ভালোবাসার সম্পর্কে বিরক্তি তৈরিকারী অভ্যাসগুলো 

ভালোবাসার সম্পর্কে বিরক্তি তৈরিকারী অভ্যাসগুলো 

প্রেম বলতে এখনো আমাদের মাথায় থাকে উনবিংশ শতাব্দীর কিছু অস্পষ্ট গল্প। ফলে আমরা যখন একটি সম্পর্কে জড়িত হই তখন বাস্তব অবস্থা মোকাবেলা করার ধৈর্য আমাদের থাকে না। আমরা এমন কিছু আচরণ নিজেদের অজান্তেই করতে শুরু করি যা সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিরক্তির উদ্রেক করে।

আমাদের কখনো শেখানো হয় না কীভাবে একজন ভালো বন্ধু হতে হবে। সম্পর্কের বেলায় কোনো আচরণগুলো পরিহার করতে হবে। বরং শেখানো হয় জীবতত্ত্বের যৌনতা, বিয়ে সম্পর্কিত বিষয়গুলো। একনজরে আমরা দেখে নেবো আমাদের কিছু সাধারণ অভ্যাস যেগুলো খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু একই সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্কে বিরক্তি তৈরির জন্য খুবই কার্যকর ভূমিকা পালন করে। ওই অভ্যাসগুলো জেনে নিলে খুব সহজেই তা পাশ কাটিয়ে সুন্দর সম্পর্ক ধরে রাখা সম্ভব।

আকার-ইঙ্গিতে কথা বলা

অধিকাংশ রিলেশনেই আমরা সরাসরি কিছু বলি না। আমরা মনে করি, ভালোবাসার মানুষ তো এমনিতেই জানবে। লাইলী-মজনু, রোমিও-জুলিয়েট এবং বর্তমান যুগের রোমান্টিক মুভি দেখে এক ধরনের মিথ্যা কল্পনা আমাদের মধ্যে তৈরি হয়। এ কারণে আমরা এই সায়েন্টেফিক যুগেও টেলিপ্যাথির চিন্তা করি এবং পরস্পরের চিন্তা না মিললে হতাশ হই। ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষার কথা সরাসরি শেয়ার করুন। যদি লাইফ পার্টনারের সঙ্গেই সরাসরি কথা বলতে না পারেন তাহলে কার সঙ্গে বলবেন? এই হতাশা থেকে সম্পর্কে বিরক্তি তৈরি হতে পারে।

রিলেশনশিপ স্কোরকার্ড

আমাদের একটি সহজ অভ্যাস হলো, আমরা অতীতের ভুল নিয়ে বেশি আলোচনা করি। ধরা যাক, খুব সুন্দর একটি বিকেল। আপনি ও আপনার সঙ্গী তা উপভোগ না করে অতীতে কার কি ভুল ছিল তা নিয়ে আলোচনা শুরু করলেন। ফলে সুন্দর বিকেলের সময়টিকে টাইম মেশিন দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিয়ে গেলেন। অনেক সময় এটা একপক্ষীয় থাকে আবার দ্বিপক্ষীয় রূপ নেয়। এটা ক্ষতিকর এই কারণে যে, অতীতের ছোটখাটো ভুলের আলোচনা করা এবং একই সঙ্গে বিচারিক ট্রাইবুনালের মাধ্যমে দোষী-নির্দোষ প্রমাণ করার মধ্য দিয়ে বর্তমান সময়টিই অবহেলা করা হয়। জানেন তো, বর্তমান কিন্তু ভবিষ্যৎ নির্মাণ করে। ফলাফল- এক রাশ বিরক্তির ভালোবাসার জগতে অনুপ্রবেশ। অতীত যেহেতু অপরিবর্তনীয় সেহেতু মাথা থেকে তা ঝেড়ে ফেলে দেয়াই উত্তম।

রিলেশনশিপের জিম্মিদশা

অনেক সময় ছোটোখাটো বিষয় নিয়ে আমরা ইমোশনাল বø্যাকমেইল-এর আশ্রয় নিই। ফোন বন্ধ করে রাখা, যোগাযোগ বন্ধ রাখা, কিছুদিন এড়িয়ে চলা- এ বিষয়গুলো অন্যপক্ষকে মানসিকভাবে পঙ্গু করে দেয়। প্রাত্যহিক জীবনে ছন্দপতন ঘটে যা অনেক সময় সম্পর্কের ইতি টানতে বাধ্য করে। ‘ইমোশনাল বø্যাকমেইল’-এর সবচেয়ে ক্ষতিকারক দিক হচ্ছে তা বেশির ভাগ সময় অপ্রয়োজনীয় নাটকের সৃষ্টি করে। এর কারণে রিলেশনশিপে সবাই একটু সতর্কভাবে থাকার চেষ্টা করে যা এক সময় নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। সরাসরি সমালোচনা এবং যে যেমন আছে তেমন থাকা লং রান রিলেশনশিপ ও রিলেশনশিপের ছন্দ বজায় রাখার জন্য সহায়ক।

নিজের বাজে অনুভূতির জন্য সঙ্গীকে দোষ দেয়া

আপনার খুব বাজে একটা দিন গেল। কিন্তু আপনার সঙ্গী হয়তো বা অন্য একটা পার্টিতে তার বন্ধুদের সঙ্গে ব্যস্ত। আপনি জানানোর পরও সে হয়তো বা তার প্ল্যান চেঞ্জ করলো না। এ জন্য আপনি খুব রেগে গেলেন। আপনার ইমোশন একান্তই আপনার ব্যক্তিগত বিষয়। রিলেশনের মধ্যেও একটা পারসোনাল বাউন্ডারি থাকে। তা মনে রাখতে হবে। রিলেশন মানে এক ধরনের মিক্সিং সালাদ। এক সঙ্গে থাকবে। কিন্তু যার যার অভ্যাস, পছন্দ, রুচি- এগুলা আলাদাভাবে নির্ণয় করা যাবে। আমরা মনে করি, রিলেশনশিপ মানে পুডিং অর্থাৎ দু’জন মিলে একীভূত হয়ে যেতে হবে। তখনই বিরক্তির তৈরি হয়।

অকারণে সন্দেহ

একটি সুন্দর রিলেশনশিপে ঝামেলা তৈরি করার জন্য সন্দেহ একাই যথেষ্ট। ফেসবুক আইডি হ্যাক করার চেষ্টা করা অথবা গোপনে মেসেজ দেখার চেষ্টা করা হয়তো আপনাকে শার্লক হোমস-এর সাময়িক উত্তেজনা দিতে পারে। কিন্তু পারস্পরিক সম্মানের জায়গাটা নষ্ট করে দেয়। সরাসরি একটা চিন্তা করুন- যাকে আপনি সন্দেহ করেন, যার ওপর আপনি বিশ্বাস রাখতে পারেন না, বাকিটা জীবন তার সঙ্গে কাটানো কি যৌক্তিক?

গিফটের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা

আমরা একটি ভুল প্রায়ই করি। তা হচ্ছে কোনো সমস্যা সমাধানে আমরা গিফট অথবা ট্রিপের আশ্রয় নিই। এটা অনেকটা গাছের গোড়ায় পানি না ঢেলে ডালপালায় পানি ঢালার মতো। গিফট অথবা কোনো জায়গায় ঘুরতে যাওয়ার মাধ্যমে কিছু সুন্দর মুহূর্ত সৃষ্টি হয় ঠিকই কিন্তু একই সঙ্গে সমস্যাটাকে দূরে ঠেলে দেয়া হয়। দুই দিন পর আবার এর প্রত্যাবর্তন ঘটে অন্য কোনো রূপে। তাই যে কোনো সমস্যা তৈরি হলে তা এড়িয়ে না গিয়ে সরাসরি মোকাবেলা করুন। যদি এটাতে ভয় পান তাহলে বুঝতে হবে আপনাদের বোঝাপড়ায় সমস্যা আছে। এটি চলতে থাকলে রিলেশনশিপ হয়তো থাকবে। কিন্তু ছন্দটি থাকবে না।

ওইসব অতি সাধারণ অভ্যাসগুলোয় সতর্ক থাকতে হবে। হতে হবে সরল ও স্বাভাবিক। তবেই না ভালো থাকবে ভালোবাসার সম্পর্ক।