পৃথিবীর ৮২ শতাংশ সম্পদ ১ শতাংশ ধনীর দখলে

অক্সফামের রিপোর্ট

পৃথিবীর ৮২ শতাংশ সম্পদ ১ শতাংশ ধনীর দখলে

পুরো দুনিয়ায় গত এক বছরে যে পরিমাণ সম্পদ সৃষ্টি হয়েছে এর কোনো সুবিধা পায়নি বিশ্বের অর্ধেক ভাগ মানুষ। এমনকি ওই সম্পদের ৮২ শতাংশের মালিক হয়ে বসে আছে পৃথিবীর মোট জনগোষ্ঠীর মাত্র ১ শতাংশ মানুষ। নিজেদের নতুন গবেষণায় এ রকমটিই উঠে এসেছে বলে দাবি করেছে লন্ডনভিত্তিক সাহায্য সংস্থা ‘অক্সফাম’।

এমন বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অসাম্যতাটিকে একটি ‘ব্যর্থ হতে যাওয়া অর্থনীতি ব্যবস্থার লক্ষণ’ হিসেবে দেখছেন অক্সফাম-এর নির্বাহী পরিচালক উইনি বায়ানিমা। তিনি বলেন, ওই অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ধনীদের করবে আরো ধনী আর অবহেলা বাড়বে দরিদ্রদের প্রতি।

গত সোমবার প্রকাশিত বার্ষিক অসাম্যতা রিপোর্ট ২০১৭ অনুযায়ী পৃথিবীতে বিলিয়নিয়ারদের মোট সম্পত্তি বেড়েছে গত বছরে প্রায় ৭৬২ বিলিয়ন ডলার। ওই সমপরিমাণ অর্থ দিয়ে সারা বিশ্বের দারিদ্র্য ‘সাতবার’ সমাধান করা যাবে বলে দাবি করে হয় সেখানে। সারা বিশ্বে ধনীর সংখ্যা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সংস্থাটি জানায়, প্রতি দু’দিনে সারা বিশ্বে একজন বিলিয়নিয়ার বাড়ছেন। অথচ দরিদ্রতার সীমায় আটকে যাচ্ছে লাখাে মানুষ।

অন্যদিকে ওই বছর সারা বিশ্বে বিলিয়নিয়রের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৪৩ জন। তাদের মধ্যে প্রতি ১০ জনের ৯ জনই পুরুষ। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী সাধারণ শ্রমিকের আয় বছরে বেড়েছে ২ শতাংশ। সেখানে ধনীদের তা ছয়গুণের চেয়ে বেড়ে প্রায় ১৩ শতাংশ হয়েছে।

ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরাম আয়োজিত বিশ্ব নেতাদের অর্থনীতি বিষয়ক নীতি-নির্ধারণী বৈঠকের আগেই ওই রিপোর্টে বিশ্ব নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে অক্সফাম। তাদেরওেই রিপোর্টে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মন্ত্রিসভাকে ‘ধনীদের সংসদ’ আখ্যাি দিয়ে ট্রাম্পের সমালোচনা করা হয়। বলা হয়, খোদ যুক্তরাষ্ট্রের মোট জনগোষ্ঠীর অর্ধেকের আয় ওই দেশের মাত্র তিনজনের আয়ের সমান। তাই ট্রাম্পসহ সারা বিশ্বের নেতাদের ‘কর ফাঁকি’সহ সম্পদের অসম বণ্টনের বিরুদ্ধে আরো কঠোর হওয়ার পরামর্শ দেন তারা। ওই করের টাকায় সবার জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও তরুণদের চাকরি নিশ্চিত করার আহবান করে সংস্থাটি।

বর্তমান বিশ্ব অর্থ ব্যবস্থাটিকে ‘অকার্যকর’ দাবি করে রয়টার্সকে অক্সফামের ওই রিপোর্ট প্রণেতা ইনিগো মাসিয়াস আয়মার বলেন, যেভাবে সম্পদ সারা বিশ্বে বণ্টিত হচ্ছে এতে তারা উদ্বিগ্ন। এভাবেই বিশাল সম্পদ গুটিকয়েকের হাতে পুঞ্জীভূত হচ্ছে। এছাড়া নারী-পুরুষের কর্মক্ষেত্রে সমান অধিকারের ওপর জোর দেয়ার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ করেন তিনি। অবশ্য ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরাম কিছুদিন আগে আশঙ্কা করেছিল, কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা পেতে এখনাে প্রায় ২১৭ বছর অপেক্ষা করতে হবে।

অন্যদিকে অক্সফামের ওই রিপোর্টের সঙ্গে বিশ্লেষকদের অনেকেই ভিন্নমত পোষণ করেন। এছাড়া পুঁজিবাদ বিরোধী অবস্থান নেয়ার অভিযোগ তুলেছেন কেউ কেউ।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইনস্টিটিউট অফ ইকনমিক অ্যাফেয়ার্স-এর পরিচালক মার্ক লিটলউড দাবি করেন, মুক্তবাজার অর্থনীতি বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের জন্য কাজের নতুন নতুন দ্বার উন্মুক্ত করছে। তিনি মনে করেন, পুঁজিবাদের গালি দেয়া এখন একটি ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। এখন কেবল ধনীরা আয় করছেন তা নয়, দেশ তথা পৃথিবীর উন্নয়নের স্বার্থে কর দিয়েও অবদান রাখছেন তারা।