মেস্তেয়ায় বিধ্বস্ত ভ্যালেন্সিয়া, রিয়ালের সহজ জয়

মেস্তেয়ায় বিধ্বস্ত ভ্যালেন্সিয়া, রিয়ালের সহজ জয়

  • এস্তাদিও মাস্তেয়ায় রোনালদোর ১-৪ গোলে জয়ে পেলো রিয়াল মাদ্রিদ।
  • টানা দ্বিতীয় ম্যাচে জোড়া গোল ‘দ্য বেস্ট’ রোনালদোর, বাকি দুই গোল মার্সেলো এবং টনি ক্রুসের।
  • ৩ মাস পরে টানা ২ ম্যাচে জয় পেল রিয়াল।

স্পেনের যে মাঠটি রীতিমত বিভীষিকার নাম হয়ে আছে মাদ্রিদের কাছে সেটি হচ্ছে মেস্তায়া। আগের ম্যাচেই নীচু সারির দল লেগানের কাছে হেরে কোপার স্বপ্ন বিসর্জন দেয়া রিয়াল মাঠে নেমেছিলো বিষম চাপ মাথায় নিয়ে। রোনালদোর জোড়া এবং মার্সেলো, ক্রুসের একটি করে গোলে সহজ জয় নিয়েই মাঠ ছেড়েছে জিদান শিষ্যরা।

 

ভ্যালেন্সিয়া এফ সি ১ – ৪ সি এফ রিয়াল মাদ্রিদ

রোনালদো ১৬’ (পেনাল্টি),৩৮’ (পে.)

সান্তি মিনা ৫৮’

মার্সেলো ৮৪’

‎ক্রুস ৮৯’

ম্যাচ সেরা: ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো (রিয়াল মাদ্রিদ)

 

একত্রে বিবিসি, অসহায় ভ্যালেন্সিয়া

গত ম্যাচে ২৭০ এরও বেশি দিন পরে একত্রে দেখা দিয়ে গিয়েছিলো বিবিসি ত্রয়ীকে। তবে সেটি স্বল্প সময়ের জন্য। কিন্তু এ ম্যাচে মূল একাদশেই দেখা গিয়েছে বেনজেমা, বেল এবং ক্রিশ্চিয়ানোকে। তার প্রভাব দেখা গিয়েছে ম্যাচের শুরু থেকেই। ভ্যালেন্সিয়ার কর্নার থেকে ক্রুসের মাথা ছুয়ে রোনালদোর পায়ে বল পৌছানো মাত্রই চোখে লেগে থাকার মতো কাউন্টার অ্যাটাকের শুরু। অনেকটা পথ দৌড়ে রোনালদো পা ঘুরে মার্সেলো এবং মার্সেলোর পা থেকে বেনজেমা হয়ে রোনালদোর পায়ে বল পৌছানো মাত্রই নিরুপায় ভ্যালেন্সিয়ার রক্ষণ বাধ্য হয় ফাউল করতে। অবৈধ সে বাধা চোখ এড়ায় নি রেফারির। বাজলো পেনাল্টির বাঁশি। তা থেকে গোল করে দলকে প্রথমবারের মতো এগিয়ে নিলেন রোনালদো। এর কিছুক্ষণ পরেই আরো একটি আক্রমণ। এবার বল দখলের উদ্দেশ্যে লাফিয়ে উঠা বেনজেমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় ভ্যালেন্সিয়ার রক্ষণ তারকা। আবারো বেজে উঠলো পেনাল্টির বাশি। পেনাল্টিতে লা লিগার সর্বোচ্চ গোলের মালিক এবারো ভুল করলেন না। ফলাফল ০-২ তে এগিয়ে গেলো রিয়াল।

 

প্রথমার্ধ শেষ ০-২ গোলে, জমজমাট দ্বিতীয়ার্ধ

আপনি যদি নিরপেক্ষ দর্শক হন, কোনো দ্বিধা নেই রিয়ালের তৃতীয় গোলের আগ মুহুর্ত পর্যন্ত বেশ উপভোগ করেছেন। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে দারুণ খেলা উপহার দিয়েছে দুই দলই। এক মুহুর্তে রিয়াল ভ্যালেন্সিয়ার ডি বক্সে ত অপর মুহূর্তে ভ্যালেন্সিয়া রিয়ালের ডি বক্সে। এমন আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণের মাঝেই ভ্যালেন্সিয়া আদায় করে নেয় কর্নার। আর কর্নার থেকে পাওয়া চমৎকার এক ডেলিভারি থেকে গোল করতে ভুল করেননি সান্তি মিনা। তার এ গোলেই যেনো শঙ্কার মেঘ জমতে শুরু করে রিয়াল শিবিরে। কারণ, মেস্তেয়ায় এসে পা হড়কানো রিয়ালের জন্য নতুন কিছু বরং এক অলিখিত রীতি।

 

শঙ্কাকে দূর করে দুর্দান্ত জয়

জমতে থাকা শঙ্কার মেঘককে যেন এক ফুৎকারেই উড়িয়ে দিয়েছেন ব্লাংকোস তারকারা। আক্রমণের ধার বাড়িয়ে অস্থির করে তোলে ভ্যালেন্সিয়ার রক্ষণ। তা থেকেই আসে তৃতীয় গোল, মৌসুমে সবচেয়ে বেশী সমালোচিতদের একজন মার্সেলোর পা থেকে। অ্যাসেন্সিওর সাথে ওয়ান-টু করে ডি বক্সে ঢুকে গিয়ে যে ভঙ্গিমায় বলটি জালে জড়ালেন সেটি যে কোনো স্ট্রাইকারের জন্যই ঈর্ষার কারণ হয়ে থাকবে। স্মৃতির সেলে জেগে উঠলো সেরা সময়ের মার্সেলোর সেই জাদুকরী মুহুর্তগুলো। এরপরের গোলটিও চোখে লেগে থাকার মতো। মার্সেলোর দৌড়, তা থেকে কোভাচিচের আলতো ছোয়া, এবং ক্রুসের নিখুত ফিনিশিং, চোখের শান্তি দেয়ার মতো এক গোল।

 

রক্ষণ এবং দুর্দান্ত নাভাস

একটি গোল হজম করা বাদ দিলে পুরো মৌসুম বিবেচনায় নিলে ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে রিয়ালের ডিফেন্স বেশ ভালো ভাবেই উতরে গিয়েছে। বিশেষ করে ভ্যালেন্সিয়ার আক্রমণভাগ রিয়ালের রক্ষণকে ফাকি দিলেও বাধা হয়ে দাড়িয়ে ছিলেন নাভাস। নিশ্চিত দুটি গোল সেভ করে দলকে টিকিয়ে রেখেছিলেন খেলায়। বিশেষ করে এক পা দিয়ে যেভাবে গোল বঞ্চিত করেছেন পারেহোকে , তা এ মৌসুমের নাভাসের অন্যতম সেরা সেভ বলে বিবেচিত হতে পারে অনায়াসেই।

কোথাও যাচ্ছেন না রোনালদো 

রিয়ালে আসার পর থেকেই প্রতিটি ট্রান্সফার সিজনে রোনালদোকে রিয়াল ছাড়া করা বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের কাটতি বাড়ানোর একটি সহজ উপায়ে পরিণত হয়েছে। চলতি মৌসুমও এর ব্যাতিক্রম নয়। স্প্যানিশ গণমাধ্যমের সর্বশেষ খবর অনুযায়ী রিয়াল ত্যাগের সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিয়েছেন এই পর্তুগিজ যুবরাজ। তিনি জানান রিয়ালে তিনি বেশ সুখেই আছেন এবং বার্নাব্যুতেই থাকতে চান। রোনালদো বলেন, “অবশ্যই আমি এখানে থাকতে ভালোবাসি। আমি এখানে ২০০৯ সাল থেকে আছি, এবং এখানকার মানুষ পরিবেশ সবকিছুই আমার ভালো লাগে।” তিনি আরো যোগ করেন, “এটি পর্তুগালের বেশ কাছেই, এমনকি গাড়ি চালিয়েই স্পেন থেকে পর্তুগালে যাওয়া যায়। স্পেন চমৎকার একটি দেশ, এবং আমি দেশটিকে ভালোবাসি। অবশ্যই আমি এখানে থাকতে চাই। ভালোবাসি এই ক্লাবটিকে।”

এর আগে ৪১ বছর বয়স পর্যন্ত ফুটবল চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করা রোনালদো কথা বলেছেন এ প্রসঙ্গেও। পাঁচবারের ব্যালন জয়ী এই তারকা বলেন বর্তমান অবস্থায় এটি বেশ কঠিন মনে হচ্ছে। কথা বলেন কোচ হবার সম্ভাবনা নিয়েও। “কোচ হবার কোনো পরিকল্পনা এই মুহুর্তে আমার নেই, যদিও মানুষের ভাবনায় পরিবর্তন আসে। কিন্তু, এই মুহুর্তে যদি জিজ্ঞাস করেন, না, এই মুহুর্তে কোচ হবার কোনো চিন্তা আমার নেই।”

এ ম্যাচ শেষে রিয়ালের সংগ্রহ ২০ ম্যাচে ৩৮ পয়েন্ট, অবস্থান চতুর্থ। এক ম্যাচ বেশি খেলে ভ্যালেন্সিয়ার সংগ্রহ ৪০ পয়েন্ট, অবস্থান তৃতীয়।

তিন ম্যাচ পর মেস্তেয়ায় রিয়ালের জয়। রোনালদোর গোল ধারা অব্যাহত রাখার ধারাবাহিকতা এবং রিয়াল ছাড়ার গুঞ্জণ উড়িয়ে দেয়ার রাত রিয়াল সমর্থকদের যে বেশ ভালো গিয়েছে বলাই বাহুল্য। সবচেয়ে বেশি স্বস্তি বোধয় পেয়েছেন প্রবল চাপের মুখে থাকা জিদান। মেস্তেয়ায় ফিরে পাওয়া পথ ধরে রিয়াল হয়তো লিগ জিতবে না, কিন্তু এমনটা অব্যাহত থাকলে দুঃস্বপ্নের প্রহর যে কাটবে সেটি কিন্তু হলফ করেই বলা যায়।