ইসলামে কবিতা ও সাহিত্যের ব্যাপারে একটা প্রশস্ত পথ আছে। চারজন সাহাবি আছেন, যারা ছিলেন তদানীং আরব বিশ্বের বিখ্যাত কবি। তাঁদেরকে আল্লাহ্র রাসুলের কবিও বলা হত। তাঁরা হচ্ছেন- কা’ব বিন মালিক আবু আল আনসারি (রা.), হাসসান বিন ছাবিত (রা.), আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা আল আনসারি (রা.) ও কা’ব ইবনে জুবাইর ইবনে আবু সুলমা (রা.)।
কা’ব বিন মালিক (রা.): ছিলেন অগ্রগামী সাহাবীদের একজন। তার তিলাওয়াত অত্যন্ত সুন্দর ছিল। অসাধারণ ক্বারী ছিলেন। কেবলমাত্র তাবুকের যুদ্ধ ব্যতীত সকল যুদ্ধেই তিনি বীরোচিতভাবে রাসুল সা. এর সাথে যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। তাঁর ক্ষমার ব্যাপারে কোরআনে আয়াত আছে। এই সাহাবি সেইসব সাহাবাদের একজন ছিলেন যারা রাসুল সা. এর দেহরক্ষী হওয়ার সৌভাগ্য পেয়েছিলেন।
হাসসান বিন ছাবিত (রা.): খুবই ব্যতিক্রম ছিলেন। তার জন্ম হয়েছিল মদিনায়। রাসুলের জন্মের সাত-আট বছর আগে। সম্পর্কে রাসুল সা. এর আত্মীয় ছিলেন। মদিনার আলোচিত খাজরাজ গোত্রের লোক ছিলেন তিনি। ১২০ বছর হায়াত পেয়েছিলেন, ষাট বছর ছিলেন খোদায় অবিশ্বাসী আর বাকী ষাট বছর ছিলেন আল্লাহ বিশ্বাসী মুসলিম কবি। একটা যুদ্ধেও তিনি শরিক হন নি। তবুও আল্লাহ্ জিবরাঈলের মাধ্যমে তাঁর ব্যাপারে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। এমনকি এও বলা হয়েছে, রাসুলের জবানে পাকে, ‘হাসসানের কবিতা তোমাদের তীরের থেকে শত্রুর দেহে অধিক জ্বালা ধরায়।’
আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা আল আনসারি (রা.): ছিলেন অত্যন্ত বীর যোদ্ধা। খাজরাজ গোত্রের ইবনে হারিছের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন এবং নিজ সম্প্রদায়ের সকলের ইসলাম গ্রহণের ব্যাপারে জানিয়েছিলেন। মুহাজিরদের জন্য উদার মনে নিজের সব ভাগ করে দিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন মু’তার যুদ্ধের সেনাপতি। মু’তার যুদ্ধে আল্লাহ্র রাসুল যায়েদ বিন হারিছা, যাফর ইবনে আবু তালিব এবং আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহাকে একজনের শাহাদাতের পর অপরজনের সেনাপতিত্ব ঘোষণা করেছিলেন যুদ্ধে প্রেরণের পূর্বেই।
এমন ঘটনা যা রাসুল ইতোপূর্বে কখনো করেন নি। সবাইকে স্থির বিশ্বাসে পৌঁছে দিয়েছিল যে, এরা প্রত্যেকেই চলতি যুদ্ধে শহীদ হবেন। হয়েছেও তাই। দুইজনের শাহাদাতের পর যখন আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা দায়িত্ব নিলেন। তিনি যুদ্ধের ময়দানে দ্রুত বেগে ঘোড়া ছুটাচ্ছিলেন আর কবিতা আবৃত্তি করছিলেন। এমনকি শাহাদাতের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি যুদ্ধের পতাকা ঊর্ধ্বে ধরে আবৃত্তি করে যাচ্ছিলেন। মাত্র তিন হাজার সৈন্যের এই কমাণ্ডার কবি সেদিন হেরাক্লিউয়াসের ২ লাখ সৈন্যের বাহিনীকে পরাজিত করেছিলেন।
কা’ব ইবনে জুবাইর ইবনে আবু সুলমা (রা.): তিনি কুরাইশদের খুব প্রিয় ও বিখ্যাত কবি ছিলেন। রাসুলের অসম্মানে এমন কোনও কুৎসাপূর্ণ কবিতা নাই, যা তিনি রচনা করেন নি। এমনকি কবিতাগুলো ছিল খুবই জঘন্য। যে মদিনার ইসলামি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আদালত তাঁকে দেখমাত্র হত্যার নির্দেশ দিয়েছিল। এরপর মক্কা বিজয়ের কিছুকাল পর তিনি গোপনে মদিনা গেলেন। এক বন্ধু সাহাবীর কাছে রাজনৈতিক আশ্রয় নিলেন।
ফজরের নামাজের সময় মসজিদে উপস্থিত হয়ে খোদ আল্লাহ্র রাসুলের কাছ থেকে ইসলামের ঘোষণা আর পূর্ববর্তী অপকর্ম থেকে ফিরে আসার কথা জানালেন। আল্লাহ্র রাসুল তাকে নিরাপত্তা দিলেন। পরম শত্রুকেও গভীর ভালোবাসায় টেনে নিলেন বুকে। এই কা’ব ইবনে জুবাইর পরবর্তী যুগে এমনভাবে ইসলামের প্রভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন যে। উমার বলতেন, তিনি কবিদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ। তিনি তাঁর সহজ রচনশৈলীর জন্য বিখ্যাত ছিলেন। এছাড়া তাঁর কবিতায় অযোগ্যের স্তুতিও ঠাই পায়নি। যেখানে অন্যান্য আরব কবিদের কবিতা গোত্রপতি বা ধনাঢ্য ব্যক্তিবর্গের স্তুতিগাথায় ভরপুর থাকত।