তাজমহল হবে তাজমন্দির : বিনয় কাটিয়ার

তাজমহল হবে তাজমন্দির : বিনয় কাটিয়ার

ভারতীয় জনতা পার্টির এমপির নামের শুরুতে ‘বিনয়’ কথাটি থাকলেও বিনয় কাটিয়া-র কথা-বার্তায় বিনয়ের লেশমাত্র নেই। তিনি উদ্ধত বক্তব্য দিয়ে মোদির ভারত যে উগ্রবাদের স্বর্গভূমি হতে চলেছে ওই বার্তাই পুনরায় দিলেন। বিজেপির এমপি বিনয় কাটিয়ার মঙ্গলবার এক বক্তব্যে বলেন, তাজমহল-কে ‘তাজমন্দির’-এ রূপান্তর করা হবে। তার ওই বক্তব্যের পর জনগণের মধ্যে তীব্র সমালোচনার ঝড় ওঠে। বিশেষ করে ফেসবুক-টুইটারের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোয় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।

কাটিয়া এমন সময় ওই বক্তব্য দিলেন যখন আগ্রা-য় চলছে ঐতিহ্যবাহী তাজ উৎসবের প্রস্তুতি। প্রতি বছরের মতো এবারও ১৮ থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই ১০ দিন আগ্রা-র শিল্প গ্রামে তাজ উৎসবের আয়োজন করা হবে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আদিত্য নাথ। এই অনুষ্ঠান বিষয়ে ‘টাইমস নাও’-এর সঙ্গে এক আলাপে বিনয় কাটিয়া বলেন, ওই উৎসবকে আপনি তাজ মহোৎসব বা তাজ উৎসব যা খুশি বলতে পারেন। তবে এটিকে খুব দ্রুতই তাজমন্দিরে রূপান্তর করা হবে।

‘টাইমস নাও’-এর টুইটার থেকে

 

ভারতীয় গণমাধ্যম টাইমস নাওয়ের সঙ্গে আলাপে বিনয় কাটিয়া বলেন, এক সময় দেখবেন, প্রশাসনের কতিপয় ব্যক্তি তাজমহলের সমাধিস্থল ভেঙে ফেলছে এবং ওখানে নির্মাণ করা হবে তাজমন্দির। তিনি বলেন, তাজমহল আমাদের ঐতিহ্য। এটিকে মন্দিরে রূপান্তর করতে পারলে জাতীয় পর্যটন খাত উন্নতিতে ভূমিকা রাখবে।

বিনয় কাটিয়া দাবি করেন, ‘তাজমহল এখন যেমন আছে তেমন ছিল না, আওরঙ্গজেবের সময়ে এটি আমাদের মন্দির ছিল।’

উল্লেখ্য, মোগল সম্রাট শাহজাহান ১৬৩২ সালে তাজমহল নির্মাণ করেন। তার প্রিয়তমা মমতাজ-এর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পৃথিবীর ওই অত্যাশ্চার্য মহলটি নির্মাণ করে ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন তিনি। সারা দুনিয়ার মানুষের কাছে এটি প্রেমের অনন্য নিদর্শন হিসেবে বিশেভিাবে খ্যাত। একটি বাগান ও সুন্দর মসজিদ নিয়ে অনন্যা নকশার ওই স্থাপত্যটি পৃথিবীর ঐতিহ্যের অংশ অনেক দিন থেকেই।

ওই ঐতিহাসিক স্থাপনার ওপর উগ্রবাদী আগ্রাসনের নিন্দা জানিয়েছেন বিভিন্ন ব্যক্তি ও সামাজিক সংগঠন। রাজ্যসরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তাজ উৎসবের আয়োজনের উদ্দেশ্য কোনােভাবেই এটিকে ‘তাজমন্দিরে’ রূপান্তর করা নয়। স্থানীয় প্রসাশনের কর্মকর্তারা নিয়ম মেনেই ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করছেন বলে স্থানীয় সরকার থেকে জানানো হয়। অন্যদিকে বিনয় কাটিয়ার ওই বক্তব্যের দায় প্রশাসন নিতে চাইছেন না। তবে কোনো এমপির এমন উগ্রবাদী বক্তব্য ইতিহাসকে বিকৃতভাবে উস্থাপনের জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট সমাজকর্মীরা। তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এমপির দিক থেকে এখনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

ওই প্রেক্ষাপটে এক পাঠক টুইটারে মন্তব্য করেছেন, ‘ভারতীয় সমাজে হিন্দু উগ্রবাদকে যে রাষ্ট্রীয়ভাবেই পোক্ত করার আয়োজন চলছে তা ওই বক্তব্য এরই নগ্ন প্রমাণ মাত্র।’