মওলানা ভাসানীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ

মওলানা ভাসানীর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ

মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ১৯৭২ সালের ২২ জানুয়ারি ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা, আওয়ামী লীগ ও ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) প্রতিষ্ঠাতা মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৭তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ। ফিরে এসেই ১৯৭২ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সাপ্তাহিক ‘হককথা’ প্রকাশ করেন। ওই বছরের জুনে আইন অমান্য আন্দোলন শুরু করলে টাঙ্গাইলের সন্তোষে গৃহবন্দি হন তিনি।

১৯৭৬ সালের ১৬ মে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের প্রতিবাদে ঐতিহাসিক লং মার্চে নেতৃত্ব দেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। তিনি ছিলেন বিশ শতকে ব্রিটিশ ভারতের অন্যতম তৃণমূল রাজনীতিবিদ ও গণআন্দোলনের নায়ক। জীবদ্দশায় ১৯৪৭ সালে সৃষ্ট পাকিস্তান ও ১৯৭১ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি।

মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী বাংলাদেশের মানুষের কাছে ‘মজলুম জননেতা’ হিসেবে সমধিক পরিচিত। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট গঠনকারী প্রধান নেতাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায়ও বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। রাজনৈতিক জীবনের বেশির ভাগ সময়ই তিনি মাওবাদী কমিউনিস্ট তথা বামধারার রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তার অনুসারীদের অনেকে এ জন্য তাকে ‘লাল মওলানা” নামেও ডাকতেন। তিনি অত্যন্ত দূরদর্শী নেতা ছিলেন এবং পঞ্চাশের দশকেই নিশ্চিত হয়েছিলেন, পাকিস্তানের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ একটি অচল রাষ্ট্র কাঠামো।

বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের জনবিরোধী কার্যকলাপের ফলে মওলানা ভাসানী ১৯৪৯ সালের ২৩ থেকে ২৪ জুন ঢাকার টিকাটুলীতে রোজ গার্ডেনে মুসলিম লীগ কর্মী সম্মেলন আহ্বান করেন। ২৩ জুন ওই কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সারা দেশ থেকে ৩ শতাধিক কর্মী যোগ দেন।

ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন আতাউর রহমান খান এবং মওলানা ভাসানী ছিলেন প্রধান অতিথি। ২৩ জুন পূর্ববঙ্গের প্রথম বিরোধী রাজনৈতিক দল ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ গঠিত হয়। মওলানা ভাসানী সর্বসম্মতিক্রমে ওই দলের সভাপতি নির্বাচিত হয় এবং সাধারণ সম্পাদক হন শামসুল হক। ২৪ জুন আরমানিটোলা ময়দানে আওয়ামী মুসলিম লীগের প্রথম জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৪৯ সালের মধ্যভাগে পূর্ববঙ্গে খাদ্যাভাব দেখা দেয়। ১১ অক্টোবর আরমানিটোলা ময়দানে আওয়ামী মুসলিম লীগের একটি জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় খাদ্য সমস্যা সমাধানে ব্যর্থতার জন্য পূর্ববঙ্গ মন্ত্রিসভার পদত্যাগের দাবি তোলা হয় এবং ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে মওলানা ভাসানী ভুখা মিছিলে নেতৃত্ব দেন। ভুখা মিছিলে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য ১৯৪৯ সালের ১৪ অক্টোবর গ্রেফতার হয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে যান তিনি।

মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ১৯৫৭ সালের ৬ থেকে ১১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঐতিহাসিক কাগমারী সম্মেলন আয়োজন করেন। এতে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের উদ্দেশে বিখ্যাত ‘ওয়ালায়কুমুসসালাম’ উক্তির মধ্য দিয়ে সর্বপ্রথম পূর্ব পাকিস্তানের বিচ্ছিন্নতার ঐতিহাসিক বার্তা দেন তিনি। ওই বছর মার্চে বিরোধ দেখা দেয়ায় নিজের প্রতিষ্ঠিত দল আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগ করেন এবং ২৬ জুলাই ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন তিনি।