায়
রিপাবলিকান ও ডেমক্রেটিকদের অনেকেই ওই সিদ্ধান্তের সঙ্গে দ্বিমত করেছেন। রিপাবলিকান সিনেটর র্যান্ড পল বলেন, কোটি কোটি ডলার শুধু শুধু আফগানিস্তানের ঝুড়িতে ছুড়ে অপচয় করা হচ্ছে। তিনি ওই অবস্থার সহসা উন্নতির আশা দেখছেন না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
অন্যদিকে ডেমক্রেটিকপন্থী সিনেটর এড মারকে মনে করেন, ওই যুদ্ধে বরাদ্দকৃত অর্থ মাদকাসক্তিসহ নানান জীবনবিনাশকারী রোগ থেকে আমেরিকার নাগরিকদের বাঁচাতে কাজে লাগানো যেত। এক গবেষণা-তথ্যের বরাতে তিনি জানান, আফগানিস্তানে দুই মাস যুদ্ধ চালাতে যুক্তরাষ্ট্রের যা ব্যয় হয় ওই অর্থ দিয়ে প্রতিটি প্রদেশে মাদক নিরাময় কেন্দ্র স্থাপন করা যায়।
ডেমক্রেটিকপন্থী আরেক সিনেটর জেফ মার্কলে আফগানিস্তানের বর্তমান রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা অবস্থার চিত্র তুলে ধরে বলেন, সশস্ত্র বাহিনী দ্বারা তালেবান-কে শান্তির পথে আনার চিন্তা একেবারেই কল্পনাপ্রসূত।
জেফ মার্কলে-র মতে, ২০০১ সালের শাসন করা অঞ্চলের প্রায় দ্বিগুণ এলাকা এখন তালেবান নিয়ন্ত্রণ করছে। ফলে কেনই বা তালিবানরা যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক প্রস্তাবিত রাজনৈতিক সমঝোতায় রাজি হবেন ওই উত্তর খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি।
এছাড়া মার্কিন স্টেট বিভাগের ডেপুটি সেক্রেটারি জন সালিভান কাবুল ভ্রমণ করেছেন এবং আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানিসহ সরকারি অনেক ব্যক্তির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তিনি বলেন, আফগানিস্তানে মার্কিন পরিস্থিতি খুব ভালাে নয়।
জন সালিভান দাবি করেন, আফগান সরকার ও তালেবান-এর মধ্যকার বরফ গলাতে কাজ করবে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু গত সপ্তাহে ট্রাম্প ঘোষণা দেন, কোনাে চরমপন্থী গ্রুপের সঙ্গে বসবে না যুক্তরাষ্ট্র। তবে সালিভান মনে করেন, আফগান বিদ্রোহী গ্রুপগুলো একাট্টা নয়। এবং ট্রাম্পের উচিৎ তালেবানের কয়েক ব্যক্তির মৌলিক কিছু বিষয়ে মনােযোগ দেয়া যার মাধ্যমে ওই চরমপন্থী দলগুলোর সাথে একটি ঐক্যমতে পৌছানো যায়।
প্রতিরক্ষা সেক্রেটারি জিম ম্যাতিস অবশ্য আফগানিস্তানে সৈন্য মোতায়েন জারি রাখার পক্ষে মত দেন। তিনি মনে করেন, এর মাধ্যমে নাইন-ইলেভেনের মতাে ঘটনা এড়ানো সম্ভব। স্থানীয় সশস্ত্র সেবা কমিটির উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নীতি হচ্ছে, ‘তার শক্রকে সমঝোতার রাস্তায় আনতে বাধ্য করা’।