চট্টগ্রামে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত হাজার সৈনিকের সমাধি

চট্টগ্রামে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত হাজার সৈনিকের সমাধি

পুলিশের কনস্টেবল পারলেন না। ভাবলাম সাব-ইন্সপেক্টর পারবেন। তিনিও বলতে পারলেন না চিটাগাং ওয়ার সেমিট্রির লোকেশনটা! আন্দরকিল্লা শাহি জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করি। গেটে অনেক পুলিশ দাঁড়িয়ে। মুসল্লিদের নিরাপত্তার জন্যে অথবা মিছিল বের হলে ঠেঙ্গানোর জন্যে। সাব ইন্সপেক্টরের সাথে যখন কথা বলছিলাম, কৌতুহলী হয়ে তাদের চেয়ে উঁচু আরেকজন পুলিশ কর্মকর্তা এগিয়ে এলেন। কিন্তু তিনিও বলতে পারলেন না চিটাগাং ওয়ার সেমিট্রিটা কোথায়!

আমাদের মধ্যে একমাত্র রাশেদ-ই ওয়ার সেমিট্রি দেখেছে। কিন্তু সেও জায়গাটির নাম বলতে পারছে না। রিকশা ড্রাইভার, অটো রিকশা ড্রাইভার কেউই ওয়ার সেমিট্রি চিনতে পারছে না। উপায় খুঁজে না দেখে আমরা পুলিশের হাওলা হয়েছিলাম। কিন্তু তারাও যখন পারলেন না, তখন সদ্য কৈশোর পেরুনো এক দঙ্গল তরুণকে পেয়ে তাদের শরণাপন্ন হই। ওরাই জায়গাটি চিনিয়ে দেয়।

একটি সিএনজি অটো রিকসায় চেপে বসি। সিলেটে একটি অটো রিকশার সামনে ড্রাইভারসহ তিনজন আর পেছনে তিনজন বসে। চট্টগ্রামে ড্রাইভাররা সামনে একজন বসায় আর পেছনে পাঁচজন বসলেও আপত্তি নেই। আমরা পেছনে চারজন আর সামনের সিটে ড্রাইভারসহ দুজন বসি।

গাড়ী থেকে নেমে সত্তর টাকা গুণলেও আমরা সন্তুষ্ট। সিলেটে হলে আন্দরকিল্লা জামে মসজিদ থেকে ওয়ার সেমিট্রি পর্যন্ত কম করে হলেও দেড়শ টাকা গুণতে হতো।

চট্টগ্রাম নগরীর দামপাড়া এলাকায় ১৯ নম্বর বাদশা মিয়া চৌধুরী সড়কের বাম পাশে চট্টগ্রাম ওয়ার সেমিট্রি। উঁচুনীচু টিলা নিয়ে এলাকাটি। একটি উঁচু টিলার ঠিক নীচেই ওয়ার সেমিট্রি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত ৭৩১জন সৈনিকের সমাধিস্থল। এর মধ্যে ১৭টি সমাধি অজানা ব্যক্তির। চট্টগ্রাম ওয়ার সেমিট্রি নামে পরিচিত হলেও সমাধি ক্ষেত্রের অফিসিয়াল নাম কমনওয়েলথ ওয়ার সেমিট্রি। একসময় এখানে ধানের ক্ষেত ছিলো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের (১৯৩৯-১৯৪৫) সময় এখানে সেনাবাহিনীর এবং ১৫২ নম্বর ব্রিটিশ জেনারেল হাসপাতালের সুবিধে থাকায় চট্টগ্রামে মিত্র বাহিনীর এই পথিকৃৎ ক্যাম্পটি স্থাপন করা হয়। হাসপাতালটি ১৯৪৪ থেকে ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর পর্যন্ত চালু ছিলো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় গভীর জলের পোতাশ্রয় চট্টগ্রাম এলাকা ছিলো আরাকান সামরিক তৎপরতার অন্যতম ঘাটি। মূলত: এই হাসপাতালটিতে যারা মৃত্যুবরণ করতো তাদেরকে সমাহিত করার জন্যেই এই সমাধিস্থলের সৃষ্টি হয়েছে। যুদ্ধ চলাকালে প্রাথমিকভাবে এখানে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে প্রায় চারশো মৃতদেহ সমাহিত করা হয়। যুদ্ধ শেষ হয়ে গেলে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী এ সমাধিসৌধ প্রতিষ্ঠা করে। যুদ্ধশেষে লুসাই, ঢাকা, খুলনা, যশোর, কক্সবাজার, ধোয়া পালং, দোহাজারি, রাঙ্গামাটি, পটিয়া ও অন্যান্য অস্থায়ী সমাধি থেকে সৈন্যদের মৃতদেহ এখানে এনে সমাধিস্থ করা হয়। উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, এখানে যুক্তরাজ্যের ৩৭৮ জন, কানাডার ২৫ জন, অস্ট্রেলিয়ার ৯ জন, নিউজিল্যান্ডের ২ জন, মায়ানমারের ২ জন, নেদারল্যান্ডের একজন, জাপানের ১৯ জন, অবিভক্ত ভারতের ২১৪ জন, পূর্ব আফ্রিকার ১১ জন, পশ্চিম আফ্রিকার ৯০ জন, অন্যান্য চারজন। এদের মধ্যে পেশা অনুসারে সৈনিক ৫২৪ জন, বৈমানিক ১৯৪ জন, নাবিক ১৩ জন। উইকিপিডিয়ার তথ্যে কিছু গড়মিল পরিলক্ষিত হয়। প্রথমে বলা হয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত ৭৩১ জনের সমাধিস্থল। এর মধ্যে ১৭টি সমাধি অজানা ব্যক্তির। কিন্তু উইকিপিডিয়ায় দেশের পরিচয় হিসেবে কবরের সংখ্যা ৭৫৫টি। আবার পেশা হিসেবে কবরের সংখ্যা ৭৩১টি। যা হোক, আপাতত: কবরের সংখ্যায় খানিকটা গড়মিল হলে সাধারণ পাঠকের কিছু যায় আসে না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইন্দো-বার্মা রণাঙ্গণে আজাদ হিন্দ ফৌজের আক্রমনে মিত্র বাহিনীর যে সব সৈন্য নিহত হন তাদের বেশীর ভাগকেই এ দেশে সমাহিত করা হয়।

১৯৩৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর জার্মানি প্রতিবেশী পোল্যান্ড আক্রমণ করলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বেধে যায়। জার্মানির পক্ষে ছিলো ইতালি, যুগোশ্লাভিয়া, রোমানিয়া, বুলগেরিয়া ও জাপান (অক্ষশক্তি)। অন্যদিকে পোল্যান্ড, ব্রিটেন, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, রাশিয়া, আমেরিকা প্রভৃতি দেশ নিয়ে গড়ে উঠে মিত্রবাহিনী। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন তীব্র হয়ে উঠে। নেতাজী সুভাষ বসু সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে ভারতবর্ষকে স্বাধীন করার উদ্দেশ্যে জার্মানিতে যান। ইচ্ছে হিটলারের সাহায্য নেবেন। কারণ ভারতের সেই সময়ের শাসক ব্রিটেন। তাদের ঘোর শত্রু ছিলো জার্মানি। কিন্তু হিটলার নেতাজীকে সাহায্য করলেন না। ব্যর্থ হয়ে নেতাজী চলে যান জাপানে। সেখানে তখন অবস্থান করছিলেন রাস বিহারী। তিনি ছিলেন ভারতের স্বাধীনতাকামী সংগঠন অনুশীলন সমিতির নেতা। তারা স্বাধীনতা অর্জনের জন্যে সশস্ত্র সংগ্রামে বিশ্বাস করতেন। রাস বিহারী ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে ভারত ছেড়ে জাপানে চলে যান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে তিনি যুদ্ধবন্দী ভারতীয়দেরকে নিয়ে আজাদ হিন্দ ফৌজ গঠন করেন। সুভাষ বসু জাপান পৌছে রাস বিহারী বসুর কাছ থেকে আজাদ হিন্দ ফৌজের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। জাপান এবং প্রবাসী ভারতীয়দের সহযোগিতায় পুণর্গঠন করেন আজাদ হিন্দ ফৌজ। যুদ্ধের আধুনিক অস্ত্র, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও অর্থের অভাব থাকলেও সুভাষ বসুর অসাধারণ নেতৃত্বের ফলে খুব কম সময়ের মধ্যেই প্রায় ষাট হাজার সৈন্যের একটি সুশৃংখল দেশপ্রেমিক সৈনিকদল গড়ে ওঠে।

১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে সুভাষ বসু আজাদ হিন্দ বাহিনীকে নিয়ে কোহিমায় পৌছেন। ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দের ৪ ফেব্রুয়ারি রেঙ্গুন থেকে যাত্রা করে ১৪ এপ্রিল ভারতের মাটি ময়রং-এ ভারতের ত্রিবর্ণের জাতীয় পতাকা উত্তোলিত হয়। আজাদ হিন্দ ফৌজের সৈন্যরা ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের গোড়ার দিকে সর্বপ্রথম মায়ানমার হয়ে ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলো আক্রমণ করে ভারতের ব্রিটিশ শাসকদের ব্যতিব্যস্ত করে তোলে। সুভাষ বসুর সরাসরি নেতৃত্বে আজাদ হিন্দ ফৌজ ভারতের আরাকান, ইমফল, ময়রং, বিষেণপুর প্রভৃতি স্থান দখল করে নেয়। ব্রিটেনের নেতৃত্বে মিত্রবাহিনী দখল হয়ে জায়গা পুনরুদ্ধারের জন্যে বিমান দিয়ে পাল্টা আক্রমণ করে। ফলে আজাদ হিন্দ ফৌজ ছত্রভঙ্গ হয়ে রেঙ্গুনে এসে পুনর্গঠিত হওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু আমেরিকা কর্তৃক জাপানে পারমানবিক বোমা নিক্ষেপ এবং এ কারণে জাপানের আত্মসমর্পণ ও নেতাজীর রহস্যজনক নিখোঁজ হওয়ায় আজাদ হিন্দ ফৌজ দূর্বল হয়ে পড়ে। ভারতের বিভিন্নস্থানে  কয়েক মাসের যুদ্ধে আজাদ হিন্দ ফৌজের ২৭ হাজার সৈন্যের মৃত্যু হয়। মিত্র বাহিনীরও প্রায় সাড়ে চার হাজার সৈন্যের মৃত্যু হয়েছিলো। মিত্রবাহিনীর নিহত সেই সৈন্যদের লাশ নিজেদের দেশে পাঠানো হয়। যাদের লাশ পাঠানো সম্ভব হয়নি, তাদেরকে চট্টগ্রাম ও কুমিল্লায় সমাহিত করা হয়। পরে এ দুটো জায়গায় কমনওয়েলথ গ্রেভস কমিশন মনোরম নৈসর্গিক দুটো ওয়ার সেমিট্রি গড়ে তোলে।

চট্টগ্রাম ওয়ার সেমিট্রির সামনের দিকটি লোহার উঁচু বেষ্ঠনী দিয়ে ঘেরা। বাকী তিন দিকে ছোট্ট টিলা। অনেকটা শুকিয়ে যাওয়া পুকুরের মধ্যখানের মতো অংশে কবরগুলো ও কবরের ফলক। প্রায় চার একর জমির উপর নির্মিত ওয়ার সেমিট্রির সামনের অংশ নানা গাছগাছালিতে পূর্ণ। চারপাশ মিলিয়ে মনোরম একটি পার্কের মতো। আমরা যখন ওয়ার সেমিট্রিতে পৌছি, তখনও দুপুর গড়ায়নি। বিকেল না আসলেও তরুণ তরুণীদের ভিড়। সেমিট্রিতে প্রবেশের জন্যে রয়েছে আলাদা একটি গেইট। গেইট থেকে শুরু করে পুরো গোরস্থানটি রঙিন ফুলের গাছ ছাঁটাই করে তৈরি সবুজ বেড়ায় ঘেরা। এর ঠিক মাঝখানে শ্বেত পাথরে নির্মিত ক্রশের আকারের স্মৃতিস্তম্ভ। মূল গেইট থেকে স্মৃতিস্তম্ভে যেতে একটি প্রশস্ত রাস্তা। রাস্তার দুপাশে সবুজ ঘাসের মধ্যে সার বাধা দু তিন ফুট উচ্চতার স্মৃতি ফলক। প্রতিটি স্মৃতি ফলকের পিতলের প্লেটে মৃত সৈন্যের নাম, বয়স, জাতীয়তা ও র‌্যাংক খোদাই করে লেখা। এখানে হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান বিভিন্ন ধর্মের মানুষের কবর। পুরো সেমিট্রিতে এমন একটি পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে, মনে হচ্ছে যুদ্ধের ময়দানে প্রাণ হারানো সৈনিকেরা এখানে প্রশান্তির ঘুম ঘুমোচ্ছে। আবার একটু অন্যভাবে ভাবলে- এখানে ঘুমিয়ে থাকা সৈন্যটি যুদ্ধের ময়দানে বা হাসপাতালের বেডে শুয়ে শুয়ে কতো কথা ভেবেছিলো। সৈন্যটি হয়তো তার বাগদত্তা প্রিয়তমার কথা ভাবছিলো। অথবা প্রথম সন্তানের মুখ দেখার অপেক্ষায় ছিলো। হয়তো বড় সাধ ছিলো মায়ের কোলে ফিরে যাবার। সেই সৈনিকের মা হয়তো জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত অপেক্ষায় ছিলেন তার সন্তান ফিরে আসবে। কিন্তু মা, স্ত্রী, সন্তান-স্বজনের সব স্বপ্ন ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে ছুটে আসা একটি বুলেট, বিমান থেকে ছুড়ে ফেলা বোমার স্প্লিন্টার।

চট্টগ্রাম ওয়ার সেমিট্রিতে দাঁড়িয়ে মনে পড়লো আজাদ হিন্দ ফৌজের দেশপ্রেমিক সৈন্যদের কথা। তাদেরও তো কবর হতে পারতো এই সমাধিক্ষেত্রে। তারা তো এই দেশের জন্যে, অখণ্ড ভারতের স্বাধীনতার জন্যে লড়েছিলো। পরাজয় অথবা নিজের জীবনের কথা না ভেবেই একটি সুসজ্জিত বাহিনীর বিরুদ্ধে তারা দাঁড়িয়েছিলো। তাদের শক্তি ছিলো শুধু দেশপ্রেম। আজাদ হিন্দ ফৌজের অন্যতম নেতা কর্ণেল শাহ নেওয়াজ খান বলেছিলেন, ‘জাপানের সাথে শর্ত দেয়া হয়েছিলো যে, ভারতে পদার্পণ করলে ভারতের মাটিতে আজাদ হিন্দ ফৌজের পতাকাই উড়বে, জাপানের পতাকা নয়। সুভাষ বসুর সুস্পষ্ট নির্দেশ ছিলো, সাহায্যকারী জাপানি বাহিনী ব্রিটিশের মতো আচরণ করলে তাদের বিরুদ্ধে বন্দুকের নল ঘুরিয়ে ধরতে হবে। কাজেই আজাদ হিন্দ ফৌজের সৈন্যদের স্বপ্নও তো মহৎ ছিলো। দেশকে মুক্ত করবে। এজন্যেই তো আমাদের স্বাধীনতার জন্যে অকাতরে দিয়েছিলো জীবন। কোথায় কোন বনবাদাড়ে পড়েছিলো সেই ফৌজদের মৃতদেহ। এ ব্যাপারে তুরস্কের একটি মহান উদাহরণ উল্লেখ করা যায়। সেই দেশের দার্দানেসল নামের একটি প্রণালী (দুটো সাগর বা মহাসাগরকে সংযোগকারী জলভাগ) দখল করার জন্যে ব্রিটেনের নেতৃত্বে যৌথবাহিনী তুরস্কের দার্দানেসল অভিমুখে অভিযান চালায়। ১৯১৬ ও ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে বিভিন্ন সময় পরিচালিত যুদ্ধের চুড়ান্ত যুদ্ধ গাল্লি পলিতে তুরস্ক জয়লাভ করে। সেই যুদ্ধে ১লাখ ৬০ হাজার বিদেশী সৈন্য ও ৮৬ হাজার তুর্কি সৈন্য নিহত হন। নিহত এক লাখ ষাট হাজার যৌথবাহিনীর সদস্যদের বেশীর ভাগই ছিলো অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড থেকে আসা তরুণ। তাদের না ছিলো ফ্রন্টের অভিজ্ঞতা, না অচেনা দেশের উপযোগী ট্রেনিং। গাল্লিপলি যুদ্ধে বিজয়ী তুরস্কেও ৫৭তম আনাফার্তালা রেজিমেন্টের সর্বাধিনায়ক মোস্তফা কামাল (পরে আতাতুর্ক) যুদ্ধ জয়ের পরই সতীর্থদের নির্দেশ দিলেন ‘নিহত সবার জন্যে সম্মানজনক কবর’ তৈরী করো। গাল্লিপলি এলাকায় এগারোটি সেমিট্রি তৈরি হলো গাল্লিপলির এক লাখ ষাট হাজার বিদেশি এবং ছিয়াশি হাজার তুর্কি শহিদদের জন্যে। এপিটাফে লিখলেন-

‘সেই সব বীর, যারা রক্ত ঝরিয়েছো

এবং উৎসর্গ করেছে তাদের অমূল্য প্রাণ

শুয়ে আছে সুদূরে; বন্ধুদের স্বদেশে

ঘুমাও শান্তিতে, ঘুমাও!

ঈসায়ি এবং মুসলমানদের মধ্যে তফাৎ নেই

যখন তারা যুদ্ধ করে মাতৃভূমির জন্য এবং শহিদ হয়…

হে মায়েরা, বহুদূর থেকে যারা পাঠিয়েছেন আপনাদের সন্তান-

দয়া করে চোখ মুছুন। আপনাদের

ছেলেরা আমাদের কোলেই আছে; শান্তিতে

মুত্যু তাদেরকে তুরস্কের সন্তান করেছে…

ঘুমাও বন্ধুরা ঘুমাও।’

তুরস্ক যদি তার শত্রু সেনাদের জন্যে সেমিট্রি বানাতে পারে, এতো উদার চমৎকার এপিটাফ লেখতে পারে, তাহলে আজাদির জন্যে লড়ে যাওয়া আজাদ হিন্দ ফৌজের সেই সব শহিদ সেনাদের স্মৃতিতে এতো মনোরম সেমিট্রি নয়, এই সেমিট্রিতেই অন্তত একটি ফলক নির্মাণ করে তাদের দেশপ্রেমের প্রতি জানানো যায় শ্রদ্ধা।

পাশাপাশি আরেকটি ফলক কি এই সমাধিক্ষেত্রে থাকতে পারে না। যাতে লেখা থাকবে- সঙ্গীন নামাও, মিথ্যে অজুহাতে মানুষকে হত্যা বন্ধ করো। পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ মানুষের প্রাণ, এসো সেই প্রাণ রক্ষায় হাত ধরি।