দুঃসময়ের স্রোতে ঘূর্ণিপাক খাওয়া রিয়াল আজ মুখোমুখি হচ্ছে ভিলারিয়ালের। সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত ৯ টা ১৫ মিনিটে। ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে ‘টেন টু’।
১৭ ম্যাচে ৩২ পয়েন্ট নিয়ে লিগ টেবিলের চতুর্থ স্থানে রয়েছে রিয়াল। এক ম্যাচ কম খেলেও লিগ লিডার বার্সা থেকে বেশ পিছিয়ে রয়েছে রিয়াল। লা লিগার শিরোপা স্বপ্নের ইতোমধ্যেই সমাধি রচিত হয়ে যাওয়ায় এখন সম্মানজনক একটি অবস্থান থেকে লিগ শেষ করাটাই ব্ল্যাংকোসদের মূল চ্যালেঞ্জ। এ জন্য পুরো আসরের কথা ভুলে গিয়ে ম্যাচ বাই ম্যাচ আগাতে চাচ্ছেন জিদান। কিন্তু বর্তমানে হতশ্রী দেখানো রিয়ালের জন্য এ ম্যাচটিও সহজ হবে না। কারণ প্রতিপক্ষ ভিলারিয়াল লিগ টেবিলের ছয় নম্বর স্থানেই শুধু নেই, সর্বেশষ তিন ম্যাচে হারের মুখও দেখেনি তারা। এছাড়া সর্বশেষ পাঁচটি অ্যাওয়ে ম্যাচেও আশার আলো দেখাচ্ছে দি ইয়েলো সাবমেরিনদের। এ পাঁচ ম্যাচের মাত্র একটিতেই হেরেছে তারা। জয় রয়েছে সর্বশেষ দুই ম্যাচে। এ দুই জয় এসেছে লিগ টেবিলের তৃতীয় দল ভ্যালেন্সিয়া এবং সর্বশেষ ম্যাচে রিয়ালকে রুখে দেয়া সেল্টা ভিগোর বিপক্ষে।
অন্যদিকে মৌসুমের শুরু থেকেই খুঁড়িয়ে চলা রিয়ালের ফর্মের পাশাপাশি অস্বস্তির কারণ হয়ে দেখা দিচ্ছে চলতি মৌসুমে ঘরের মাঠে তাদের হতাশ করা নৈপুণ্য। এ মৌসুমে ঘরের মাঠে খেলা নয়, ম্যাচের চারটিতেই পয়েন্ট খুইয়েছে রিয়াল। এর মধ্যে ইনজুরির কারণে আগে থেকেই দল থেকে ছিটকে গেছেন সার্জিও রামোস, করিম বেনজেমা ও মার্কোস লরেন্তে এবং ভিলারিয়ালের বিপক্ষে ম্যাচের স্কোয়াড থেকে জিদান বাদ দিয়েছেন ড্যানি সেবেওস ও হাকিমি আশরাফকে। বাড়তি দুশ্চিন্তা হিসেবে যোগ হয়েছে দলের প্রাণভোমরা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর অফ-ফর্ম।
ম্যাচ-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে জিদানকে দেখা গেছে বেশ ভিন্ন মেজাজেই। তিনি বলেন, ‘আমি এটা শুনতে শুনতে বিরক্ত যে, মাদ্রিদ খারাপ। খারাপ বলাটা খুবই সহজ। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এখনো সবকিছু খারাপ হয়ে যায়নি এখানে।’ এর সঙ্গে তিনি যোগ করেন, রিয়ালকে নিয়ে নেতিবাচক নিউজ করাটি দারুণ ঘটনা। এটি বিকোয় ভালো।
সংবাদমাধ্যম থেকে শুরু করে সমর্থকরা সবাই যখন সমালোচনায় মুখর তখন জিদান এমন দু’জনকে পাশে পেলেন যাদের সমর্থন তার হারানো আত্মবিশ্বাস কিছুটা হলেও ফিরিয়ে আনবে।
জিদানের পক্ষ নিয়ে ১৯৮৫ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত রিয়ালের প্রেসিডেন্ট পদে থাকা লরেঞ্জ সান বলেছেন, গত আগস্টেই তারা ছিল বিশ্বের সেরা দল এবং তাদের খেলাও হারিয়ে যায়নি। তারা এক রকমই আছে।
লরেঞ্জ সান-এর সময় রিয়াল ১৯৯৭-৯৮ মৌসুমে ইউরোপিয়ান কাপ (বর্তমানে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ) জিতলেও লা লিগা শেষ করেছিল লিগ লিডার বার্সা থেকে ১১ পয়েন্ট কম নিয়ে চতুর্থ স্থানে থেকে। একই ঘটনা ঘটেছিল ১০৯৯-২০০০ মৌসুমেও। ওই বছর ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন রিয়াল লিগ শেষ করেছিল চ্যাম্পিয়ন দেপোর্তিভো থেকে ৭ পয়েন্ট কম নিয়ে পঞ্চম স্থানে থেকে।
ওই অভিজ্ঞতা থেকেই লরেঞ্জ সান বলেন, ‘এটি সম্পূর্ণই নির্ভর করে খেলোয়াড়দের ওপর।’
জিদানের পাশে দাঁড়িয়েছেন সাবেক রিয়াল অধিনায়ক ফার্নান্দো হিয়েরোও। তিনি বলেন, ‘এটি কেবলই জানুয়ারি মাস। আমাদের একই কোচ ও একই স্কোয়াড রয়েছে যারা গত দু’বছরে ৮টি শিরোপা জিতেছে। জিততে অভ্যস্ত এমন একজনের সাময়িক ব্যর্থতা তাকে বাদ দেয়ার জন্য উপযুক্ত কোনো কারণ হতে পারে না। আমাদের স্থির থাকতে ও চিন্তা করতে হবে পরিষ্কারভাবে।”
লরেঞ্জ সান ও হিয়েরার সমর্থন জিদানের জন্য স্বস্তিদায়ক হলেও স্ট্রাইকারদের গোলখরা এবং রক্ষণের দুর্বলতা মাথা ব্যথার কারণ হয়ে উঠতে পারে এ ম্যাচেও, বিশেষ করে দ্বিতীয়ার্ধে দলের প্রায়ই খেই হারিয়ে ফেলাটারও দ্রæত সমাধান বের করতে হবে।
পরিসংখ্যান মতে চলতি মৌসুমে নিজেদের মাঠে শতকরা ৪৪ বার নিজেদের গোলবার অক্ষত রাখতে পারলেও শতকরা ২২ ম্যাচে গোল না পাওয়াটা বেশ উদ্বেগজনক। চলতি মৌসুমে লা লিগায় করা রিয়ালের ৩২ গোলের ৭টি গোলই এসেছে ৩১ থেকে ৪০ মিনিটের মধ্যে। তা শতাংশের হিসাবে সর্বোচ্চ। দ্বিতীয়ার্ধে রিয়ালের গোল স্কোরিং রেশিও বেশ আশঙ্কাজনক। ৪১ থেকে ৫০, ৫১ থেকে ৬০ ও ৬১ থেকে ৭০ মিনিট সময়ের মধ্যে রিয়ালের করা গোল সংখ্যা যথাক্রমে ৩, ১ ও ২ গোল। ম্যাচের শেষ ২০ মিনিটেও অবস্থা বেশ করুণ। ৭১ থেকে ৯০ মিনিটের মধ্যে রিয়ালের করা গোলের সংখ্যা মাত্র ৬টি।
অন্যদিকে দ্বিতীয়ার্ধে রিয়ালের রক্ষণ যেন হয়ে উঠছে উন্মুক্ত দুয়ার। মৌসুমে হজম করা ১৬ গোলের ৫টিই এসেছে ৫১ থেকে ৬০ মিনিটে যা শতাংশের হিসাবে ৩১ ভাগ। ৮১ থেকে ৯০ মিনিটে রিয়াল হজম করেছে ৩টি গোল যা শতাংশের হিসাবে ১৯ ভাগ। সর্বশেষ লিগ ম্যাচেও ৮০ মিনিট পর্যন্ত এগিয়ে থেকেও ৮২ মিনিটে গোল খেয়ে ম্যাচ ড্র করে রিয়াল।
একই সঙ্গে ভোগাচ্ছে দুই ফুলব্যাকের পারফম্যান্সও, বিশেষ করে মার্সেলোর সাইড থেকেই রিয়াল হজম করেছে মোট গোলের শতকরা ৪০ ভাগ। এ অবস্থায় শুধু নির্দিষ্ট কোনো অংশ নয়, বরং পুরো দলকে নিয়েই ভাবতে হচ্ছে জিদানকে।
ভিলারিয়ালের বিপক্ষে জয়টা হয়তো লিগ রেসে ফেরাবে না রিয়ালকে। কিন্তু অক্সিজেন হিসেবে কাজ করতে পারে মৌসুমের বাকিটা সময়ের জন্য। কিন্তু জিদান কি পারবেন ব্যর্থতার ওই ঘূর্ণিপাক থেকে দলটি উদ্ধার করতে?
বিশ্লেষকদের মতে, দুই মৌসুমে যার অর্জন ৮টি শিরোপা তার ওপর এত জলদি ভরসা হারানোর সময় বোধয় এখনো আসেনি।