ক্যারিয়ার নিয়ে যে ৯টি পরামর্শ কেউ দেয় না

ক্যারিয়ার নিয়ে যে ৯টি পরামর্শ কেউ দেয় না

যদি জানতে চাওয়া হয় বাংলাদেশের কোথায় প্রতিযোগিতা সবচেয়ে বেশি? নিঃসন্দেহে উত্তর আসবে চাকরির বাজার। আমাদের দেশে চাকরির ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা যেমন বেশি তেমনি সুযোগ কম। তাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, যেকোন একটা চাকরির সুযোগ পেলেই আমরা নিয়ে নিই। নিয়মিত অফিসে ৯টা থেকে ৫টা দায়িত্বশেষে আবার বাসায় ফিরি। পরের দিন পুনরায় একই রুটিন। এটা খারাপ কিছু নয়। কিন্তু অনেকে আছেন যারা সবসময় সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে কাজ করে। তারা সেসব মানুষ যারা সকালে কষ্ট করে নিজেকে বিছানা থেকে টেনে তোলার পরিবর্তে লাফ দিয়ে বিছানা ছেড়ে কাজের জন্যে বের হন। যখন সবাই প্রতিদিনের একই বিরক্তিকর কাজ করে যাচ্ছেন। তখন তারা নিজেদের কাজের মধ্য দিয়ে হাজারজনের কাজকে  নানাভাবে প্রভাবিত করেন। তারা সেই কাজগুলোই ভাল করতে পারেন যা সবাই করতে পারেন না।

১. দরকষাকষি করুন

ধরুন, আপনি একটা দোকানে গেলেন এবং কেনাকাটার পর ফিক্সড প্রাইস-এর দোকান জেনেও দরদাম করা শুরু করলেন। অনেকের কাছে একটা পাগলামি মনে হলেও দেখা যাবে, বেশির ভাগ সময়ই দাম কিছুটা কমানো যায়।এমন অনেক কিছুই আছে, আমরা ভাবি যে, দরাদরি করা সম্ভব নয়। কিন্তু হয়তো চেষ্টা করলেই করা সম্ভব। কিন্তু আমাদের দেশে হাই করপোরেট ছাড়া কোথাও আসলে দরকষাকষির উপায় থাকে না।

২. নিরাপত্তাহীনতায় ভোগার সুবিধা নিন

মার্কিন মুল্লুকের বিখ্যাত সংবাদপত্র ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’-এর একটি গবেষণায় একবার দেখা গেছে, একটি নির্দিষ্ট দলের কিছু লোক তুলনামূলক বেশি টাকা রোজগার করে। কিন্তু কীভাবে তা করেন? যেমন- এশিয়ার মানুষ গড়পরতা বেশি রোজগার করে থাকে। ভারতীয়-আমেরিকান বা চায়নিজ-আমেরিকানদের গড় রোজগার জন্মগত আমেরিকানদের থেকেও বেশি। নিউ ইয়র্ক টাইমসের মতে, মূলত ৩টি বৈশিষ্ট্যের কারণে এশিয়ানদের মধ্যে সফলতার হার তুলনামূলক বেশি-

ক. অন্যকে টেক্কা দেয়ার ইচ্ছা।

খ. নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা। সহজে কাজে তুষ্ট না হওয়া বা নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা।

গ. প্ররোচিত না হওয়া।

ওই তিন বৈশিষ্ট্যের মিশেল এবং এর সঙ্গে একটু নিয়ম-শৃঙ্খলা থাকলেই পেশাদার জীবনে সফলতার ক্ষেত্রে কয়েক ধাপ এগিয়ে যেতে পারবেন।

৩. বড় প্রতিষ্ঠান নয়, কার অধীন কাজ করছেন তা গুরুত্বপূর্ণ 

মানুষ চিন্তা করে ফেসবুক, গুগল-এর মতো প্রতিষ্ঠানে চাকরি করবাে এবং লাইফ সেট হয়ে যাবে। কিন্তু এটা সত্যি নয়। প্রতিষ্ঠান নির্বাচনের আগে সঠিক বস নির্বাচন করুন। সফলতার প্রথম ধাপ এটাই।

এভাবে শুধু যে অভিজ্ঞতাই বাড়বে তা নয়, সফল মানুষের সঙ্গে থেকে যদি নিজেকে প্রমাণ করতে পারেন তাহলে জায়গা পেয়ে যাবেন তাদের নিজস্ব বলয়ে। এর মাধ্যমে সুযোগও বাড়তে থাকবে। শুধু যে সফল হবেন তা নয়, আপনি ভুল পথে ধাবিত হলে আপনার ভুলও ধরিয়ে দেবেন তিনি।

কোনো সফল মানুষ আপনাকে ওই সুযোগগুলো দিতে পারবে যা কোনো প্রতিষ্ঠান পারবে না।

৪. অর্থ নয়, অভিজ্ঞতাকে প্রশ্রয় দিন

বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিরা একটা কথা প্রায়ই বলেন, ‘যুবকরা সবচেয়ে বড় ভুল করে। তা হলো তারা অধৈর্য হয়ে যায়।’

স্ট্যানলি ড্রাকেনমিলার একবার বলেছিলেন, ‘আমাকে যদি অধিক বেতন ও বিজ্ঞ এক পরিচালকের মধ্যে যে কোনো একটা নির্বাচন করতে বলা হয় তাহলে আমি সব সময় পরিচালককে বেছে নেবাে এবং আমি ততক্ষণ পর্যন্ত তার সঙ্গে থাকবাে যতক্ষণ না আমি সেরা হতে পারি।’ সফল হওয়ার জন্য মাঝে মধ্যে পিছপা হওয়া জরুরি।

৫. দক্ষতাই সব নয়

কোনো পেশায় ঢুকতে হলে সবচেয়ে বেশি জরুরি আপনার দক্ষতা- আপনি কত ভালো লিখতে পারেন, কত ভালো বলতে পারেন অথবা কোডিংয়ে দক্ষতা কেমন। কিন্তু সব সময় দক্ষতা দিয়ে পার পেয়ে যাবেন না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রায়োগিক দক্ষতার প্রয়োজন কমে গিয়ে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের দক্ষতা বড় বিষয় হয়ে দাঁড়াবে।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আপনি ভাল বেনারসির কাজ জানেন। কিন্তু মানুষকে আকর্ষণ করা বা বিক্রির স্বার্থে যোগাযোগ বাড়াতে আপনি মোটামুটি ব্যর্থ। তখন দেখা যাবে, আপনার কাজ যতই ভালো হোক, বাজারে চাহিদা কমে যাবে। তবে আপনার দক্ষতা অবশ্যই প্রভাব ফেলে। তবে এরসঙ্গে সবার সামনে নিজের কাজটি তুলে ধরার ক্ষমতাও লাগবে।

আপনার জানতে হবে, প্রতিষ্ঠান আপনার কাছে কী আশা করে এবং যথাসময়ে তা দিতে হবে, এমনকি প্রতিষ্ঠান আপনার কাছে চাওয়ার আগেই।

৬. প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শেষ মানেই জ্ঞান অর্জন শেষ নয়

অনেকেই গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেই ভাবেন, পড়ালেখা শেষ। কিন্তু আসল শিক্ষা শুরু হয় এরপরই। সত্যি বলতে কী, পাঠ্যবইয়ের শিক্ষা পরবর্তীকালে খুব একটা কাজে আসে না।

আজ যারা সফল তাদের দিকে তাকান, দেখবেন- তারা কেউই শুধু পাঠ্যবই পড়ে সফল নন। তারা সময় পেলেই বই পড়েন, বিভিন্ন কনফারেন্স ও সেমিনারে যান এবং গবেষণাপত্র পড়েন।

এভাবেই তারা বিক্ষিপ্ত হয়ে থাকা বিন্দুগুলো মিলিয়ে নিজেদের জন্য সুযোগ বের করে নেন।

৭. যা বাস্তব তা সব সময় সবার জন্যে বাস্তব নয়

আপনার জন্য যা বাস্তব তা সবার জন্য বাস্তবসম্মত নাও হতে পারে। ধরুন, আমাকে আমার বন্ধু যদি বলে, সে ডাক্তার হতে চায় তাহলে আমি ধরে নেবাে, এটা সম্ভব। কারণ আমার সাথের অনেকেই মেডিকেল কলেজে পড়ে এবং আমি জানি, এর জন্য কী কী করতে হবে। কিন্তু অনেকের কাছেই এটা অবাস্তব ঠেকতে পারে।

এমন অনেক বিষয় আছে যেগুলা আমরা খুব সহজেই মেনে নিই। কিন্তু অনেকের কাছে তা অবাস্তব। যেমন- যার পরিচিত কেউ কখনো স্কুল জীবন শেষ করতে পারেনি তার কাছে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি পাওয়ার বিষয়টা অনেকটাই অবাস্তব।

অথবা কেউ একটা বহুজাতিক কোম্পানি চালায়। তার কাছে এটা খুবই সহজ কিছু হলেও একটা মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলের কাছে এটা অবাস্তব।

তেমনি আপনার কাছেও অনেক কিছু অবাস্তব লাগতে পারে। আপনার কাজের ক্ষেত্রে যারা সফল তাদের সঙ্গে কাজ করার চেষ্টা করুন। তাদের সাক্ষাৎকার পড়ুন। তারা কীভাবে সফল হয়েছে জানুন। তাহলে এক সময় ওই অবাস্তব মনে হওয়া স্বপ্নগুলো আপনার জন্য বাস্তব হবে।

৮. ভিন্নপথে কাজের উপায় জানতে চেষ্টা করুন

অ্যালেক্স বানায়ান-এর মতে, ‘একটা নাইট ক্লাবে ঢোকার জন্য তিনটি রাস্তা থাকে। প্রথম দরজা- বিশাল লাইন ধরে ঢুকতে হবে। দ্বিতীয় দরজা- পয়সাওয়ালাদের জন্য, তারা টাকা দিয়ে ঢোকেন। আর তৃতীয় রাস্তা দিয়ে ঢুকতে হলে দেয়াল টপকে, পাইপ দিয়ে উঠে জানালার ফাঁক গলে ঢুকতে হবে। যাওয়ার ইচ্ছা থাকলে সবসময়ই রাস্তা থাকে। বিল গেটস-এর প্রথম সফটওয়্যার বলুন অথবা স্টিভেন স্পিলবার্গ-এর প্রথম কাজ- তারা সবাই তৃতীয় রাস্তা ধরেই এগিয়েছেন।

সবাই যেই পথে হাঁটে ওই পথে হেঁটে কেউ অসাধারণ হন না। অসাধারণ হওয়ার জন্য নিজের পথ তৈরি করতে হবে।

এটা খুবই অদ্ভুত নয় যে, একটা ‘ড্রিম জব’-এর জন্য হাজারো মানুষ লাইন ধরে আছে আর সবাই একই রাস্তায় পৌঁছাতে চান! এই খেলায় জিততে হলে তা করতে হবে যা সবাই করতে প্রস্তুত নয়। আপনার কাছে চাওয়ার আগেই প্রতিষ্ঠানকে তা দিতে হবে যা তারা চান। এভাবেই আপনি জিতবেন।

৯. কাজের ভেতরটা জানতে চেষ্টা করুন

যুক্তরাষ্ট্রের এক উদ্যোক্তা একবার কফি হাউসে কাজ করার চিন্তা করলেন। কল্পনা করে দেখুন, একটা প্রতিষ্ঠানের সিইও মানুষের কফির অর্ডার সরবরাহ করছনে! অনেকেই হয়তাে চিন্তাও করবনে না এমন কিছু করার। কিন্তু তিনি ভেতর থেকে দেখতে চেয়েছিেনে কীভাবে একটা কফি হাউস কাজ করে।

বেশির ভাগ মানুষ চিন্তা করে কেএফসি বা পিৎজাহাট-এর তুলনায় একটা বড় প্রতিষ্ঠানে কাজ করা সুবিধাজনক। কিন্তু কাজের জন্য প্রতিষ্ঠান বিষয় নয়। কারণ প্রতিষ্ঠান ততটা ভালো হবে যতটা আপনি করবেন।

পরবর্তীকালে যদি আপনি নিজে একটা ফাস্ট ফুড ব্যবসা শুরু করতে চান তাহলে কেএফসি বা পিৎজাহাট-এ কাজের অভিজ্ঞতাই আপনার কাজে লাগবে। কোনো পেশাই ভালো কিছু দিতে পারবে না যতক্ষণ না আপনি ভালো করে আপনার কাজের ভেতরটা না জানবেন- প্রতিষ্ঠান যত বড়ই হোক না কেন।

মোদ্দা কথা যাই করুন তা ভালোবেসে করুন এবং সবার চেয়ে ভালো করুন। সফলতা এমনিতেই আসবে।