বিদায়
একটা পয়েন্ট অব্দি এসে তোমাকে হারিয়ে ফেলেছি।
ওরা এক ঊষর মৃত্যুভূমি তৈরি করে সেটাকে শান্তিকুঞ্জ নাম দিতে চেয়েছে।
তুমি চলে গেলে, পাথরগুলো পর্যন্ত পুঁতে দেয়া হলো,
যাতে করে, যেসব মানুষেরা এমনিতেই মরবে, তাদের হাতে কোনো অস্ত্র উঠে না আসে।
ভেড়া যখন পাহাড়ের গায়ে গা ঘষে, কে তার গায়ের থেকে খসে পড়া লোমগুলোকে তুলে তুলে রাখে?
হে তাঁতি, তোমার সেলাই হাওয়ায় সম্পূর্ণ মিলিয়ে যায়, আর তুমি বেনের দাঁড়িপাল্লায়
সেই লোম ওজন করে দেখাে?
স্বর্গের ফটকে আজ রাতে পাহারাদার কে?
আমার স্মৃতি আবার একবার তোমার ইতিহাসের উল্টোদিকে এসে দাঁড়িয়েছে।
তামাম রাত ক্যারাভানের মতাে আর্মি কনভয় গুলি চারণরত।
সমস্ত শীত নিভন্ত হেড লাইটের তেলচিটে ধোঁয়ায় গলন্ত সময়– গুঁড়ন্ত বীজ,
ওদের কী জিজ্ঞেস করা যায়– পৃথিবীটাকে নিয়ে যা যা করার সব করে ফেলেছে কি না?
লেকের জলে মন্দির আর মসজিদের ছায়া এ ওকে জড়িয়ে।
আর তোমার ছায়ার গায়ে যে দেশটাকে আমি সুই দিয়ে সেটেছি,
তাতে কয়েকশ’ বছর পর যখন ওরা এমনি জড়াজড়ি করেই আবিষ্কৃত হবে, তখন
ওদের গায়ে ঢালবার জন্যে যথেষ্ট পরিমাণ জাফরান শুকিয়ে রেখেছ তো?
এ দেশে বেরোলে, হাতে দরজা নিয়ে বেরোতে হয়।
বাচ্চাদের জন্যে, জানলা।
আলোকিত করিডাের বেয়ে– টেনে টেনে– নিয়ে যেতে হয়।
সুইচ মেরে দিলেই সমস্ত কিছু থেকে বলপূর্বক বিচ্ছিন্নতা।
♦
একটা পয়েন্টে এসে আমি তোমায় হারিয়ে ফেলেছি।
আমাকে তোমার প্রয়োজন ছিল, উপযুক্ত করে তোলার প্রয়োজন:
তোমার অনুপস্থিতি আমাকে মেজে-ঘষে তোমার শত্রু বানিয়ে তুলেছে।
তোমার ইতিহাস আমার স্মৃতির উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে।
তোমার যা কিছু হারিয়েছে, সবই আমি। তুমি আমাকে ক্ষমা করতে পারােনি।
তোমার যা কিছু হারিয়েছে, সমস্ত আমি– তোমার একদম লাগসই শত্রু।
তোমার স্মৃতি আমার স্মৃতির পথে বাধা।
একটা নরকের নদী বেয়ে দু’পাশে স্বর্গের সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে চলেছি:
হে মহীয়ান প্রেত, এখন রাত,
হাতে দাঁড়ের মতাে হৃদয়, পােরসিলিনের ঢেউ চুরমার করতে করতে এগোচ্ছে।
এখনাে রাত বাকি। হাতে দাঁড়ের মতাে পদ্ম:
আর আমাকে নৌকোয় চাপিয়ে নিয়ে যেতে যেতে তার পাপড়িগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে, আমার প্রতি যেন বা কৃপাশীল মৃদু থেকে মৃদুতর বাতাসের দিকে।
তোমাকে নিজের করে নিতে পারলে, পৃথিবীতে আর কি না হতে পারতাে?
তোমার যা কিছু হারিয়েছে সমস্ত আমি। তুমি আমাকে ক্ষমা করতে পারাে না।
আমি আমার যন্ত্রণার ব্যাপারগুলো নিজের থেকেও গোপন রেখেছি; আমার যন্ত্রণা আমি শুধু নিজেকে খুলে দেখাই।
সবকিছু ক্ষমা করা যায়। তুমি আমাকে ক্ষমা করতে পারােনি।
শুধু যদি তোমাকে আমার নিজের করে নিতে পারতাম,
পৃথিবীতে আর কী না করা যেত?
(প্যাট্রিশিয়া ও’নিলের জন্য)
♦ ♦ ♦
‘কাশ্মীরের জগৎ যে রকম’
‘গোলাপ যদি ঘুষ দেয়া যেত,
আমহার্স্ট থেকে কাশ্মির অব্দি যত ফুল ফোটে,
সব দিতাম ওদের’
–এমিলি ডিকিনসন
এক.
এদিকে ফোনটা বাজলো আমহার্স্টে : ‘তোমার ঠাকুমা মারা যাচ্ছেন। আমাদের গ্রামটা– ফ্লাড চ্যানেলের উপরে মজহুর বলে যে ব্রিজটা– তার ওইপারে।’
‘এ রকম কোনো গ্রামের কথা আমি জানি না!’
‘পড়ে গিয়ে ভীষণ আঘাত পেয়েছেন। এদিকে সর্বত্র কারফিউ। নিয়ে আসার কোনো উপায় নেই। রাস্তা-ঘাটের অবস্থা সাংঘাতিক। আশপাশের বাড়ির কেউ কেউ এরই মধ্যে মারা গেছে।’
এ রকম কোনো গ্রাম কখনো ছিল না।
‘আমরা-তোমার মায়ের মা-দের দিকের লোকজন বাবা। তুমি আমাদের কথা শুনেছ! আমরা কলকাতায় সিল্ক কার্পেটের ব্যবসা করতাম। এখন আমাদের অবস্থা খুব পড়ে গেছে তো, তাই হয়তাে চিনতে পারছ না!’
দুই.
ফোন নামিয়ে রেখে আমি বাইরে রোদের ভেতর ছুটে যাই, শ্রীনগরে, সেই মেয়েটির বাড়ির দিকে। বাগানের লাগোয়া বাড়ি। তার যে সাজগোজের আয়নাটা– সিকন্দর মরার পরেও যেটা কষে পরিষ্কার করে চলেছে, সেটা ছাড়া অন্য সমস্ত কিছু আর্মি থেকে ক্রোক করে নিয়েছে। বাড়িটাকে ঘিঞ্জি অফিস বানিয়েছে, আর পুরনো ফোনের ওপর, স্যাঁতসেঁতে ফাইলের ওপর, ভাঙা ডেস্কের ওপর রাশি রাশি ধুলো জমা করেছে। তার বাইরের ঘরটায় একজন ক্লার্ক বসে নির্দেশ শুনে শুনে টাইপ করে। যে কর্নেলটি পায়চারী করতে করতে কী লিখতে হবে না হবে– সেসব বলছিল, সে একবার ঘুরে তাকাতেই দেখি, বীর! আমার হারানো বন্ধু! শ্রীনগর তো তারও শহর। সেটাকে জ্বালিয়ে দেবার অর্ডারটা তার হবার কথা নয়। না, বোধহয় বীর নয় । কিন্তু ওই রকমই দরদি হাসি, আর মুখটাতেও ওরই মতাে– একটা দেশকে রক্ষা করার, একটা শহরকে গুঁড়িয়ে দেবার স্বপ্নমাখা ।
‘আমার ঠাকুমার খুব অসুখ। আমার সঙ্গে প্লিজ কাউকে দিতে পারেন? প্লিজ। আপনাদের একটা কোনো জিপ আমাকে একটু আমার গ্রামে ছেড়ে দিতে পারে?’
তিন.
তার ঘরে তার বাবার একটা ছবির ওপর রোদ পড়েছে। হাতে আঁকা ছবি– তার মধ্যে থেকে তিনি তাকিয়ে আছেন, পলকহীন, সকালবেলার সূর্যের দিকে।
আর ঠিক তখনি তার গ্রামের অন্য লোকেরা আর তার মৃত ভাই তার দেহটাকে পপলার গাছের বনের ভেতর দিয়ে বহন করে আনছে, গোলাপ বাগানের পাশ দিয়ে, ধীরে। আমি ছুটে বেরোলাম : ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, তুই বেঁচে আছিস ! সে তার ভাইকে বলছে, ভাগ্যিস, তুই এসব বিশ্রী ব্যাপার শুরু হবার আগেই মরে গেছিস! আমার বাড়িটাকে ওরা আবার অফিস বানিয়েছে! তোকে বসতে-টা দিতাম কোথায়?
চার.
আয়নাগুলো তার অনুপস্থিতিতে ম্লান হয়ে ছিল। দৌড়ে গেল– দরজা থেকেই তাকে আদর করে ভেতরে নিয়ে আসতে। তার-ই তো বাড়ি। সিকন্দর রেডিওতে মজহুরের গান লাগিয়েছে, রাজ বেগমের গলায় : ‘আমার কাছে এই গোটা পৃথিবীর চেয়ে তোমার দাম বেশি।’ আমার সমস্ত শৈশব যে সূর্যের আলোয় আলোকিত, সেই সূর্যের নিচে আমি তার হাত ধরেছি, যে সূর্য চোখের জলের ফোঁটায় উজ্জ্বল, আর সেই জলের মধ্যে খোলা জানলা দিয়ে তার কণ্ঠ ধ্বনিত, ঈশ্বর দয়াময়, ঈশ্বর আমাদের দেখছেন।
♦ ♦ ♦
প্রিয় শাহিদ,
‘যে মতবাদই হোক, তা এত মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার পক্ষে যথেষ্ট নয়, সে যদি রাশিয়ানদের মতে রাশিয়ার অবিভক্ততাও হয়।’
–এলেনা বনার, চেচনিয়া নিয়ে ইয়েলত্সিনকে লেখা খোলা চিঠি
‘কোনো মানুষের বা কোনো দলেরই একটা গোটা শহরকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার অধিকার নেই।
-চার্লস সিমিচ
এক দূরদেশ থেকে এই চিঠিটা লিখছি। আমরা যারা এখানেই থাকি, তাদের পক্ষেও বেশ দূর। এখানে কেউ আর ঠিক বসবাস করে না। পকেটে চিরকুটে লেখা ঠিকানা নিয়ে বেরোয় যাতে তাদের দেহটা অন্তত দিনের শেষে ঘরে ফিরে আসে।
এ শহরে এমনিতেই কথা ওড়ে। কিন্তু সীমান্তের শহরতলিগুলো থেকে এখনো খবর এসে পৌঁছায় : পুরুষদের সব সারা রাত খালি পায়ে বরফের মধ্যে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিল। মেয়েরা ঘরে একা। আর সৈন্যরা হাতে হাতে বাড়িগুলোকে টুকরো টুকরো করছিল– রেডিও, টেলিভিশন আছড়ে চুরমার।
তুমি নিশ্চয় রিজওয়ানের খুন হবার খবরটা পেয়েছ। রিজওয়ান : স্বর্গের দরজার একজন পাহারাদার। মোটে আঠেরো বছর বয়েস। গতকাল হাইড আউট কাফে-তে (ওখানে কিন্তু সবাই তোমার কথা জিজ্ঞেস করে) একজন ডাক্তার– সবে একটা ষোলো বছরের ছেলেকে দেখে এসেছেন– ইন্টারোগেশন সেন্টার থেকে বেরিয়েছে ছেলেটি– বলছিলেন : এই সব জ্যোতিষীর কাছে আমার একটা প্রশ্ন আছে : এই ছেলেটার ভাগ্যরেখায় কী লেখা ছিল, যে ওর হাত দুটো ছুরি দিয়ে কেটে ফেলা হবে?
এই চিঠিটা– ইনশাআল্লাহ– কাল আমার ভাই যখন সাউথের দিকে যাবে, তখন পোস্ট করে দেবে। এ পোড়া জায়গায় পোস্টেজ স্ট্যাম্প অব্দি পাওয়া যায় না আজকাল। আজ আমি নদী পেরিয়ে পোস্ট অফিস গিয়েছিলাম। শ’-এ শ’-এ ক্যানভাসের ব্যাগ ভর্তি বিলি না-হওয়া চিঠি। ভাগ্য ভালো, আমি কি কারণে মাটির দিকে তাকিয়েছিলাম, আর তাইতে তোমার নামে লেখা এই চিঠিটা চোখে পড়অিৈ। তাই এটাও একই সঙ্গে পাঠিয়ে দিলাম। আশা করি, তোমার খুব কাছের কোনো মানুষের লেখা এটা– যার খবর পাবার জন্য তুমিও হয়তো উন্মুখ হয়ে আছ–
এখানকার ব্যাপার-স্যাপার সব একই রকম, আর আমরা সব সময় তোমার কথা বলাবলি করি। তুমি কি শিগগিরই এর মধ্যে আসবে একবার? তোমার জন্য অপেক্ষা করাটা কেমন যেন বসন্তকালের জন্য অপেক্ষা করার মতাে। আমরা এখানে আমন্ড গাছের ফুল বেরোনোর জন্য বসে আছি। আর যদি উপরওয়ালার ইচ্ছা হয়, ওঃ! সেই শান্তিপূর্ণ দিনগুলো– যখন আমরা সবাই এ-ওর প্রেমে পড়েছিলাম আর যখন যেমন চাইতাম বৃষ্টি নামতাে।
♦ ♦ ♦
‘দ্যাখো কাশ্মীর!/দ্যাখো একটা গোলাপ ফুটেছে!’
-এমিলি ডিকিনসন
এক.
আরেক গ্রীষ্মের কথা : ঠিক সূর্যাস্তের সময় বেল বাজলো, আমরা তখন রেডিও কাশ্মীর শুনছি : উপোস ভাঙার পরে : সবে তখন একটা গান শুরু হয়েছে :
আবার গরমকাল : আমাদের শেষ ইতিবাচক গ্রীষ্ম ছিল সেটা : বারান্দায় বসে রেডিও কাশ্মীরে গান শুনছি : ‘হৃদয় ছাড়া কি-ই বা দিতে পারি?/আমার বাকি বছরগুলোও সব তোমায় দিলাম।’
সে এখনো পৃথিবীটাকে কোনাে রকমে ধরে রেখেছে : গোলাপগুলোর নামকরণ করেছে :
ঈশ্বর প্রেমময়, ঈশ্বর আমাকে ভালোবেসেছেন, তোমাতে আমার যে প্রীতি, তিনি তাকে ঈর্ষা করেন, আর তুমি– আমার সর্বাপেক্ষা প্রিয় দৌহিত্র। আমার কবি, তোমার কাব্যে সেই প্রীতি কোথায়?
সে আমার সাথে একটা স্বপ্নের ভেতরকার স্বপ্নের ভেতরের স্বপ্নে বসবাস করছে। আয়নাগুলো তার প্রতিফলন পাবার জন্যে কাড়াকাড়ি লাগিয়ে দেয়: আমি তার আদি-অন্তহীন হাতের দিকে তাকিয়ে থাকি: শেষ শান্তির গ্রীষ্ম: শেষ ইতিবাচন: আমরা কোনাে রকমে পৃথিবীটাকে এখনো ধরে রেখেছি: গোলাপগুলোর নাম দিচ্ছি: সে তার ভাগ্যরেখা, জীবনরেখা, হৃদয়রেখা, মস্তিষ্করেখা– সবসুদ্ধ আমার হাতের খোলা পাতায় চেপে ধরছে আর আমার হাতের পাতা যেন পুড়ে যাচ্ছে। দ্যাখো, তার শূন্য হাত, গোলাপ!
দুই.
‘অতএব প্রতিদিনই হৃদয়ে বিপ্লব উদ্ভূত,/শোকের সমুজ্জ্বল স্বৈরতন্ত্র জাগরূক থাক।’
আবার গরম পড়েছে: শেষ ইতিবাচকতার গ্রীষ্ম: আমরা বারান্দায়, শুনছি:
‘অতএব প্রতিদিনই হৃদয়ে বিপ্লব উদ্ভূত’… এটা তো ফৈজ, না? আমি না একবার সত্যি সত্যি প্রার্থনা করা ছেড়ে দিয়েছিলাম। একবারই। ‘আমি ভুঁইয়ের ওপর মাথা নত করলে পৃথিবী কঁকিয়ে ওঠে:/তোমার ভক্তির ভারে– আমি সতত পিষ্ট।’
তিন.
সে কোনােক্রমে পৃথিবীটাকে ধরে রেখেছে: গোলাপগুলোর নাম দিয়ে চলেছে:
শোন, কয়েকটি শীত আগে আমি নাসিরের সাথে দিল্লিতে ছিলাম। আমেরিকা থেকে খবর এসেছিল: নুজহাত মারা যাচ্ছে। তখন আমি একলা। খালি ওর সেই মাতাল কাজের কাজের লোকটা আর আমি! আমার এমন অসুখ হলো যে, আর হাঁটতে অব্দি পারি না। কাজের লোকটি বললাে : মা, সবই তাঁর ইচ্ছে ! উল্টোদিকের ডিসপেন্সারির নার্স আমায় কী একটা ইনজেকশন দিল। আমি কেমন আধঘুম, আধজাগরণে, স্বপ্নজ্বরে– জানি না কতক্ষণের জন্য– দেখলাম তিনজন মহিলা, তার দু’জনকে মনে হয় আমি চিনি। কিন্তু তৃতীয়জন কে? আমি নিশ্চয় মরে গেছি, আর ওরা আমায় মাটিচাপা দিতে এসেছে। না না, ওরা আবার আমায় বাঁচাতে চাইছে! নার্সিং হোমে আমায় একটা ভারী সুন্দর ঘর দিয়েছিল। আমার জানলার বাইরের বাগানটা ফুলে ফুলে সয়লাব। আর আমি মরে গেছি। এটা স্বর্গ। ঠাকুর আমায় কত ভালোভাবে রেখেছেন।
চার.
স্বপ্নের ভেতরকার স্বপ্নের ভেতরের সেই স্বপ্ন:
জানলা দিয়ে আমার বাবাকে আর স্বামীকে দেখতে পাচ্ছিলাম। কী কম বয়েস ওঁদের! ওঁরা আমার দিকেই আসছিল, আর অমনি আমি ঘুম ভেঙে উঠে বসে ডাক্তারকে বললাম, আমার যন্ত্রণা আর বাড়াবেন না, দেখুন না, ওঁরা আমাকে ডাকতে এসেছেন। ডাক্তার তখন সেই মেয়েগুলিকে বলছে, উনি তো কোঅপারেট করছেন না। না না, আমি ওষুধ খাবাে। আমি মরতে চাই না। কিন্তু আমি যে বাবাকে আর ওঁনাকে দেখতে পাচ্ছি– ওঃ কতদিন হয়ে গেল ওঁরা নেই! এত কম বয়েসে গেছে সব! ওঁরা এখন ওই বাগানটায় আর আমিও বোধহয় মরে গেছি। নিশ্চয় ভগবানের খাতায় আমার বিস্তর ভালো ভালো কাজের হিসাব লেখা আছে, যাতে করে আমায় শেষমেশ এই সুন্দর বাগানটায় এনে ফেলেছে।
কবিতাগুলো আগা শহিদ আলির কাব্যগ্রন্থ ‘দি কান্ট্রি উইদাউট পোস্ট অফিস’ থেকে নেয়া। পশ্চিমবঙ্গের ‘আয়নানগর’ সাহিত্য পত্রিকায় প্রথম প্রকাশ হয়। এটি অনুবাদ করেছেন কবি মধুশ্রী বসু।
কাশ্মীরি চিত্রশিল্পী মাসুদ হুসাইন-এর আঁকা চিত্রগুলো ভারতীয় সাইট ‘দি ওয়ার’ থেকে নেয়া।