নতুন বছরে আমাদের জীবনকে আরেকটু গতিশীল করতে বাজারে আসছে চোখধাঁধানো কিছু ডিভাইস বা প্রযুক্তিপণ্য। সম্ভাব্য এমন সেরা ৫ প্রযুক্তিপণ্যের হালহকিকত দেখে নেই এক নজরে।
টেসলা মডেল থ্রি
বিশ্বে বৈদ্যুতিক গাড়ির কদর বাড়ছে দিনকে দিন। ইলেক্টিক গাড়ি উৎপাদনকারী মার্কিন প্রতিষ্ঠান টেসলা তাদের ‘মডেল এস’ সেডান কারটি দিয়ে বাজার মাত করেছে। ২০১৭ সালের শেষ দিকে এসে ‘মডেল থ্রি’ নামের নতুন মডেলের গাড়ি বাজারে আনে। মডেলটির ব্যবসাভাগ্য ভাল হবে সেটা এখন সবার কাছে পরিষ্কার। টেসলার সিইও এলান মাস্কের বর্ণনামতে, কোম্পানিটি প্রথমে খুব দামি রেসিং কার তৈরি করলেও পরে বৃহৎ বিনিয়োগের মাধ্যমে লাক্সারী মডেল এস সেডান কার বাজারে নিয়ে আসে। পরে আস্তে আস্তে প্রযুক্তি বিশ্লেষণ করে অবশেষে এমন একটি গাড়ি ডিজাইন করতে সক্ষম হয়েছে যা এই কোম্পানির আগের মডেলগুলোর তুলনায় দামে অনেক সস্তা। তবে এর অসাধারণ প্রযুক্তির ব্যবহার এবং অনন্য ডিজাইনের ধারা অব্যাহত রেখে আজকের দিনের অন্যতম সফল এবং প্রভাবশালী অটোমোটিভ কোম্পানি হিসেবে বিশ্বে সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন আগামী একযুগ মডেল থ্রি থেকে ভাল ব্যবসা করবে কোম্পানিটি।
হোমপড
বর্তমান সময়ে অ্যাপলের সবচেয়ে আকর্ষণীয় প্রোডাক্টের নাম হোমপড। নামেই বোঝা যায়, বাসাবাড়িতে গান শোনার জন্য মূলত হোমপড তৈরি। অ্যাপলের এই পণ্যটি ভোক্তাদের আলাদা অভিজ্ঞতার যোগান দিবে বলে জানিয়েছেন নির্মাতারা। তারবিহীন এই স্পিকারটি যেখানে রাখা হবেতার পরিবেশ বুঝে সেই অনুযায়ী ভলিউম ঠিকঠাক করে নেবে নিজেই। একইসাথে অ্যাপল মিউজিকের সঙ্গেও কাজ করবে এই হোমপ্যাড। কাজেই মিউজিক স্ট্রিমিং সার্ভিসে সাবস্ক্রিপশন থাকতে হবে। অ্যাপল বলছে, এই হোমপড কারও সঙ্গীত বিষয়ে ব্যক্তিগত রুচি নিয়ে রীতিমত গবেষণা চালাবে। সেই সাথে নতুন নতুন গান খুঁজে বের করতেও সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেবে।
উচ্চতায় ৭ ইঞ্চি এবং সিলিন্ডার আকৃতির এই হোমপড গভীর ও পরিষ্কার বেইজ মিউজিকের জন্য আদর্শ হতে পারে শ্রোতাদের কাছে। আর এতে খাঁটি হাই ফ্রিকোয়েন্সি অ্যাকোয়াস্টিকে ডিরেকশনাল কন্ট্রোলও রয়েছে। এর দাম হতে পারে প্রায় ৩৪৯ ডলারের মত।
ওয়্যারলেস চার্জার
অ্যানারজিয়াস নামের একটি প্রতিষ্ঠান ওয়্যারলেস চার্জিং প্রযুক্তি তৈরি করলেও আইফোন এক্স এবং আইফোন ৮ ফিচারটির যথাযথ ব্যবহার করেছে। ‘ওয়্যারলেসলি ট্রান্সমিটিং পাওয়ার’ পদ্ধতিতে প্রায় ১৫ ফুট দুরত্বে থাকা স্মার্টফোনটি অনায়াসেই চার্জ দেয়া যাবে। একটি ডিভাইস ঘরের বা অফিসের এক কোণে বৈদ্যুতিক সংযোগ দিয়ে ফেলে রাখলেই হয়। ডিভাইসটি থেকে সংযোগকৃত স্মার্টফোন বা ট্যাবলেট নির্দিষ্ট দুরত্বের মধ্যে থেকে চার্জ দেয়া যাবে। এতে প্রায় ১০ ওয়াটের মত বিদ্যুৎ খরচ হবে। এছাড়াও কিছু গাড়ি তৈরীর কোম্পানি, কফিশপ কিংবা ফার্নিচার কোম্পানি তাদের রেগুলার আইটেমের সাথে ওয়ারলেস প্যাড তৈরীর সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।
অগমেন্টেড রিয়েলিটি
ভার্চুয়াল এবং বাস্তবতার এক অপুর্ব সংমিশ্রণই হচ্ছে অগমেন্টেড রিয়েলিটি। অগমেন্টেড রিয়েলিটির আদলে গড়া ‘পোকেমন গো’ গেইম টি জনপ্রিয়তা পাওয়ায় অগমেন্টেড রিয়েলিটির প্রথম সফলতা প্রকাশ পায়। এরপর যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক স্টার্টআপ ম্যাজিক লিপ এনেছে মিক্সড রিয়েলিটি গগলস। এটি মূলত একটি অগমেন্টেড রিয়েলিটি হার্ডওয়্যার প্লাটফর্ম। ডিভাইসটি এ বছরের শুরুতেই বাজারে আনা হবে।
‘ম্যাজিক লিপ ওয়ান’ নামে গ্লাসটি চোখে দিলে এর সেন্সর মানুষের চোখকে বিভ্রান্ত করে দেয়। যার ফলে যেই জিনিসের অস্তিত্ব নেই সেগুলোও মানুষ চোখের সামনে দেখতে পায়। অগমেন্টেড রিয়েলিটির অভিজ্ঞতা দিতে ফার্স্ট জেনারেশন ডেভেলপমেন্ট কিট হিসেবে এতে থাকছে মিক্সড রিয়েলিটি গগলস, শরীরে ধারণ করা কম্পিউটার সিস্টেম ও একটি ওয়্যারলেস কন্ট্রোলার।
একইসাথে তথ্য সংগ্রহ করবে এবং ব্যবহারকারী যা দেখবে সেগুলোই এর ক্যামেরা ও হেডফোনে রেকর্ড হয়ে যাবে। ম্যাজিক লিপের পেটেন্ট অনুযায়ী এর ক্ষমতা বাকি স্মার্টগুলোর চেয়ে বেশি হবে। মাইক্রোসফটের হলোলেন্স হেডসেটের প্রধান প্রতিযোগী হতে পারে এই ডিভাইসটি।
মোবোমানি
অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেমে ভিন্নতা নিয়ে এসেছে ‘মোবোমানি।’ এটি একটি অভিনব পেমেন্ট সিস্টেম। এর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, ট্রানজেকশনের জন্য এটি শব্দতরঙ্গ ব্যবহার করে থাকে। ভারতের বেঙ্গালুরু ভিত্তিক একটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান টোনট্যাগ এ প্রযুক্তি তৈরি করেছে। টোনট্যাগ নামক একটি সফটওয়্যার ডেভেলপার কিট (এসডিকে) যা শব্দতরঙ্গ এবং নিয়ার-ফিল্ড-কম্যুনিকেশন (এনএফসি) প্রযুক্তি ব্যবহার করে অফলাইনে, নিরাপদ, স্পর্শবিহীন পেমেন্ট সেবা প্রদান করতে পারে। এ প্রযুক্তি যে কোন জায়গায় ব্যবহার করা যায় এবং এর জন্যে ইন্টারনেটের প্রয়োজন নেই। মার্চেন্ট এবং ক্রেতা তাদের ফোনে মোবোমানি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ইনস্টল করে এটি ব্যবহার করতে পারবে। কার্ডে পেমেন্ট করার অবকাঠামোতে মোবাইল ওয়ালেট সেবা সাপোর্ট করবে তাই শীঘ্রই নতুন বছরে বাংলাদেশেও যে মোবোমানির মতো পেমেন্ট সিস্টেম চালু হবে তা বলাই যায়।