ছয় দিনের ভারত সফরে জায়নবাদের প্রতিনিধি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু অনেক অনুষ্ঠান, ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক স্থানসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক সভায় অংশ নেন। সফরের শেষ দিনে এসে বলিউডের ইহুদি তারকাদের সঙ্গে ‘শ্যালম বলিউড’ নামক একটি তথ্যচিত্রের মুক্তি ও প্রদর্শনী অনুষ্ঠানেও অংশ নেন তিনি। এ সময় ইহুদি তারকাদের সঙ্গে বলিউডের খ্যাতনামা অভিনেতা-অভিনেত্রী, পরিচালক-প্রযোজকরাও অংশ নেন।
সভায় নেতানিয়াহু বলেন, সারা বিশ্ব যেমন ভালোবাসে, ইসরায়েলও বলিউডকে ভালোবাসে। আমি ও আমার স্ত্রীও বলিউডকে ভালোবাসি। এখানে অমিতাভ বচ্চন রয়েছেন যার টুইটার ফলোয়ার তিন কোটিরও বেশি। আমার ফলোয়ার তার থেকেও কম। অন্যরাও যারা আছেন, আপনারা অনেক বড় মাপের মানুষ- এতে সন্দেহ নেই।
অনুষ্ঠানে ইসরায়েলের সৌন্দর্য ও প্রকৃতি নিয়ে একটি ভিডিওচিত্র দেখানো হয়। নেতানিয়াহু উপস্থিত বলিউডের পরিচালক-প্রযোজকদের উদ্দেশ করে বলেন, শুটিংয়ের জন্য ইসরায়েল অনেক সুন্দর একটি জায়গা হতে পারে। এক ঘণ্টার দূরত্বে আপনি বরফাচ্ছাদিত এলাকা পাবেন, আছে সমুদ্রতীরের লোনাপানির বিছানা আবার রয়েছে মরুভূমির রুক্ষতা ও ইন্ডিয়ান রেস্তোরাঁর খাবার।
বিশ্বের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির বিশাল বাজারে বলিউড একটা বড় জায়গা করে নিয়েছে। ভারতে বছরে গড়ে এক হাজার ৯০০ সিনেমা মুক্তি পায়। এই বাজারের প্রতি ইসরায়েলের আকর্ষণের ঘটনাটিকে অর্থনীতি ও বাজার বিশ্লেষকরা ‘মজার ব্যাপার’ হিসেবে বলছেন।
যেখানে বাণিজ্য আছে সেখানেই যে কোনো কায়দায় জায়গা তৈরি করে নেয় ইহুদি আধিপত্য বিস্তারকারী জায়নবাদীরা। বলিউডের বাণিজ্য ভারত ছাড়িয়ে অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। তাছাড়া বিশাল দেশ খোদ ভারতেই বলিউডের বাজার জায়নবাদীদের লোভাতুর চোখে ঝিলিক ধরিয়ে দিচ্ছে। কাজেই ওই সফরে জায়নবাদের প্রতিনিধি নেতানিয়াহুর বলিউডপ্রীতি নিখাদ সংস্কৃতিপ্রেম হিসেবে দেখতে রাজি নন বিশ্লেষকরা।
অনুষ্ঠানে প্রখ্যাত অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন, অভিনেত্রী ঐশ্বরিয়া রাই, অভিনেতা অভিষেক বচ্চন, পরিচালক ও প্রযোজক করন জোহরসহ অনেক খ্যাতিমান বলিউড তারকা অংশ নিয়ে নেতানিয়াহু দম্পতির সঙ্গে হৃদ্যতাপূর্ণ সময় কাটান। নেতানিয়াহু এ সময় সবাইকে এক সঙ্গে সেলফির আমন্ত্রণ জানান।
অস্কার অনুষ্ঠানে হলিউডের তারকাদের সঙ্গে নিয়ে ব্র্যাড পিটের তোলা বিশ্বব্যাপী ভাইরাল হওয়া সেলফির কথা উল্লেখ করে নেতানিয়াহু বলেন, আসুন, আমরা একটি ছবির মাধ্যমে কোটি কোটি মানুষকে জানিয়ে দিই আমাদের বন্ধুত্বের দৃঢ় বন্ধন।
নেতানিয়াহুকে স্বাগত জানিয়ে অমিতাভ বচ্চন বলেন, “ইসরায়েল ও ভারতের মধ্যে বন্ধুত্ব মজবুত করতে সিনেমা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।”
সংবাদ সংস্থা আলজাজিরাকে প্রযোজক রনি স্ক্রেউলা বলেন, ইসরায়েলের ডানপন্থী সরকারের জন্য এটি একটি কার্যকর মাধ্যম হতে পারে। এতে তাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। দুই দেশের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির জন্য এটা অত্যন্ত বড় একটা সুযোগ।
ভারতের মহারাষ্ট্রে মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফাদনভিসও নেতানিয়াহুকে স্বাগত জানান। এ সময় মুম্বাইকে ভারতের সাংস্কৃতিক রাজধানী হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি। সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি বলেন, ভারতীয় চলচ্চিত্র যে আসলেই বিশ্বমঞ্চে অবস্থান করছে তা আজ আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
অনুষ্ঠানে অভিনেতা বিবেক ওবেরয়, পরিচালক ইমতিয়াজ আলী, সাইফ আলী খানের মেয়ে সারাহ আলী খান, সুভাষ ঘাই, প্রসুন জোশি, মধুর ভান্ডারকর ও রাজনায়ক উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে ‘নেতানিয়াহু গো ব্যাক’ আন্দোলনের অংশগ্রহণকারী চলচ্চিত্র নির্মাতা আনন্দ পতবর্ধন বৃহস্পতিবার মুম্বাইয়ে এক বিক্ষোভ সমাবেশে দাঁড়িয়ে আলজাজিরাকে বলছিলেন, “আসলে ভারত ইসরায়েল নয়, ফিলিস্তিনি জনগণের বন্ধু- তা মুসলিম, খ্রিস্টান অথবা ইহুদি যাই হোক না কেন।”
ভারতে হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক দিন দিন পাকাপোক্ত হচ্ছে। গত বছরের জুলাইয়ে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীদের মধ্যে প্রথম ইসরায়েল সফর করেন নরেন্দ্র মোদি। বিশ্লেষকরা ওই সফরটিকে ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন।