অসাধারণ মেসি, জিতলো বার্সা

বার্সার জয়রথ ছুটছেই

অসাধারণ মেসি, জিতলো বার্সা

আলাভেসের বিপক্ষে পিছিয়ে পড়েও লিওনেল মেসির দুর্দান্ত ফ্রি কিকে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়লো ভালভার্দের শিষ্যরা। এ জয়ের ফলে লা লিগা জয়ের পথে আরো একধাপ এগিয়ে গেলো বার্সা। ২১ ম্যাচ শেষে তাদের পয়েন্ট ৫৭। নিকটতম প্রতিদ্বন্দী অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদের সমান সংখ্যক ম্যাচে সংগ্রহ ৪৬ পয়েন্ট।

বার্সেলোনা ২ – ১ আলাভেস
গুইদিত্তে ২৩’
সুয়ারেজ ৭২’
মেসি ৮৪’

জমাট রক্ষণ বনাম গোল মিসের মহড়া

মৌসুমের শুরু থেকেই দুর্দান্ত ছন্দে থাকা বার্সাকে আটকাতে রক্ষণাত্বক কৌশল নিয়েই মাঠে নেমেছিলেন আলাভেস কোচ। সে কৌশলের বিপরীতে বার্সা ছিলো চূড়ান্ত আক্রমণাত্বক। মুহুর্মুহ আক্রমণে নাভিশ্বাস তুলে ছেড়েছিলো আলাভেসের রক্ষণের। কিন্তু কখনো আলাভেসের জমাট রক্ষণ কখনো বা স্ট্রাইকারদের নিদারুণ ব্যর্থতায় মাথা কুটে মরছিলো বার্সা। উল্লেখ্য যে, নিজেদের ঘরের মাঠে লা লিগাতে বার্সার সর্বশেষ পরাজয় ছিলো এই আলাভেসের বিপক্ষেই।

ধারার বিপরীতে গোল, স্তব্ধ বার্সা

বার্সার আক্রমণের ঢেউয়ে ভেসে না গিয়ে বরং পাল্টা আক্রমণের পথ খুজতে থাকে আলাভেস। প্রথম প্রচেষ্টা টার স্টাগেনের দৃঢ়তায় আটকে গেলেও পরেরবার আর দলকে রক্ষা করতে পারেননি তিনি। বার্সার হারানো বল থেকে ইবাই এর দ্রুত এক পাস ধরে গতির ঝরে উমতিতিতে ছিটকে ফেলেন গুইদেত্তি। চমৎকার সে দৌড়টি শেষ হয় বার্সার জালে বল জড়ানোর মধ্য দিয়ে। ক্যাম্প ন্যুতে শেষবার বার্সাকে পরাজয়ের স্বাদ দেয়ার নায়ক ইবাই গোমেজ এবারও যেনো স্বপ্ন দেখছিলেন ফের বার্সার হন্তারক হবার।

অসাধারণ মেসি-ইনিয়েস্তা

লিও মেসি এবং আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা জুটি বহুবার বল পায়ে মুগ্ধ করেছেন দর্শকদের। কালকের রাতটিও ব্যতিক্রম ছিলো না। একের পর এক অসাধারণ বলের যোগান দিয়ে রীতিমত নাচিয়ে ছেড়েছেন আলাভেসের রক্ষণকে। কঠিন পরীক্ষা দিয়েছেন গোলরক্ষক ফার্নান্দো পাচেও। বেশ কয়েকটা দারুন সেভ করে দলকে ম্যাচেও টিকিয়ে রেখেছিলেন তিনি।

দ্বিতীয়ার্ধে চেনা বার্সা

প্রথমার্ধে প্রতিপক্ষের গোলবারের সামনে মাথা কুটে মরলেও দ্বিতীয়ার্ধে বদলে যায় দৃশ্যপট। চলতি মৌসুমে এটি যেনো এক অলিখিত নিয়মই হয়ে গিয়েছে। আক্রমণের পর আক্রমণের পসরা সাজানো বার্সা ম্যাচে সমতায় ফেরে ৭২ মিনিটে, লুইস সুয়ারেজের গোলে। বলের জোগানদাতা সেই আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা। সে গোলের পর জয়ের জন্য মরিয়া বার্সা যেনো আক্রমণের ধার আরো বাড়িয়ে দেয়। তাতেও আসছিলো না কাঙ্খিত গোল। অবশেষে বার্সার আক্রমণ নৎসাতের প্রচেষ্টায় ডি বক্সের বাইরে বিপজ্জনক জায়গায় বার্সাকে ফ্রি কিক উপহার দিতে বাধ্য হয় আলাভেস। আর তা থেকেই আসে মেসির সে অসাধারন গোলটি।

অনন্য মেসি

৮৪ মিনিটে মেসির নেয়া অসাধারণ ফ্রি কিকটিতে পাচেও হাত ছোঁয়ালেও তা দলকে রক্ষার জন্য যথেষ্ট ছিলো না। অসাধারণ গোল, হাসি ফুটলো ভালভার্দের মুখে, উচ্ছাসিত পুরো ক্যাম্প ন্যু। কালকের ম্যাচের ম্যান অফ দ্য ম্যাচ কে সেটি বোধকরি না বললেও চলে। এ ম্যাচে অ্যাসিস্ট করতে পারলে লা লিগায় টানা সর্বোচ্চ সংখ্যক ম্যাচে অ্যাসিস্টের রেকর্ডে ভাগ বসাতে পারতেন। সেটি না পারলেও যে ভাবে ছুটে চলেছেন তাতে এ মৌসুম শেষে ব্যক্তিগত সকল পুরষ্কারই যদি নিজের করে নেন অবাক হবার কিছুই থাকবে না।

ফ্লপ কৌতিনহো

বহু আলোচনার জন্ম দিয়ে বার্সায় আসা ব্রাজিলিয়ান তারকা কৌতিনহোর দিকে এ ম্যাচে বিশেষ নজর ছিলো সবার। গগন-স্পর্শী প্রত্যাশার কিছুই তিনি পুরণ করতে পারেননি এ ম্যাচে। পুরোটা সময়ই ছিলেন নিজের ছায়া হয়ে। বাধ্য হয়েই ম্যাচ শেষের ২৪ মিনিট আগে তাকে তুলে নিতে বাধ্য হন ভালভার্দে।

অভাগা আলাভেস, রেফারীর অমার্জনীয় ভুল

মেসির সে ফ্রি কিক থেকে করা অসাধারণ গোলের পরেও দমে না গিয়ে আলাভেস নিজেদের সবটুকু নিংঢ়ে দিয়েছিলো একটি পয়েন্টের আশায়। সে আশা প্রায় বাস্তবেই রুপ নিয়েছিলো যখন ডি বক্সে মুনিরের শ্যুট উমতিতির হাতে লাগে। নিশ্চিত পেনাল্টির সে জোড়ালো আবেদনে বধির রেফারী খেলা চালিয়ে গিয়েছেন আলাভেসের দাবীর প্রতি কর্ণপাত না করেই। প্রবল প্রতাপশালী বার্সার বিপক্ষে যেভাবে পুরো নব্বই মিনিট লড়াই করেছে আলাভেস, তাতে ড্র হতে পারতো ন্যায্য ফল।

পেনাল্টির সিদ্ধান্তটা আলাভেসের পক্ষে গেলে ফলাফল কি হতো তা বলা মুশকিল। তবে প্রায় ৭৮ ভাগ সময় বল নিজেদের দখলে রেখে ১৮ টি শ্যুট, যার ১২ টিই গোলবারে; এমন একটি দলের বিপক্ষে পুরোটা সময় লড়াই করার জন্য একটা বাহবা আলাভেস পেতেই পারে। বিশেষ করে তাদের রক্ষণভাগ এবং গোলরক্ষক। এটুকু বলার পরেও বার্সার কৃতিত্ব এতটুকুও কমছে না। বরং শিরোপার দিকে আরো একধাপ এগিয়ে যাওয়া বার্সা প্রমাণ করেছে যত বাধার দেয়ালই গঠন করা হোক, সে দেয়াল ভাঙ্গতে তারা যথেষ্টই সক্ষম।