টাইম মেশিনে করে পাঁচ-সাত বছর এগিয়ে যান। গল্পটার শুরু সেখান থেকেই। আড়মোড়া ভেঙ্গে পা দুটোকে বশে এনে বিছানা ছাড়লেন কৌশিক। সকালে ঘুম থেকে উঠে বারান্দায় রাখা ইজি চেয়ারে গা এলিয়ে দিয়ে ধুমায়িত এক কাপ চা হাতে পত্রিকার পাতায় চোখ বুলানোটা অভ্যাস হয়ে গিয়েছে নিজের অজান্তেই। খেলা ছাড়ার পর হাতে এখন অখন্ড অবসর। নিজ ভুবন, খেলার পাতায় ঢু মেরেই শুরু হয় পত্রিকা পাঠ। প্রিয় দলের ইতিবাচক খবরগুলো পড়েন খুটিয়ে খুটিয়ে। আর এমন কোনো খবর চোখে পড়া মাত্রই কৌশিকের হাকডাকে তটস্থ হয়ে ওঠে সবাই। সেদিনও প্রিয় সতীর্থদের জয়ের খবর ছেপেছিলো কোনো পত্রিকা। তা দেখা মাত্রই কৌশিক নাম ধরে ডাকতে থাকে সবাইকে। ইজি চেয়ারে আধা শোয়া কৌশিক গভীর আগ্রহ নিয়ে পড়ছে, শ্রোতা হিসাবে দু পাশে আদরের দুই সন্তান আর সামনে বসা প্রিয়তমা সুমি। কতটা সময় একসাথে চলে গেলো কিন্তু কৌশিকের ভেতরের শিশুটি বড় হলো না আর। কলেজ জীবন থেকে সুমি এই দৃশ্য দেখে আসছে। কলেজ শেষে এক ছাদের নীচে বসবাস শুরু হলো, ঘর আলো করে আসলো আদরের দুই সন্তান। কৌশিকের বোধয় কিছু চুল সাদা হতেও শুরু করেছে, কত কিছুই বদলে গেলো। শুধু বদলালো না মানুষটা। আর এ কারণেই কৌশিককে এত বেশি ভালো লাগে সুমির। কল্পনার সুমি প্রিয় কৌশিকের কল্পনায় কিছুক্ষণ সাতার কাটুন, আমরা বরং ঘুরে আসি কৌশিক থেকে মাশরাফি হবার গল্পে।
বাংলাদেশের টেস্ট অভিষেকের পরের বছরই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের কঠিন অঙ্গনে পা রাখেন কৌশিক। প্রথম ম্যাচটি খেলার আগেই খবরের পাতাগুলোতে স্থান করে নিয়েছিলেন গতির জন্যে। হালকা গড়ন, সদা হাস্য মুখ; এক দেখাতেই যেন মায়া জন্মে যায়। জাতীয় দলে ঢুকেই গড়েন ইতিহাস। কোনো প্রথম শ্রেণির ম্যাচ না খেলেই টেস্ট দিয়ে ক্রিকেটার হিসাবে হাতে গোনা যে ক’জনের যাত্রা শুরু হয়েছে কৌশিক তাদের একজন। অভিষেকেই গতির ঝড় তোলা কৌশিক হয়ে গেলেন মাশরাফি। তখন টেস্ট আঙ্গিনার সর্ব কনিষ্ঠ সদস্য বাংলাদেশ একজন গতি সম্পন্ন পেসার খুঁজছিলো অনেকদিন ধরেই। ওয়েস্ট ইন্ডিজ কিংবদন্তি অ্যান্ডি রবার্টসের নজরে আসা মাশরাফিতেই অবেশেষে বাংলাদেশ খুঁজে পায় সত্যিকারের এক পেস বোলার। প্রত্যাশার পারদ যত উচুই হোক তা মেটানোর সামর্থ্য যে মাশরাফির আছে তা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন গ্রান্ট ফ্লাওয়ারকে নিজের প্রথম শিকারে পরিণত করে।
কৌশিক থেকে মাশরাফিতে পরিণত হওয়া এ ক্রিকেটার পেয়ে গিয়েছিলেন আরো একটি নতুন নাম; ‘পাগলা’। বাংলাদেশকে জিততে শিখানো অজি কোচ ডেভ হোয়াটমোর এ নামটি দিয়েছিলেন তাকে। আর নামটি যে যথার্থ তার প্রমাণ মাশরাফি দিয়েছিলেন ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে। ম্যাচের আগেই প্রিয় বন্ধু মানজারুল রানার মৃত্যু সংবাদ কতটা প্রভাব ফেলেছিলো আবেগি মাশরাফির মনে তা সহজেই অনুমেয়
জীবনটা ফুলের মতো না। কৌশিক থেকে রাতারাতি মাশরাফিতে পরিণত হওয়া এ পেসার যেন সেটি টের পেলেন সবচেয়ে নির্মমভাবে। নিজের মাত্র তৃতীয় ম্যাচেই মুখোমুখি হন ইনজুরি নামক ঘাতকের। যার নির্মম আঘাতে দুটো বছরের জন্য মাঠের বাইরে চলে যান মাশরাফি। ঘাতক ইনজুরি ক্যারিয়ারের পুরোটা সময় তাড়া করে ফিরেছে মাশরাফিকে। কিন্তু অদম্য ইচ্ছাশক্তির অধিকারী এ মানুষটিকে টলাতে পারেনি একবিন্দু, পারেনি বুকে বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে মাঠ কাপানোর প্রবল ইচ্ছাকে বাধাগ্রস্থ করতে। একবার দুবার না, একাধিকবার শল্যবিদের শরণাপন্ন হতে হয়েছে মাশরাফিকে। দু হাটুতে কাটাছেড়া হয়েছে সাত সাতবার। একটি বা দুটি অস্ত্রপোচারের যন্ত্র নাই যেখানে ইতি টেনে দিয়েছে বহু সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ারের, সেখানে মাশরাফি এক আশ্চর্য ব্যতিক্রম। শুধু দেশের প্রতিনিধিত্ব করার গৌরবের অধিকারী হবার জন্য নিজের জীবনের ঝুকি নিতে পুরো ক্রীড়াবিশ্বেই আর কাউকে দেখা যায়নি। অধিনায়ক হিসাবে প্রথম দফায় দায়িত্ব নিয়ে প্রথম ম্যাচটিতেই মাঠ ছেড়েছিলেন সতীর্থদের কাধে ভর দিয়ে। তার সে যন্ত্রণাকাতর মুখটি যে কতো মানুষের চোখে অঝোরে অশ্রু নামিয়েছিলো তার হিসাব নেই। এই ইনজুরির কারণেই খেলতে পারেননি দেশের মাটিতে হওয়া ২০১১ সালের ওয়ান ডে বিশ্বকাপ। চিত্রশিল্পী সুলতানের জন্য পরিচিত নড়াইলে ততদিনে সুলতান রুপে আবির্ভুত হয়েছেন মাশরাফি। পৃথিবীতে বোধয় তিনিই একমাত্র ক্রিকেটার যাকে দলে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য হরতাল পালিত হয়েছে। আবেগ সর্বস্ব মাশরাফির আকুল আবেদনে কর্ণপাত না করে পেশাদারিত্বের পরিচয় দেখানোর আশ্চর্য অভিপ্রায়ে মাশরাফিকে ছাড়াই দল ঘোষণা করে বিসিবি। যে মানুষটা নিজের কথা একবারও না ভেবে দলের জন্য সবটুকু উজাড় করে দেন তার আবেগের মূল্য সেদিন দারুনভাবেই দিয়েছিলো আমাদের ক্রিকেট কর্তারা!
এ ঘটনার আগেই অবশ্য কৌশিক থেকে মাশরাফিতে পরিণত হওয়া এ ক্রিকেটার পেয়ে গিয়েছিলেন আরো একটি নতুন নাম; ‘পাগলা’। বাংলাদেশকে জিততে শিখানো অজি কোচ ডেভ হোয়াটমোর এ নামটি দিয়েছিলেন তাকে। আর নামটি যে যথার্থ তার প্রমাণ মাশরাফি দিয়েছিলেন ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে। ম্যাচের আগেই প্রিয় বন্ধু মানজারুল রানার মৃত্যু সংবাদ কতটা প্রভাব ফেলেছিলো আবেগি মাশরাফির মনে তা সহজেই অনুমেয়। বন্ধুকে হারানোর ক্ষোভ পুরোটাই মিটিয়েছিলেন ভারতের ওপর। ম্যাচের আগে করা তার বিখ্যাত সে উক্তি, “ধরে দিবানি” এখনো লোকমুখে জীবন্ত। ৩৮ রানে চার উইকেট নিয়ে ভারতে ধরে দিয়েছিলেনও তিনি। তবে মাশরাফির হাতে ভারতের হেনস্তা হবার কাহিনী সেটিই প্রথম না। ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম জয়ের নায়কও তিনি। ভূমিকা রেখেছিলেন ঐতিহাসিক অস্ট্রেলিয়া বধের ম্যাচটিতেও। বহু অর্জনের পাশে আক্ষেপ হয়ে থাকবে ২০১১ বিশ্বকাপের আগে আঘাত হানা সে ইনজুরিটি। শুধু বিশ্বকাপ খেলতে পারেননি বলেই না, সে ইনজুরি থেকে ফেরার পর এক রকম অঘোষিত অবসর নিতে বাধ্য হয়েছেন প্রিয় ফরমেট টেস্ট থেকে।
একটু কল্পনায় ফিরি। মুগ্ধ হয়ে মাশরাফির দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে সুমিও যেন হারিয়ে গিয়েছিলেন কল্পনার জগতে। কতবার ব্যাথায় কাতরাতে দেখেছেন মানুষটিকে। একবার দুবার না এগারো বার মাঠ থেকে ছিটকে পড়েছেন এই ইনজুরির কারণে। সে সময়গুলোর কথা ভাবলে যে নিজের অজান্তেই গাল বেয়ে নামতে শুরু করে অশ্রুর ধারা। মেয়ের ধাক্কায় যেন হুশ ফিরে পান সুমি। দেখেন মাশরাফি প্রিয় সাদা জার্সিটি হাতে ছেলেকে শোনাচ্ছে নিজের খেলা টেস্টগুলোর মজার সব গল্প। জীবন কত কঠিন। হাসিমুখের আড়ালে এ জার্সিটি গায়ে তুলতে না পারার আক্ষেপটা মানুষটাকে যে কতটা কষ্ট দেয় তা সুমির চেয়ে ভালো কে জানেন?
মাশরাফির টেস্ট খেলতে না পারার আক্ষেপটা শুধু তাকেই না, পোড়ায় পুরো দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের। প্রথম দু দফায় পাওয়া অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন চোটের কারণে। কিন্তু দলীয় পারফম্যান্সের গ্রাফ ক্রমাগত নিন্মমুখী হতে থাকায় পুনরায় মাশরাফির শরনাপন্ন হওয়া ভিন্ন আর কোনো গতি ছিলো না বিসিবির। তৃতীয় দফায় দায়িত্ব নিয়ে যেন ব্রতী হলেন বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসটাকেই বদলে দেবার লক্ষ্যে। প্রথম এসাইনমেন্ট ছিলো জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। নিজ মাটিতে তাদের ধবল ধোলাই করে দলের ভিতরে ফিরিয়ে আনলেন জিততে পারার আত্মবিশ্বাস। তার আগে আফগানিস্তান, নেপালদের হাতেও হেনস্তা হতে দেখা যাচ্ছিলো বাংলাদেশকে। তাই, প্রায় সম শক্তির দল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ জয়টাকে ততটা গুরুত্বের সাথে নেয়নি কেউ। মূল চমকটা তিনি দেখালেন এরপর। যে মাশরাফিকে আনফিট আখ্যা দয়ে ‘১১ এর বিশ্বকাপে ব্রাত্য ঘোষনা করেছিলো বোর্ড, সে মাশরাফির নেতৃত্বই ২০১৫ বিশ্বকাপ খেলতে দেশ ছাড়ে বাংলাদেশ দল। সময়ের বদলা বোধয় একেই বলে। মাশরাফিও যেন গিয়েছিলেন ইতিহাস গড়তে। পুল ‘এ’ তে বাংলাদেশের সঙ্গে ছিলো সাবেক দুই বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা, অস্ট্রেলিয়া; সাবেক রানার আপ ইংল্যান্ড এবং স্বাগতিক নিউজি ল্যান্ড। এমন গ্রুপ থেকে বাংলাদেশ কোয়ার্টার খেলবে এমনটা বিশ্বাস করার মতো মানুষ তখন ছিলো হাতে গোনা। অবিশ্বাসীদের চমকে দিয়ে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে পৌছে যায় বাংলাদেশ। ভারতের বিপক্ষে বহুল বিতর্কিত সে ম্যাচটিতে আম্পায়ারদের খলনায়কচিত ভূমিকা বাংলাদেশকে কোয়ার্টার থেকেই বিদায় নিতে বাধ্য করলেও ক্রিকেট প্রেমীদের মন জয় করার ক্ষেত্রে তা কোনো বাধা হয়ে দাড়াতে পারেনি। সকল বিশ্লেষকই প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন টাইগার দলপতির। বিশেষ করে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে একটি রান বাচানোর জন্য ঝুকি নেয়া মাশরাফির উদার কন্ঠে প্রশংসা করেছিলেন নামকরা সব ক্রিকেট বিশ্লেষকরা। বিরুপ কন্ডিশনে অসাধারণ নৈপুণ্য দেখানোর পরেও অনেকেই এ সাফল্যকে আখ্যা দিয়েছিলেন নেহায়েত ‘ফ্লুক’ হিসাবে। তারা যে কতটা ভুল ছিলো তাই যেন দেখাতে শুরু করলো মাশরাফির নেতৃত্বে বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। এক এক করে পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো পরাশক্তিকে দেশের মাটিতে সিরিজ হারিয়ে বিশ্বকে বাধ্য করলেন বাংলাদেশকে সমীহ জানাতে। এর মধ্যে পাকিস্তানের বরাতে জুটেছে সবচেয়ে নির্মম ফলাফল। ওয়ান ডের পাশাপাশি মাশরাফির বাংলাদেশ টি টোয়েন্টিতেও পাকিস্তানকে নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছিলো। দেশের মাটিতে সিরিজ জয়ের ধারায় অবশেষে ছেদ পরে বাংলাদেশের, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে। সে সিরিজটিতেও লড়াই হয়েছিলো বাঘে-সিংহে। ছোট্ট কিছু ভুলের খেসারত দিয়ে সিরিজটা খুইয়েছিলো বাংলাদেশ। সাফল্যের সে ধারা অব্যাহত রেখে হয়ে গিয়েছেন বাংলাদেশের সফলতম ওয়ান ডে অধিনায়ক। মাত্র ৫৩ ম্যাচে ৩০ জয় নিয়ে ছাড়িয়ে গিয়েছেন পূর্বসূরি হাবিবুল বাশারকে। হাবিবুলের ২৯টি জয় এসেছিলো ৬৯ ম্যাচে। এরই মাঝে বিশ্বমঞ্চে বাংলাদেশের নাম আরো উজ্জ্বল করেছেন ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে। বিশ্বের সেরা আট দলের এ প্রতিযোগিতায় মাশরাফির নেতৃত্বে বাংলাদেশ পৌছেছিলো সেমি ফাইনাল পর্যন্ত।
শুধু দেশের প্রতিনিধিত্ব করার গৌরবের অধিকারী হবার জন্য নিজের জীবনের ঝুকি নিতে পুরো ক্রীড়াবিশ্বেই আর কাউকে দেখা যায়নি। অধিনায়ক হিসাবে প্রথম দফায় দায়িত্ব নিয়ে প্রথম ম্যাচটিতেই মাঠ ছেড়েছিলেন সতীর্থদের কাধে ভর দিয়ে
একটি মাত্র লেখায় একজন মাশরাফিকে সঠিকভাবে তুলে ধরা অসম্ভব। ওয়ান ডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি মাশরাফি, প্রথম বাংলাদেশি পেসার হিসাবে দুইশো উইকেটের ল্যান্ড মার্ক ছোঁয়ার কৃতিত্বও তার। রয়েছে বাংলাদেশি হিসাবে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ উইকেট নেবার গৌরবও। কৌশিক, মাশরাফি, পাগলা থেকে এখন তিনি পরিচিত গুরু নামে। বয়স, জীবন থেকে পাওয়া তিক্ত অভিজ্ঞতাগুলো যেন বেশ প্রভাব ফেলেছে ব্যক্তি মাশরাফির জীবনে। কথাবার্তায় বেশ গভীর এক দর্শনের ছোয়া পাওয়া যায় এখন। বীর খেতাবে আনন্দিত হবার বদলে শান্ত মুখে সে খেতাব ফিরিয়ে বীর হিসাবে আখ্যায়িত করেন বাংলার মুক্তিযোদ্ধাদের, কৃষকদের। অকপটে বলেন ক্রিকেটাররা বীর না, বরং টাকার বিনিময়ে বিনোদন দেয়া সাধারণ কিছু মানুষ। ঈদের দিনে দেখা করতে আসা ভক্তদের নিরাশ না করলেও পরামর্শ দেন পরিবারের সাথে ঈদের দিনটি কাটানোর। কারণ, সে ভক্তের বাবা-মা, সন্তানদেরও আকাঙ্খা রয়েছে প্রিয় মানুষটির সাথে সময় কাটানোর।
আজকের যে তরুণেরা মাঠ কাপাচ্ছে বাংলাদেশের হয়ে তাদের এই অবস্থানের পেছনেও রয়েছে মাশরাফির ব্যাপক অবদান। নারী কেলেঙ্কারিতে জড়ানো রুবেল যখন চরম বিপদে, পাশে থেকে তাকে পথ দেখিয়েছেন এই মাশরাফিই। ইনজুরি ফেরত মোস্তাফিজ বা ফর্মের সাথে জুঝতে থাকা সৌমের মাথার উপর ছিলেন ছায়া হয়ে। ক্রিকেটারদের কাছে তিনি কি তা বোঝা যায় ছোট্ট একটি উদাহরণ থেকে। বাংলাদেশের তরুণ পেসার তাসকিন আহমেদের উকিল বাবাও কিন্তু মাশরাফি। দলের অধিনায়ক যখন এমন, তখন দলটা যে একটি সুখী পরিবার হয়ে উঠবে তা বলাই বাহুল্য।
আইসিএল থেকে, বাজিকরদের কাছ থেকে বহুবার পেয়েছেন মোটা অংকের প্রস্তাব। কিন্তু জন্ম যার লাল সবুজের জার্সি গায়ে মাঠ কাঁপানোর জন্য অর্থের প্রলোভনে তাকে নিজের পক্ষে টানার চিন্তাটাও যে বোকামি। আফসোস একটাই, যে মানুষটা দলের জন্য, দেশের জন্য নিজের সবটুকু ঢেলে দিয়েছেন; সহাস্যে উপেক্ষা করেছেন পঙ্গুত্বের ঝুঁকিকে তাকে প্রাপ্য সম্মান দিতে বোর্ডের রয়েছে এক আশ্চর্য অনীহা। সামর্থ্য থাকার পরেও বাধ্য করা হয়েছে টি টোয়েন্টি থেকে অবসর নিতে। ত্রিদেশীয় সিরিজ শেষে বলেছিলেন দলের প্রয়োজনে টেস্ট খেলার জন্যও প্রস্তুত তিনি। একটাবার ভাবুন তো কতোটা সাহস, কতোটা নিবেদন থাকলে দু হাটুতে সাতটি অস্ত্রপোচারের যন্ত্রণা নিয়েও কেউ টেস্ট খেলতে চায়? যুক্তি দিয়ে ভাবলে মাশরাফিকে টেস্ট খেলানোর ঝুকি না নেয়াই ভালো। কিন্তু যে ভঙ্গিমায় বোর্ড প্রধান মাশরাফির সে প্রস্তাবকে নাকচ করে দিয়েছেন তা আঘাত করেছে বহু ক্রিকেট প্রেমীর মনেই।
বাস্তবতার নিরেট কাঠিন্য থেকে বরং কল্পনার জগতেই ফিরে যাই। ছেলের হাত ধরে প্রিয় লুঙ্গি আর টি-শার্ট পরেই ঘর থেকে বের হয়ে যাচ্ছেন মাশরাফি। হয়তো বাইকে গতির ঝড় তুলে জীবনকেই চ্যালেঞ্জ জানাবেন, অথবা টং দোকানে বসে বন্ধুদের সাথে মাতবেন তুমুল আড্ডায়, অথবা ছুটে যাবেন অকালে সন্তান হারানো মানজারুল রানার মায়ের কাছে। টেস্ট আঙ্গিনায় বাংলাদেশের পথচলা আর মাশরাফির আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ারের বয়স প্রায় একই। অথচ এতটা সময়েও গায়ে লাগেনি বিতর্কের সামান্যতম আঁচ। বরং, রিকশায় হুড খুলে দিয়ে মুক্ত বাতাসের ঘ্রাণ নেয়া মাশরাফি যেন বড় বেশি কাছের, বড় বেশি প্রিয়। মাশরাফির নামের পাশে ‘তারকা’ শব্দটা বড্ড বেমানান। তারকা তো দূরের কেউ। মাশরাফি যে আমাদের ভীষণ আপন…..
দারুণ হয়েছে লেখাটি।