কোনো ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বা সাংস্কৃতিক, কোনো ক্ষেত্রে ধর্মীয় কারণ দেখিয়ে পৃথিবীর অনেক দেশের সরকার হলিউডের তারকাদের নিষিদ্ধ করেছে নানা সময়ে। মার্কিন মুল্লুকের হলিউড তারকাদের তারকাখ্যাতি আসলে বিশ্বজোড়া। বিদেশ ভ্রমণ তাদের কাছে নিত্তনৈমিত্তিক ব্যাপারই বটে। বিভিন্ন সময়ে তারকাদের নিষিদ্ধের ঘটনাগুলোর কারণ জেনে নিই আসুন।
মার্টিন স্করসিস
হলিউডের বিখ্যাত পরিচালক মার্টিন স্করসিস। সিনেমা নির্মাণ করেই যিনি সবার মুগ্ধ করেন তাকেই সিনেমার জন্য নিষিদ্ধ! ১৯৯৭ সালে মুক্তি পায় বর্তমান (১৪তম) দালাই লামাকে নিয়ে নির্মিত স্করসিস-এর মুভি ‘কুন্ডুন’। এটি দর্শকের মন জয় করলেও জয় করতে পারেনি চায়না সরকারের। সেটি সম্ভবও না। কারণ চায়না সরকারের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী দালাই লামা এবং একই কারণে বিরাগভাজন। তাই ওই সিনেমার জন্য চায়না ভ্রমণ থেকে নিষিদ্ধ হন অস্কারজয়ী এ পরিচালক।
স্নুপ ডগ
অ্যামেরিকান র্যাপার স্নুপ ডগ-কে কমবেশি সবাই চেনেন। ১৯৯২ সাল থেকে পেশাদার শিল্পী হিসেবে সঙ্গীত জগতে আছেন তিনি। সংগীত ছাড়াও তার আরেকটি প্রিয় বস্তু হচ্ছে মারিজুয়ানা। আর ওই মারিজুয়ানার জন্যই নিষিদ্ধ হন তিনি। নরওয়য়ের ক্রিশ্চিয়ানস্যান্ড এয়ারপোর্টে ৮ গ্রাম মারিজুয়ানা নিয়ে ধরা পড়ার পর তাকে নরওয়ে ভ্রমণ থেকে ২ বছরের জন্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
বন জোভি
জন বন জোভি-র বিখ্যাত রক ব্যান্ড ‘বনজভি’। ‘ইটস মাই লাইফ’ বা ‘লিভিং অন অ্যা প্রেয়ার’-এর মতো বিখ্যাত গানের জন্য পরিচিত ওই ব্যান্ড। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথমবারের মতো চায়নায় কনসার্ট করার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল ব্যন্ডটি। এ সময় ওই ব্যান্ডের লিজেন্ডারি ফ্রন্টম্যান জন বন জোভি-কে চায়না ভ্রমণে নিষিদ্ধ করে দেয় দেশটির সরকার। বলা হয়ে থাকে, ২০১০ সালে তাইওয়ান ট্যুরে এক কনসার্ট চলাকালে ব্যান্ডটি দালাই লামার ছবি উপস্থাপন করার কারণেই ওই নিষেধাজ্ঞা নেমে আসে তার ওপর।
বিয়ন্সে
আমেরিকান সঙ্গীত সম্রাজ্ঞী বিয়ন্সে-কে ২০০৭ সালে রক্ষণশীল মুসলিম আইনের কথা বলে মালয়েশিয়া সরকার ওইদেশে গান গাওয়া ও ভ্রমণ করা থেকে নিষিদ্ধ করে।
ফিফটি সেন্ট
২০০৫ সালে ফিফটি সেন্ট-কে কানাডা প্রবেশ ও গান গাওয়া থেকে নিষিদ্ধ করা হয়। কারণ হিসেবে দেখানো হয়, তার গানের কথা সহিংসতায় উৎসাহিত করে।
অ্যাকন
২০১০ সালে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জেরে অ্যাকন-কে শ্রীলংকা প্রবেশ থেকে নিষিদ্ধ করা হয়। ‘আর অ্যান্ড বি’ ঘরানার ওই জনপ্রিয় গায়ক অ্যাকন-এর একটি মিউজিক ভিডিওর পুল পার্টিতে একটি নাচের দৃশ্যে বৌদ্ধমূর্তি দেখা গিয়েছিল। তা শ্রীলংকানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে। পরে অবশ্য অ্যাকন ওই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
লেডি গাগা
আমেরিকান পপ কুইনখ্যাত লেডি গাগা-কে ২০১২ সালে ইন্দোনেশিয়া থেকে নিষিদ্ধ করা হয়। দেশটির সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, তার গানের কথা কুরুচিপূর্ণ। তার বিচিত্র ফ্যাশনের পোশাক শিশুদের মনে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। কনসার্টের ৫০ হাজার টিকেট বিক্রি হওয়ার পরও তার সফর বাতিল করেন গাগা।
দি বিটলস
ইতিহাসের অন্যতম সেরা ব্যান্ড ‘দি বিটলস’। বিখ্যাত ওই ব্যান্ডটিকে ফিলিপাইন থেকে নিষিদ্ধ করা হয় এক অদ্ভূত কারণে। ১৯৬৬ সালে তারা ফিলিপাইন ট্যুর চলাকালীন ওই দেশের ফার্স্ট লেডির সঙ্গে নাশতার আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করায় তাদের এই বিপত্তির মুখে পড়তে হয়।
ব্র্যাড পিট
জনপ্রিয় অ্যামেরিকান অভিনেতা ব্র্যাড পিট-কে চায়না থেকে নিষিদ্ধ করা হয় তার ১৯৯৭ সালে মুক্তি পাওয়া ‘সেভেন ইয়ারস ইন তিব্বত’ সিনেমায় অভিনয় করার কারণে। এতে হিমালয় প্রদেশে ‘চায়নিজদের শাসন’ ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয়। ফলে চায়না সরকার তার ওপর চায়না ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
প্যারিস হিল্টন
মাদক ব্যবহারকারী অভিযোগে জাপান সরকার প্যারিস হিল্টনকে ওই দেশে ঢুকতেই দেয়নি। ২০১০ সালে টোকিওতে নিজের জেট বিমান থেকে নেমে বিমানবন্দরে ৬ ঘণ্টা অপেক্ষা করেও কোনো লাভ হয়নি। অবশেষে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যান তিনি। জাপান সরকার জানায়, মাদক ব্যবহারের কারণে দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ায় তাকে প্রবেশ করতে দেয়া হয়নি।
ক্রিস ব্রাউন
জনপ্রিয় আমেরিকান সংগীত শিল্পী ক্রিস ব্রাউন-কে তার তৎকালীন প্রেমিকা রিহানার ওপর শারীরিক নির্যাতনের অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার কারণে ২০১১ সালে যুক্তরাজ্য ভ্রমণ থেকে নিষিদ্ধ করা হয়। একই কারণে ২০১৫ সালে অস্ট্রেলিয়া প্রবেশ থেকেও নিষিদ্ধ করা হয়।
তারকাদের নিষিদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি সিনেমা নিষিদ্ধের ঘটনা ঘটছে অহরহ। এ মাসেই লেবাননে নিষিদ্ধ করা হয়েছে অস্কারজয়ী পরিচালক স্টিভেন স্পিলবার্গ-এর সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া সিনেমা ‘দি পোস্ট’ ও ড্যানিয়েল র্যাডক্লিফ অভিনীত তথ্যচিত্র ‘জাঙ্গল’।