আজকের যুগ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগ। বিজ্ঞান প্রতিনিয়তই আমাদের জীবনকে আরও আরামদায়ক করার জন্যে একের পর এক প্রযুক্তির উতকর্ষ সাধন করেই চলছে। বিশেষ করে বিগত দুই দশকে বিজ্ঞানের জয়রথ যেন বেগবান হয়েই চলছে।এই বেগকে আরো গতি দিতেই বিজ্ঞান নিয়ে আসছে এর নতুন প্রযুক্তি ‘হিউম্যান মাইক্রোচিপ’।
কিন্ত কাজ কি এই মাইক্রোচিপের? কাজ হচ্ছে গোয়েন্দাগিরি। এটি মানুষের প্রত্যেকটা পদক্ষেপ পর্যবেক্ষণ করতে পারে। শুধু পর্যবেক্ষণ করেই ক্ষান্ত হবে না এই সফটওয়্যার! অ্যালগরিদমের মাধ্যমে ১৫ সংখ্যার এই ক্ষুদে মাইক্রোচিপ খুজে বের করবে মানুষের পরবর্তী পদক্ষেপ। এতদিন ভার্চুয়াল জগতে নজরদারি চললেও এখন এর মাধ্যমে আপনার বাস্তব জগতেও রাখা হবে পর্যবেক্ষণ। শুনতে ভীতিকর লাগে বৈকি! ভীতিকর লাগলেও সত্যি। গবেষকদের মতে হিউম্যান মাইক্রোচিপের ব্যবহার এখন সময়ের দাবি। এছাড়াও তারা মনে করছেন পৃথিবীব্যাপি এর গ্রহণযোগ্যতা এখন শুধুই সময়ের ব্যাপার।
শুনতে অবিশ্বাস্য লাগে? কোনো সমাজই তো এটা মেনে নেবে না তাই না? কেনো কোনো মানুষ নিজের শরীরে মাইক্রোচিপ বসাবে? কিন্ত যদি কথা হয় ব্যক্তিগত গোপনীয়তার তাহলে এইতো ২০ বছর আগেও মানুষ চিন্তা করে নাই কোনো প্রযুক্তি আমাদের চলাচল, গতিবিধি অনুসরণ করবে প্রতিনিয়ত। অ্যামেরিকা তো বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে এই ধারনাকে খারিজই করে দেয়। কিন্ত আজকের দুনিয়ায় তাকিয়ে দেখুন। আমরা সবাই নিজের ইচ্ছায় গতিবিধি অনুসরণ এবং রেকর্ড করে রাখার জন্য নিজেদের অজান্তেই অনুমতি দিয়ে রাখছি! হ্যা স্মার্টফোনের কথা বলছি।
জিপিএস এর মাধ্যমে স্মার্টফোনগুলো কিভাবে আমাদের গতিবিধি অনুসরণ করে আমাদের বেধে ফেলছে। কিন্ত দুই দশক আগে তো এটা আমরা ভাবতেও পারি নাই। কিন্ত আজকে আমরা টাকার কথা চিন্তা না করে বাজারে সেরা ‘ট্র্যাকিং ডিভাইস’টা কিনতে প্রতিযোগিতায় নামি।
কিন্ত স্মার্টফোন বা মোবাইল তো ইচ্ছা করলেই ফেলে দেয়া যায় বা এটা আমাদের উপর চাপানো হয় না। কিন্ত শরীরের ভেতরে থাকা হিউম্যান মাইক্রোচিপ তো ইচ্ছা করলেই ফেলে দেয়া যাবে না। তাছাড়া সমাজের সর্বসম্মতি না থাকলে এই মাইক্রোচিপ কেউই গ্রহণ করবে না।
কিন্ত এই বিষয়ে বিজ্ঞানীরা মানুষের গ্রহণ করার ক্ষমতার উপর আশাবাদী। কারণ এর আগেও দেখা গেছে নতুন কোনো প্রযুক্তি প্রথম দিকে গ্রহণযোগ্যতা না পেলেও এক সময় সার্বজনীন হয়ে যায়। পরীক্ষামূলক প্রথমত হিউম্যান মাইক্রোচিপ সেচ্ছায় শরিরে বসানো হবে এবং এর মাধ্যমে কর্তৃপক্ষ প্রবেশাধিকার পেয়ে যাবে নাগরিক এর ব্যাক্তিগত জীবনে। আপনি কোনো উচ্চনিরাপত্তা বিশিষ্ট বিল্ডিং এ যান অথবা মুদির দোকানে কেনাকাটা করেন। সবই চলে যাবে সার্ভারে। এবং সমাজের বহুলাংশ যদি একবার গ্রহণ করে নেয় তাহলে একসময় এই মাইক্রোচিপ হয়ে যাবে আমাদের ‘সোশ্যাল সিকিউরিটি নাম্বার’।
আপনি পছন্দ করেন আর নাই বা করেন এই ১৫ সংখ্যার নাম্বার এক সময় আপনার পরিচয় বহন করবে। কোনো অফিসিয়াল সেবা পেতে, হোক সেটা হাসপাতালে চিকিৎসা বা আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্স অথবা আপনি সুপারশপ থেকে কিছু কিনবেন, ১৫ সংখ্যার এই ছোট মাইক্রোচিপের ভেরিফিকেশন ছাড়া কিছুই পাবেন না আপনি।
আপনি চান অথবা না চান এটাই ভবিষ্যত। এই মাইক্রোচিপ আপনার প্রতিটা পদক্ষেপ অনুসরণ করবে এবং রেকর্ড করবে। আর শরীর কেটে বের করা ছাড়া এর থেকে রেহাই পাওয়ার কোনো উপায় থাকবে না। আপনি না চাইলেও ভবিষ্যতে প্রজন্ম ঠিকই মেনে নেবে এই পরিবর্তন। ভবিষ্যতই এখন বলতে পারবে কতটা প্রভাব ফেলবে এই প্রযুক্তি, আশির্বাদ হবে নাকি অভিশাপ হয়ে দাড়াবে।