সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানকেই ন্যাশনাল পেমেন্ট সিস্টেমের আওতায় আসতে হবে

সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানকেই ন্যাশনাল পেমেন্ট সিস্টেমের আওতায় আসতে হবে

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্প্রতি পেমেন্ট সিস্টেমস ডিপার্টমেন্টকে সহজ করতে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। তাতে ট্র্যাকিং ও ইলেকট্রনিক পেমেন্ট সিস্টেমে স্বচ্ছতা আনয়ন, লেনদেনের সঠিক চিত্র ট্রান্সপারেন্ট রাখা, দেশের টাকা বাইরে চলে যাওয়া রোধ করা, গ্রাহক স্বার্থ সংরক্ষণ এবং অভ্যন্তরীণ আন্ত:ব্যাংক লেনদেন খরচ কমিয়ে আনার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ উল্লেখ করা হয়। প্রজ্ঞাপনে ব্যাংকিং খাতের রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস ডিপার্টমেন্ট সঠিক নিরাপদ প্লাটফর্ম ব্যবহারে বাংলাদেশ ব্যাংক ন্যাশনাল পেমেন্টে সুইচ বাংলাদেশ (এনপিএসবি) ও বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্র্যান্সফার নেটয়ার্ক (বিইএফটিএন) মাধ্যমে লেনদেনের বাধ্যবাধকতা জারি করা হয়। সবাইকে অবাক করে ক্রেডিটকার্ড ব্যবসায়ী গ্রুপ মাস্টারকার্ড প্রজ্ঞাপনের বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে। কোন ধরণের নিরাপত্তা হুমকি ও এ সংক্রান্ত টেকনিক্যাল ইস্যু সুস্পষ্ট কারিগরি ব্যাখ্যা না টেনেই বাংলাদেশের রেগুলেটরি বডিকে রীতিমত বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলে দিয়েছে মাস্টারকার্ডের এমন অপেশাদারসুলভ আপত্তিনামা।

বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস ডিপার্টমেন্টের মহাব্যবস্থাপক লীলা রশিদ জানিয়েছেন, “কার্ডের মাধ্যমে দেশের লেনদেনের সঠিক চিত্র তুলে ধরা এবং সঠিক প্লাটফর্ম ব্যবহার হচ্ছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ ও নীতি নির্ধারণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ন্যাশনাল পেমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে লেনদেন হলে দেশে লেনদেনের সঠিক চিত্র তুলে ধরা এবং সংশ্লিষ্ট তথ্য সহজেই মনিটরিং করা যাবে। এনপিএসবি ব্যতীত অন্য কোন চ্যানেলে লেনদেন করা হলে রেমিটেন্স বহি:মুখী হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। যা অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনটি নতুন প্রযুক্তি সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে কোন বাধা সৃষ্টি করবে না।”

পিসিআই ডিএসএস স্বীকৃতি বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, এনপিএসবি’র নিরাপত্তা জোরদারে পেমেন্ট কার্ড ইন্ডাস্ট্রি ডাটা সিকিউরিটি স্ট্যান্ডার্ড (পিসিআই ডিএসএস) কর্তৃক স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই উদ্যোগ যদি কার্ড সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যবসায়িক অগ্রগতির পথে বাধা বলে ধরা হয়, তাহলে আমরা ধরে নিব মাস্টারকার্ড বাংলাদেশের প্রচলিত রেগুলেটরি আইন স্বচ্ছ ভাবে মানছে না। এমনকি এটাও ধারণা করা অমূলক নয় যে ক্রেডিট কার্ড পেমেন্ট লেনদেনের বিপরীতে প্রাপ্ত ভ্যাট সুবিধায় জালিয়তি হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক রেগুলেটর হিসেবে এনপিএসবি ও বিইএফটিএন ট্রানজেকশন ছাড়া বাদবাকি লেনদেনের প্রাইমারি পেমেন্ট রেকর্ড পাচ্ছে না বরং সেকেন্ডারি পেমেন্ট রেকর্ড নিতে ব্যাংকগুলোর ওপর নির্ভরশীল। ফলে এনপিএসবি ও বিইএফটিএন নেটয়ার্কের আওতার বাইরে ঘটা লেনদেনের কোন স্বচ্ছতা নেই। এখানে কালো টাকার প্রবাহ, মানি লন্ডারিং ও বৈদেশিক অর্থ পাচার, জঙ্গিবাদে অর্থায়নসহ বহু সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম বিষয় জড়িত। এর বাইরেও বলতে হয় বাংলাদেশে রাজস্ব বোর্ড প্রায়ই ভুলে ভরা ও কমিয়ে দেখানো আর্থিক ভলিউমের টার্শিয়ারি ডেটার ওপর প্যাসিভ প্রসেসের ভ্যাট পোষ্ট প্রসেসে আদায় করে থাকে, ফলে দেশের নাগরিক প্রকৃত যে ভ্যাট পরিশোধ করছে তা রাজস্ব বোর্ডে জমা হচ্ছে না। এতে করে জাতীয় বাজেটে বছর বছর ভ্যাট আদায়ের টার্গেট লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে এবং জনজীবন খরুচে হচ্ছে। কারিগরি উৎকর্ষের এই যুগে এসে একটি দেশের আর্থিক রেগুলেটর হিসেবে বাংলাদেশে ব্যাংক এর সেকেন্ডারি পেমেন্ট ডেটা এবং রাজস্ব রেগুলেটরি হিসেবে এনবিআর এর টার্শিয়ারি ডাটার ওপর নির্ভর করে থাকার কোন যুক্তিই থাকতে পারে না। বরং যারা এই নির্ভরতাগুলো জারি রাখতে চায় তাদের মতলব দুবৃত্তায়িত চিন্তা প্রসূত বলে আমরা ধরে নেবো। রেগুলেটর হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংককে অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি ও রাজস্ব লোপাট রোধ করতে এনপিএসবি ও বিইএফটিএন নির্ভর স্বচ্ছ ও নিরাপদ তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অবকাঠামো জোর দিতেই হবে। দেশি বিদেশি সকল ব্যাংকিং সেবাদানকারী ও মার্চেন্টদের এই আওতায় আসতে হবে।

এনপিএসবি’র মাধ্যমে লেনদেন নিরাপদ নয় দাবি করে মাস্টারকার্ড বলেছে “বাংলাদেশ ব্যাংকের আইটি নেটওয়ার্ক পিসিআই ডিএসএস কমপ্লায়েন্ট নয়।”

এই বক্তব্য বিভ্রান্তিকর। মূলত ক্রেডিট কার্ড মোঘল মাস্টারকার্ড, ভিসা, আমেরিকান এক্সপ্রেস নিজেরা একটি প্লাস্টিক ক্রেডিট কার্ড সিকিউরিটি স্টান্ডার্ড তৈরি করে রেখেছে যা মুলত ক্রেডিট কার্ড বিপনণকারী মার্চেন্টদের জন্য প্রযোজ্য। বাংলাদেশ ব্যাংকের আইটি সুইচিং সিস্টেম পিসিআই ডিএসএস কমপ্লায়েন্ট মানতে বাধ্য নয়। তবে নিরাপত্তা বিবেচনায় এটা একটা উপদেশ হিসেবে আসতে পারতো যা কমপ্লায়েন্ট করে নেয়া অবশ্যই প্রয়োজন।

পিসিআই ডিএসএস এর দুটি রেগুলেটরি ধারা রয়েছে, এই দুটি বাংলাদেশ ব্যাংক আইটি সিকিউরিটির পারস্পেক্টিভ থেকে কমপ্লাই করলে সার্টিফিকেশনের প্রয়োজনীয়তা দেখি না, কারণ বাংলাদেশ ব্যাংক কার্ড বিক্রিও করে না বা এমন সেবাও দেয় না।

মাস্টারকার্ড স্পষ্টভাবে বলতে পারে কোথায় কোথায় নিরাপত্তার ফাঁক রয়েছে এবং কি সেসব উত্তরণে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে একযোগে কাজ করতে কি কি করা যেতে পারে। (এখানে আমরা উল্লেখ করতে পারি, ওয়েব ব্রাউজার ইন্টারনেট এক্সপ্লোরারের সিকিউরিটি প্রসঙ্গ। গুগল মাইক্রোসফটকে তার ব্রাউজারের সিকিউরিটি ব্রেচগুলো সমাধানসহ ধরিয়ে দিয়ে নিরাপদ অনলাইন সেবায় এক বিরাট মহানুভবতা দেখিয়েছে)। এখানে বলে রাখা প্রয়োজন, বাংলাদেশ ব্যাংক ক্রেডিট কার্ড বাজারজাত করছে না বরং সে আন্ত:ব্যাংক পেমেন্ট নিরাপদ ও সুন্দর করার একটা স্বচ্ছতার জায়গা তৈরিতে সচেষ্ট প্রতিষ্ঠান। এই প্ল্যাটফর্ম শুধু সীমিত তথ্য রেকর্ড করবে। যেমন, অর্থের উৎস ও গন্তব্য একাউন্ট এবং আর্থিক ভলিউম। বাংলাদেশ ব্যাংক অন্য কোন তথ্য রেকর্ড করবে না যদি না ট্রাঞ্জেকশন সন্দেহজনক হয় (লন্ডারিং, পাচার, জঙ্গি অর্থায়ন কিংবা কালো টাকার প্রবাহ)।

মাস্টারকার্ডের কান্ট্রি ম্যানেজার (বাংলাদেশ) সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল বলেছেন, “অন্যান্য দেশে পেমেন্ট সিস্টেম গেটওয়ে ব্যাংকিংখাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থার বাইরে কারও কাছে থাকে। বাংলাদেশে এটা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে। সুতরাং নিয়ন্ত্রক সংস্থা আমাদের প্রতিযোগী। আমরা চাই একটি লেভেল প্লেইং ফিল্ড এবং লেনদেন গেটওয়ে নির্ধারণের বিষয়টি ব্যাংকগুলোর উপর ছেড়ে দিতে।” এই বক্তব্যেই আসল লক্ষণ লুকিয়ে আছে যেখানে সন্দেহ হয় যে আসলে ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতা বাড়ার ভয়েই মাস্টারকার্ড নিরাপত্তার অস্পষ্ট অভিযোগ এনেছে। এ বক্তব্যে বিভ্রান্তি থেকেই যায় কারণ, ন্যাশনাল পেমেন্টে সুইচ বাংলাদেশ (এনপিএসবি) ও বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্র্যান্সফার নেটয়ার্ক (বিইএফটিএন) আন্ত:ব্যাংক ফান্ড ট্রানজেকশন ইলেকট্রনিক তারের মাধ্যমে নিখুত ও প্রবাহমান করবার অবকাঠামো, এটা ছাড়া বাংলাদেশের লোকাল ট্রানজেকশন ইলেকট্রনিক করা অসম্ভব। এর ফলে ব্যাংকিং লেনদেন সহজ ও দ্রুত হবে। ভিসা, মাস্টারকার্ড ও আমেরিকান এক্সপ্রেসের পাশাপাশি লোকাল ট্রানজেকশনের জন্য স্থানীয় ক্রেডিট কার্ড ব্যবসায়ের নতুন দিগন্ত উম্মোচিত হবে। উপরন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক আন্ত:ব্যাংক অর্থ আদান প্রদানকে কম খরচে আনতে এমনকি খরচহীন করতে চায়। বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকিং ফান্ড ট্রান্সফারে চার্জ রাখে না, রেগুলেটর হিসেবে রাখতে পারেও না। সুতরাং বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিযোগী হয়ে ওঠার অভিযোগ তোলাটা হীনমান্যতা ছাড়া কিছু নয়।

আমরা বলব, এ ধরনের বক্তব্য ও তৎপরতার মাধ্যমে বাংলাদেশে একটি পূর্ণাঙ্গ “পেমেন্ট গেটওয়ে” সুচনা করার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে নিজেরা ব্যবসা একচেটিয়া ব্যবসা করতে চাইছে। একটি দেশের স্থানীয় লেনদেনে “স্থানীয় পেমেন্ট গেটওয়ে” থাকবে না বরং স্থানীয় লেনদেনে এক বা একাধিক বিদেশি কোম্পানি একচেটিয়া ব্যবসার অধিকার চাইবে এটা রীতিমত ন্যাক্কারজনক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ভিসা মাস্টারকার্ডসহ অনলাইন লেনদেনের যাবতীয় কার্যক্রম কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এনপিএসবির মাধ্যমে সম্পন্ন হওয়া উচিত। বর্তমানে মাস্টারকার্ডের লেনদেন এনপিএসবির আওতার বাইরে রয়েছে। দেশে বর্তমানে ৮০ লাখ মানুষ ডেবিট কার্ড, ২০ লাখ মানুষ ক্রেডিটকার্ড ব্যবহার করেন। তবে মাস্টারকার্ড ব্রান্ডের কার্ড কি পরিমাণ আছে তার সঠিক তথ্য চাইলেও দিতে রাজি হয়নি মাস্টারকার্ড। বাংলাদেশে যাত্রার শুরুর চার বছর পার হলেও কতো সংখ্যক গ্রাহকের কার্ডে কত টাকার লেনদেন হয়েছে তার কোনো তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে নেই। সকল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সব ধরণের লেনদেনের হিসাব কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা দিলেও মাস্টারকার্ড কখনোই তা দেয়নি। এটা রীতিমত ন্যাক্কারজনক যে, অব্যহত সিকিউরিটির এই বৈশ্বিক অনিরাপদ সময়ে ২০ লাখ ক্রেডিট কার্ডের সন্দেহযুক্ত লেনদেনেও বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রকের কোন প্রাইমারি ডেটা এক্সেস নেই!

প্রস্তাবনাগুলো পয়েন্ট আকারে বলা যেতে পারে।

. বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত হবে এনপিএসবি’র সাথে সংযুক্ত বেসরকারি ব্যাংক ও কার্ড বিপণনকারী মার্চেন্টগুলোর আইটি ইন্টারফেইসকে সিকিউরড করতে উচ্চ মানের কাজ করা। প্রতিটি ব্যাংক ও মার্চেন্টের ক্লায়েন্ট ইন্টারফেইস ভিপিএন কানেক্টেড থাকবে এবং প্রতিটি ক্লায়েন্ট সিকিউরিটি গেটওয়ে হয়ে এনপিএসবি সার্ভারে রাউটেড হবে। এখানে ক্লায়েন্টরা সার্টিফিকেইট অথোরিটি এবং সার্টিফিকেইট রেজিস্টারের সেন্ট্রাল এক্সেস পেয়ে সিকিউরড সেশন কানেক্ট করবে।

. ব্যাংকগুলোকে অনলাইন ব্যাংকিং সেবা দুই স্তরের পাসয়ার্ড দিয়ে (সাধারণ লগইন পাস এবং কোড জেনারেটর দিয়ে রি-অথেন্টিকেইট, চ্যালেঞ্জ-রেসপন্স বা মাল্টি ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশান নিরাপদ করতে হবে ও এনক্রিপ্টেড ওয়েব ব্রাউজিং নিশ্চিত করতে হবে।

. যেহেতু এনপিএসবি ভেন্ডর (রাউটার ও সুইচ নির্মাতা) বিশ্বখ্যাত মার্কিন জায়ান্ট “সিসকো” তাই বাংলাদেশ ব্যাংক সরাসরি সিসকোর সাথে সিকিউরিটি গেইটওয়ে (SGw), IPSec/TSL/SSL Protocol, সিকিউরিটি সার্টিফিকেশন (সিএ, আরএ ক্লায়েন্ট-সার্ভার সার্টিফিকেট অথেন্টিকেশন) এবং সর্বোপরি এইএস (এডভ্যান্স সিকিউরিটি এনক্রিপশন স্ট্যান্ডার্ড) নিয়ে কাজ করতে পারে। এইএস একটি তিন স্তরের শক্তিশালী এনক্রিপশন স্পেসিফিকেশন মেকানিজম যা ১৯২, ২৫৬ ও ৫১২ বিটের সিকিউরিটি কি-সাইজ নিয়ে পর পর তিন ধাপে ডেটা এনক্রিপশন করে (ট্রিপল ডিইএস) যা সার্টিফিকেশন কি-সাইজ ২০৪৮ পর্যন্ত বর্ধিত করে অতি উচ্চ নিরাপত্তা বিধান করে। সেই সাথে পয়েন্ট টু পয়েন্ট এনক্রিপশন (P2PE), Tokenization ইত্যাদি যাতে সফটওয়ার সাপোর্টে কভার থাকে তাও খেয়াল রাখতে হবে। যেহেতু সিসকো এই খাতে মার্কেট লিডার তাই এটা ধর্তব্য যে সিসকো রাউটিং বা সুইচিং সিস্টেমে এইসব সাপোর্ট করে। শুধু দরকার সঠিক ও নিরাপদ নেটওয়ার্ক ডিজাইন ও বাস্তবায়ন। এ ধরণের উচ্চ সক্ষমতার সিকিউরড নেটওয়ার্ক খুব সহজেই পিসিআই ডিএসএস কমপ্লায়েন্স পেয়ে থাকে। তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিৎ বাইরের বিভ্রান্তিকর তথ্যে কান না দিয়ে সরাসরি সিসকোর সাথে সিকিউরিটি প্রজেক্টে যাওয়া।

৪. তবে বাংলাদেশের অনলাইন ব্যাংকিং সার্ভিস প্রোভাইডারগুলো (ব্যাংক এবং অন্যান্য)  পিসিআই ডিএসএস, আইএসও ৮৫৮৩ এবং ইনফরমেশন সিকিউরিটির ISC^2 বা আইএসও ২৭০০১ ফলো করছে কিনা তার একটা অডিট হবার দরকার আছে। আমরা কিছু বিকাশ স্ক্যামিং (এটা অনলাইন ব্যাংকিং নয়, টেলি ব্যাংকিং। তথাপি এখানে সিকিউরিটি মেজার নিতে হবে) এর কথা শুনেছি যেগুলো স্ট্যান্ডার্ড ফলো করলে ঠেকানো যেতো। সাধারণভাবে ব্যাংকগুলো অবশ্য পিসিআই ডিএসএস মানছে কারণ তা না হলে ভিসা, মাস্টার, আমেরিকান এক্সপ্রেস এসব অপারেট করতেই পারতো না। তথাপি একটা এন্ড টু এন্ড (কোর নেটওয়ার্ক থেকে শুরু করে সার্ভিস প্রোভাইডারের হাব নেটওয়ার্ক হয়ে ডিভাইস পর্যন্ত) মানসম্পন্ন সিকিউরিটি অডিটের প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু চিন্তার ব্যাপার হচ্ছে মোবাইল ব্যাংকিং, কারণ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমেই দেশের ৮০ ভাগ মানুষ টাকা লেনদেন করে থাকে।

৫. নেটওয়ার্ক সিকিউরিটি, ইন্টারফেইস সিকিউরিটি, ট্রান্সপোর্ট সিকিউরিটি, স্টোরেজ সিকিউরিটি ও সেশন সিকিউরিটির ইমপ্লিমেন্টেশনের এন্ড টু এন্ড স্কোপের বাইরে বাইরে ইউজার ডিভাইস, ইউজার ডেটা সিকিউরিটি, এন্টিভাইরাস ইত্যাদি নিয়েও কাজ করতে হবে। সিকিউরিটি ভালনারাবেলিটি নির্ণয়ে  সঠিক এলার্ম সিস্টেমও থাকা চাই।

৬. পেমেন্ট সিস্টেমের আধুনিকায়ন, ই-ট্রাঞ্জেকশন ফেসিলিটেইট করা, ক্যাশলেইস সোসাইটি বাস্তবায়নে জোর দেয়া এবং একটি পুর্ণাঙ্গ লোকাল পেমেন্ট গেইটওয়ের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সূচনা করতে এনপিএসবি’র কোন বিকল্প নেই। এনপিএসবি ও বিইএফটিএন  একটি পুর্ণাঙ্গ “পেমেন্ট গেটওয়ে” বাস্তবায়নের অত্যাবশ্যকীয় প্রাথমিক ধাপ যার সুফল ইতোমধ্যেই ব্যাংক থেকে ব্যাংকে অনলাইন লেনদেনে দৃশ্যমান। বাংলাদেশে ব্যবসা করতে হলে সব ব্যাংক, মার্চেন্ট এমনকি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ন্যাশনাল পেমেন্ট ইনফাস্ট্রাকচারের ইউনিক ও সীমলেইস আমব্রেলার নিচে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে আসতেই হবে। এর কোন ধরণের বিকল্প অপশন রাখা দেশের আর্থিক শৃঙ্খলার স্বার্থবিরোধী হবে।

৭. পরবর্তী ধাপে বাংলাদেশ ব্যাংককে সকল ইনফাস্ট্রাকচার ও মার্কেট প্রতিবন্ধকতা পাশ কাটিয়ে আধুনিক বিশ্বের নতুন ধারার পেমেন্ট প্ল্যাটফর্ম এনএফসি (নিয়ার ফিল্ড কমিউনিকেশন) বাস্তবায়ন করতে হবে। যেখানে স্মার্ট ফোনের এনএফসি প্ল্যাটফর্ম সরাসরি ব্যাংক একাউন্টের সাথে সংযুক্ত থাকবে (টেলিচার্জ ভিত্তিক ওয়ালেট নয়), ফলে স্মার্ট ফোন ডিজিটাল ব্যাংকিং এটিএম কার্ড হয়ে ওঠে (স্মার্ট ফোন এনএফসি এটিএম)। এনএফসি ধীরে ধীরে কিছুটা অনিরাপদ প্লাস্টিক কার্ডের জায়গা দখল করে নেবে, এতে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্মার্ট ফোনে বায়োমেট্রিক ইনপুট যোগ করাও সম্ভব হবে। আর এনএফসি স্থানীয় গেটওয়ের মাধ্যমে এনপিএসবি এবং ইন্টার্নাল-এক্সটার্নাল পেমেন্ট গেটওয়েগুলোর সাথে যুক্ত হয়ে ক্যাশলেস ও সত্যিকারের ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেমের দিগন্ত উন্মোচন করবে।

দুবৃত্তপনার মোটিভকে পরাজিত করে বাংলাদেশ ব্যাংক নাগরিকের আর্থিক লেনদেনকে স্বচ্ছ ও সাশ্রয়ী করে দেশের অর্থনীতিকে সামনে এগিয়ে নিতে সঠিক, অনৈতিক প্রভাবহীন নেতৃত্ব দিবে, যেকোন বিভ্রান্তিকর আপত্তি ও প্রতিবন্ধকতাকে পাশ কাটিয়ে একটি পুর্ণাঙ্গ “পেমেন্ট গেটওয়ে” বাস্তবায়নের ধাপগুলোর কাজ অতি দ্রুততায় এগিয়ে নেবে সেটাই প্রত্যাশা! আমাদের আর্থিক অবকাঠামো নিরাপদ হোক দুরদর্শিতার সাথে এগিয়ে যাক।