* অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ৭০তম আসরে নিজের কুঁড়িতম গ্র্যান্ডস্লাম জিতলেন রজার ফেদেরার।
* এটি ফেদেরারের ৬ষ্ঠ অজি ওপেন টাইটেল। রয় এমারসন এবং নোভাক জোকোভিচের সঙ্গে যা যৌথ সর্বোচ্চ।
* ২০০৬, ২০০৭ এর পর দ্বিতীয়বার ২০১৭, ২০১৮ সালে জিতলেন টানা দু’বার।
* ম্যাচ জেতেন ৬–২, ৬–৭, ৬–৩, ৩–৬, ৬–১ গেমে।
* প্রথম সেট জিততে সময় নেন মাত্র ২৪ মিনিট।
* কাল মেলবোর্নের তাপমাত্রা প্রায় ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকায় খেলা হয়েছে মাঠের ছাদ ঢেকে। যাতে অসন্তোষ রয়েছে রানার আপ মারিন সিলিচের।
‘রজার ফেদেরার’। নাম শুনলে চোখের সামনে ভেসে ওঠে হাস্যোজ্জ্বল মুখাবয়ব। কাল অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের রড লেভার অ্যারেনায় বেলাশেষের হাসিমুখে ঘাম জমেছে প্রচুর। ১৮৩ মিনিট! রীতিমতো যুদ্ধ। ২৯ বছর বয়সী ক্রোয়েশিয়ান তারকা মারিন সিলিচের সঙ্গে।
পাঁচ সেটের পরিসংখ্যান বলছে কেউ কাউকে ছাড় দেয়নি একচুল। আসলেই দেয়নি! অনায়াসেই প্রথম সেট জয়ের পর পরের সেট ফেড হারেন ট্রাইবেকে। তৃতীয় সেট ফেদের। চতুর্থ সেটেও এগিয়ে যান ৩-০তে। তাকে সেখানেই রেখে ঘুরিয়ে দাঁড়িয়ে ৬-৩ এ সেট জিতে খেলায় ফেরেন সিলিচ। শেষ সেটে দাঁড়াতে পারেননি। ৬-১ এ সেট ও ম্যাচ দুটোই নিজের করে নেন ফেড। ২০১৪ সালে ফেদেরারকে হারিয়ে ইউএস ওপেন জিতে ‘ডোপ টেস্টে নিষিদ্ধ হওয়ার পর ফিরে গ্র্যান্ডস্লামজয়ী একমাত্র খেলোয়াড়’ সিলিচ লড়েছেন দাঁতে দাঁত চেপে। কিন্তু, বুড়ো ফেদেরারের আত্না পরিণত তারুণ্যে। সিলিচের গোটা ক্যারিয়ারে এটিপি শিরোপা যেখানে ১৭টি সেখানে এর আগে ফেদেরারের কেবল মেজর ছিল ১৯টি! আর এটিপির সংখ্যা ৯৬! জিমি কোর্নসের ১০৯টির পর টেনিসের উন্মুক্ত যুগে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। অভিজ্ঞতার একটা দাম আছে। এমন পরিস্থিতিতে ম্যাচ কতবার বের করেছেন ফেডেক্স! কাল বের করলেন আবার। ঝুলিতে পুরে নিলেন গ্র্যান্ডস্লাম নাম্বার টুয়েন্টি।
ম্যাচ শেষে কি বললেন দুই ফাইনালিস্ট?
‘খেলা হয়েছে ছাদ ঢেকে। আর সবাই জানেন ইনডোরে ফেদেরার কেমন ভয়ংকর। পুরো টূর্ণামেন্ট আউটডোরে খেলে ফাইনালে ইনডোর। মানিয়ে নিতে সময় লেগেছে। তাঁকে অভিনন্দন। খেলাটা আউটডোরে হলে ফল অন্যরকমও হতে পারত’। সিলিচের অভিযোগ নিয়ে ভাবতে বয়েই গেছে ভক্ত অনুরাগীদের। ম্যাচের শেষ শট নিয়ে শঙ্কায় থাকা সিলিচ যখন বল রিটার্ন আউট হয়েছে কিনা তা জানতে রিপ্লে নিয়েছেন গ্যালারি তখন নীরব। টিভি রিপ্লে আউট দেখাতেই গ্যালারিতে বাঁধভাঙা উল্লাস, ওদিকে ফেদেরারের চোখের জলেও কোন বাঁধ নেই!
ম্যাচ শেষে তিনি জানালেন নিজের অনুভূতি- ‘অবিশ্বাস্য! ২০টি গ্র্যান্ডস্লাম। এটি রূপকথা! ভীষণ খুশি আমি’।
এক কুঁড়ি গ্র্যান্ডস্লাম অবিশ্বাস্য। ছেলেদের এককে ম্যাজিক ফিগারটা ছুঁতে পারেননি আর কেউ। সব মিলিয়েই জিতেছেন মাত্র চারজন। নারী টেনিসের রাণী মার্গারেট কোর্ট (২৪), মার্কিন কৃষ্ণকলি সেরেনা উইলিয়ামস (২৩) আর স্টেফি গ্রাফের ২২টির পর ফেডির ২০! অথচ এই তিনিই কি না ২০১২ উইম্বলডনের পর পাঁচ বছর পাননি গ্র্যান্ডস্লামের স্বাদ। তিনি মহাতারকা বলে ফিরে এসেছেন। বুড়ো হাঁড়ের ভেল্কি দেখালেন ছত্রিশে। ৩৫তম জন্মদিন যেন জীবনে নতুন করে বসন্ত এনেছে। সে জন্মদিনের পর ট্রফিকেস সাজিয়েছেন আরো তিনটি গ্র্যান্ড উৎসবে। যার সর্বশেষ সংযোজন অস্ট্রেলিয়ান ওপেন। রড লেভার অ্যারেনা যার নামানুসারে, ১১ গ্র্যান্ড স্লাম জয়ী অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি ‘রড লেভার’ এর চোখে ফেদেরার- ‘সে ঠিক এক দশক আগের মতোই খেলেছে। বলছি না আগের চেয়ে ভালো, কিন্তু নিজের সেরাটাই খেলছে’।
চিরসবুজ? সেরাদের সেরা?
ছেলেদের এককে পিট সাম্প্রাস ছিল শেষ কথা! ১৪টি গ্র্যান্ডস্লামজয়ী এ মার্কিন এখন নাদালেরও (১৬) পরে। সুকান্ত ভট্টাচার্যের ‘আঠারো বছর’ কবিতাটি পড়া প্রজন্ম ফেদেরারকে দেখে কবিতার নাম বদলে ‘আঠারো স্কয়ার’ রাখলে তা ভুল কিছু হবে না! ফেদেরার এমনই। কল্পনাতীত! ‘কুঁড়ি’ সংখ্যাটা চার সন্তানের জনক সুইজারল্যান্ড ছাপিয়ে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনের গর্বে পরিণত হওয়া রজার ফেদেরারকে দাঁড় করাচ্ছে দুটি অদৃশ্য উৎসাহী প্রশ্নে!
‘কুঁড়িতেই বুড়ি’ না ‘কুঁড়ি থেকে ফুল’? ফেদেরার বলেই দুইয়ের সমন্বয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন! পরিণত ফুল হয়ে ফুটে ছড়িয়ে যাচ্ছেন সুবাস, বুড়ো ডালেই…