হ্যালসাল নাকি হাথুরুসিংহ, কালকের দিনটি কার?

হ্যালসাল নাকি হাথুরুসিংহ, কালকের দিনটি কার?

রকেট ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম বড় ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ এবং শ্রীলংকা। জিম্বাবুয়ের বিরুদ্ধে প্রত্যাশিত জয় দিয়েই টাইগার বাহিনীর মিশন শুরু হলেও লংকানদের নতুন কোচ হাথুরুর শ্রীলংকা হোচট খেয়েছে জিম্বাবুয়ের কাছে। তুলনামূলক দুর্বল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে পরাজয় শ্রীলংকাকে তাতিয়ে তোলে নাকি অদম্য টাইগারদের থাবায়  টুর্নামেন্ট থেকে বিদায়ের দিকে ঠেলে দেয় সেটিই এখন দেখার বিষয়।
সূচি চূড়ান্ত হবার পর থেকেই যে নামটি সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হচ্ছে সেটি হচ্ছে হাথুরুসিংহ। আফ্রিকা সফরের মাঝ পথেই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নেয়া হাথুরু এবার হাল ধরেছেন বেহাল অবস্থায় থাকা শ্রীলংকার। সিনিয়র ক্রিকেটারদের বিদায়ে শ্রী হারানো লংকান দলের হয়ে হাথুরু কতটা কি করতে পারেন সেটি দেখার জন্য অধির আগ্রহে অপেক্ষা করছেন অনেকেই। কাগজে কলমে বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল কোচ হলেও বহু কারণে বিতর্কিত হাথুরুর প্রত্যাবর্তনটাকে বিস্মরণযোগ্য করে তুলুক বাংলাদেশ এমনটাই চাওয়া সাধারণ দর্শকদের। বিপরীতে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত কোচ রিচার্ড হ্যালসাল দায়িত্ব নেয়ার প্রথম ম্যাচেই খেলেছেন কিছু মাস্টার স্ট্রোক। স্পিনে দুর্বল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দু পাশ থেকেই স্পিনার দিয়ে ইনিংস সূচনা করে চমকে দিয়েছেন সবাইকে। একই সাথে মিরাজকে বসিয়ে সানজামুলকে খেলানোর ফাটকাটাও কাজে দিয়েছে বেশ। পরিবর্তন এনেছেন ব্যাটিং অর্ডারেও।
তবে মাশরাফি বিন মুর্তজা সংবাদ সম্মেলনে পেশাদারিত্বের রীতিমাফিক বলেছেন, ‘এ ধরনের ঘটনা এটাই প্রথম নয়। কদিন আগে যে নিজেদের কোচ ছিল তারই মুখোমুখি হওয়া এটা প্রথম নয়। আমরা এটা অনেক আগেই পেছনে ফেলে এসেছি। যখন তিনি চলে গেছেন তার পরিকল্পনা আমরা পুরোটাই ভুলে গেছি। এখন যারা নতুন কোচ হবে তাদের সঙ্গে আমরা মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি।’
এদিকে মাঠের যোদ্ধাদের নিয়ে বেশ স্বস্তিতেই রয়েছে বাংলাদেশ শিবির। বছরের প্রথম ম্যাচেই অর্ধশতক তুলে নিয়েছেন তামিম। দু বছর পর দলে ফেরা এনামুল রান না পেলেও তার ব্যাটিংয়ে ছিলো আত্মবিশ্বাসের ছাপ। সাকিবকেও বেশ স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে খেলতে দেখা গিয়েছে নতুন পজিশনে। সবচেয়ে বড় স্বস্তির কারণটা এনে দিয়েছেন বোলাররা। জিম্বাবুয়েকে দুশর নীচে বেধে ফেলার কারণেই শুধু না; বহুদিন পর চেনা ছন্দে দেখা গিয়ে মোস্তাফিজকে। স্লগ ওভারগুলোতে নিজেকে প্রতিনিয়তই যেন নতুন করে প্রমাণ করে চলেছেন রুবেল। পাশ থেকে মাশরাফির সমর্থন তো রয়েছেই। এখন, দেখার বিষয় যে স্পিনে সাকিবের সঙ্গি হিসাবে সানজামুলই থাকবেন নাকি লংকানদের স্পিনে স্বাচ্ছন্দ্যের কথা বিবেচনা করে একজন বাড়তি পেসার খেলানোর সিদ্ধান্ত নেবে টিম ম্যানেজমেন্ট ? তবে, যেই দলে আসুক, আফ্রিকার বিপক্ষের ভয়াবহ সে সিরিজের অভিজ্ঞতাকে পেছনে ফেলে জয় দিয়ে নতুন বছর শুরু করা বাংলাদেশকে আবারো দেখাচ্ছে একটি সুখী পরিবারের মতো।
বাংলাদেশ শিবিরে যখন বইছে স্বস্তির সুবাতাস তখন সম্পুর্ণ ভিন্ন চিত্র লংকান শিবিরে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ব্যাটিং বোলিং দু বিভাগেই হতশ্রী দেখিয়েছে শ্রীলংকাকে। দুই পেরেরা, কুশল এবং থিসেরা বাদে বাকি সবাই যেন ছিলেন নিজেদের ছায়া হয়ে। পুনরায় অধিনায়কত্ব পাওয়া ম্যাথুসকে ম্যাচ শেষে দেখাচ্ছিলো বিধ্বস্ত। ৫০ ওভারের ক্রিকেটে সর্বশেষ ১৬ ম্যাচের ১৫ টিতেই পরাজয়ে মুখ দেখা লংকানদের জন্য কালকের ম্যাচটিও যে হবে আরেকটি অগ্নিপরীক্ষা তা বলাই বাহুল্য। চারিদিক থেকে ঘিরে ধরা হতাশার ভীরে লংকানরা চাইলে অনুপ্রেরণা খুজে নিতে পারে মিরপুরেই অনুষ্ঠিত হওয়া ২০০৯ সালে হওয়া ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনাল ম্যাচটি থেকে। প্রায় নিশ্চিত পরাজয়ের মুখ থেকে শ্রীলংকাকে উদ্ধার করে দুই উইকেটের এক অবিস্মরণীয় জয় এনে দিয়েছিলেন ‘ব্যাটসম্যান’ মুরালিধরন। যদিও, সে বাংলাদেশ আর এ বাংলাদেশের মধ্যে আকাশ পাতাল তফাত।
সব ছাপিয়ে কাল মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে লড়াইটা যতটা বাংলাদেশ বনাম শ্রীলংকার, তারচেয়ে বেশি হবে বাংলাদেশ বনাম হাথুরুর। হাথুরুর অনিচ্ছায় দীর্ঘদিন উপেক্ষিত থাকা এনামুল যে হাথুরুর সামনে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দিতে চাইবেন তা সহজেই অনুমেয়। তেতে রয়েছেন সর্বশেষ দিনগুলোতে হাথুরুর সাথে  যেসকল সিনিয়রদের সম্পর্ক তিক্ততায় পৌছেছিলো তারাও। লড়াইটা চলবে পর্দার পিছনেও। হাথুরুর সাথে বর্তমান বাংলাদেশ দলের ভারপ্রাপ্ত কোচ রিচার্ড হ্যালসালের সম্পর্কটা যে খুব একটা মধুর ছিলো না তা বেশ বোঝা যাচ্ছে হাথুরুকে নিয়ে করা হ্যালসালের সর্বশেষ মন্তব্যগুলোতে। দেখার বিষয় শেষ হাসিটি কে হাসে ? কৌশলি হাথুরু নাকি আত্ববিশ্বাসি হ্যালসাল ? লড়াই যে তাদের মধ্যেও….