গুগল আপনাকে যেভাবে বেঁধে ফেলছে

গুগল আপনাকে যেভাবে বেঁধে ফেলছে

বর্তমান যুগ স্মার্টফোনেরই যুগ, আর অবস্থা দাড়িয়েছে এমন স্মার্টফোন মানেই অ্যান্ড্রয়েড। সেই দিন অনেক আগেই চলে গেছে যখন মানুষ শুধু কথা বলতে মোবাইল ব্যবহার করতো। বিশ্বায়নের এই যুগে হাতে হাতে স্মার্টফোন। ঘরে ঘরে ইন্টারনেট। এন্ড্রয়েড এর ব্যবহার জানলেও এর অনেক ব্যাপার সম্পর্কেই অবগত নই আমরা। আপনার অ্যান্ড্রয়েড ফোনটা কোথায় আছে তা শুধু আপনিই জানেন? না, গুগলও জানে আপনি কোথায় যান, কি করছেন। আপনি বাইক চালাচ্ছেন? আপনি কেনাকাটায় ব্যস্ত? অথবা পাহাড়ে চড়ছেন? সব খবরই আছে গুগলের থলিতে!

সম্ভবত গুগলের সবচেয়ে বিস্ময়কর এবং উদ্ভাবনী ব্যাপার হচ্ছে আপনার অজান্তেই আপনার পিছনে লেগে থাকা। একবার আপনি এন্ড্রয়েড এর জগতে আসলেই অক্টোপাসের মত গুগল আপনাকে শুঁড়ের মধ্যে আটকে ফেলে। গুগল যে আপনাকে ট্র্যাকিং করছে শুধু তাই না, আপনার অ্যান্ড্রয়েড লোকেশন মানে ফোনের অবস্থান তথ্য আপনার অজান্তেই গুগল এর সার্ভার এ জমা হচ্ছে। শুধু কি জিপিএস লোকেশন? শুধু লোকেশনই না, আপনার ব্যবহৃত ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক, কোথায় কখন ব্রাউজিং করছেন এবং এমনকি আপনার দৈনিক কার্যক্রমও তাদের হাতে।

তাহলে বলাই যায়, গুগল আপনার সম্পর্কে এমন সব তথ্যই রাখে যা নিয়ে আপনার নিজেরই কোনো মাথাব্যথাই নাই। আপনার ব্যক্তিগত জীবন সব সময়ই ঝুঁকিতে আছে। এবং প্রশাসন যদি চায় তাহলে আপনার এসব তথ্য আপনার বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে পারবে।

সেই ২০০৯ সাল থেকে ‘লোকেশন হিস্ট্রি’ গুগল অ্যান্ড্রয়েড এর সাথে আছে। লোকেশন হিস্ট্রি গুগল ম্যাপস, গুগল ফটোস, গুগল অ্যাসিস্টেন্ট এবং গুগল অ্যাপ ব্যবহার করে থাকে। যদিও কোনো অ্যান্ড্রয়েডে শুরু থেকেই লোকেশন হিস্ট্রি এনাবল করা থাকে না বা এন্ড্রয়েড প্রথম বারের মত অন করলে বলাও হয় না এনাবল করতে কিন্ত গুগলের অ্যাপগুলো ব্যবহার করতে গেলেই লোকেশন হিস্ট্রি দরকার হবে।

বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কয়েকটা অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন এর লোকেশন হিস্ট্রি নিয়ে এনালাইসিস করে দেখা যায় নিম্নোক্ত তথ্যগুলো গুগল এর সার্ভার এ প্রতিনিয়ত পাঠানো হয়-

আপনার গতিবিধি।

 আপনার ফোন কোন ওয়াইফাইয়ের সাথে যুক্ত আছে কিনা।

 ওয়াইফাই এর আইপি অ্যাড্রেস, সিগনাল, ফ্রিকোয়েন্সি।

 ব্লুটুথ এর ফ্রিকোয়েন্সি, টাইপ, সিগনাল স্ট্রেংথ।

 ব্যাটারির চার্জ, কখন চার্জ করা হয়।

 ফোনের জিপিএস কো-অরডিনেটর।

 

গুগল ফটোস

আপনি গুগল ফটোস এ ঢুকলে দেখবেন একটি অনুরোধ আসবে যেখানে আপনাকে বলা হবে লোকেশন হিস্ট্রি চালু করতে। আপনি হয়তো করলেনও কারণ এটা এনাবল করলে আপনার ছবিগুলো লোকেশন অনুযায়ী সাজানো থাকবে। কিন্ত গুগল আপনাকে বলবে না লোকেশন হিস্ট্রি এনাবল করলে আপনি কোথায় ছবিগুলো তুলেছেন তা সার্ভারে রেকর্ড হয়ে থাকবে এবং পরবর্তীতে সেই লোকেশনে কেউ সার্চ করলে সাজেশন এ আপনার ছবিগুলোই হয়তো আসবে।

 

গুগল ম্যাপস

গুগল ম্যাপস অ্যাপে ঢুকলেই দেখবেন আপনাকে বলা হবে ম্যাপের সর্বোচ্চ ব্যবহারের জন্যে লোকেশন হিস্ট্রি চালু করতে। কিন্ত লোকেশন হিস্ট্রি চালু করলে গুগল এর কি লাভ? হ্যা গুগল এর লাভ হলো লোকেশন হিস্ট্রি চালু করলে গুগল আপনার চলাচলের পথের তথ্য রেকর্ড করে রাখবে।

 

গুগল অ্যাপ

গুগল এর প্রাথমিক অ্যাপে আপনার কাছে লোকেশন হিস্ট্রি এনাবল এর জন্যে অনুরোধ আসবে। এবং গুগল অ্যাপ দেখাবে যে লোকেশন হিস্ট্রি এনাবল করলে রোড ট্রাফিকের নানা তথ্য আপনার ফোনে আসবে। কিন্ত আপনি যদি ‘লার্ন মোর’(মানে আরো জানুন) এ ক্লিক করেন তাহলে দেখবেন গুগল শুধু ট্রাফিক দেখানোর জন্যেই লোকেশন হিস্ট্রি এনাবল করে না, এর মাধ্যমে আপনার লোকেশন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় গুগলের বিজ্ঞপন ভাসবে আপনার এন্ড্রয়েডে। যেমন আপনি যদি বাংলাদেশ থেকে এন্ড্রয়েড ব্যবহার করেন তাহলে শুধু এই দেশের ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপনই দেখাবে।

 

গুগল অ্যাসিস্টেন্ট

গুগল অ্যাসিস্টেন্ট চালু করার সাথে সাথেই আপনাকে অনুরোধ করা হবে লোকেশন হিস্ট্রি অন করতে। আপনাকে দেখানো হবে এটা চালু করলে আপনি কোথায় বেশি যাতায়াত করেন তার উপর ভিত্তি করে প্রাইভেট ম্যাপ দেখার সুযোগ পাওয়া যাবে। কিন্ত যা বলা হয় না তা হল লোকেশন হিস্ট্রি অন করা থাকলে নিয়মিত ওয়াইফাই এর মাধ্যমে তথ্য রেকর্ড করা হয়। যদি অ্যাসিস্টেন্ট সেট-আপ করার পর আপনি লোকেশন হিস্ট্রি বন্ধও করে দেন তখনও গুগল অ্যাসিস্টেন্টে আপনার লোকেশন হিস্ট্রি সক্রিয় থাকবে এবং তথ্য রেকর্ড করতে থাকবে।

অ্যান্ড্রয়েড ব্যবহারকারীরা গুগলের রেকর্ড এরকম বেশ কিছু তথ্য দেখতে পারবেন গুগল ম্যাপস এর ‘ইওর টাইমলাইন’ এ ক্লিক করে। প্রযুক্তি নিঃসন্দেহে আশির্বাদ, তবে তা ব্যবহারে আমাদের আরো বেশী দায়িত্বশীল সচেতন জরুরি হওয়া দরকার।