শীতার্তদের জন্যে লড়ছেন যারা

শীতার্তদের জন্যে লড়ছেন যারা

চলছে মাঘ মাস। শীতের ঋতু। কনকনে শীতে জবুথবু মানুষ ও প্রকৃতি। স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যহত হচ্ছে শীতের তীব্রতায়। বয়সী মানুষের মুখে শোনা যাচ্ছে শীতের প্রবাদ। ‘মাঘের শীত বাঘের গায়।’ যে অর্থে মাঘের শীত বাঘের-ই সহ্য করার কথা! ফলে শীতের তীর্যক চাকু মানুষকে কাবু করে ফেলেছে। আর মাঘ মাসের ভেতর দিয়ে দৌঁড়ে পালিয়ে যাচ্ছে বাঘ!

এবার শীতের তীব্রতা বেড়েছে। ছাড়িয়ে গেছে বিগত সব রেকর্ড। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, শীত দেরিতে এলেও গত ৫০ বছরের মধ্যে এবারই সবচেয়ে বেশি শীত পড়েছে বাংলাদেশে ৷ বিশেষ করে রংপুর দিনাজপুর কুড়িগ্রাম নীলফামারি পঞ্চগড়সহ সারা দেশেই বিগত সালের চেয়ে শীতের তীব্রতা ছিল বেশি। ফলে বিভিন্ন অঞ্চলের সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বেড়েই চলেছে। শীতার্তদের জন্যে বিভিন্ন সরকারি উদ্যোগ নেয়া হলেও সেগুলো প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।

পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার কৃষক আসলাম তালুকদারের কাছে শীতে সরকারি ত্রাণ সহয়তার কথা জানতে চাইলে জবান প্রতিবেদককে বলেন, “শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সরকার কিছু কিছু সহয়তা করে কিনা জানি না। আমরা শীতে অনেক কষ্টে আছি। এসব দূর্যোর্গের সময় আমাদের দিকে সরকারের একটু খেয়াল করা উচিত।”

 

শীতার্তদের পাশে বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠন

বরাবরের মত, এবারও শীতপীড়িত অঞ্চলের  মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে বিভিন্ন বেসরকারি সামাজিক সংগঠন। ব্যক্তি উদ্যোগে অনেকেই শীতার্তদের জন্য শীত বস্ত্র সংগ্রহ করে তা বিতরণের ব্যবস্থা করেছে। আবার কেউ কেউ নিজের সামান্য অর্থ নিয়েই ছুটে গিয়েছেন শীতার্তদের পাশে। কিন্তু তার সীমাবন্ধতা অনেক। অনেকে শীত ভোগ করলেও আত্মসম্মানের ভয়ে শীতের কাপড় গ্রহণ করেন না।

সিলেট অঞ্চলের শীতার্তদের সহয়তা করছেন এমন একটি সংগঠন ‘রুরাল টু আরবান’  সংগঠনটির সমন্বয়ক সোহেল রানা বলেন, “আমরা প্রায় সময়ই দেখি অনেক মানুষ ফুটপাতে কিংবা রেলস্টেশনে থাকা মানুষদের জন্য সাহায্য নিয়ে যায়। কিন্তু গ্রামের সেই মানুষগুলোর কাছে তেমন কেউ যায় না। তারাও চক্ষু লজ্জায় কারও কাছে মুখ ফুটে চাইতে পারে না। সে কারণে আমরা প্রত্যন্ত এলাকার দিকে নজর দিচ্ছি। যাতে গ্রামের  মানুষদের কাছে পৌছানো যায়। অধিকাংশ সেবা থেকে যারা বঞ্চিত তাদের দিকেই মূলত আমাদের সাহায্যের হাত বাড়াতে চাই। এটা আমাদের মানবিক দায়িত্ব থেকেই করছি।”

শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানো আরেকটা সংগঠনের নাম ‘স্লোগান’। শীতার্তদের জন্য কম্বল বিতরণ করেছে সংগঠনটি। তাদের অন্যতম উদ্যোক্তা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র মীর সিবগাতুল্লাহ তাকি। তিনি বলেন, “প্রচন্ড শীতে যারা পথে পথে থাকেন। পথই যাদের ঘর। পথেই যাদের জীবন। তাদেরকে কিছুটা উষ্ণতা ও স্বাচ্ছন্দ্য দিতে উদ্যোগ নিয়েছে ‘স্লোগান।’ আমাদেরও কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। আমরা অধিকাংশ ছাত্র। কিন্তু তারপরও আমরা চেষ্টা করছি মানুষের পাশে দাড়াতে। তাদের কষ্টে ও ব্যথায় ব্যথিত হতে। ভাগাভাগি করে নিতে চাই তাদের দুঃখের।”

গোপালগঞ্জ জেলাল মকসুদপুরে ‘পথশিশু সেবা’ নামে একটি সংগঠন পথশিশুদের মাঝে শীতের পোশাক বিতরণ করে। সংগঠনটির সমন্বয়ক, ফারজানা আক্তার খুশি বলেন, ‘আমরা সবাই কলেজে পড়ি। স্কুলে থাকা অবস্থায় এই সংগঠনটি বন্ধুরা মিলে গঠন করি। সবাই মিলেই পুরনো পোশাক সংগ্রহ করি। তারপর সেগুলো পথশিশুদের মাঝে বিতরণ করি। ঈদের সময় নতুন পোশাক পথশিশুদের মাঝে বিতরণ করেছি। আমরা আমাদের সামর্থ্য অনুয়ায়ী যা পারছি, করছি।’

উত্তর অঞ্চলে কাজ করছেন এমন একটি সংগঠনের নাম ‘সরোবর’। যারা বিভিন্ন মাধ্যম থেকে অর্থ সংগ্রহ করে। তারপর সেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে শীতার্তদের মাঝে পৌছে দিচ্ছে শীতের পোশাক।

ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে কাজ করে এমন আরও অনেক সংগঠন রয়েছে। ঢাকার মধ্যে ‘নির্ভিক’ নামে একটি সংগঠন বিভিন্ন পথশিশুদের শীত বস্ত্র বিতরণ করেছে। একইভাবে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন শীতার্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতির পরিব্রাজক দল (প্রপদ) এবং বিভিন্ন বিভাগ ভিত্তিক সংগঠন ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার অন্যতম। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যেও এমন উদ্যোগ লক্ষ্য করা গেছে।

অনেকে সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে শীতার্তদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আহমাদ রশিদ বাহার তেমনই একজন। তিনি নিজ উদ্যোগে সাহায্য সংগ্রহ করে কুড়িগ্রাম অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় শীত বস্ত্র বিতরণ করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্র সাকিবুর রহমান সায়েম নিজ এলাকার নরসিংদীর নলুয়া গ্রামের শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ করেন। তিনি বলেন, “আমাদের মধ্যে যাদের সামর্থ্য আছে তাদের উচিত সাধ্য মতো এই সময়ে শীতার্তদের পাশে দাঁড়ানো। এটা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। একজন ছাত্র হিসেবেও আবার একজন মানুষ হিসেবেও”।

এভাবে ব্যক্তি উদ্যোগে কিংবা সামাজিক বিভিন্ন সংগঠন নিজ নিজ জায়গা থেকে মানুষের পাশে দাড়াচ্ছে। তবে তাদের কাছ থেকে কিছু কিছু অভিযোগও শোনা যায়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোনরকম সরকারি সহযোগিতা পাচ্ছেন না। উল্টো শহরাঞ্চলে কাজ করার সময় আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাধার মুখেও পড়তে হয়েছে বলে কেউ কেউ অভিযোগ করেন।