চুক্তি নবায়ন নিয়ে রিয়াল তারকা রোনালদো এবং ক্লাব প্রেসিডেন্ট পেরেজের মধ্যকার দুরত্ব ক্রমশই বাড়ছে বলে জানাচ্ছে বিভিন্ন গণমাধ্যম। গেলো বছরটা স্বপ্নের মতো কাটানো রিয়ালের সাফল্যের অন্যতম কারিগর রোনালদো। তার নৈপুণ্যে মুগ্ধ হয়ে পেরেজ পরিশ্রুতি দিয়েছিলেন নতুন চুক্তির। কিন্তু অনেকটা সময় পার হয়ে গেলেও সে চুক্তি আলোর মুখ দেখেনি। ফলে নিজেকে প্রতারিত ভাবছেন এই পর্তুগিজ তারকা। উল্লখ্য, বৈদেশিক গণমাধ্যম স্পোর্টস মেইলের দাবী তেমনটিই।
আরেক গণমাধ্যম ‘রেকর্ড’-এর সূত্রমতে, পেরেজ ও রোনালদোর এজেন্ট হোর্হো মেন্দেসকে সবুজ সংকেত দিয়েছেন।এমনটাও নাকি বলেছেন, তার মক্কেল যেন পরবর্তী গন্তব্য খুঁজে নেয়! রোনালদো যদি সত্যিই দল বদল করেন, সে ক্ষেত্রে তার সম্ভাব্য গন্তব্য হতে পারে সাবেক ক্লাব ইউনাইটেড। কিন্তু এখনও সেটা জানা যাইনি। কারণ রোনালদোর ক্লাব ট্রান্সফার করতে বিশাল অংকের ফি মিটিয়ে তাকে পুণরায় ওল্ড ট্রাফোর্ডে আনার কোন ইচ্ছে ইউনাইটেড কর্তা ব্যক্তিদের রয়েছে কি না।
রোনালদো-রিয়ালের মধুর সম্পর্কে চিড় ধরে মূলত গেলো বছরের জুলাই মাস থেকে। কর ফাঁকির অভিযোগ উঠার পর থেকে রিয়ালের কাছ থেকে যতটা সমর্থন প্রাপ্য ততটা তিনি পাননি বলেই রোনালদোর বিশ্বাস।
এখন যে প্রশ্নটি অবধারিতভাবে সামনে চলে আসে, তা হলো রোনালদোর সাথে রিয়ালের চুক্তি নবায়নের এ মুহূর্তে কোনো প্রয়োজন আছে কি না? এর পক্ষে-বিপক্ষে বেশ জোরালো মতও রয়েছে। মার্কার জরিপ মতে, সমর্থকদের শতকরা ৭০ ভাগই মনে করেন না যে চুক্তি নবায়ন করে রোনালদোর বেতন বৃদ্ধির কোনো প্রয়োজন রয়েছে। যদিও বেশ কিছু বিশ্লেষকের বিপক্ষে নিজেদের মতামত তুলে ধরেছেন।
• ব্লাংকোস প্রেসিডেন্ট পেরেজ প্রায় সময়ই প্রকাশ্যে বলেছেন, রোনালদো শুধু বর্তমান সময়েরই না বরং সর্বকালের সেরা খেলোয়ার। শ্রেষ্ঠত্বের বিতর্ক এক পাশে সরিয়ে রেখেও যদি দেখা যায়, তাহলে রোনালদো পেরেজের কথার সূত্র ধরেই বেশী বেতন দাবী করতে পারেন। কেননা, পেরেজের ভাষ্যমতে সর্বকালের সেরার বেতন তার দুই প্রতিদ্বন্দি মেসি এবং নেইমারের চেয়ে কম।
• অর্জনের দিক দিয়ে মেসি এবং রোনালদোর অবস্থান প্রায় একই। বরং শেষ বছর ব্যালন, বেস্টসহ একাধিক ব্যক্তিগত এবং রিয়ালের বছরে পাঁচটি শিরোপা জয়ে অনন্য অবদান রোনালদোর দাবীটাকে আরো জোরালো করে তুলেছে।
• সেরা ফর্মের রোনালদো কতটা ভয়ানক হতে পারে তার নমুনা দেখা গিয়েছে গত মৌসুমের শেষের দিকেই। শিরোপা নির্ধারণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচগুলোতে রোনালদো ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। এটা সত্য যে, চলতি মৌসুমে রোনালদোকে চেনা ফর্মে পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু বার্নাব্যুতে আসার পর থেকে তার পেছনে বিনিয়োগ করা প্রত্যেকটি পয়সার উপযুক্ত মূল্য তিনি দিয়েছেন।
বিপরীত দিক থেকে যারা রোনালদোর বেতন বৃদ্ধির বিপক্ষে; মার্কার জরিপ মতে যারা সংখ্যায় প্রায় ৭০ শতাংশ তাদের যুক্তিগুলোও বেশ শক্ত।
• রোনালদো নিজের সেরা ফর্ম থেকে আলোকবর্ষ দূরে অবস্থান করছেন। চলতি মৌসুমে গোল খরায় ভুগতে থাকা রিয়ালের নিজেদের ফিরে পেতে বেশ বড় রকমের একটি ধাক্কা প্রয়োজন। রোনালদো নির্ভরতায় এতগুলো বছর কেটে গেলেও এখনই উপযুক্ত সময় দলকে ঢেলে সাজাবার। বিশেষ করে রোনালদোর বয়স যখন ত্রিশের কোটা ছাড়িয়েছে আরো দু বছর আগেই।
• তার রিয়াল-রোনালদোর চলমান চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে ২০১৬ সালে। অনেক বিশ্লেষকই এর মাত্র দু-বছরের মাথায়ই চুক্তি নবায়ন করে বেতন বৃদ্ধির কোনো প্রয়োজন দেখছেন না।
• ২০১৭ সালের রোনালদো এবং ২০১৮ সালের রোনালদোর মধ্যে আকাশ পাতাল ব্যবধান। গেলো বছর যখন মনে হচ্ছিলো প্রতিদ্বন্দি মেসি থেকে বহুদূর এগিয়ে গিয়েছেন রোনালদো। সেখানে বর্তমান মৌসুমে দেখা যাচ্ছে পুরো ভিন্ন চিত্র। মেসি যখন সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে লিগের মাঝপথেই বার্সার লিগ জয় অনেকটাই নিশ্চিত করে ফেলেছেন। অপর দিকে নিয়মিত গোল মিসের মহড়া দিয়ে নিয়তই হতাশার জন্ম দিয়ে যাচ্ছেন।
রোনালদোর রিয়াল ছাড়ার গুঞ্জন যখন বাজারে হটকেকের মতো বিকোচ্ছে। তখন রিয়ালের অন্দরের চিত্র কিন্তু ভিন্ন। জানুয়ারির ৯ তারিখে রিয়ালের প্র্যাক্টিস গ্রাউন্ডে সতীর্থদের উদ্দেশ্য বেশ উদ্দিপনামূলক বক্তব্যই রেখেছিলেন পাঁচ বারের এই ব্যালন জয়ী তারকা।
সে বক্তব্যে রোনালদো বলেছিলেন যে, মাঝপথেই লিগ শিরোপা প্রায় নিষ্পত্তি হয়ে যাবার পর প্রতি রবিবার মাঠে নামার জন্য নিজেদের উদ্দিপ্ত করা বেশ কঠিন একটি ব্যাপার। এই মুহূর্তে কোপা এবং চ্যাম্পিয়ন্স লিগই রিয়ালের মূল লক্ষ্য এবং সেটি জিতার জন্যই ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে ব্লাংকোসদের।
হাল না ছাড়ার জন্য সর্বমহলে প্রশংসিত এই পুর্তগিজ তারকা তার অনমনীয় মনোভাবের জন্য ড্রেসিংরুমেও বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে তরুণদের মাঝে তার এই হাল না ছাড়া মানসিকতা বেশ অনুকরণীয়। এখনো যে অবস্থা, তাতে রোনালদোর রিয়াল ছাড়াটাকে নেহায়েত গুঞ্জন বৈ ভিন্ন কিছুই না। এটা সত্য যে, চলতি মৌসুমে প্রত্যাশার কিয়দাংশও পূরণ করতে না পারলেও সম্পূর্ণ্ বিরূপ পরিস্থিতিকে কি করে অনুকূলে আনতে হয়, তা রোনালদোর চেয়ে বেশী বার কেউ প্রমাণ করে দেখাতে পারেননি। দলের এই অবস্থায় পেরেজ নিশ্চয় চাইবেন না এতো সহজে রোনালদোকে হাতছাড়া করতে।
আপাত দৃষ্টিতে পুরো বিষয়টিকেই মনে হচ্ছে নেহায়েত গুজব হিসাবে। একাধিকবার রিয়ালেই ক্যারিয়ার শেষ করার ইচ্ছা প্রকাশ করা রোনালদো দলের এই অবস্থায় পরাজিত সৈনিকের মতো পলায়ন করবেন বলে আর যে-ই মনে করুক, রোনালদো ভক্তরা অন্তত এমটা বিশ্বাস করেন না। এখন দেখার বিষয়, গুজবের সত্যতা প্রমাণ করে রোনালদো রণে ভঙ্গ দিয়ে ইউনাইটেডের পথ ধরেন, নাকি ভক্তদের বিশ্বাসের প্রমাণ দিয়ে আবার ফিরে আসেন স্বরূপে।