প্রিমিয়ার লিগের ২৫টি বাজে ডিজাইনের জার্সি

প্রিমিয়ার লিগের ২৫টি বাজে ডিজাইনের জার্সি

প্রিয়দলের জার্সি কিনে ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটানো এখন সাধারণ ঘটনা। বছরের একটা সময় সকলে উন্মুখ হয়ে থাকি বাজারে কখন পছন্দের কিট আসবে। আবার তারও আগে চোখ রাখি নতুন মৌসুম শুরুর সময়ে। প্রিয় দল তাদের জার্সি রিলিজ দিবে। হোম, অ্যাওয়ে, থার্ড। ডিজাইন দেখে উল্লসিত হই, কখনোবা হতাশ। হাল আমলে কমবেশি সকলেই কেতাদুরস্ত, ফ্যাশন সচেতন। তাই, আমরা আলোচনায় মাতি। কেউ গভীর পর্যবেক্ষণে উপনীত হই। ক্লাবের ভক্তরা সবাই অন্তত মত প্রকাশের নূন্যতম অধিকারটুকু রাখেন।

অন্যদিকে ক্লাবের কর্তারাও মানুষ। যারা এসবের নকশা তৈরি করেন তারাও মানুষ। ভুল হওয়া স্বাভাবিক। তারা নিজস্ব ধারা অনুসরণ করেন। কিন্তু একটার অনুসরণ করতে গিয়ে আরেকটা ঘটলে তখন তারা এটিকে ভুল বলে গন্য করে। কখনো কখনো কিছু ভুল ভুলের ঊর্ধ্বে। এমন সব ভুলভাল ধারায় তৈরি কিছু ডিজাইন যেগুলো মানুষ মনে রাখে বহুদিন, তবে নেতিবাচক ধারণা নিয়ে। জনপ্রিয় ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ ফুটবলের রজতজয়ন্তী বা পঁচিশ বছর পূর্তি উপলক্ষে চলুন জেনে নেওয়া যাক এমন পঁচিশটি জার্সির ব্যাপারে… 

 

২৫. বোল্টন ওয়ান্ডার্স, ২০১১-১২, হোম।

ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগে ২০১১-১২ মৌসুমে জার্সির জন্য সমালোচিত হওয়া দলের নাম বোল্টন ওয়ান্ডার্স। হোম কিটে যুক্তিহীন ডিজাইনের কারণে সমালোচনার মুখোমুখি হয় দলটি।

 

২৪. ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, ১৯৯৫-৯৬, অ্যাওয়ে।

সম্ভবত প্রিমিয়ার লিগের ইতিহাসেই জার্সি নিয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে ১৯৯৫-৯৬ সিজনে রেড ডেভিলদের ছাইরঙা অ্যাওয়ে কিটটি নিয়ে। প্রথম দেখায় মনে হবে সস্তা দরের কোন মোটা কাপড়ের হাফ সোয়েটার।

 

২৩. শেফিল্ড ওয়েডনেসডে, ১৯৯৫-৯৬, অ্যাওয়ে।

ক্রীড়াসামগ্রী প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ‘পুমা’র তৈরিকৃত শেফিল্ড ওয়েডনেসডের অ্যাওয়ে কিট রীতিমতো চোখে প্রেসার ফেলতে বাধ্য করেছিল! পিওর গ্রীণ কালারে ঘন কালো রঙের স্ট্রাইপ বা রেখা দেখতে আপনার চোখের পাওয়ার বাড়াতে হতো। জার্সিটি একেবারে গড়পড়তার চাইতেও নিম্নমানের ছিল।

 

২২. লিভারপুল, ১৯৯৪-৯৫, থার্ড কিট।

এই কিটে তারা কয়েকবছর আগে ফেলে আসা ক্রেজি সময়ের স্মৃতিচারণ করতে চেয়েছিল। তা তো হয়ইনি উলটো অনেকটা বিকৃত হয়ে শুভাকাঙ্ক্ষীদের চক্ষুশূলে পরিণত হয়েছিল সেবার।

 

২১. চেলসি, ২০০৭-০৮, অ্যাওয়ে।

২০০৭-০৮ মৌসুমে চেলসির টিয়া রঙের অ্যাওয়ে কিটটাকে ‘মিরর পত্রিকা’র এক প্রতিবেদক তুলনা করেছে রেলওয়ের ওভারটাইম করা শ্রমিকদের ইউনিফর্ম এর সাথে। খারাপ বলেননি তিনি। আমাদের দেশেও বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের এমনটা পড়তে দেখা যায়। তাই, চেলসি ভক্তদের কাছে প্রিয় ফুটবলারদের ফি সপ্তাহেই অন্তত একবার হলেও এমন রূপে দর্শন বিরক্তিকর ছিল।

 

২০. ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, ১৯৯২-৯৩, থার্ড কিট।

ঘন গোফওয়ালা একদল মানুষ যাদের পরিহিত জামার দুটো রং। একপাশে সবুজ, অন্যপাশে সবুজাভ হলুদ। কি, চোখের সামনে নিশ্চয়ই কোন জোকার ভাসছে? যাদের বর্ণনা দিচ্ছিলাম, তারা জোকার নয়। ম্যানচেস্টারের লাল অংশের ফুটবলার তারা। আর পরনের জামাটা তাদের জন্য বানানো ‘আমব্রো’ ব্র‍্যান্ডের ১৯৯২-৯৩ সিজনের থার্ড কিট।

 

১৯. লিভারপুল, ২০১২-১৩, অ্যাওয়ে।

একই সঙ্গে কমলা, সাদা, বেগুনি। এ যেন রঙের খেলা। লিভারপুলের ২০১২-১৩ মৌসুমের অ্যাওয়ে কিট এটি। যেন দলবেঁধে সেজেগুজে মদের দোকানে উইকেন্ডে যাচ্ছে!

 

১৮. এভারটন, ১৯৯৪-৯৫, অ্যাওয়ে।

ধূসর বা ছাই রঙ খারাপ না দেখতে। কিন্তু, অসমাপ্ত যেকোন কিছুই বেখাপ্পা। এভারটনের জার্সির বেলায়ও হয়েছিল তাই। ছাইয়ের সাথে অফ হোয়াইট, কলারের দিকে কালো মিলিয়ে জার্সি হয়েছিল মোটামুটি জগাখিচুড়ি গোছের।

 

১৭. টটেনহাম হটস্পার, ২০০৯-১০, হোম।

সাদা রঙ টটেনহামের ট্রেডমার্ক। ২০০৯-১০ মৌসুমের হোম কিট সাদাই ছিল। বাঁধ সাধে দুই কাঁধের এ মাথা ও মাথা জুড়ে হলুদ রেখায় ‘ভি’ দেখানোর চেষ্টা। জার্সির ডিজাইনার জিনিসটা ফুটিয়ে তুলতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছিলেন বটে, বাট হি ফেইল্ড!

 

১৬. ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, ২০১৭-১৮, থার্ড কিট।

লাল শয়তানরা চলতি মৌসুমে আবার ফিরে ছাই কালারে। এবারেরটার বিশেষত্ব আছে যদিও। এটি দর্শকরা ডিজাইন করেছেন এবং এতে রয়েছে ইংলিশদের পবিত্র ‘ট্রিনিটি’ ভাস্কর্যের ছায়াবিশেষ। কিন্তু, যত যাই থাকুক, ছাই রং যেন ঠিক যায় না ম্যান ইউনাইটেডের সাথে।

 

১৫. বোল্টন ওয়ান্ডার্স, ১৯৯৭-৯৮, অ্যাওয়ে।

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ পার্পল বা বেগুনি কিট অনেক দেখলেও ৯৭-৯৮’র বোল্টনেরটার মতো দেখেনি। আজো বেগুনি জার্সি সেটির কথা মনে করিয়ে দেয়। সাধে কি বলে, চকচক করলেই সোনা হয় না!

 

 

১৪. মিডলসবার্গ, ১৯৯৬-৯৭, অ্যাওয়ে।

তারা সাজসজ্জায় ভিন্নতা আনতে চেয়েছিল। কিন্তু জামায় নীলরঙের মোটা প্লাস সাইনটা বুঝাতে পারেনি তাদের ভাবনাটা। এছাড়াও জার্সির ডানহাতায় ক্লাবের নামের শর্ট ফর্ম ইউজের সিস্টেমটাও তাদের অ্যাওয়ে কিটটাকে দৃষ্টিকটু ঠেকিয়েছে।

 

১৩. কনভেন্ট্রি, ১৯৯২-৯৩, অ্যাওয়ে।

প্রিমিয়ার লিগের এই দলটি তাদের ৯২-৯৩ এর সেকেন্ড কিটটিতে দিতে চেয়েছিল আমেরিকান পেইন্টার পল জ্যাকসন পোলাকের আর্টের ছোঁয়া। উলটো তা হয়ে গেছে কসাইয়ের টি-শার্ট! আসলেই তাই। লাল জমিনে সাদার অদ্ভুত মিশেলে কনভেন্ট্রির জার্সিতে শিল্পের ছোঁয়ার বদলে ভ্যাবলা রূপ ধরেছে।

 

১২. ম্যানচেস্টার সিটি, ২০০৮-০৯, অ্যাওয়ে।

ইউনাইটেডের পাঁড় ভক্তদের মতে ম্যানচেস্টার ইজ রেড। আবার সিটিদের মতে, দ্য স্কাই ইজ ব্লু। অবশ্য, ২০০৮- ০৯ সেশনে সিটির অ্যাওয়ে কিট দেখে হঠাৎ কেউ ভড়কে যেতেই পারে! ম্যানচেস্টার কি তবে কমলাও? সিটিজেনদের টাটকা কমলা জার্সি যেন ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফলটির প্রচারণা করে গেছে।

 

১১. অ্যাস্টন ভিলা, ১৯৯৩-৯৪, অ্যাওয়ে।

সবুজ, কালো, লাল। তেরঙা স্ট্রাইপ। না রঙচঙে, না সাধারণ। অদ্ভুতুড়ে…

 

১০. হাডার্সফিল্ড, ২০১৭-১৮, থার্ড কিট।

চলতি সিজনে ক্লাবটির থার্ড কিট দেখে থাকলে খুব বেশি লোক দ্বিমত করবে না এ কথার সাথে যে, এটি জার্সির চেয়েও বেশি হ্যালোইন পার্টির জামা হয়েছে। দেখতে রঙিন হলেও ভয়ংকর। ফ্র‍্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টূর্ণামেন্টেই এসব আকর্ষক ডিজাইনের চাহিদা থাকে বেশি।

 

. সান্ডারল্যান্ড, ২০১৬-১৭, থার্ড কিট।

বেগুনির মাঝে নেভি ব্লু। আলোর নিচেও কেমন যেন নিরামিষ কম্বিনেশন। খানিকটা ভৌতিক আমেজ!

 

. টটেনহাম হটস্পার, ২০০৭-০৮, হোম।

ক্লাবের ১২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে স্পাররা বিশেষ জার্সি তৈরি করে। একপাশে নীল, অন্যপাশে সাদায় তারা বুঝিয়েছে ভুল করলে সবকিছু কেমন দৃষ্টিকটু দেখায়। জার্সিতেও তাদের তেমন ভালো দেখাচ্ছিল না।

 

. নটিংহাম ফরেস্ট, ১৯৯৭-৯৮, অ্যাওয়ে।

যেন কালো মার্কার পেনে হিজিবিজি কিছু লেখা। সেই লেখা দিয়ে সম্ভবত নটিংহাম বুঝাতে চেয়েছে তাদের ঘুরে দাঁড়ানো। সে যাই হোক, তাদের অ্যাওয়ে কিট ছিল ঠিক যেমনটা আমাদের স্কুল ইউনিফর্মে কলমের কালি ছেড়ে দেওয়ার পর হতো…

 

. লিভারপুল, ২০১৩-১৪, থার্ড কিট।

দুইয়ের অধিক রং, দুইয়ের অধিক নকশা, দুইয়ের অধিক অ্যাঙ্গেলে থার্ডকিট প্রায়োগিক অর্থেই বিশ্রী চেহারার হয়েছিল।

 

. নিউক্যাসল ইউনাইটেড, ১৯৯৭-৯৮, অ্যাওয়ে।

এমনিতে ম্যাগপাই খ্যাত নিউক্যাসলের সেবারের অ্যাওয়ে কিটে কোন এক্সট্রা জাঁকজমক ছিল না। তবে, তা দেখতেও অতটা কেতাদুরস্ত লাগেনি। এর পেছনের কারণ অবশ্যই রঙ নির্বাচনে উদাসীনতা। নেভি ব্লুর উপরে সবুজ এবং কমলা, তার উপর ভারী গলার গোল, পুরু কলার যা ম্যাচের জন্য অনুপযোগী। তাছাড়া, কাপড়ও যথেষ্ট মোটা। সবমিলিয়ে ১৯৯৭-৯৮ মৌসুমে নিউক্যাসল ইউনাইটেডের সেকেন্ড কিটটা যাচ্ছেতাই।

 

 

. ব্ল্যাকবার্ন রোভার্স, ১৯৯৬-৯৭, অ্যাওয়ে।

প্রাচীন এজেটেক (স্পেন কর্তৃক মেক্সিকো জয়ের আগে যে জাতি সেখানে সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিল) সভ্যতার ল্যাঙ্কাশায়ার মিল শহরের সাথে ব্ল্যাকবার্নের সম্পর্ক অজানা। কিন্তু রোভার্স তাদের কিট প্রস্তুতকারকদের দ্বারা জার্সির ডিজাইনে লাতিন আমেরিকান কিছু ব্যাপার তুলে ধরেছে যা দেখতে কোনমতেই ভালো ঠেকেনি।

 

. ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, ১৯৯২-৯৩, অ্যাওয়ে।

সে মৌসুমের ইউনাইটেডের কিট যেন সব হেয়ালিপনায় ভরপুর ছিল। থার্ড কিটের ন্যায় সেকেন্ড কিটও বিতর্কিত। নীল রঙের জার্সির ব্যাকগ্রাউন্ডজুড়ে দলের বিশাল লোগোতে প্রত্যেককে লাগছিল হাবাগোবা ক্যাবলার মত। এমনকি সে সময়কার স্টাইলিশ তরুণ লি শার্প, এরিক ক্যান্টোনাদেরও দেখাচ্ছিল পুরো ভ্যাবলা।

 

. টটেনহাম, ১৯৯১-৯২, থার্ড কিট।

অনেকটা ইউনাইটেডের মত। জার্সির এক তৃতীয়াংশ জায়গায় বড় করে সেমি-রিডেবল টাইপে ‘স্পার্স’ লেখা। কোন কারণ ছাড়াই জামায় এমন অহেতুক আঁকাজোকা টটেনহামের এই কিটে লাগিয়ে দিয়েছে অন্যতম বাজে কিটের তকমা।

 

. নরউইচ সিটি, ২০১৫-১৬, থার্ড কিট।

বাচ্চারা খাবার না খেতে চাইলেও সবজি বা ফলের সালাদ তাদের প্রিয়। কারণ, এতে বিভিন্ন রকম রঙের একটা মোহনীয় সমন্বয় থাকে যা বাচ্চাদের মানসিকতাকে এর সাথে মিশে যেতে বাধ্য করে। ২০১৫-১৬ সিজনে নরউইচ সিটি কর্তৃপক্ষ কি তবে তাদের খেলোয়াড়দের বাচ্চা ভেবেছিল? এক কিটে চারটের বেশি কালার, হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে জার্সির প্যাটার্নের সাথে তেমন অমিলও নেই! কে জানে, টিম কর্তৃপক্ষ আগাম জানতো কি না এমন জরিপের কথা যাতে গত ২৫ বছরের মধ্যে তাদের এই থার্ড কিটটা থাকবে সবার আগে, মন্দের তালিকায়!