পদব্রজে বিশ্ব ভ্রমণকারী ছয় অভিযাত্রীর গল্প

পদব্রজে বিশ্ব ভ্রমণকারী ছয় অভিযাত্রীর গল্প

প্রযুক্তির এই যুগে সবকিছুর সাথে পাল্লা দিয়ে উন্নতি হচ্ছে যোগাযোগ ব্যবস্থার। কয়েক ঘন্টার ব্যবধানেই চলে যাওয়া যায় এক দেশ থেকে ভিন্ন দেশে। কিন্ত বিশ্বায়নের এই যুগে কেউ কি চাইবে সব যোগাযোগ ব্যবস্থা বাদ দিয়ে পায়ে হেঁটে ভ্রমণ করতে? হ্যা এমনই কয়েকজন সাহসী মানুষের কথা জানব আজকে যারা পায়ে হেঁটে বিশ্বভ্রমণের এই দুঃসাহস দেখিয়েছেন।

 

ডেইভ কান্সট:

কান্সটকে বলা হয় পদব্রজে বিশ্ব ভ্রমণ করা প্রথম স্বীকৃত ব্যক্তি। ১৯৭০ সালের কথা, ডেইভ ও তার ভাই জন সিদ্ধান্ত নেয় দুইভাই মিলে পায়ে হেঁটে দুনিয়া ভ্রমণ করবে। এর জন্যে তারা ইউরোপ থেকে শুরু করে তাদের অভিযান। পর্যায়ক্রমে উত্তর আমেরিকা, এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ঘুরে ফিরে আসেন ইউরোপে।

দুঃখজনক ভাবে তার ভাই জন কান্সট এই অভিযান শেষ করার আগেই আফগানিস্তানে দস্যুদলের গুলিতে নিহত হন। এরপর ডেইভ এর আরেক ভাই পিট এসে তার সাথে যোগ দেয়। পরে নিহত ভাইয়ের স্মৃতি মাথায় রেখে ডেইভ তার অভিযানে ক্ষ্যান্ত দেন। ৪ বছর ধরে চলতে থাকা এই অভিযান সম্পন্ন করতে ডেইভকে মোট হাঁটতে হয়েছিল ১৪,৪৫০ মাইল!

Willie-Dave-Iranian-soldiers-copy
ইরানি সৈন্যদের সাথে হাঁটছেন ডেইভ কান্সট।

 

স্টিভেন নিউম্যান:
স্টিভেন নিউম্যান

“ওয়ার্ল্ড ওয়াকার” নামে খ্যাত স্টিভেন নিউম্যান তার অভিযান শুরু করেন ১৯৮৩ সালে। তার বিশ্বভ্রমণে ৪ বছরে তিনি মোট ২০টি দেশ পাড়ি দেন এবং এর জন্যে তার ১৫ হাজার মাইল পথ অতিক্রম করতে হয়।

গিনেজ বুক অব রেকর্ডসে প্রথম ব্যাক্তি হিসেবে একা বিশ্বভ্রমণ করার খেতাব পান নিউম্যান।

এখানেই থেমে থাকতে রাজি নন তিনি। পরিকল্পনা নিয়েছেন প্রথম ব্যাক্তি হিসেবে আড়াই হাজার মাইল দীর্ঘ চীনের গ্রেট ওয়াল হেঁটে অতিক্রম করার।

 

রসি সুয়েল-পোপ:

লেখিকা ও ম্যারাথন রানার হিসেবে পরিচিত রসি সুয়েল-পোপ, রাশিয়ার একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠানের জন্য অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে পদব্রজে বিশ্বভ্রমণে বের হন। রসি রাশিয়া, আলাস্কা, কানাডা, গ্রীনল্যান্ড, আইসল্যান্ড এবং যুক্তরাষ্ট্রের নানান প্রদেশে ঘুরে যুক্তরাজ্যে এসে তার ভ্রমণ শেষ করেন।

ভ্রমণকালে তিনি ৫০ জোড়া জুতা পরেছিলেন এবং এতিম শিশুদের জন্য আড়াই লাখ পাউন্ড পরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করেন।

Rosie-Swale-Pope
রসি সুয়েল-পোপ

 

ফিওনা ক্যাম্পবেল:

১৯৮৩ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে ঘর ছেড়ে বের হয়ে পড়েন ফিওনা ক্যম্পবেল। দীর্ঘ ১১ বছর এ ২০,০০০ মাইল অতিক্রম করে সে তার বিশ্বভ্রমণ শেষ করেন।

ইতিহাসের প্রথম নারী হিসেবে পদব্রজে বিশ্বভ্রমণ করে রেকর্ড গড়েন ফিওনা ক্যাম্পবেল। যদিও পরবর্তিতে ইউএস অতিক্রমকালে কয়েক মাইল পথ নিয়ম না মেনে অতিক্রম করার কারণে তার এই খেতাব কেড়ে নেয়া হয়। সে তার এই দুঃসাহসী অভিযানের বর্ণনা দিয়ে ৩ খন্ডের একটি বই প্রকাশ করেন।

এই নারী মাত্র ৯৫ দিনে অস্ট্রেলিয়ার এ মাথা থেকে ও মাথা ৩ হাজার দুই শ মাইল হেঁটে মাড়াতে সক্ষম হন।

campbell-joban
ফিওনা ক্যাম্পবেল এর ৩টি বইয়ের প্রচ্ছদ। ছবি: থ্রি পয়েন্টস অব দ্য কম্পাস ডটকম।

 

জর্জ মিগান:

তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রভাষক। তবে তার চেয়ে বড় পরিচয় তিনি একজন অভিযাত্রী। দক্ষিণ অামেরিকার তিয়েরা দেল ফুগো থেকে আলাস্কার উত্তরাংশ, উনিশ হাজার উনিশ মাইল পথ অতিক্রম করেন প্রায় ৬ বছরে।

এই অভিযানে পুরো সময় তিনি শুধুমাত্র পায়ে হেঁটে অতিক্রম করে রেকর্ড করেন ‘লংগেস্ট আনব্রকেন ওয়াক’ এর। এছাড়াও ব্রিটিশ অভিযাত্রী জর্জ মিগান এর স্বীকৃত বিশ্ব রেকর্ড ৮টি এবং এটাও একটা রেকর্ড, কারণ ইউরোপীয়দের মধ্যে আর কারও এতো অফিশিয়াল ওয়ার্ল্ড রেকর্ড নাই।

১৯৭৭ সালে শুরু করেন অভিযান। অভিযান সমাপ্ত করতে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বাঁধার সম্মুখীন হলেও একাই সব অতিক্রম করেন জর্জ মিগান। পরবর্তীতে তার এই পর্বতপ্রমাণ অভিজ্ঞতা নিয়ে বই ‘দ্যা লংগেস্ট ওয়াক’ প্রকাশিত হয়।

জর্জ মিগান। ছবি: মাইটি গুডস ডটকম।

 

কার্ল বুশবি:

এই মুহুর্তে মঙ্গোলিয়া অতিক্রম করতে থাকা কার্ল বুশবি তার পদব্রজে বিশ্বভ্রমণ শুরু করেন ১৯৯৮ সালে। তার পরিকল্পিত ১৪ বছরে ৩৬ হাজার মাইল, অভিযানটি এখনও চলছে। এতদিনে শেষ হয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও বিভিন্ন সময় ভিসা জটিলতার কারণে আটকে যায় তার অভিযান। কিন্ত থেমে থাকেন নি  কার্ল। সব বাঁধা অতিক্রম করে এগিয়ে চলছেন বুশবি।

bushby-karl-closeup-walk_i
কার্ল বুশবি। ছবি: উইকিপিডিয়া।